রাজধানীর কাপ্তানবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজির নৈরাজ্য কায়েম করেছিল চক্রটি। প্রতি রাতে কাপ্তানবাজার থেকেই কয়েক লাখ টাকা চাঁদাবাজি করতো তারা। এছাড়া রাস্তার পাশের ভাসমান দোকান এবং লেগুনা স্ট্যান্ড থেকেও তারা নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে নিয়মিত চাঁদা তুলতো।
চাঁদাবাজ চক্রের বিষয়টি এতদিন গোপন থাকলেও শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৩ জনকে গ্রেফতারের পর পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সবজি ও ফলের দোকান, ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান, লেগুনা স্ট্যান্ড এবং মালবাহী গাড়ি থেকে অবৈধভাবে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে আসছিলেন। তারা আরও জানান, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ দোকানের মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রত্যেক দোকানদারদের কাছ থেকে তারা ৫০০-১০০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করতো।
আরিফ মহিউদ্দিন জানান, ওয়ারী থানাধীন কাপ্তান বাজারে চাঁদাবাজি শুরু হতো মূলত রাত ১২টার পর থেকে। চলতো ভোররাত পর্যন্ত। মুরগি বহনকারী কোনো গাড়ি এই বাজারে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির ধরন ও মুরগির পরিমাণের ওপর নির্ভর করে চাঁদার পরিমাণ ঠিক করে দেওয়া হতো এবং জোর করে তা আদায় করা হতো। কেউ চাঁদা না দিলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হতো। গাড়ির মুরগি আনলোড/বিক্রিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হতো। এছাড়াও যেসব গাড়িতে তুলনামূলকভাবে ছোট/অসুস্থ/মৃত মুরগি পাওয়া যায় তাদের বেশি চাঁদা দিতে হতো। প্রতি রাতে এখান থেকে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতো তারা।
রমনার শান্তিনগরে মূলত রাস্তার ধারে ভাসমান দোকান থেকে নির্দিষ্ট হারে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হতো। এখানে সকাল ও বিকাল দুই শিফটে চাঁদা আদায় করা হতো। এই কাজে ৪/৫ জনের একটি গ্রুপ জড়িত। প্রতিদিন এখান থেকে লাখের অধিক টাকা উত্তোলন করা হয়।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, চাঁদার টাকা না দিলে তারা নিরীহ দোকানদারদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিতো এবং তাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে মারপিট করতো। তাদের কথা মতো কেউ চাঁদার টাকা না দিলে দোকান বসাতে দেওয়া হতো না। হুমকি দেওয়া হতো। লেগুনা স্ট্যান্ডে তাদের কথা মতো কেউ চাঁদার টাকা না দিলে এই রুটে কোনো লেগুনা চলতে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দিতেন তারা। তখন লেগুনা চালকরা পেটের দায়ে বিনা প্রতিবাদে চাঁদা পরিশোধ করতে বাধ্য হতেন।