পেঁয়াজের ঝাঁঝ কমবে কবে?

পেঁয়াজের দাম গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৭ টাকা। আগামী এক মাস বাজারে পেঁয়াজের এই সংকট থাকবে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, আগামী মার্চের শেষে বাজারে হালি পেঁয়াজ আসবে। তখন দাম কমবে।

 

নিত্যপণ্য নিয়ে ভোক্তারা রীতিমতো উদ্বিগ্ন। নিত্যপণ্যের দাম জানতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এও ফোন করছেন ভোক্তারা। ৯৯৯ সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক দিনে জিনিসপত্রের দাম কেন কমছে না—জানতে চেয়ে শতাধিক ফোন পেয়েছেন তাঁরা। যারা ফোন করেছেন তাঁদের অধিকাংশের প্রশ্ন ছিল, সবজির দাম কবে কমবে? রোজায় পণ্যের দাম কমবে নাকি বাড়বে?

 

রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বুধবার তাদের বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৬-৩৮ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার তা বিক্রি হয়েছে ৪৩-৪৫ টাকায়। অর্থাৎ পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৭ টাকা। আর গত সপ্তাহে রাজধানীর বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৫-৫০ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা।

 

পেঁয়াজচাষি ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার কামারডাঙি গ্রামের আবদুল মাজেদ বলেন, এ বছর পেঁয়াজ আবাদ করে অনেকেই চালান তুলতে পারেননি। কয়েক মাস আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ তাঁরা ১৮-২০ টাকায় বিক্রি করেছেন। বর্তমানে এই পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। আগামী মার্চের শেষের দিকে বাজারে নতুন হালি পেঁয়াজ উঠবে। তখন দাম সহনীয় হয়ে আসবে বলে জানান তিনি।

 

মাজেদ আরও বলেন, এ বছর কয়েক দফা বৃষ্টির কারণে নষ্ট হওয়ার ভয়ে অনেকেই জমি থেকে আগেভাগে পেঁয়াজ তুলেছেন। এ পেঁয়াজে বেশি পরিমাণে সার দেওয়া হয়। ফলে এই মুড়িকাটা পেঁয়াজ বেশি দিন ঘরে সংরক্ষণ করা যায় না। বর্তমানে তাদের ৯০ শতাংশ পেঁয়াজের মজুত শেষ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে দাম বাড়লেও কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না। কারণ তাদের হাতে পেঁয়াজের মজুত নেই।

 

পেঁয়াজ চাষিরা জানান, পেঁয়াজ আবাদের প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামই বেশি। কীটনাশক থেকে শুরু করে বীজের দাম অনেক বেড়েছে। শ্রমিকের মজুরি অনেক চড়া। বর্তমানে ৭০০-৭৫০ টাকার নিচে একজন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ কৃষকের উৎপাদিত রসুনের মণ ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকেরা পেঁয়াজ-রসুন চাষে এগিয়ে আসবে না।

 

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহের রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৯ টাকা। যা গতকাল মঙ্গলবার তা বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর এক সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৯ টাকা। যা গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫৩ টাকায়।

 

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে পেঁয়াজের মোট চাহিদা ২৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশে উৎপাদন হয় ২৯ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। সংরক্ষণের কারণে প্রসেস লস হয় ২৫ শতাংশ। আর আমদানি করা পেঁয়াজ প্রসেস লস হয় ৮-১০ শতাংশ। দেশে বছরে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৬-৭ লাখ মেট্রিক টন। বাজার যাতে অস্বাভাবিক না বাড়ে সে জন্য সরকার টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে। বর্তমানে দেশের পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ি, নওগাঁ, রাজশাহী ও নাটোরে পেঁয়াজ আবাদ হয়।

সূএ:পূর্ব পশ্চিম ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জাতি হিসেবে আমাদের সকল প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচন করে গেছে মুজিব নগর সরকার-ধর্মমন্ত্রী

» ইসলামপুরে হিট স্ট্রোকে ব্যবসায়ীর মৃত্যু

» ব্র্যাক ব্যাংক ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের দুই মাসে ২,৫০০ কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন

» চলমান বিডিএস এর আওতায় গ্রাউন্ড পয়েন্ট স্থাপনের কাজ শেষ, শীঘ্রই ম্যাপ তোরির কাজ শুরু

» ৬১ বিজিবি তিস্তা ব্যাটালিয়ন-২ কর্তৃক হাতীবান্ধায় অর্ধকোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস

» লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় বৃষ্টি জন্য বিশেষ নামাজ আদায়

» পলাশে প্রেমিকাকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে প্রেমিক গ্রেপ্তার

» আরো কর্মী নিতে কাতারের আমিরের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান

» সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩১৩৮ টাকা

» বান্দরবানের তিন উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

পেঁয়াজের ঝাঁঝ কমবে কবে?

পেঁয়াজের দাম গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৭ টাকা। আগামী এক মাস বাজারে পেঁয়াজের এই সংকট থাকবে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, আগামী মার্চের শেষে বাজারে হালি পেঁয়াজ আসবে। তখন দাম কমবে।

 

নিত্যপণ্য নিয়ে ভোক্তারা রীতিমতো উদ্বিগ্ন। নিত্যপণ্যের দাম জানতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এও ফোন করছেন ভোক্তারা। ৯৯৯ সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক দিনে জিনিসপত্রের দাম কেন কমছে না—জানতে চেয়ে শতাধিক ফোন পেয়েছেন তাঁরা। যারা ফোন করেছেন তাঁদের অধিকাংশের প্রশ্ন ছিল, সবজির দাম কবে কমবে? রোজায় পণ্যের দাম কমবে নাকি বাড়বে?

 

রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বুধবার তাদের বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৬-৩৮ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার তা বিক্রি হয়েছে ৪৩-৪৫ টাকায়। অর্থাৎ পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৭ টাকা। আর গত সপ্তাহে রাজধানীর বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৫-৫০ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা।

 

পেঁয়াজচাষি ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার কামারডাঙি গ্রামের আবদুল মাজেদ বলেন, এ বছর পেঁয়াজ আবাদ করে অনেকেই চালান তুলতে পারেননি। কয়েক মাস আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ তাঁরা ১৮-২০ টাকায় বিক্রি করেছেন। বর্তমানে এই পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। আগামী মার্চের শেষের দিকে বাজারে নতুন হালি পেঁয়াজ উঠবে। তখন দাম সহনীয় হয়ে আসবে বলে জানান তিনি।

 

মাজেদ আরও বলেন, এ বছর কয়েক দফা বৃষ্টির কারণে নষ্ট হওয়ার ভয়ে অনেকেই জমি থেকে আগেভাগে পেঁয়াজ তুলেছেন। এ পেঁয়াজে বেশি পরিমাণে সার দেওয়া হয়। ফলে এই মুড়িকাটা পেঁয়াজ বেশি দিন ঘরে সংরক্ষণ করা যায় না। বর্তমানে তাদের ৯০ শতাংশ পেঁয়াজের মজুত শেষ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে দাম বাড়লেও কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না। কারণ তাদের হাতে পেঁয়াজের মজুত নেই।

 

পেঁয়াজ চাষিরা জানান, পেঁয়াজ আবাদের প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামই বেশি। কীটনাশক থেকে শুরু করে বীজের দাম অনেক বেড়েছে। শ্রমিকের মজুরি অনেক চড়া। বর্তমানে ৭০০-৭৫০ টাকার নিচে একজন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ কৃষকের উৎপাদিত রসুনের মণ ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকেরা পেঁয়াজ-রসুন চাষে এগিয়ে আসবে না।

 

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহের রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৯ টাকা। যা গতকাল মঙ্গলবার তা বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর এক সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৯ টাকা। যা গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫৩ টাকায়।

 

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে পেঁয়াজের মোট চাহিদা ২৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশে উৎপাদন হয় ২৯ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। সংরক্ষণের কারণে প্রসেস লস হয় ২৫ শতাংশ। আর আমদানি করা পেঁয়াজ প্রসেস লস হয় ৮-১০ শতাংশ। দেশে বছরে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৬-৭ লাখ মেট্রিক টন। বাজার যাতে অস্বাভাবিক না বাড়ে সে জন্য সরকার টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে। বর্তমানে দেশের পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ি, নওগাঁ, রাজশাহী ও নাটোরে পেঁয়াজ আবাদ হয়।

সূএ:পূর্ব পশ্চিম ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com