পাহাড়ি নদীর পানিতে ডুবলো হাওরের ২০০ হেক্টর জমির ধান

সুনামগঞ্জে টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে টানা দুদিন কাজ করেও রক্ষা করতে পারলেন না নজরখালি বাঁধ। ফলে বাঁধ ভেঙে কৃষকদের সামনেই ভেসে গেছে তাদের সোনার ফসল। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় পাহাড়ি নদী পাটলাইয়ের পানি বেড়ে নজরখালি বাঁধ ভেঙে যায়। ফলে চোখের পলকে ডুবে যায় ৮২ গ্রামের কৃষকদের প্রায় ২০০ হেক্টর জমির ফসল।

 

জানা গেছে, টাঙ্গুয়ার জলাভূমির হাওর হিসেবে খ্যাত হলেও হাওরের কান্দাগুলোতে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে টাঙ্গুয়াপাড়ের জয়পুর, গোলাবাড়ি, মন্দিয়াতা, রংচি ও শপনগরসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা বোরো ধান চাষাবাদ করেছেন। তবে বাঁধ ভেঙে পাহাড়ি নদীর পানি ঢুকলে ফসল ডুবে যেতে পারে, এমন শঙ্কায় ছিলেন কৃষকরা।

তারা বাঁধ মেরামতের দাবিও তুলেছিলেন। কৃষকদের দাবির মুখে হাওরের তিনটি বাঁধ মেরামতের জন্য সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড আট লাখ টাকা বরাদ্দও দেয়। তবে গেলো দুদিনে নদীতে আগাম পানি আসায় টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে জয়পুর গোলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে দিনরাত কাজ করছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। অবশেষে পানিতেই তলিয়ে গেল কৃষকের ধান, সঙ্গে মিলিয়ে গেলো তাদের স্বপ্নও।

 

হাওরপাড়ের গোলাবাড়ি গ্রামের কৃষকরা জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নজরখালি বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকেছে। ৮২ গ্রামের মানুষের কষ্টের ফসল বোর ধান তলিয়ে যায়। আমরা শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ধর্মপাশার রংচি,রুপনগর ও অন্যন্য গ্রামের প্রায় শতাধিক লোক নজরখালি, নাওটানা ও গনিয়াকুড়ি গ্রামের মানুষ বাঁধটি যাতে না ভাঙে সেজন্য সেচ্ছায় কাজ করেছি।

 

স্থানীয় কৃষক সামির মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ঝণ করে এই বছর বোর ধান করেছিলাম কিন্তু আগাম নদীর পানি এসে বাঁধ ভেঙে আমার ধান তলিয়ে নিয়ে গেছে। এখন আমি ঝণ কি করে সুধ করব এবং সংসার কি করে চালাব সেই চিন্তায় আছি।

স্থানীয় কৃষক রহিম মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এত কষ্ট করে ধান করলাম অথচ একটা ধানও ঘরে তুলতে পারলাম না। এখন কি করে সংসার চলবে সেই চিন্তায় আছি। ৮২টি গ্রামের মানুষের কষ্টের ফলানো ধান ডুবে গেছে।

 

কৃষক তাজির মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতাম। চাকরি ছেড়ে গ্রামে এসে বোরো ধান চাষ করেছি। স্বপ্ন ছিল বৈশাখে ধান তুলে মেয়ের বিয়ে দেবো। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন পানিতে তলিয়ে গেলো।

 

তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরে বোরো চাষাবাদ খুবই কম। নজরখালি বাঁধ ভেঙে ২০০ হেক্টরের মতো ধান ডুবেছে। এ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় শনি ও মাটিয়ান হাওরের বাঁধের ওপর চাপ কমেছে।’ সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» যাত্রীবাহী বাসের চাপায় অটোচালকসহ দুজন নিহত

» আবারও রেকর্ড গড়েছে স্বর্ণের দাম

» পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

» টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ডাবল সেঞ্চুরি

» ছেলের বন্ধুরা আমাকে ‘দিদি’ বলে ডাকে: শ্রাবন্তী

» কিছু আসনের লোভে জাতীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে কেউ পিআর চাইছে: সালাহউদ্দিন

» গাজায় গণহত্যা চলছে, দায়ী ইসরায়েল: জাতিসংঘ তদন্ত কমিশন

» বিশেষ অভিযানে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আরও ১১২৬ জন আসামি গ্রেফতার

» ফখরুল-আব্বাসসহ ৬৭ জনকে অব্যাহতি দিলো আদালত

» জামায়াতের আন্দোলন সরকারবিরোধী না : ব্যারিস্টার ফুয়াদ

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

পাহাড়ি নদীর পানিতে ডুবলো হাওরের ২০০ হেক্টর জমির ধান

সুনামগঞ্জে টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে টানা দুদিন কাজ করেও রক্ষা করতে পারলেন না নজরখালি বাঁধ। ফলে বাঁধ ভেঙে কৃষকদের সামনেই ভেসে গেছে তাদের সোনার ফসল। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় পাহাড়ি নদী পাটলাইয়ের পানি বেড়ে নজরখালি বাঁধ ভেঙে যায়। ফলে চোখের পলকে ডুবে যায় ৮২ গ্রামের কৃষকদের প্রায় ২০০ হেক্টর জমির ফসল।

 

জানা গেছে, টাঙ্গুয়ার জলাভূমির হাওর হিসেবে খ্যাত হলেও হাওরের কান্দাগুলোতে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে টাঙ্গুয়াপাড়ের জয়পুর, গোলাবাড়ি, মন্দিয়াতা, রংচি ও শপনগরসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা বোরো ধান চাষাবাদ করেছেন। তবে বাঁধ ভেঙে পাহাড়ি নদীর পানি ঢুকলে ফসল ডুবে যেতে পারে, এমন শঙ্কায় ছিলেন কৃষকরা।

তারা বাঁধ মেরামতের দাবিও তুলেছিলেন। কৃষকদের দাবির মুখে হাওরের তিনটি বাঁধ মেরামতের জন্য সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড আট লাখ টাকা বরাদ্দও দেয়। তবে গেলো দুদিনে নদীতে আগাম পানি আসায় টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে জয়পুর গোলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে দিনরাত কাজ করছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। অবশেষে পানিতেই তলিয়ে গেল কৃষকের ধান, সঙ্গে মিলিয়ে গেলো তাদের স্বপ্নও।

 

হাওরপাড়ের গোলাবাড়ি গ্রামের কৃষকরা জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নজরখালি বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকেছে। ৮২ গ্রামের মানুষের কষ্টের ফসল বোর ধান তলিয়ে যায়। আমরা শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ধর্মপাশার রংচি,রুপনগর ও অন্যন্য গ্রামের প্রায় শতাধিক লোক নজরখালি, নাওটানা ও গনিয়াকুড়ি গ্রামের মানুষ বাঁধটি যাতে না ভাঙে সেজন্য সেচ্ছায় কাজ করেছি।

 

স্থানীয় কৃষক সামির মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ঝণ করে এই বছর বোর ধান করেছিলাম কিন্তু আগাম নদীর পানি এসে বাঁধ ভেঙে আমার ধান তলিয়ে নিয়ে গেছে। এখন আমি ঝণ কি করে সুধ করব এবং সংসার কি করে চালাব সেই চিন্তায় আছি।

স্থানীয় কৃষক রহিম মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এত কষ্ট করে ধান করলাম অথচ একটা ধানও ঘরে তুলতে পারলাম না। এখন কি করে সংসার চলবে সেই চিন্তায় আছি। ৮২টি গ্রামের মানুষের কষ্টের ফলানো ধান ডুবে গেছে।

 

কৃষক তাজির মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতাম। চাকরি ছেড়ে গ্রামে এসে বোরো ধান চাষ করেছি। স্বপ্ন ছিল বৈশাখে ধান তুলে মেয়ের বিয়ে দেবো। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন পানিতে তলিয়ে গেলো।

 

তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরে বোরো চাষাবাদ খুবই কম। নজরখালি বাঁধ ভেঙে ২০০ হেক্টরের মতো ধান ডুবেছে। এ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় শনি ও মাটিয়ান হাওরের বাঁধের ওপর চাপ কমেছে।’ সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com