পাকিস্তানে মৃত ছাড়াল ১০০, এখনও চলছে উদ্ধারকাজ

পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরের একটি মসজিদে পুলিশকে লক্ষ্য করে চালানো আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ জনে। অত্যন্ত সুরক্ষিত এক জোনে এই মসজিদটি অবস্থিত এবং এরকম একটি স্থানে হামলাকারী কীভাবে ঢুকতে পারলো তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

 

পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় ধরনের যতো হামলার ঘটনা ঘটেছে তার একটি সোমবারের এই হামলা যাতে আরো বহু মানুষ আহত হয়েছে। পাকিস্তানি তালেবানের একজন কমান্ডার প্রথমে হামলার দায়িত্ব স্বীকার করলেও পরে এই জঙ্গি গ্রুপটি এই দাবি অস্বীকার করেছে।

অতীতে মসজিদ, স্কুল এবং বাজারে চালানো কিছু হামলার কৃতিত্ব দাবি করা থেকে বিরত থেকেছে এই পাকিস্তানি তালেবান। কারণ তাদের বক্তব্য হচ্ছে তারা পাকিস্তানি জনগণের সঙ্গে নয়, বরং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে।

 

তবে এই দাবির বিষয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে। হামলার একদিন পর মঙ্গলবারেও মসজিদের ভেতরে উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে যেসব মুসল্লি চাপা পড়ে আছে, উদ্ধারকারীরা তাদেরকে বের করে আনার চেষ্টা করছে।

 

মঙ্গলবার নয় জনকে জীবন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে আরও ২৪টি মৃতদেহ। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এখন আর কেউ নিচে আটকা পড়ে নেই বলেই তারা মনে করছেন।

 

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য যারা কাজ করছে তাদের ওপর হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীরা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে।

 

একদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন তিনি। ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, মসজিদের ওই কম্পাউন্ডে কয়েক মিনিট পর পর অ্যাম্বুলেন্স ঢুকছে এবং বের হয়ে আসছে।

 

হাসপাতালের একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে, হামলায় ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছে, যাদের অনেকের অবস্থা গুরুতর। এর মধ্যেই নিহত ২০ জনেরও বেশি পুলিশ কর্মকর্তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এসময় তাদের কফিন পাকিস্তানি পতাকা দিয়ে ঢাকা ছিল।

 

নিহতদের মৃতদেহ তাদের পরিবারের কাছে তুলে দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। পেশোয়ারের পুলিশ প্রধান মুহাম্মদ ইজাজ খান জানিয়েছেন, হামলার সময় ওই মসজিদে পুলিশ বাহিনীর ৩০০ থেকে ৪০০ সদস্য নামাজ পড়ছিল।

 

মসজিদটি পেশোয়ার শহরের যে জায়গায় অবস্থিত, সেখানে পুলিশের সদরদপ্তরও রয়েছে। আছে গোয়েন্দা এবং সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটের অফিসও।

 

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ বলেছেন, ‘যারা এই হামলার পেছনে ছিল তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পুরো দেশ একতাবদ্ধ।

 

আফগান সীমান্তের কাছে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ারে সোমবারের হামলাটি চালানো হয় জোহরের নামাজের সময়।

 

বিস্ফোরণে মসজিদের একটি দেয়াল ধসে পড়েছে। আহতদের অনেকেরই পরনে ছিল পুলিশের ইউনিফর্ম। বিস্ফোরণের কারণে অনেকের শরীর পুড়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের আঘাতে কারো হাড় ভেঙে গেছে।

 

এক ব্যক্তি বলেছেন, বিস্ফোরণের আওয়াজ এতো তীব্র ছিল যে তিনি এখনও কিছু শুনতে পাচ্ছেন না। আরেকজন জানিয়েছেন যে ধ্বংসস্তূপের নিচে প্রায় এক ঘণ্টা চাপা পড়ে থাকার পর তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।

 

গত মার্চ মাসে পেশোয়ারে শিয়াদের একটি মসজিদে আরো একটি বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে যাতে বহু মানুষ নিহত হয়।

 

সর্বশেষ হামলার পর পুলিশ রাজধানী ইসলামাবাদে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। বলা হয়েছে যে শহরের সব প্রবেশ-মুখে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» চেক প্রতারণার মামলা ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

» রাম চরণকে কিয়ারার জন্মদিনের শুভেচ্ছা

» একনেকে ১১ প্রকল্প অনুমোদন

» চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৎপর হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

» জিম্মি নাবিক-জাহাজ উদ্ধার নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

» চট্টগ্রাম টেস্টের আগে বড় ধাক্কা খেলো শ্রীলংকা

» তিনটি পাইপগান, ২০টি রাবার কার্তুজ ও ৩৬ বোতল ফেনসিডিলসহ ২ জন গ্রেফতার

» ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় বাড়ানো হচ্ছে ফেরি: বিআইডব্লিউটিসি

» এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির

» শিগগিরই ভাঙা হবে কারওয়ান বাজারের ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

পাকিস্তানে মৃত ছাড়াল ১০০, এখনও চলছে উদ্ধারকাজ

পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরের একটি মসজিদে পুলিশকে লক্ষ্য করে চালানো আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ জনে। অত্যন্ত সুরক্ষিত এক জোনে এই মসজিদটি অবস্থিত এবং এরকম একটি স্থানে হামলাকারী কীভাবে ঢুকতে পারলো তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

 

পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় ধরনের যতো হামলার ঘটনা ঘটেছে তার একটি সোমবারের এই হামলা যাতে আরো বহু মানুষ আহত হয়েছে। পাকিস্তানি তালেবানের একজন কমান্ডার প্রথমে হামলার দায়িত্ব স্বীকার করলেও পরে এই জঙ্গি গ্রুপটি এই দাবি অস্বীকার করেছে।

অতীতে মসজিদ, স্কুল এবং বাজারে চালানো কিছু হামলার কৃতিত্ব দাবি করা থেকে বিরত থেকেছে এই পাকিস্তানি তালেবান। কারণ তাদের বক্তব্য হচ্ছে তারা পাকিস্তানি জনগণের সঙ্গে নয়, বরং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে।

 

তবে এই দাবির বিষয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে। হামলার একদিন পর মঙ্গলবারেও মসজিদের ভেতরে উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে যেসব মুসল্লি চাপা পড়ে আছে, উদ্ধারকারীরা তাদেরকে বের করে আনার চেষ্টা করছে।

 

মঙ্গলবার নয় জনকে জীবন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে আরও ২৪টি মৃতদেহ। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এখন আর কেউ নিচে আটকা পড়ে নেই বলেই তারা মনে করছেন।

 

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য যারা কাজ করছে তাদের ওপর হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীরা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে।

 

একদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন তিনি। ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, মসজিদের ওই কম্পাউন্ডে কয়েক মিনিট পর পর অ্যাম্বুলেন্স ঢুকছে এবং বের হয়ে আসছে।

 

হাসপাতালের একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে, হামলায় ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছে, যাদের অনেকের অবস্থা গুরুতর। এর মধ্যেই নিহত ২০ জনেরও বেশি পুলিশ কর্মকর্তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এসময় তাদের কফিন পাকিস্তানি পতাকা দিয়ে ঢাকা ছিল।

 

নিহতদের মৃতদেহ তাদের পরিবারের কাছে তুলে দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। পেশোয়ারের পুলিশ প্রধান মুহাম্মদ ইজাজ খান জানিয়েছেন, হামলার সময় ওই মসজিদে পুলিশ বাহিনীর ৩০০ থেকে ৪০০ সদস্য নামাজ পড়ছিল।

 

মসজিদটি পেশোয়ার শহরের যে জায়গায় অবস্থিত, সেখানে পুলিশের সদরদপ্তরও রয়েছে। আছে গোয়েন্দা এবং সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটের অফিসও।

 

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ বলেছেন, ‘যারা এই হামলার পেছনে ছিল তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পুরো দেশ একতাবদ্ধ।

 

আফগান সীমান্তের কাছে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ারে সোমবারের হামলাটি চালানো হয় জোহরের নামাজের সময়।

 

বিস্ফোরণে মসজিদের একটি দেয়াল ধসে পড়েছে। আহতদের অনেকেরই পরনে ছিল পুলিশের ইউনিফর্ম। বিস্ফোরণের কারণে অনেকের শরীর পুড়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের আঘাতে কারো হাড় ভেঙে গেছে।

 

এক ব্যক্তি বলেছেন, বিস্ফোরণের আওয়াজ এতো তীব্র ছিল যে তিনি এখনও কিছু শুনতে পাচ্ছেন না। আরেকজন জানিয়েছেন যে ধ্বংসস্তূপের নিচে প্রায় এক ঘণ্টা চাপা পড়ে থাকার পর তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।

 

গত মার্চ মাসে পেশোয়ারে শিয়াদের একটি মসজিদে আরো একটি বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে যাতে বহু মানুষ নিহত হয়।

 

সর্বশেষ হামলার পর পুলিশ রাজধানী ইসলামাবাদে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। বলা হয়েছে যে শহরের সব প্রবেশ-মুখে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com