নবজাতক বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ!

সিজারের মাধ্যমে পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার পর হাসপাতালের বিল পরিশোধে নবজাতককে বিক্রি করে দিতে হয়েছে হতভাগ্য এক মায়ের। এই হৃদয়স্পর্শী ঘটনা ঘটেছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায়। বুকের ধন হাতছাড়া হওয়ায় এখন পাগল প্রায় ওই মা।

 

জানা গেছে, চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার বারোআনি গ্রামের বাসিন্দ তামান্না বেগম। দুই সন্তানের জননী তামান্না গেল ২৬ জানুয়ারি প্রসববেদনা নিয়ে ভর্তি হন উপজেলার পালস-এইড জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। অবশেষে সিজারের মাধ্যমে মায়ের কোল আলো করে আসে এক ছেলে সন্তান।

কিন্তু হাসপাতাল ও ওষুধ খরচের ব্যয় বহন করতে না পেরে ৫০ হাজার টাকায় বাধ্য হয়ে নাড়িছেঁড়া ধন বিক্রি করেন স্থানীয় এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে। অবশেষে হাসপাতালের ৪০ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করে নিজ বাড়ি ফেরার সুযোগ মেলে হতভাগ্য ওই মায়ের।

 

প্রেম করে পাঁচ বছর আগে তামান্নার পার্শ্ববর্তী হানিরপাড় গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে আলমের সঙ্গে বিয়ে হয়। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেনে না নেওয়ায় তারা আলাদা বাসায় ভাড়া থাকতেন। তৃতীয় সন্তানের ডেলিভারির সময় হয়ে আসলে স্বামী আলম টাকা জোগাড় করতে না পেরে বাড়ি থেকে চলে যান।

 

তামান্না বেগম বলেন, ‘প্রসববেদনা উঠলে আমার স্বামী টাকা জোগাড় করতে না পেরে মোবাইল বন্ধ করে ঘর থেকে চলে যায়। টাকা ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি না নেওয়ায় আমার খালা তার স্বর্ণ পাঁচ হাজার টাকা বন্ধক রেখে হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরে সিজারের পরপরই টাকা চাওয়া হয় আমাদের কাছে। আমি গরিব মানুষ টাকা দেব কোথা থেকে?’

 

তিনি বলেন, ‘আরেক জনে আমাকে বিনামূল্যে রক্ত দিলেও হাসপাতালে রক্তের বিল দুই হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে অপারেশন, ওষুধপত্র এবং আনুষঙ্গিক খরচ নিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়।

 

তামান্না বলেন, ‘কারও কথায় আমি সন্তান দিইনি। তবে যখন হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে এবং নিজের চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারছিলাম না, তখনই সন্তান বিক্রির সিদ্ধান্ত নিই। যদিও এর আগে কাউসার নামে একজন সন্তান বিক্রি করবো কি-না আমার কাছে জানতে চায়।

 

তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে হাসপাতালে একজনের সঙ্গে কথা বলে ৫০ হাজার টাকায় আমার নবজাতক শিশুকে বিক্রি করে দিই। কিন্তু এখন আমার স্বামী আমাকে তার সন্তান দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তা না হলে আমার সঙ্গে আর সংসার করবে না বলেও আমাকে হুমকি দিয়েছে।

 

তামান্না বলেন, ‘আমার বুকের ধন হারিয়েছি। দয়া করে আমার মানিককে আমার বুকে ফিরিয়ে দেওয়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকার ও সমাজের মানুষের কাছে আবেদন করছি।

 

তিনি বলেন, ‘জানি না আমি আমার সন্তানকে পাবো কি-না। কারণ তারা আমার কাছ থেকে স্ট্যাম্প করেছে এ সন্তান আমি আর কোনদিন দাবি করতে পারবো না। তার ওপর ৫০ হাজার টাকা আমার মতো গরিব মানুষ কীভাবে তাদেরকে দেবো। জানি না আমার সন্তান এখন কোথায় আছে বা কেমন আছে।’

 

তামান্না বেগমের মা সেফালী বেগম বলেন, ‘টাকার অভাবে আমার নাতিকে বিক্রি করতে হয়েছে। সন্তান হারিয়ে আমার মেয়ে এখন পাগলপ্রায়। আমরা গরিব মানুষ, এই টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। কেউ যদি দয়া করে আমাদের, তবেই আমার মেয়ে তার সন্তান ফিরে পাবে।

 

এ ব্যাপারে হাসপাতালের মালিক প্রতিনিধি লিমন সরকার বলেন, ‘বাচ্চা বিক্রির বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছুই অবগত নয়। তারা আমাদেরকে বিশেষ কিছু জানায়নি। সর্বশেষ গত দু’দিন আগে যখন তিনি অপারেশনের সেলাই কাটতে আসেন, তখনো আমরা তার বাচ্চা কেমন আছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান বাচ্চা ভালো আছে।

 

এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী শরিফুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ বা আবেদন করেনি।বিস্তারিত জেনে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কক্সবাজার-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

» নির্মাণাধীন ভবনে লার্ভা পেলে নির্মাণ কাজ বন্ধ : তাপস

» বাংলাদেশ সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করল জিম্বাবুয়ে

» চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ফের সড়ক অবরোধ

» ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় ভারত

» থাইল্যান্ডে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

» ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃত্যু

» রাবির ভর্তির বিভাগ পছন্দক্রম ফরম পূরণের তারিখ ঘোষণা

» শুভ জন্মদিন ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’

» মন্ত্রী-এমপির স্বজন যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেনি, সময়মতো ব্যবস্থা: কাদের

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নবজাতক বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ!

সিজারের মাধ্যমে পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার পর হাসপাতালের বিল পরিশোধে নবজাতককে বিক্রি করে দিতে হয়েছে হতভাগ্য এক মায়ের। এই হৃদয়স্পর্শী ঘটনা ঘটেছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায়। বুকের ধন হাতছাড়া হওয়ায় এখন পাগল প্রায় ওই মা।

 

জানা গেছে, চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার বারোআনি গ্রামের বাসিন্দ তামান্না বেগম। দুই সন্তানের জননী তামান্না গেল ২৬ জানুয়ারি প্রসববেদনা নিয়ে ভর্তি হন উপজেলার পালস-এইড জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। অবশেষে সিজারের মাধ্যমে মায়ের কোল আলো করে আসে এক ছেলে সন্তান।

কিন্তু হাসপাতাল ও ওষুধ খরচের ব্যয় বহন করতে না পেরে ৫০ হাজার টাকায় বাধ্য হয়ে নাড়িছেঁড়া ধন বিক্রি করেন স্থানীয় এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে। অবশেষে হাসপাতালের ৪০ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করে নিজ বাড়ি ফেরার সুযোগ মেলে হতভাগ্য ওই মায়ের।

 

প্রেম করে পাঁচ বছর আগে তামান্নার পার্শ্ববর্তী হানিরপাড় গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে আলমের সঙ্গে বিয়ে হয়। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেনে না নেওয়ায় তারা আলাদা বাসায় ভাড়া থাকতেন। তৃতীয় সন্তানের ডেলিভারির সময় হয়ে আসলে স্বামী আলম টাকা জোগাড় করতে না পেরে বাড়ি থেকে চলে যান।

 

তামান্না বেগম বলেন, ‘প্রসববেদনা উঠলে আমার স্বামী টাকা জোগাড় করতে না পেরে মোবাইল বন্ধ করে ঘর থেকে চলে যায়। টাকা ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি না নেওয়ায় আমার খালা তার স্বর্ণ পাঁচ হাজার টাকা বন্ধক রেখে হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরে সিজারের পরপরই টাকা চাওয়া হয় আমাদের কাছে। আমি গরিব মানুষ টাকা দেব কোথা থেকে?’

 

তিনি বলেন, ‘আরেক জনে আমাকে বিনামূল্যে রক্ত দিলেও হাসপাতালে রক্তের বিল দুই হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে অপারেশন, ওষুধপত্র এবং আনুষঙ্গিক খরচ নিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়।

 

তামান্না বলেন, ‘কারও কথায় আমি সন্তান দিইনি। তবে যখন হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে এবং নিজের চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারছিলাম না, তখনই সন্তান বিক্রির সিদ্ধান্ত নিই। যদিও এর আগে কাউসার নামে একজন সন্তান বিক্রি করবো কি-না আমার কাছে জানতে চায়।

 

তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে হাসপাতালে একজনের সঙ্গে কথা বলে ৫০ হাজার টাকায় আমার নবজাতক শিশুকে বিক্রি করে দিই। কিন্তু এখন আমার স্বামী আমাকে তার সন্তান দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তা না হলে আমার সঙ্গে আর সংসার করবে না বলেও আমাকে হুমকি দিয়েছে।

 

তামান্না বলেন, ‘আমার বুকের ধন হারিয়েছি। দয়া করে আমার মানিককে আমার বুকে ফিরিয়ে দেওয়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকার ও সমাজের মানুষের কাছে আবেদন করছি।

 

তিনি বলেন, ‘জানি না আমি আমার সন্তানকে পাবো কি-না। কারণ তারা আমার কাছ থেকে স্ট্যাম্প করেছে এ সন্তান আমি আর কোনদিন দাবি করতে পারবো না। তার ওপর ৫০ হাজার টাকা আমার মতো গরিব মানুষ কীভাবে তাদেরকে দেবো। জানি না আমার সন্তান এখন কোথায় আছে বা কেমন আছে।’

 

তামান্না বেগমের মা সেফালী বেগম বলেন, ‘টাকার অভাবে আমার নাতিকে বিক্রি করতে হয়েছে। সন্তান হারিয়ে আমার মেয়ে এখন পাগলপ্রায়। আমরা গরিব মানুষ, এই টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। কেউ যদি দয়া করে আমাদের, তবেই আমার মেয়ে তার সন্তান ফিরে পাবে।

 

এ ব্যাপারে হাসপাতালের মালিক প্রতিনিধি লিমন সরকার বলেন, ‘বাচ্চা বিক্রির বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছুই অবগত নয়। তারা আমাদেরকে বিশেষ কিছু জানায়নি। সর্বশেষ গত দু’দিন আগে যখন তিনি অপারেশনের সেলাই কাটতে আসেন, তখনো আমরা তার বাচ্চা কেমন আছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান বাচ্চা ভালো আছে।

 

এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী শরিফুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ বা আবেদন করেনি।বিস্তারিত জেনে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com