নতুন শিক্ষার্থীদের ভয় র‌্যাগিং-মাদক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে থেমে নেই র‌্যাগ। হলে, ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিংয়ের শিকার হতে হয়। যদিও ৪৯ আবর্তনের শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক কম র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন। এর একটি কারণ সম্প্রতি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বদল ও করোনাকালে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকা। এ বছরের ৩রা জানুয়ারি আক্তারুজ্জামান সোহেলকে সভাপতি ও হাবিবুর রহমান লিটনকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ। তবে এর আগের ব্যাচের অর্থাৎ ৪৮ আবর্তনের থেকে আগের শিক্ষার্থীরা র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন বেশি। ৫০তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা এখনও ক্যাম্পাসে আসেননি। মীর মশাররফ হোসেন হলের ৪৭ আবর্তের এক শিক্ষার্থী তার র‌্যাগিংয়ের শেষ দু’দিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, আমাদের এক বন্ধুকে বানানো হলো পর্নো তারকা।

তার বুকে দেয়া হলো বেলুন। আর আমাদের শরীরে লম্বা একটি বেলুন দিয়ে অশ্লীল ভঙ্গিমায় অভিনয় করানো হলো। আর শেষদিন আমাদের বড় ভাইয়েরা বলেন, কে কে এতোদিনেও কোনো শাস্তি পাস নাই। কয়েকজন হাত তোলে। তাদের দু’-একটা করে চড় দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রিলের সঙ্গে ঝুলে থাকা, একাধিকবার সালাম দেয়া, রাতের বেলা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সেলফি তোলা, ফল পেড়ে আনা ইত্যাদি র‌্যাগ দেয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের প্রথমে রাখা হয় গণরুমে। মীর মশাররফ হোসেন হলের গণরুমে গিয়ে দেখা যায় তোষকের সারি। মাথার উপরে অপ্রতুল ফ্যান। শক্তিহীন এসব ফ্যান যেন ঘুরতে নারাজ। বড় একটি রুমে থাকেন প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থী। নেই হাঁটার জায়গাও। গরমের সঙ্গে তারা ছারপোকার কামড়ে অস্থির। এসব শিক্ষার্থীরা সবসময়ই থাকেন ভীত অবস্থায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৪৯ আবর্তনের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের এখানে গরমে এমন অবস্থা হয় যে, শ্বাস নিতে পারি না। এরপর রাতভর চলে নানা কায়দা-কানুন শেখানো। আমাদের বড় শাস্তিটাইতো হলো ভয় দেখানো। বড় ভাইয়েরা লাঠি নিয়ে পর্যন্ত এগিয়ে আসেন।

এই হলের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বাড়ি থেকে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। করোনার ছুটি শেষে হল খুলে দেয়ার পর ক্যাম্পাসে আসি। সেদিন যানজটে ক্লান্ত হয়ে হলে আসার পরও আমি প্রায় ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমাতে পারিনি। প্রথম যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এলাম তখন বাজে রাত প্রায় ৯টা। এরপর ১১টা থেকে শুরু হয় র‌্যাগিং। আমাকে সেদিন ১২ জন ভাইয়ের কাছে অন্তত ৫০ বার নিজের পরিচয় দিতে হয়েছে। আরেক বন্ধুর সঙ্গে এক পায়ে দাঁড়িয়ে গান গাইতে হয়। ক্লান্তি ও ঘুমের কথা জানানো হলে, বড় ভাইয়েরা চোখে পানি দিয়ে আসতে বলেন। এরপর ফের চলে র‌্যাগিং। সেদিন রাতে একটা চড় খেলেও যে পরিমাণ ভয় দেখানো হয়েছে তা অবর্ণনীয়।

গণরুমে থাকা এসব শিক্ষার্থী সকলেই বলেন, তাদের প্রধান সমস্যাটাই হচ্ছে ভীতি। সবসময় একটা মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে চলতে হয়। থাকতে হয় ভয়ে। আর গণরুমের অপরিচ্ছন্নতা, গরম ইত্যাদিতো আছেই।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, আমাদের সঙ্গে যারা নবীন শিক্ষার্থী যোগ দেন তাদের রীতিমতো ভয়ভীতির পাশাপাশি এক ঘরে করে রাখা হয়। নবীন এক শিক্ষার্থী একবার আমার কাছে বই নিয়েছিল কিছু উপনাস্যের। এরপর ওকে রাতভর বই নিয়ে বিভিন্ন বড় ভাইদের পাঠানো হয়। নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করা হয়। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর কিংবা অনুশাসনের বিপক্ষে আমরা বরাবরই সোচ্চার। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের দাপুটে আমরা কোণঠাসা। আর আমরা সংখ্যায় কম হওয়াতে চাইলেও সর্বোচ্চটা দিয়েও অন্যায় অনেক সময় রুখতে পারি না। তবে আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজের চোখে একটা তথ্য যায় যে, দুর্নীতি হচ্ছে।

হলের র‌্যাগিং বন্ধে পাপেট শো করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাকতাড়ুয়া পাপেট থিয়েটার। এর একজন সদস্য আসাদুজ্জামান আশিক বলেন, ১৫ই মার্চ এই শোতে র‌্যাগিংয়ের শিকার শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা তুলে ধরা হয় পাখিদের মাধ্যমে। এর একটাই উদ্দেশ্য আমরা চাই র‌্যাগিং মুক্ত সুষ্ঠু ক্যাম্পাস।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন ছাত্রলীগের নেতারা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, আগে কি হয়েছে না হয়েছে সেটা আমরা দেখতে চাই না। আমরা নতুন করে হলগুলোর পরিবেশ সাজাতে চাই। এটা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো না এখানে সবাই হলে থাকেন। কারণ আমি বিশ্বাস করি রাজনীতি করবে অল্প ক’জন সমর্থক থাকবে ব্যাপক। আমরা সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করেই সেই সমর্থন আনতে চাই।

 

সম্প্রতি র‌্যাগ ডে’তে ভাইরাল হওয়া দু’টি নৃত্য নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়। এই অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিল উদ্দাম নৃত্য। আর দর্শক সারিতে ছিল মাদকের আসর। ১০ থেকে ১২ই মার্চ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া অনেকেই গাঁজার ধোঁয়ায় থাকতে পারেননি। এমনি প্রকাশ্যে চলেছে মদ্য পান। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া একাধিক অনূজ শিক্ষার্থী বলেন, সেখানে বড় ভাইয়েরা শুধু মাদক সেবন না বিনামূল্যে বিতরণও করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতি ৪২ ব্যাচের অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন মাদকের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, আমরা মাদকের কোনো ব্যবস্থা করিনি।

সরজমিন অবস্থান করে জানা যায়, ক্যাম্পাসে গাঁজা, মদ, ইয়াবা এমনকি হেরোইন বিক্রি হয় দেদারছে। শিক্ষার্থীদের অনেকের ভাষ্য- গাঁজা এতোটাই সহজলভ্য যে, এটাকে মাদক মানতেই নারাজ। হলগুলোতে অভিযোগ রয়েছে এসব মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে প্রশাসনের লোকজনও।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরসহকারী অধ্যাপক আ.স.ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমরা র‌্যাগিং বিরোধী নানা কর্মসূচি পালন করি। নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সচেতন করি। কোনো স্থানে র‌্যাগিং পেলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এছাড়াও র‌্যাগিং মুক্ত রাখতে আমরা তৎপর রয়েছি। আমি বলবো না র‌্যাগিং মুক্ত হয়েছে। তবে আগের থেকে অনেক কম। তিনি আরও বলেন, র‌্যাগিংয়ের পাশাপাশি মাদক নির্মূলেও আমরা সোচ্চার। প্রায়শই মাদকবিরোধী নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের এই অবস্থান চলমান থাকবে।  সূএ: মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ঘূর্ণিঝড়ে আলফাডাঙ্গার ২২ গ্রাম বিধ্বস্ত

» প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা আগামীকাল

» আইপিইউর এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের চেয়ারম্যান হলেন স্পিকার

» এক শহরের মধ্যে দুই দেশ

» ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে খেলে রোজা শুদ্ধ হবে?

» মশার কামড়ে গায়ে চাকা চাকা দাগ হলে কী করবেন?

» মাটিভর্তি ট্রাকের ধাক্কায় অটোভ্যান দুমড়ে-মুচড়ে চালক নিহত

» ২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে বুলডোজার দিয়ে বালুচাপা দিলো ইসরায়েল

» বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছিল: ওবায়দুল কাদের

» চেক প্রতারণার মামলা ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নতুন শিক্ষার্থীদের ভয় র‌্যাগিং-মাদক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে থেমে নেই র‌্যাগ। হলে, ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিংয়ের শিকার হতে হয়। যদিও ৪৯ আবর্তনের শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক কম র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন। এর একটি কারণ সম্প্রতি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বদল ও করোনাকালে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকা। এ বছরের ৩রা জানুয়ারি আক্তারুজ্জামান সোহেলকে সভাপতি ও হাবিবুর রহমান লিটনকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ। তবে এর আগের ব্যাচের অর্থাৎ ৪৮ আবর্তনের থেকে আগের শিক্ষার্থীরা র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন বেশি। ৫০তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা এখনও ক্যাম্পাসে আসেননি। মীর মশাররফ হোসেন হলের ৪৭ আবর্তের এক শিক্ষার্থী তার র‌্যাগিংয়ের শেষ দু’দিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, আমাদের এক বন্ধুকে বানানো হলো পর্নো তারকা।

তার বুকে দেয়া হলো বেলুন। আর আমাদের শরীরে লম্বা একটি বেলুন দিয়ে অশ্লীল ভঙ্গিমায় অভিনয় করানো হলো। আর শেষদিন আমাদের বড় ভাইয়েরা বলেন, কে কে এতোদিনেও কোনো শাস্তি পাস নাই। কয়েকজন হাত তোলে। তাদের দু’-একটা করে চড় দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রিলের সঙ্গে ঝুলে থাকা, একাধিকবার সালাম দেয়া, রাতের বেলা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সেলফি তোলা, ফল পেড়ে আনা ইত্যাদি র‌্যাগ দেয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের প্রথমে রাখা হয় গণরুমে। মীর মশাররফ হোসেন হলের গণরুমে গিয়ে দেখা যায় তোষকের সারি। মাথার উপরে অপ্রতুল ফ্যান। শক্তিহীন এসব ফ্যান যেন ঘুরতে নারাজ। বড় একটি রুমে থাকেন প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থী। নেই হাঁটার জায়গাও। গরমের সঙ্গে তারা ছারপোকার কামড়ে অস্থির। এসব শিক্ষার্থীরা সবসময়ই থাকেন ভীত অবস্থায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৪৯ আবর্তনের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের এখানে গরমে এমন অবস্থা হয় যে, শ্বাস নিতে পারি না। এরপর রাতভর চলে নানা কায়দা-কানুন শেখানো। আমাদের বড় শাস্তিটাইতো হলো ভয় দেখানো। বড় ভাইয়েরা লাঠি নিয়ে পর্যন্ত এগিয়ে আসেন।

এই হলের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বাড়ি থেকে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। করোনার ছুটি শেষে হল খুলে দেয়ার পর ক্যাম্পাসে আসি। সেদিন যানজটে ক্লান্ত হয়ে হলে আসার পরও আমি প্রায় ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমাতে পারিনি। প্রথম যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এলাম তখন বাজে রাত প্রায় ৯টা। এরপর ১১টা থেকে শুরু হয় র‌্যাগিং। আমাকে সেদিন ১২ জন ভাইয়ের কাছে অন্তত ৫০ বার নিজের পরিচয় দিতে হয়েছে। আরেক বন্ধুর সঙ্গে এক পায়ে দাঁড়িয়ে গান গাইতে হয়। ক্লান্তি ও ঘুমের কথা জানানো হলে, বড় ভাইয়েরা চোখে পানি দিয়ে আসতে বলেন। এরপর ফের চলে র‌্যাগিং। সেদিন রাতে একটা চড় খেলেও যে পরিমাণ ভয় দেখানো হয়েছে তা অবর্ণনীয়।

গণরুমে থাকা এসব শিক্ষার্থী সকলেই বলেন, তাদের প্রধান সমস্যাটাই হচ্ছে ভীতি। সবসময় একটা মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে চলতে হয়। থাকতে হয় ভয়ে। আর গণরুমের অপরিচ্ছন্নতা, গরম ইত্যাদিতো আছেই।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, আমাদের সঙ্গে যারা নবীন শিক্ষার্থী যোগ দেন তাদের রীতিমতো ভয়ভীতির পাশাপাশি এক ঘরে করে রাখা হয়। নবীন এক শিক্ষার্থী একবার আমার কাছে বই নিয়েছিল কিছু উপনাস্যের। এরপর ওকে রাতভর বই নিয়ে বিভিন্ন বড় ভাইদের পাঠানো হয়। নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করা হয়। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর কিংবা অনুশাসনের বিপক্ষে আমরা বরাবরই সোচ্চার। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের দাপুটে আমরা কোণঠাসা। আর আমরা সংখ্যায় কম হওয়াতে চাইলেও সর্বোচ্চটা দিয়েও অন্যায় অনেক সময় রুখতে পারি না। তবে আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজের চোখে একটা তথ্য যায় যে, দুর্নীতি হচ্ছে।

হলের র‌্যাগিং বন্ধে পাপেট শো করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাকতাড়ুয়া পাপেট থিয়েটার। এর একজন সদস্য আসাদুজ্জামান আশিক বলেন, ১৫ই মার্চ এই শোতে র‌্যাগিংয়ের শিকার শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা তুলে ধরা হয় পাখিদের মাধ্যমে। এর একটাই উদ্দেশ্য আমরা চাই র‌্যাগিং মুক্ত সুষ্ঠু ক্যাম্পাস।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন ছাত্রলীগের নেতারা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, আগে কি হয়েছে না হয়েছে সেটা আমরা দেখতে চাই না। আমরা নতুন করে হলগুলোর পরিবেশ সাজাতে চাই। এটা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো না এখানে সবাই হলে থাকেন। কারণ আমি বিশ্বাস করি রাজনীতি করবে অল্প ক’জন সমর্থক থাকবে ব্যাপক। আমরা সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করেই সেই সমর্থন আনতে চাই।

 

সম্প্রতি র‌্যাগ ডে’তে ভাইরাল হওয়া দু’টি নৃত্য নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়। এই অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিল উদ্দাম নৃত্য। আর দর্শক সারিতে ছিল মাদকের আসর। ১০ থেকে ১২ই মার্চ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া অনেকেই গাঁজার ধোঁয়ায় থাকতে পারেননি। এমনি প্রকাশ্যে চলেছে মদ্য পান। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া একাধিক অনূজ শিক্ষার্থী বলেন, সেখানে বড় ভাইয়েরা শুধু মাদক সেবন না বিনামূল্যে বিতরণও করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতি ৪২ ব্যাচের অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন মাদকের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, আমরা মাদকের কোনো ব্যবস্থা করিনি।

সরজমিন অবস্থান করে জানা যায়, ক্যাম্পাসে গাঁজা, মদ, ইয়াবা এমনকি হেরোইন বিক্রি হয় দেদারছে। শিক্ষার্থীদের অনেকের ভাষ্য- গাঁজা এতোটাই সহজলভ্য যে, এটাকে মাদক মানতেই নারাজ। হলগুলোতে অভিযোগ রয়েছে এসব মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে প্রশাসনের লোকজনও।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরসহকারী অধ্যাপক আ.স.ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমরা র‌্যাগিং বিরোধী নানা কর্মসূচি পালন করি। নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সচেতন করি। কোনো স্থানে র‌্যাগিং পেলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এছাড়াও র‌্যাগিং মুক্ত রাখতে আমরা তৎপর রয়েছি। আমি বলবো না র‌্যাগিং মুক্ত হয়েছে। তবে আগের থেকে অনেক কম। তিনি আরও বলেন, র‌্যাগিংয়ের পাশাপাশি মাদক নির্মূলেও আমরা সোচ্চার। প্রায়শই মাদকবিরোধী নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের এই অবস্থান চলমান থাকবে।  সূএ: মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com