পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত করা চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে বর্তমান প্রশাসকের পদে থেকে কাজ করতে কোনো বাধা নেই।
একই সঙ্গে এ বিষয়ে নিয়মিত আপিল শুনানির জন্য আগামী ৬ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছেন আপিল আদালত। ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) করা আপিল শুনানি নিয়ে রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম ও ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। তাদের সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার কারিশমা জাহান। আইডিআরএর পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তা ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এসকে) মোরশেদ।
আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, স্থগিতাদেশের মেয়াদ ৬ মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়ে সেদিন শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। এছাড়া হাইকোর্টের রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি যদিও এখনো আমরা হাতে পাইনি। নিয়মিত আপিল আবেদনের জন্য বলেছেন আদালত।
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ওই প্রশাসক নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের বিচারপতি খসরুজ্জামান এবং বিচারপতি মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ওই রায় ঘোষণা করেন।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করা হলে সেটির শুনানি নিয়ে গত ১০ জানুয়ারি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে আদেশ দেন। এরপর ওই আবেদন শুনানি নিয়ে গত ১৬ জানুয়ারি সেটি বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ওইদিনও প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আইডিআরএর সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার মাসিক সম্মানি ধরা হয়েছে চার লাখ টাকা। এ বিষয়ে সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে পাঠানো চিঠিতে আইডিআরএ বলেছে, বিমা আইন ২০১০ এর ৯৬ ধারার (১) উপধারা অনুযায়ী প্রশাসক হিসেবে চূড়ান্তভাবে দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
বিমা আইন ২০১০ এর ধারা ৯৫ (৩) এর আলোকে নতুন পলিসি ইস্যু আগের মতো অব্যাহত রাখা এবং কোম্পানির ব্যবসা ও অন্যান্য কার্যক্রম যথারীতি পরিচালনা করতেও বলা হয় এ সংক্রান্ত নির্দেশনায়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, কোম্পানির প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মো. শাখাওয়াত নবী, (অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব) এবং মো. রফিকুল ইসলামকে (অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব) পরামর্শক (কনসালটেন্ট) হিসেবে শিগগির নিয়োগ দিয়ে কোম্পানির প্রশাসনিক কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
জীবন বিমা তহবিল বাড়িয়ে দেখানো, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদকে বরখাস্ত করে চার মাসের জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেয় বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। সংস্থাটির চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা ঘুস চাওয়ার অভিযোগ আনার কয়েক দিন পর ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সাসপেন্ড করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
আইডিআরএর ওই নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে ডেল্টা লাইফের বরখাস্ত হওয়া পর্ষদ হাইকোর্টে রিট করেছিল। ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে প্রশাসক নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের চার সদস্য ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে প্রশাসক নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণার আবেদন করা হয়েছিল।
জানা গেছে, ডেল্টা লাইফের জীবন বিমা তহবিল রয়েছে চার হাজার কোটি টাকার। সর্বশেষ গত মাসে ডেল্টা লাইফের স্থগিত পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, রাজস্ব ফাঁকি ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তিন হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনে আইডিআরএ।
এদিকে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম, আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন, ডেল্টা লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান (বর্তমানে পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান) মঞ্জুরুর রহমান, তার ছেলে ডেল্টা লাইফের পরিচালক জেয়াদ রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে প্রশাসক তুলে নেবে আইডিআরএ। আর সরকার ও বিএসইসি যৌথভাবে কোম্পানিটির জন্য নতুন একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করবে।
এছাড়া আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার করবে ডেল্টা লাইফ কর্তৃপক্ষ। আর ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোও প্রত্যাহার করবে আইডিআরএ।
বর্তমানে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে আইডিআরএ ও এর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ২১টি মামলা চলমান রয়েছে। আর আইডিআরএর পক্ষ থেকে ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে চারটি। এসব মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৈঠকে।