জেএসডির চমৎকার কাউন্সিল

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : আমাদের স্বাধীনতার গৌরবের মাস ডিসেম্বর। ডিসেম্বরের শ্রেষ্ঠ দিন ১৬ ডিসেম্বর। আর ৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার মতোই স্মরণীয় মর্যাদাপূর্ণ দিন। এদিন মহান ভারত ও ভুটান আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল। বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয় ভুটান। কিন্তু ভারতের মতো বিশাল দেশের স্বীকৃতির কারণে ভুটানের স্বীকৃতি অনেকাংশেই পিছে পড়ে যায়, ঢাকা পড়ে যায়। আজকের এ শুভদিনে ভারত-ভুটানকে অভিনন্দন জানাই। জানি না এবারের ডিসেম্বর কীভাবে যাবে। ৩ ডিসেম্বর ছিল বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ। বিএনপির সবকটি সমাবেশই ভালো হয়েছে। বলতে গেলে সরকার যেভাবে বিএনপির সমাবেশগুলোকে বাধা দিয়েছে তাতে বরং বিএনপির ভালোই হয়েছে। নির্জীব বিএনপি অনেকটাই সজীব হয়েছে। অন্যদিকে দল যত বড় হয় দলাদলি-উপদলীয় কোন্দল তত বেশি হয়। বিএনপিতে যে তেমন কোন্দল ছিল না বা নেই তেমন নয়। বিএনপিতে প্রচ- কোন্দল ছিল এবং আছে। কিন্তু এ কদিনে তার কোনো প্রকাশ ঘটেনি। কোথাও নিজেরা মারামারি, কাটাকাটি, চেয়ার ছোড়াছুড়ি করেনি। বরং সব জায়গায় ১০-২০ মাইল বা তারও বেশি হেঁটে ৩-৪ ঘণ্টার সমাবেশ দু-তিন দিন মাটি কামড়ে পড়ে থেকে প্রতিটি সমাবেশ সফল করেছে। তাই বলছি, বাধা দিয়ে নির্যাতন করে বরং বিএনপিকে সরকার উপকারই করেছে, শক্তিশালী করেছে।

 

৪ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রামের মহাসমাবেশে বিপুল লোক হয়েছে। সভানেত্রীর বক্তৃতাও যথেষ্ট ভালো হয়েছে। কিন্তু কোনো দিন যদি কোনোভাবে প্রশ্ন আসে নির্বাচনী জনসভায় সরকারি অর্থ ব্যয় করে নেত্রী নির্বাচনী নীতিমালা ভঙ্গ করেছেন তখন কী জবাব দেবেন? ভারতের মহীয়সী নারী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচনে সরকারি প্রভাব খাটিয়েছেন- এ অভিযোগে তিনি তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ হারিয়েছিলেন। রাজনারায়ণ নামে একজন অতি নগণ্য সাধারণ মানুষের কাছে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। একজন নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দিরা গান্ধীর জনসভার মঞ্চ তৈরি করতে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেছেন। এই ছোট্ট একটি অভিযোগে এলাহাবাদ হাই কোর্ট শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সংসদ সদস্য পদ বাতিল করেছিলেন। তার জন্য কত কিছু হয়েছে। জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন, ভারতের প্রায় সব নেতাকে বন্দি করেছিলেন। যে কারণে জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে জনতা পার্টি গঠিত হয়েছিল এবং ১৯৭৭-এর নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতা হারায়, জনতা পার্টি সরকার গঠন করে। এমনকি ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচনে হেরে যান। পরে তাঁকে অন্ধ্র প্রদেশের চিকমাংগালুর থেকে উপনির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে আসতে হয়। কংগ্রেসের নরসিমা রাও পদত্যাগ করে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করেন এবং সেই উপনির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচিত হয়ে বিরোধী দলের নেতা হয়েছিলেন। মোরারজি দেশাইয়ের জনতা পার্টির সরকার ইন্দিরা গান্ধীকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবেও স্বীকার করে নেয়নি। নানা কৌশল করে তাঁর বিরোধী দলের নেতৃত্বের পদ অন্যায়ভাবে খারিজ করেছিল। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের এত আগে সরকারি সুবিধা নিয়ে সভা-সমাবেশ করে হাত তুলে ভোট চেয়ে নির্বাচনের সময় কোনো অসুবিধায় পড়েন কি না তা অবশ্যই ভাবতে হবে।

প্রায় চার বছর পর আ স ম আবদুর রবের জেএসডির কাউন্সিল উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনেকের সঙ্গে দেখা। বিশেষ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মাহমুদুর রহমান মান্না, শরীফ নূরুল আম্বিয়া। মোস্তফা মহসীন মন্টুর সঙ্গে আগেও দেখা হয়েছে। তাদের সম্মেলনে, তাদের ডাকা অনেক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে অংশ নিয়েছি। নুরুল হক নূরদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গিয়েছিলাম তাই দেখা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে এর মাঝে আর কখনো দেখা হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর এই তার সঙ্গে প্রথম দেখা। তেমন কথাবার্তা হয়নি। তবে খুব বিনয়ের সঙ্গে হাত ধরে জিজ্ঞাসা করেন, ‘বড় ভাই, কেমন আছেন? আপনি হাসপাতালে ছিলেন যেতে পারিনি।’ আরও অনেক কিছু। সভা চলার একপর্যায়ে যেমন এসেছিলেন, জরুরি আলোচনা আছে বলে মাঝপথেই চলে গিয়েছিলেন। রাজশাহী থেকে অনেক রাত পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে ঢাকায় ফিরে এরকম একটি সম্মেলনে যোগদান করা সত্যিই প্রশংসার। সে প্রশংসা তিনি পেতেই পারেন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জীবনে প্রথম ছাত্রলীগের সম্মেলনে গিয়েছিলাম। সেটা ১৯৬৩ বা ’৬৪ সালের কথা। তারপর পাকিস্তান আমলে অনেকবার অনেক সভা-সমাবেশে গেছি। কিন্তু সেসবের অনেক কিছুই মনে নেই। স্বাধীনতার পর নূরে আলম সিদ্দিকী যেবার ছাত্রলীগের সভাপতি হন সেই সভা বিরোধীরা ভেঙে দিতে পারে এই ভয়ে নূরে আলম সিদ্দিকী সম্মেলনের আগের দিন দুবার আমার বাসায় এসেছিলেন। জননেতা আবদুর রাজ্জাক চার-পাঁচ বার ফোন করেছিলেন। দুবার মোহাম্মদপুরের বাড়িতে এসেছিলেন। সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘কাদের, ওরা বলছে সম্মেলনে হামলা হবে। ছাত্রলীগের সম্মেলনে হামলা হলে মুখ দেখানো যাবে না। তুই একটু দেখ।’ বঙ্গবন্ধুর কথা নেতার কথা ফেলে দেওয়ার কোনো পথ ছিল না। ছুটে গিয়েছিলাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা সবুর খান বীরবিক্রম ও আরও অনেকেই গিয়েছিল। কেউ কোনো গোলমাল করেনি। শান্তিতে স্বস্তিতে ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়েছিল। সে সময় গণতন্ত্র ছিল বলে সরকার নয়, বিরোধী দলের আক্রমণের ভয় করেছে সরকার সমর্থিত ছাত্রলীগ। আর আজকাল বিরোধী দল ভয় করে সরকারি দলকে। আমাদের সময় পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ময়মনসিংহের মোনায়েম খান দুর্দান্ত মানুষ ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার এনএসএফ ছিল। তাদের কাজই ছিল খুন-খারাবি, নিরীহ ছাত্রদের মারধর করা, হল থেকে বের করে দেওয়া। কিন্তু শেষ পর্যায়ে তারা টিকতে পারেনি। সাধারণ ছাত্রদেরই জয় হয়েছে। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে মোনায়েম খানের এনএসএফ কোথায় উড়ে গিয়েছিল তা তারাও বুঝতে পারেনি। যে আইয়ুব খান তার জীবদ্দশায় ক্ষমতা ছাড়বে বলে মনে হচ্ছিল না, ’৬৯-এর ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদের আকস্মিক মৃত্যু সেই আইয়ুব খানকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলা তুলে নিয়ে সবার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়। এরপর আইয়ুবের ডাকা গোলটেবিলে যান। আলোচনা সফল না হওয়ায় ফিরে আসেন। আগরতলা মামলায় মুক্ত হয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সংবর্ধনা সভায় টুঙ্গিপাড়ার শেখ লুৎফর রহমানের ছেলে শেখ মুজিবুর রহমানকে ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনের মহানায়ক তোফায়েল আহমেদ বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। যা আজ বাংলার আপামর জনসাধারণ এবং সারা বিশ্বের কাছে বঙ্গবন্ধু নামে পরিচিত। তাই রাজনীতিতে এ কথা বলার কোনো পথ নেই যে উজান-ভাটি আসবে না। রাজনীতির উজান-ভাটি, রাজনীতির জোয়ার-ভাটা সে এক মারাত্মক ব্যাপার। তাই সময় থাকতে সাবধান হওয়া উচিত। বহুদিন পর অনেক নেতাকে দেখে প্রায় ৪ ঘণ্টা বক্তৃতা শুনে কখনো কখনো কিছুটা কষ্ট, কিছুটা ভালোও লেগেছে। এমনিতেই একটা পুঞ্জীভূত কষ্ট নিয়ে জেএসডির সম্মেলনে গিয়েছিলাম। আগের দিন রাজশাহীতে বিএনপির সভায় অনেক গালাগালির মধ্যে রাজশাহীর এক স্থানীয় নেতার কণ্ঠে শুনেছিলাম, ‘একজন পালিয়ে গেছে, আরেকজন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে।’ কথাটা শুনে ভীষণ মর্মাহত হয়েছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পালিয়ে গেলেন আর মেজর জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করলেন! বক্তা একবারও ভাবলেন না কোথায় যুদ্ধ করলেন। জিয়াউর রহমানও কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টাই ভারতে ছিলেন। যারা নির্বোধ তারা কালুরঘাট বেতারে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে জিয়াউর রহমানের ঘোষণা স্বীকার করতে চান না। কিন্তু জিয়াউর রহমানের ঘোষণা করার বিশেষ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করার অবস্থা বা অবস্থান ছিল না। তার ঘোষণায় কিছু যায় আসে না। নিশ্চয়ই স্বাধীন বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান অনেক বড়। তার মস্তবড় রাজনৈতিক দল আছে। তার দল অনেকদিন ক্ষমতায় থেকেছে। তাই বলে মুক্তিযুদ্ধের সময় তেমন কেউ ছিলেন না। সামরিক বাহিনীর লোক বলে তাকে দরকার ছিল। তিনি সে দরকার পূরণ করেছেন। সেজন্য তার সুনাম হয়েছে। আজ তার এবং তার দলের এত প্রতিপত্তি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করলে, ’৭০-এর নির্বাচিত আওয়ামী লীগকে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে অস্বীকার করলে জিয়াউর রহমানের কোনো অস্তিত্ব থাকে না। তাই রাজশাহীর নতুন নেতাকে কী বোঝাব? এখন প্রায় সবাই ছোটবড় পার্থক্য ভুলে যা নয় তা-ই বলে। কোনো বাছবিচার নেই, মুখে পর্দা নেই। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাড়ি থেকে পালালে বা অন্যত্র চলে গেলে খোদ ঢাকা শহরেই আরও ৫ লাখ লোক পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে নিহত হতো। যতক্ষণ বঙ্গবন্ধুকে খুঁজে না পেত ততক্ষণ হত্যাযজ্ঞ চলতেই থাকত। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি না থেকে কোথাও পালিয়ে থাকলে যুদ্ধের তেজ অনেক কমে যেত। আর যদি আমাদের নেতাদের মতো, সেনাবাহিনীর লোকদের মতো ভারতে আশ্রয় নিতেন তাহলে স্বাধীনতা আরও ৫০ বছর পিছিয়ে যেত। কতভাবে পাকিস্তান বলার চেষ্টা করেছে মুক্তিযুদ্ধ কিছু না, ওটা ভারতের কারসাজি। ভারতের লেলিয়ে দেওয়া লোকজন গোলমাল করছে। এমনই ছিল পাকিস্তানিদের প্রপাগান্ডা। এ প্রপাগান্ডা অনেকেই বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বলেছেন, ‘ব্রিটিশ পার্লামেন্ট যখন বলার চেষ্টা করছিল- বাংলাদেশে যা হচ্ছে সব ভারতীয় কর্মকান্ড, ভারতের কারসাজি; তখন আমি বলেছিলাম, কদিন আগে সীমান্ত থেকে আড়াই শ কিলোমিটার ভিতরে যমুনায় বীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পাকিস্তানিদের দুটি অস্ত্রবোঝাই জাহাজ দখল করা হয়েছে। সে জাহাজ দখলের নেতা কাদের সিদ্দিকী। আমি আর কাদের সিদ্দিকী একই ইউনিয়নের বাসিন্দা। নিশ্চয়ই এটি ভারতের কাজ নয়।’ একপর্যায়ে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ, এমপি, মন্ত্রীরা মেনে নিয়েছিলেন আমাদের নেতা আবু সাঈদ চৌধুরীর কথা। ইদানীং যারা চোখ-মুখ বন্ধ করে বঙ্গবন্ধুকে, জাতির পিতাকে ছোট করে জিয়াউর রহমানকে বড় করতে চান বড় দেখাতে চান আমার মনে হয় তাদের চাইতে বড় নির্বোধ এ বিশ্বে দ্বিতীয় আর কেউ নেই। বঙ্গবন্ধুর বুকের পাটা ছিল বলেই ওরকম কঠিন সময়ে পাকিস্তানিদের উপেক্ষা করতে পেরেছিলেন। বুঝতে পারি না কেমন যেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধটা একেবারেই ছেলেখেলা হতে চলেছে বা অনেকেই ছেলেখেলা বলে ভাবছে। আদতে তেমন ছিল না। মনটা আরও খারাপ ছিল দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা যারা লুটপাট করে তাদের কিছু হয় না, যে কৃষক আমাদের খাওয়ায়ে-পরায়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন তাদের মাজায় দড়ি বেঁধে কারাগারে নেওয়া হয়। পত্রিকায় দেখলাম বসুন্ধরা গ্রুপ ওইসব কৃষকের দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছে। বিষয়টা খুবই প্রশংসার। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান সাধারণ মানুষকে নিয়ে খুবই ভাবেন। এটাওটা করার চেষ্টাও করেন। যে কৃষক দেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যারা দেশের সম্মান বৃদ্ধি করেছে, দিনের পর দিন উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে তাদের নিয়ে এমন টানাহেঁচড়া মোটেই প্রশংসনীয় নয়। যে ব্যাংক করেছে তারা ভালো করেনি, যে কোর্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন সেই কোর্টও ঠিক করেননি; উপরন্তু যে পুলিশ এটা কার্যকর করেছে তারাও ভালো কিছু করেনি।

 

‘খেলা হবে খেলা হবে’ বলে সারা দেশ তোলপাড়। মানুষ শঙ্কিত। খেলা হবে প্রথম বলেছিল নারায়ণগঞ্জে আমার প্রিয় নাসিম ওসমানের ছোট ভাই শামীম ওসমান। তারপর সেটা পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনের সময় খেলা হয়েছে। এখন আবার আওয়ামী লীগের প্রিয় সাধারণ সম্পাদক যেখানে সেখানে ‘খেলা হবে’ বলে বেড়াচ্ছেন। কথাটা ভালো শোনাচ্ছে না, কথাটা রাজনৈতিক নয়। শামীমের কণ্ঠে যতটা মানাত সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কণ্ঠে সেরকম মানায় না। কেমন যেন শঙ্কাবোধ হয়। সবাইকে বিষয়টা চিন্তা করতে বলছি। বহুদিন পর আ স ম আবদুর রব এবং নুরুল হক নূরকে একই মঞ্চে দেখে একটা চমৎকার নজির খুঁজে পেয়েছিলাম। পাকিস্তান আমলে সা’দত কলেজের একসময় ভিপি ছিলেন আমার বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী, বাংলাদেশে আমাদের পরিবারের সব থেকে ছোট আজাদ সিদ্দিকী হয়েছিল করটিয়া সা’দত কলেজের ভিপি। ঠিক তেমনি একটা মারাত্মক মিল দেখলাম জেএসডির কাউন্সিলে আ স ম আবদুর রব ছিলেন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিপি আর ইদানীং সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ভিপি নুরুল হক নূর।

গিয়েছিলাম সবার আগে, কেন যে বক্তৃতায় দাঁড়িয়েছিলাম সবার শেষে। এমনকি সভার সভাপতি আ স ম আবদুর রবেরও পরে। শ্রোতারা সব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। তা ছাড়া হলের বাইরে খাবার দেওয়া হয়েছিল। এখন আর লম্বা বক্তৃতা করতে ভালো লাগে না, করিও না। কথা বলার একপর্যায়ে কেন জানি না বুকের ভিতর থেকে তাগিদ এসেছিল তাই বলেছি, প্রিয় বোন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেকদিন হয়ে গেল প্রকৃত আলেমদের আর জেলে নয়, তাদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিন। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় রিসোর্ট থেকে মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছিল মেয়ে নিয়ে কেলেঙ্কারির কারণে। কেউ বলছে স্ত্রী, কেউ বলছে অন্য কিছু। তা যাই হোক, এসব অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের জামিন হয়। তাহলে কেন মামুনুল হকের হবে না, বিবেচনা করবেন। আশা করি সরকার বিষয়টি ভেবে দেখবে।

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com   সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কোনো সমস্যা হলে ট্রিপল নাইনে জানাতে বললেন আইজিপি

» নোয়াখালীর সেই পুকুরে এবার মিলল ৪০ রুপালি ইলিশ

» রমজানের তৃতীয় জুমায় বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের ঢল

» রাজার আমন্ত্রণে ভুটান সফরে তথ্য প্রতিমন্ত্রী

» কারিনা-কারিশমার রাজনীতিতে নামার গুঞ্জন

» ‘জিয়া মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মাবরণে পাকিস্তানের দোসর ছিলেন’

» কবি মুক্তাদির চৌধুরী তরুণের ইন্তেকাল

» পুলিশের সোর্সকে চাকু মেরে হত্যা মামলার পলাতক দুই আসামি গ্রেফতার

» ব্যবহৃত অলংকারের জাকাত দিতে হবে কি?

» ফেসবুক দীর্ঘদিন লগ আউট না করলে কী হয়?

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

জেএসডির চমৎকার কাউন্সিল

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : আমাদের স্বাধীনতার গৌরবের মাস ডিসেম্বর। ডিসেম্বরের শ্রেষ্ঠ দিন ১৬ ডিসেম্বর। আর ৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার মতোই স্মরণীয় মর্যাদাপূর্ণ দিন। এদিন মহান ভারত ও ভুটান আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল। বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয় ভুটান। কিন্তু ভারতের মতো বিশাল দেশের স্বীকৃতির কারণে ভুটানের স্বীকৃতি অনেকাংশেই পিছে পড়ে যায়, ঢাকা পড়ে যায়। আজকের এ শুভদিনে ভারত-ভুটানকে অভিনন্দন জানাই। জানি না এবারের ডিসেম্বর কীভাবে যাবে। ৩ ডিসেম্বর ছিল বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ। বিএনপির সবকটি সমাবেশই ভালো হয়েছে। বলতে গেলে সরকার যেভাবে বিএনপির সমাবেশগুলোকে বাধা দিয়েছে তাতে বরং বিএনপির ভালোই হয়েছে। নির্জীব বিএনপি অনেকটাই সজীব হয়েছে। অন্যদিকে দল যত বড় হয় দলাদলি-উপদলীয় কোন্দল তত বেশি হয়। বিএনপিতে যে তেমন কোন্দল ছিল না বা নেই তেমন নয়। বিএনপিতে প্রচ- কোন্দল ছিল এবং আছে। কিন্তু এ কদিনে তার কোনো প্রকাশ ঘটেনি। কোথাও নিজেরা মারামারি, কাটাকাটি, চেয়ার ছোড়াছুড়ি করেনি। বরং সব জায়গায় ১০-২০ মাইল বা তারও বেশি হেঁটে ৩-৪ ঘণ্টার সমাবেশ দু-তিন দিন মাটি কামড়ে পড়ে থেকে প্রতিটি সমাবেশ সফল করেছে। তাই বলছি, বাধা দিয়ে নির্যাতন করে বরং বিএনপিকে সরকার উপকারই করেছে, শক্তিশালী করেছে।

 

৪ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রামের মহাসমাবেশে বিপুল লোক হয়েছে। সভানেত্রীর বক্তৃতাও যথেষ্ট ভালো হয়েছে। কিন্তু কোনো দিন যদি কোনোভাবে প্রশ্ন আসে নির্বাচনী জনসভায় সরকারি অর্থ ব্যয় করে নেত্রী নির্বাচনী নীতিমালা ভঙ্গ করেছেন তখন কী জবাব দেবেন? ভারতের মহীয়সী নারী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচনে সরকারি প্রভাব খাটিয়েছেন- এ অভিযোগে তিনি তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ হারিয়েছিলেন। রাজনারায়ণ নামে একজন অতি নগণ্য সাধারণ মানুষের কাছে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। একজন নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দিরা গান্ধীর জনসভার মঞ্চ তৈরি করতে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেছেন। এই ছোট্ট একটি অভিযোগে এলাহাবাদ হাই কোর্ট শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সংসদ সদস্য পদ বাতিল করেছিলেন। তার জন্য কত কিছু হয়েছে। জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন, ভারতের প্রায় সব নেতাকে বন্দি করেছিলেন। যে কারণে জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে জনতা পার্টি গঠিত হয়েছিল এবং ১৯৭৭-এর নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতা হারায়, জনতা পার্টি সরকার গঠন করে। এমনকি ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচনে হেরে যান। পরে তাঁকে অন্ধ্র প্রদেশের চিকমাংগালুর থেকে উপনির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে আসতে হয়। কংগ্রেসের নরসিমা রাও পদত্যাগ করে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করেন এবং সেই উপনির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচিত হয়ে বিরোধী দলের নেতা হয়েছিলেন। মোরারজি দেশাইয়ের জনতা পার্টির সরকার ইন্দিরা গান্ধীকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবেও স্বীকার করে নেয়নি। নানা কৌশল করে তাঁর বিরোধী দলের নেতৃত্বের পদ অন্যায়ভাবে খারিজ করেছিল। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের এত আগে সরকারি সুবিধা নিয়ে সভা-সমাবেশ করে হাত তুলে ভোট চেয়ে নির্বাচনের সময় কোনো অসুবিধায় পড়েন কি না তা অবশ্যই ভাবতে হবে।

প্রায় চার বছর পর আ স ম আবদুর রবের জেএসডির কাউন্সিল উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনেকের সঙ্গে দেখা। বিশেষ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মাহমুদুর রহমান মান্না, শরীফ নূরুল আম্বিয়া। মোস্তফা মহসীন মন্টুর সঙ্গে আগেও দেখা হয়েছে। তাদের সম্মেলনে, তাদের ডাকা অনেক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে অংশ নিয়েছি। নুরুল হক নূরদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গিয়েছিলাম তাই দেখা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে এর মাঝে আর কখনো দেখা হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর এই তার সঙ্গে প্রথম দেখা। তেমন কথাবার্তা হয়নি। তবে খুব বিনয়ের সঙ্গে হাত ধরে জিজ্ঞাসা করেন, ‘বড় ভাই, কেমন আছেন? আপনি হাসপাতালে ছিলেন যেতে পারিনি।’ আরও অনেক কিছু। সভা চলার একপর্যায়ে যেমন এসেছিলেন, জরুরি আলোচনা আছে বলে মাঝপথেই চলে গিয়েছিলেন। রাজশাহী থেকে অনেক রাত পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে ঢাকায় ফিরে এরকম একটি সম্মেলনে যোগদান করা সত্যিই প্রশংসার। সে প্রশংসা তিনি পেতেই পারেন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জীবনে প্রথম ছাত্রলীগের সম্মেলনে গিয়েছিলাম। সেটা ১৯৬৩ বা ’৬৪ সালের কথা। তারপর পাকিস্তান আমলে অনেকবার অনেক সভা-সমাবেশে গেছি। কিন্তু সেসবের অনেক কিছুই মনে নেই। স্বাধীনতার পর নূরে আলম সিদ্দিকী যেবার ছাত্রলীগের সভাপতি হন সেই সভা বিরোধীরা ভেঙে দিতে পারে এই ভয়ে নূরে আলম সিদ্দিকী সম্মেলনের আগের দিন দুবার আমার বাসায় এসেছিলেন। জননেতা আবদুর রাজ্জাক চার-পাঁচ বার ফোন করেছিলেন। দুবার মোহাম্মদপুরের বাড়িতে এসেছিলেন। সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘কাদের, ওরা বলছে সম্মেলনে হামলা হবে। ছাত্রলীগের সম্মেলনে হামলা হলে মুখ দেখানো যাবে না। তুই একটু দেখ।’ বঙ্গবন্ধুর কথা নেতার কথা ফেলে দেওয়ার কোনো পথ ছিল না। ছুটে গিয়েছিলাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা সবুর খান বীরবিক্রম ও আরও অনেকেই গিয়েছিল। কেউ কোনো গোলমাল করেনি। শান্তিতে স্বস্তিতে ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়েছিল। সে সময় গণতন্ত্র ছিল বলে সরকার নয়, বিরোধী দলের আক্রমণের ভয় করেছে সরকার সমর্থিত ছাত্রলীগ। আর আজকাল বিরোধী দল ভয় করে সরকারি দলকে। আমাদের সময় পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ময়মনসিংহের মোনায়েম খান দুর্দান্ত মানুষ ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার এনএসএফ ছিল। তাদের কাজই ছিল খুন-খারাবি, নিরীহ ছাত্রদের মারধর করা, হল থেকে বের করে দেওয়া। কিন্তু শেষ পর্যায়ে তারা টিকতে পারেনি। সাধারণ ছাত্রদেরই জয় হয়েছে। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে মোনায়েম খানের এনএসএফ কোথায় উড়ে গিয়েছিল তা তারাও বুঝতে পারেনি। যে আইয়ুব খান তার জীবদ্দশায় ক্ষমতা ছাড়বে বলে মনে হচ্ছিল না, ’৬৯-এর ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদের আকস্মিক মৃত্যু সেই আইয়ুব খানকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলা তুলে নিয়ে সবার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়। এরপর আইয়ুবের ডাকা গোলটেবিলে যান। আলোচনা সফল না হওয়ায় ফিরে আসেন। আগরতলা মামলায় মুক্ত হয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সংবর্ধনা সভায় টুঙ্গিপাড়ার শেখ লুৎফর রহমানের ছেলে শেখ মুজিবুর রহমানকে ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনের মহানায়ক তোফায়েল আহমেদ বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। যা আজ বাংলার আপামর জনসাধারণ এবং সারা বিশ্বের কাছে বঙ্গবন্ধু নামে পরিচিত। তাই রাজনীতিতে এ কথা বলার কোনো পথ নেই যে উজান-ভাটি আসবে না। রাজনীতির উজান-ভাটি, রাজনীতির জোয়ার-ভাটা সে এক মারাত্মক ব্যাপার। তাই সময় থাকতে সাবধান হওয়া উচিত। বহুদিন পর অনেক নেতাকে দেখে প্রায় ৪ ঘণ্টা বক্তৃতা শুনে কখনো কখনো কিছুটা কষ্ট, কিছুটা ভালোও লেগেছে। এমনিতেই একটা পুঞ্জীভূত কষ্ট নিয়ে জেএসডির সম্মেলনে গিয়েছিলাম। আগের দিন রাজশাহীতে বিএনপির সভায় অনেক গালাগালির মধ্যে রাজশাহীর এক স্থানীয় নেতার কণ্ঠে শুনেছিলাম, ‘একজন পালিয়ে গেছে, আরেকজন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে।’ কথাটা শুনে ভীষণ মর্মাহত হয়েছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পালিয়ে গেলেন আর মেজর জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করলেন! বক্তা একবারও ভাবলেন না কোথায় যুদ্ধ করলেন। জিয়াউর রহমানও কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টাই ভারতে ছিলেন। যারা নির্বোধ তারা কালুরঘাট বেতারে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে জিয়াউর রহমানের ঘোষণা স্বীকার করতে চান না। কিন্তু জিয়াউর রহমানের ঘোষণা করার বিশেষ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করার অবস্থা বা অবস্থান ছিল না। তার ঘোষণায় কিছু যায় আসে না। নিশ্চয়ই স্বাধীন বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান অনেক বড়। তার মস্তবড় রাজনৈতিক দল আছে। তার দল অনেকদিন ক্ষমতায় থেকেছে। তাই বলে মুক্তিযুদ্ধের সময় তেমন কেউ ছিলেন না। সামরিক বাহিনীর লোক বলে তাকে দরকার ছিল। তিনি সে দরকার পূরণ করেছেন। সেজন্য তার সুনাম হয়েছে। আজ তার এবং তার দলের এত প্রতিপত্তি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করলে, ’৭০-এর নির্বাচিত আওয়ামী লীগকে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে অস্বীকার করলে জিয়াউর রহমানের কোনো অস্তিত্ব থাকে না। তাই রাজশাহীর নতুন নেতাকে কী বোঝাব? এখন প্রায় সবাই ছোটবড় পার্থক্য ভুলে যা নয় তা-ই বলে। কোনো বাছবিচার নেই, মুখে পর্দা নেই। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাড়ি থেকে পালালে বা অন্যত্র চলে গেলে খোদ ঢাকা শহরেই আরও ৫ লাখ লোক পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে নিহত হতো। যতক্ষণ বঙ্গবন্ধুকে খুঁজে না পেত ততক্ষণ হত্যাযজ্ঞ চলতেই থাকত। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি না থেকে কোথাও পালিয়ে থাকলে যুদ্ধের তেজ অনেক কমে যেত। আর যদি আমাদের নেতাদের মতো, সেনাবাহিনীর লোকদের মতো ভারতে আশ্রয় নিতেন তাহলে স্বাধীনতা আরও ৫০ বছর পিছিয়ে যেত। কতভাবে পাকিস্তান বলার চেষ্টা করেছে মুক্তিযুদ্ধ কিছু না, ওটা ভারতের কারসাজি। ভারতের লেলিয়ে দেওয়া লোকজন গোলমাল করছে। এমনই ছিল পাকিস্তানিদের প্রপাগান্ডা। এ প্রপাগান্ডা অনেকেই বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বলেছেন, ‘ব্রিটিশ পার্লামেন্ট যখন বলার চেষ্টা করছিল- বাংলাদেশে যা হচ্ছে সব ভারতীয় কর্মকান্ড, ভারতের কারসাজি; তখন আমি বলেছিলাম, কদিন আগে সীমান্ত থেকে আড়াই শ কিলোমিটার ভিতরে যমুনায় বীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পাকিস্তানিদের দুটি অস্ত্রবোঝাই জাহাজ দখল করা হয়েছে। সে জাহাজ দখলের নেতা কাদের সিদ্দিকী। আমি আর কাদের সিদ্দিকী একই ইউনিয়নের বাসিন্দা। নিশ্চয়ই এটি ভারতের কাজ নয়।’ একপর্যায়ে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ, এমপি, মন্ত্রীরা মেনে নিয়েছিলেন আমাদের নেতা আবু সাঈদ চৌধুরীর কথা। ইদানীং যারা চোখ-মুখ বন্ধ করে বঙ্গবন্ধুকে, জাতির পিতাকে ছোট করে জিয়াউর রহমানকে বড় করতে চান বড় দেখাতে চান আমার মনে হয় তাদের চাইতে বড় নির্বোধ এ বিশ্বে দ্বিতীয় আর কেউ নেই। বঙ্গবন্ধুর বুকের পাটা ছিল বলেই ওরকম কঠিন সময়ে পাকিস্তানিদের উপেক্ষা করতে পেরেছিলেন। বুঝতে পারি না কেমন যেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধটা একেবারেই ছেলেখেলা হতে চলেছে বা অনেকেই ছেলেখেলা বলে ভাবছে। আদতে তেমন ছিল না। মনটা আরও খারাপ ছিল দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা যারা লুটপাট করে তাদের কিছু হয় না, যে কৃষক আমাদের খাওয়ায়ে-পরায়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন তাদের মাজায় দড়ি বেঁধে কারাগারে নেওয়া হয়। পত্রিকায় দেখলাম বসুন্ধরা গ্রুপ ওইসব কৃষকের দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছে। বিষয়টা খুবই প্রশংসার। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান সাধারণ মানুষকে নিয়ে খুবই ভাবেন। এটাওটা করার চেষ্টাও করেন। যে কৃষক দেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যারা দেশের সম্মান বৃদ্ধি করেছে, দিনের পর দিন উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে তাদের নিয়ে এমন টানাহেঁচড়া মোটেই প্রশংসনীয় নয়। যে ব্যাংক করেছে তারা ভালো করেনি, যে কোর্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন সেই কোর্টও ঠিক করেননি; উপরন্তু যে পুলিশ এটা কার্যকর করেছে তারাও ভালো কিছু করেনি।

 

‘খেলা হবে খেলা হবে’ বলে সারা দেশ তোলপাড়। মানুষ শঙ্কিত। খেলা হবে প্রথম বলেছিল নারায়ণগঞ্জে আমার প্রিয় নাসিম ওসমানের ছোট ভাই শামীম ওসমান। তারপর সেটা পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনের সময় খেলা হয়েছে। এখন আবার আওয়ামী লীগের প্রিয় সাধারণ সম্পাদক যেখানে সেখানে ‘খেলা হবে’ বলে বেড়াচ্ছেন। কথাটা ভালো শোনাচ্ছে না, কথাটা রাজনৈতিক নয়। শামীমের কণ্ঠে যতটা মানাত সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কণ্ঠে সেরকম মানায় না। কেমন যেন শঙ্কাবোধ হয়। সবাইকে বিষয়টা চিন্তা করতে বলছি। বহুদিন পর আ স ম আবদুর রব এবং নুরুল হক নূরকে একই মঞ্চে দেখে একটা চমৎকার নজির খুঁজে পেয়েছিলাম। পাকিস্তান আমলে সা’দত কলেজের একসময় ভিপি ছিলেন আমার বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী, বাংলাদেশে আমাদের পরিবারের সব থেকে ছোট আজাদ সিদ্দিকী হয়েছিল করটিয়া সা’দত কলেজের ভিপি। ঠিক তেমনি একটা মারাত্মক মিল দেখলাম জেএসডির কাউন্সিলে আ স ম আবদুর রব ছিলেন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিপি আর ইদানীং সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ভিপি নুরুল হক নূর।

গিয়েছিলাম সবার আগে, কেন যে বক্তৃতায় দাঁড়িয়েছিলাম সবার শেষে। এমনকি সভার সভাপতি আ স ম আবদুর রবেরও পরে। শ্রোতারা সব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। তা ছাড়া হলের বাইরে খাবার দেওয়া হয়েছিল। এখন আর লম্বা বক্তৃতা করতে ভালো লাগে না, করিও না। কথা বলার একপর্যায়ে কেন জানি না বুকের ভিতর থেকে তাগিদ এসেছিল তাই বলেছি, প্রিয় বোন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেকদিন হয়ে গেল প্রকৃত আলেমদের আর জেলে নয়, তাদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিন। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় রিসোর্ট থেকে মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছিল মেয়ে নিয়ে কেলেঙ্কারির কারণে। কেউ বলছে স্ত্রী, কেউ বলছে অন্য কিছু। তা যাই হোক, এসব অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের জামিন হয়। তাহলে কেন মামুনুল হকের হবে না, বিবেচনা করবেন। আশা করি সরকার বিষয়টি ভেবে দেখবে।

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com   সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com