জুলাইয়ে পদ্মার বুকে চলবে ট্রেন

যানবাহনের পাশাপাশি এবার পদ্মা সেতুতে চলবে স্বপ্নের ট্রেন। আগামী জুলাইয়ে প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে চলবে রংবেরঙের ট্রেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাখো যাত্রী ট্রেনে বসে সুর তুলবে ‘ঝিক-ঝিক-ঝিক-ঝিক চলে রেলগাড়ি, এতে চড়ে আমি এবার পৌঁছে যাব বাড়ি’। প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার ট্রেন চালু হবে। এরপর আগামী বছর ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হবে। আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে দিন-রাত কাজ করছেন হাজারো শ্রমিক। গতকাল পর্যন্ত প্রকল্পকাজের সার্বিক অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ, ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ। যদিও রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আগামী জুনেই পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রেল চালু হবে।

 

তবে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. আফজাল হোসেন  বলেন, ‘আগামী জুনেই রেললাইন বসানোর কাজ শেষে একটা ট্রায়াল রান করব। এরপর সরকারের কাছে আরও এক মাস সময় চাইব। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচলের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে জুলাইয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলা শুরু হবে। তবে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে কবে নাগাদ ট্রেন চলতে শুরু করবে তা চূড়ান্ত করবে সরকারের শীর্ষ মহল।

 

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু ও এর দুই প্রান্তে রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালে। প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে। শুরুতে যানবাহনের সঙ্গে একই দিন রেল চালুর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়। পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করার দায়িত্ব সেতু বিভাগের হলেও ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করার দায়িত্ব রেলপথ মন্ত্রণালয়ের। ফলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন বসানো এবং স্টেশন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে আলাদা প্রকল্প নেয় রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। জিটুজি (সরকারি পর্যায়ে) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথের কাজ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগ ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া। দ্বিতীয় ভাগ মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা। শেষ ভাগে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশ পড়েছে। ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর ও রাজবাড়ীর রেলসংযোগ আগে থেকেই আছে। ফলে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথের কাজ শেষ হলে পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে বিকল্প আরেকটি পথ চালু হয়ে যাবে। এখন ঢাকা থেকে রেলের পশ্চিমাঞ্চলে ট্রেন বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যায়। পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চালু হলে ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব ২১২ কিলোমিটার কমে যাবে। 

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতুর ওপর রেললাইন নির্মাণে প্রকল্পে মূল নির্মাণকাজের ৮৫ শতাংশ অর্থ দিচ্ছে চীন। অর্থ পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তার পর ২০১৬ সালেই চায়না রেলওয়ে গ্রুপকে (সিআরইসি) নিয়োগ দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঋণচুক্তি হয় ২০১৮ সালে। ফলে ঠিকাদার দুই বছর কোনো কাজ করেনি। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০২২ সালে। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। সময় বেড়ে হয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে বাড়তি আরও ১৫২ একর জমি লাগবে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া পর্যন্ত মিশ্রগেজ লাইন সম্প্রসারণ, কমলাপুর টিটিপাড়ায় ও নড়াইলে পাতালপথ নির্মাণ এবং অন্যান্য স্টেশন অবকাঠামোর কাজ বেড়েছে। এর জন্য আরও ১ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা বৃদ্ধি হবে। এতে ব্যয় দাঁড়াবে ৪০ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা।

 

এদিকে মুন্সীগঞ্জ থেকে আমাদের প্রতিনিধি লাবলু মোল্লা জানান, জুনের আগেই রেললাইন চালু করার লক্ষ্যে পুরোদমে এগিয়ে চলেছে রেললাইনের কাজ। পদ্মা সেতুতে বসেছে পাথরবিহীন রেললাইন আর দুই প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া রেললাইনের ফিনিশিং। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প প্রকৌশলী সালমান শাহ্  বলেন, পদ্মা সেতুর রেলপথ চলাচলের জন্য ১০০ ব্রডগেজ কাজের চালান দেশে আসতে শুরু করেছে। ঢাকা-যশোর ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ লেভেল ক্রসিংবিহীন রেলপথ নির্মাণেও চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ইতোমধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের ২৯ কিলোমিটার পাথরসহ রেললাইন নির্মাণ সম্পন্ন করে সফলভাবে পরীক্ষামূলক ট্রাক কার চালানো হয়েছে। ১৩ কিলোমিটার পাথরবিহীন রেললাইনের বাকি মাত্র ৬ কিলোমিটার। ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস ও ১৩টি রেলসেতুর কাজ শতভাগ সম্পন্ন। মাওয়া রেলস্টেশন শেষ পর্যায়ে। সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৯০ ভাগ। ভাঙ্গা পুরনো রেলস্টেশনে আধুনিকায়নের অগ্রগতি ৬০ ভাগ। ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার অংশে কাজের অগ্রগতি প্রায় ৫০ ভাগ।

 

মাদারীপুর থেকে বেলাল রিজভী জানান, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে এখন আর স্বপ্ন নয়। বাস্তবে রূপ নিয়েছে। প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে ৭৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজা পর্যন্ত রেলপথ ইতোমধ্যে নির্মাণ শেষ হয়েছে। ট্রেনে চড়ে রাজধানীতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে মাদারীপুরের মানুষ। ২০২২ সালের ১ নভেম্বর ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রাক কার চালানো হয়েছে।

 

শরীয়তপুর থেকে রোকনুজ্জামান পারভেজ জানান, পদ্মা সেতুর দেড় কিলোমিটার রেলপথ রেলের ট্রাক কারে জাজিরা প্রান্তর ৪২ নম্বর খুঁটি থেকে ৩৫ নম্বর পিলার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ সম্পন্ন করেছে সেতু বিভাগ। ভাঙ্গা থেকে জাজিরার পদ্মা সেতুর ৩৫ নম্বর খুঁটি পর্যন্ত পরীক্ষামূলক রেল চলাচল করছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৭৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আর ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের কাজ শেষ হয়েছে ৮৮ শতাংশ। পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী আর এম রিয়াজ বলেন, ‘সেতুর উভয় প্রান্ত থেকেই কাজ শুরু করা হয়। কাজের যে গতি তাতে মার্চ-এপ্রিলে সেতুর অংশের কাজ সম্পন্ন করা যাবে। আমাদের স্টেশনগুলো প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি জুনেই সেতু দিয়ে ট্রেন চলবে।’   সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কক্সবাজার-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

» নির্মাণাধীন ভবনে লার্ভা পেলে নির্মাণ কাজ বন্ধ : তাপস

» বাংলাদেশ সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করল জিম্বাবুয়ে

» চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ফের সড়ক অবরোধ

» ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় ভারত

» থাইল্যান্ডে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

» ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃত্যু

» রাবির ভর্তির বিভাগ পছন্দক্রম ফরম পূরণের তারিখ ঘোষণা

» শুভ জন্মদিন ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’

» মন্ত্রী-এমপির স্বজন যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেনি, সময়মতো ব্যবস্থা: কাদের

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

জুলাইয়ে পদ্মার বুকে চলবে ট্রেন

যানবাহনের পাশাপাশি এবার পদ্মা সেতুতে চলবে স্বপ্নের ট্রেন। আগামী জুলাইয়ে প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে চলবে রংবেরঙের ট্রেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাখো যাত্রী ট্রেনে বসে সুর তুলবে ‘ঝিক-ঝিক-ঝিক-ঝিক চলে রেলগাড়ি, এতে চড়ে আমি এবার পৌঁছে যাব বাড়ি’। প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার ট্রেন চালু হবে। এরপর আগামী বছর ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হবে। আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে দিন-রাত কাজ করছেন হাজারো শ্রমিক। গতকাল পর্যন্ত প্রকল্পকাজের সার্বিক অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ, ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ। যদিও রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আগামী জুনেই পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রেল চালু হবে।

 

তবে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. আফজাল হোসেন  বলেন, ‘আগামী জুনেই রেললাইন বসানোর কাজ শেষে একটা ট্রায়াল রান করব। এরপর সরকারের কাছে আরও এক মাস সময় চাইব। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচলের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে জুলাইয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলা শুরু হবে। তবে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে কবে নাগাদ ট্রেন চলতে শুরু করবে তা চূড়ান্ত করবে সরকারের শীর্ষ মহল।

 

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু ও এর দুই প্রান্তে রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালে। প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে। শুরুতে যানবাহনের সঙ্গে একই দিন রেল চালুর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়। পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করার দায়িত্ব সেতু বিভাগের হলেও ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করার দায়িত্ব রেলপথ মন্ত্রণালয়ের। ফলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন বসানো এবং স্টেশন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে আলাদা প্রকল্প নেয় রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। জিটুজি (সরকারি পর্যায়ে) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথের কাজ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগ ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া। দ্বিতীয় ভাগ মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা। শেষ ভাগে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশ পড়েছে। ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর ও রাজবাড়ীর রেলসংযোগ আগে থেকেই আছে। ফলে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথের কাজ শেষ হলে পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে বিকল্প আরেকটি পথ চালু হয়ে যাবে। এখন ঢাকা থেকে রেলের পশ্চিমাঞ্চলে ট্রেন বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যায়। পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চালু হলে ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব ২১২ কিলোমিটার কমে যাবে। 

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতুর ওপর রেললাইন নির্মাণে প্রকল্পে মূল নির্মাণকাজের ৮৫ শতাংশ অর্থ দিচ্ছে চীন। অর্থ পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তার পর ২০১৬ সালেই চায়না রেলওয়ে গ্রুপকে (সিআরইসি) নিয়োগ দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঋণচুক্তি হয় ২০১৮ সালে। ফলে ঠিকাদার দুই বছর কোনো কাজ করেনি। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০২২ সালে। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। সময় বেড়ে হয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে বাড়তি আরও ১৫২ একর জমি লাগবে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া পর্যন্ত মিশ্রগেজ লাইন সম্প্রসারণ, কমলাপুর টিটিপাড়ায় ও নড়াইলে পাতালপথ নির্মাণ এবং অন্যান্য স্টেশন অবকাঠামোর কাজ বেড়েছে। এর জন্য আরও ১ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা বৃদ্ধি হবে। এতে ব্যয় দাঁড়াবে ৪০ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা।

 

এদিকে মুন্সীগঞ্জ থেকে আমাদের প্রতিনিধি লাবলু মোল্লা জানান, জুনের আগেই রেললাইন চালু করার লক্ষ্যে পুরোদমে এগিয়ে চলেছে রেললাইনের কাজ। পদ্মা সেতুতে বসেছে পাথরবিহীন রেললাইন আর দুই প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া রেললাইনের ফিনিশিং। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প প্রকৌশলী সালমান শাহ্  বলেন, পদ্মা সেতুর রেলপথ চলাচলের জন্য ১০০ ব্রডগেজ কাজের চালান দেশে আসতে শুরু করেছে। ঢাকা-যশোর ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ লেভেল ক্রসিংবিহীন রেলপথ নির্মাণেও চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ইতোমধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের ২৯ কিলোমিটার পাথরসহ রেললাইন নির্মাণ সম্পন্ন করে সফলভাবে পরীক্ষামূলক ট্রাক কার চালানো হয়েছে। ১৩ কিলোমিটার পাথরবিহীন রেললাইনের বাকি মাত্র ৬ কিলোমিটার। ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস ও ১৩টি রেলসেতুর কাজ শতভাগ সম্পন্ন। মাওয়া রেলস্টেশন শেষ পর্যায়ে। সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৯০ ভাগ। ভাঙ্গা পুরনো রেলস্টেশনে আধুনিকায়নের অগ্রগতি ৬০ ভাগ। ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার অংশে কাজের অগ্রগতি প্রায় ৫০ ভাগ।

 

মাদারীপুর থেকে বেলাল রিজভী জানান, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে এখন আর স্বপ্ন নয়। বাস্তবে রূপ নিয়েছে। প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে ৭৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজা পর্যন্ত রেলপথ ইতোমধ্যে নির্মাণ শেষ হয়েছে। ট্রেনে চড়ে রাজধানীতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে মাদারীপুরের মানুষ। ২০২২ সালের ১ নভেম্বর ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রাক কার চালানো হয়েছে।

 

শরীয়তপুর থেকে রোকনুজ্জামান পারভেজ জানান, পদ্মা সেতুর দেড় কিলোমিটার রেলপথ রেলের ট্রাক কারে জাজিরা প্রান্তর ৪২ নম্বর খুঁটি থেকে ৩৫ নম্বর পিলার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ সম্পন্ন করেছে সেতু বিভাগ। ভাঙ্গা থেকে জাজিরার পদ্মা সেতুর ৩৫ নম্বর খুঁটি পর্যন্ত পরীক্ষামূলক রেল চলাচল করছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৭৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আর ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের কাজ শেষ হয়েছে ৮৮ শতাংশ। পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী আর এম রিয়াজ বলেন, ‘সেতুর উভয় প্রান্ত থেকেই কাজ শুরু করা হয়। কাজের যে গতি তাতে মার্চ-এপ্রিলে সেতুর অংশের কাজ সম্পন্ন করা যাবে। আমাদের স্টেশনগুলো প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি জুনেই সেতু দিয়ে ট্রেন চলবে।’   সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com