জলাবদ্ধতায় কৃষকের সর্বনাশ

যত্রতত্র পুকুর খনন, খাল-নদী ও ক্যানেল বন্ধ করে অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণ, সেতু-কালভার্টের মুখ ভরাট করায় সিরাজগঞ্জে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদি হয়ে পড়েছে। এতে বছরে ২০-২৫ হাজার মেট্রিক টন ধান, ১২-১৫ হাজার মেট্রিক টন সরিষাসহ হাজার হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাজার হাজার কৃষক।

 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সিরাজগঞ্জের ৯ উপজেলায় ৩ হাজার ৭৩১ একর জমি জলাবদ্ধ হয়ে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৭৫ একর রায়গঞ্জ উপজেলায়। এছাড়া তাড়াশে ৮৬৫, বেলকুচিতে ৬৬৭, সদরে ৪৯২, কামারখন্দে ২৭১, শাহজাদপুরে ২২২, উল্লাপাড়ায় ৮৯ ও কাজিপুরে ৫০ একর জমিতে রয়েছে জলাবদ্ধতা। তবে বেসরকারি হিসাবে জেলায় জলাবদ্ধ জমি ৫ হাজার হেক্টরের বেশি। ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় অবাধে পুকুর খনন, খাল-ক্যানেল বন্ধ করে রাস্তা ও স্থাপনা নির্মাণের ফলে প্রতি বছরই জলাবদ্ধতা বাড়ছে। তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাধবপুর, মথুরাপুর, বিদি মাগুড়া ও শ্রীকৃষ্ণপুরের চাষিরা জানান, তাদের এলাকায় প্রায় ১ হাজার বিঘা জমি পানির নিচে। বর্ষা পেরিয়ে শীত এলেও এসব জমিতে এখনো হাঁটু পানি। পুরো মাঠ কচুরিপানায় ভরে গেছে। জমির অধিকাংশই ৬-৭ মাস পানির নিচে থাকে। ফলে বছরের দুটি আবাদ থেকে বঞ্চিত হন কৃষক। আবার কোনো জমি জলাবদ্ধ হয়ে সারা বছরই পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। একই অবস্থা মাধাইনগরের সরাপপুর ও ঝুরঝুরি এলাকায়ও। এখানে সারা বছর জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ হয় না বললেই চলে। তাড়াশের শোলাপাড়া  গ্রামের কৃষক দুলাল হোসেনসহ অনেকে জানান, জলাবদ্ধতার কারণে তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন। তাড়াশ সদর এলাকার কৃষক রাজ্জাক, গৌতম কুমার রিপন ও তমছের আলী জানান, অপরিকল্পিত পুকুর খননবন্ধসহ ক্যানেলের মুখ খুলে দেওয়ার জন্য কৃষি অফিসে বারবার বললেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। জমিগুলো আবাদযোগ্য করার জন্য অবৈধ পুকুর খনন বন্ধসহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের কারণে কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকদের পুকুর খননে নিরুসাৎসাহিত করার পাশাপাশি জলাবদ্ধতার বিষয়টি জেলা সমন্বয় সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে জমি চাষযোগ্য করে তোলা হবে। যাতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না থাকে। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কোনো সমস্যা হলে ট্রিপল নাইনে জানাতে বললেন আইজিপি

» নোয়াখালীর সেই পুকুরে এবার মিলল ৪০ রুপালি ইলিশ

» রমজানের তৃতীয় জুমায় বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের ঢল

» রাজার আমন্ত্রণে ভুটান সফরে তথ্য প্রতিমন্ত্রী

» কারিনা-কারিশমার রাজনীতিতে নামার গুঞ্জন

» ‘জিয়া মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মাবরণে পাকিস্তানের দোসর ছিলেন’

» কবি মুক্তাদির চৌধুরী তরুণের ইন্তেকাল

» পুলিশের সোর্সকে চাকু মেরে হত্যা মামলার পলাতক দুই আসামি গ্রেফতার

» ব্যবহৃত অলংকারের জাকাত দিতে হবে কি?

» ফেসবুক দীর্ঘদিন লগ আউট না করলে কী হয়?

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

জলাবদ্ধতায় কৃষকের সর্বনাশ

যত্রতত্র পুকুর খনন, খাল-নদী ও ক্যানেল বন্ধ করে অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণ, সেতু-কালভার্টের মুখ ভরাট করায় সিরাজগঞ্জে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদি হয়ে পড়েছে। এতে বছরে ২০-২৫ হাজার মেট্রিক টন ধান, ১২-১৫ হাজার মেট্রিক টন সরিষাসহ হাজার হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাজার হাজার কৃষক।

 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সিরাজগঞ্জের ৯ উপজেলায় ৩ হাজার ৭৩১ একর জমি জলাবদ্ধ হয়ে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৭৫ একর রায়গঞ্জ উপজেলায়। এছাড়া তাড়াশে ৮৬৫, বেলকুচিতে ৬৬৭, সদরে ৪৯২, কামারখন্দে ২৭১, শাহজাদপুরে ২২২, উল্লাপাড়ায় ৮৯ ও কাজিপুরে ৫০ একর জমিতে রয়েছে জলাবদ্ধতা। তবে বেসরকারি হিসাবে জেলায় জলাবদ্ধ জমি ৫ হাজার হেক্টরের বেশি। ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় অবাধে পুকুর খনন, খাল-ক্যানেল বন্ধ করে রাস্তা ও স্থাপনা নির্মাণের ফলে প্রতি বছরই জলাবদ্ধতা বাড়ছে। তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাধবপুর, মথুরাপুর, বিদি মাগুড়া ও শ্রীকৃষ্ণপুরের চাষিরা জানান, তাদের এলাকায় প্রায় ১ হাজার বিঘা জমি পানির নিচে। বর্ষা পেরিয়ে শীত এলেও এসব জমিতে এখনো হাঁটু পানি। পুরো মাঠ কচুরিপানায় ভরে গেছে। জমির অধিকাংশই ৬-৭ মাস পানির নিচে থাকে। ফলে বছরের দুটি আবাদ থেকে বঞ্চিত হন কৃষক। আবার কোনো জমি জলাবদ্ধ হয়ে সারা বছরই পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। একই অবস্থা মাধাইনগরের সরাপপুর ও ঝুরঝুরি এলাকায়ও। এখানে সারা বছর জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ হয় না বললেই চলে। তাড়াশের শোলাপাড়া  গ্রামের কৃষক দুলাল হোসেনসহ অনেকে জানান, জলাবদ্ধতার কারণে তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন। তাড়াশ সদর এলাকার কৃষক রাজ্জাক, গৌতম কুমার রিপন ও তমছের আলী জানান, অপরিকল্পিত পুকুর খননবন্ধসহ ক্যানেলের মুখ খুলে দেওয়ার জন্য কৃষি অফিসে বারবার বললেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। জমিগুলো আবাদযোগ্য করার জন্য অবৈধ পুকুর খনন বন্ধসহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের কারণে কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকদের পুকুর খননে নিরুসাৎসাহিত করার পাশাপাশি জলাবদ্ধতার বিষয়টি জেলা সমন্বয় সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে জমি চাষযোগ্য করে তোলা হবে। যাতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না থাকে। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com