চাঁদাবাজি দখলবাজি ৩০ খাতে

রাজধানীর সর্বত্রই চলছে চাঁদাবাজি আর দখলবাজির সীমাহীন তান্ডব। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে যে যেভাবে পারছে রাতারাতি কামিয়ে নিচ্ছে বেশুমার অর্থবিত্ত। ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজির মাধ্যমে একশ্রেণির দুর্বৃত্ত কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও দখলবাজিতে তারা মুহূর্তেই বাড়ি, গাড়ি, সহায়-সম্পদের মালিক বনে যাচ্ছেন। বেপরোয়া প্রভাব খাটিয়ে, নানা ছলচাতুরী আর দুর্বৃত্তপনার মাধ্যমে যে কারোর বাড়ি, গাড়ি, জায়গাজমি জবরদখল করে রাতারাতি বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়ে যাচ্ছেন তারা।

 

ক্ষমতাসীন দল বা অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে দেশের বেশির ভাগ স্থানেই সাংগঠনিক তৎপরতার কোনো বালাই নেই, যে কোনো মূল্যে অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকছেন নেতারা। টাকা কামানোর ধান্ধা থেকে দলীয় সংঘাত-সংঘর্ষেরও সূত্রপাত ঘটছে। ফুটপাথে দোকান বসানো, হাট-ঘাট, বালুমহাল, ট্রাক-বাস স্ট্যান্ড থেকে রিকশাস্ট্যান্ড ঠিকাদারি জবরদখলে খুব বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তারা। সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হয় ইজিবাইক থেকে। নেতাদের অনেকেই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুনখারাবি, মাদক ব্যবসাসহ সব ধরনের অপরাধ-অপকর্মেও জড়িয়ে পড়েছেন। হুমকি-ধমকি দিয়ে তদবিরবাজি, ব্যবসা-বাণিজ্য ছিনিয়ে নেওয়া, বাসাবাড়ি, মূল্যবান জায়গাজমি জবরদখলেও সিদ্ধহস্ত তারা। কোথাও দলের পদপদবি পেয়েই অপরাধমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত হচ্ছে, আবার কোথাও কোথাও চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, পেশাদার অপরাধীরা নানা কায়দায় ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী কোনো সংগঠনে নাম লিখিয়ে নিজেদের নিরাপদ করছে। অপরাধী চক্রটি প্রভাব বলয় সৃষ্টিসহ কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদপদবিও কবজা করে নিচ্ছে। ফলে সাংগঠনিকভাবে দক্ষ, ত্যাগী নেতা-কর্মীরা সর্বত্রই রয়েছেন কোণঠাসা অবস্থায়। অপরাধী নেতাদের একচ্ছত্র দাপটের সামনে প্রকৃত নেতা-কর্মীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। জানা গেছে, দেশের সর্বত্র হাট-ঘাটের ইজারাদারির পাশাপাশি ৩ শতাধিক পয়েন্টে অবৈধ বালুমহাল রয়েছে দলীয় নেতাদের দখলে। সামান্য ফুটপাথ দোকানিও যুবলীগ, শ্রমিক লীগ কিংবা স্বেচ্ছাসেবক লীগে নাম লিখিয়ে বড় বড় বালুমহাল দখল করে নিয়েছেন। প্রতিদিন তাদের আয়ের পরিমাণ ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠছে। বালুমহাল দখলের বাণিজ্য চলছে রাজধানীসহ জেলায় জেলায়। যুবলীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে মাত্র পাঁচ-সাত বছরে রাজধানীর উত্তরায় দুই ডজন ভবঘুরে যুবক এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। ফুটপাথ বরাদ্দ, জায়গাজমি জবরদখল, নিষিদ্ধ অটোরিকশাসহ পরিবহনে চাঁদাবাজি, অবৈধ কোচ টার্মিনাল স্থাপনসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড পুঁজি করে তারা রাতারাতি শত কোটিপতি হয়ে উঠেছেন। অতিসম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা রাজধানীর মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রণয়নকালে যুবলীগের ৭ শতাধিক নেতা-কর্মীকে সরাসরি মাদক বাণিজ্যে সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে। থানা ও মহানগরী পর্যায়ের অনেক নেতা মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার দিচ্ছেন বলেও ওই তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

৩০ খাতের চাঁদায় ধনাঢ্য অনেকেই : ঢাকা মহানগরীসহ দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়েও একশ্রেণির নেতা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, লুটপাটসহ অপরাধ-অপকর্মের অপ্রতিরোধ্য গডফাদার হয়ে উঠেছেন। তারা এলজিইডি, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের টেন্ডারবাজি, মাদক বাণিজ্য পরিচালনা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান, ছিনতাইকারী-ডাকাত গ্রুপগুলোকে শেল্টার, জায়গাজমি দখল-বেদখল, গার্মেন্টসহ কলকারখানায় চাঁদাবাজি, অস্ত্র ভাড়া দেওয়া, ভাড়ায় খুন, পাওনা টাকা আদায়সহ নানা বিরোধ মেটানোর মতো অন্তত ৩০টি খাতে চাঁদাবাজি চালায়। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরে জমিসংক্রান্ত ঝামেলাই সবচেয়ে বেশি। এসব ঝক্কি মিটিয়ে দেওয়ার নামে বা একজনের হয়ে তা দখল করে দেওয়ার ঘটনায় এককালীন সবচেয়ে বেশি টাকা আদায় করেন নেতারা। গুলশানে জমির মালিকের সঙ্গে ডেভেলপার কোম্পানির বিরোধ মিটিয়ে দেওয়ার এক ঘটনাতেই যুবলীগের বিতর্কিত এক নেতা ৭ কোটি টাকা চাঁদা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে শোনা যায়।

 

রাজধানীতে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে গেলেই সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুরান ঢাকার ডেভেলপার কোম্পানিকে জমি দিয়েছেন এমন একজন বলেন, এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর লোকজন ম্যানেজ করেই এখানে ডেভেলপাররা বাড়ি নির্মাণ করছে। কদমতলীর এক ডেভেলপার কোম্পানির মালিক জানান, সরাসরি চাঁদা না চেয়ে প্রভাবশালী চিহ্নিত একটি চক্র তার কেনা জমি নিয়ে অভিযোগ তুলেছে। ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি কাগজপত্র যাচাই করে জমির মালিকের সঙ্গে চুক্তিপত্র করে কাজ শুরু করেছি। হঠাৎ তারা এসে জমির মালিকানা দাবি করে বসেছে। এখন বাধ্য হয়ে মোটা চাঁদা দিয়ে হলেও ওদের সরাতে হবে।’ এ ছাড়া সরকারি জায়গা জবরদখল, বিরোধপূর্ণ জায়গার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ, ভেজাল কাগজপত্রধারী মালিককে নামকাওয়াস্তে টাকাপয়সা দিয়ে বাড়িঘর দখল করে নেওয়ার মতো ঘটনায় রাতারাতি ধনাঢ্য হয়ে উঠছেন তথাকথিত নেতারা। তারা দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রভাব ব্যবহার করেন নিজেরা বিত্তবান হওয়ার জন্য।

 

সর্বত্রই চলছে চাঁদাবাজি : ধনাঢ্য হওয়ার প্রতিযোগিতায় সর্বত্রই চলছে চাঁদাবাজি। রীতিমতো চাঁদাবাজি ধান্দার কাছে জীবনযাত্রা বাঁধা পড়ে আছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই চলছে চাঁদাবাজির ধকল। ব্যবসা-বাণিজ্য নিশ্চিত রাখতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টেকাতে, সর্বোপরি প্রাণ বাঁচাতেও কাউকে না কাউকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের কবল থেকে রক্ষা পেতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য পেতেও দিতে হয় আরেক ধরনের চাঁদা। চাঁদাবাজি থামছে না কিছুতেই। রাজধানীর ফুটপাথ থেকে শুরু করে নির্মাণাধীন বহুতল ভবন পর্যন্ত, তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায়েও প্রভাব বিস্তার করে চলেছে চাঁদা। পরিবহন, ডিশ, ইন্টারনেট প্রোভাইডার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি-কোচিং বাণিজ্যসহ অনিয়ম-দুর্নীতি টিকিয়ে রাখতে ম্যানেজিং কমিটিকেও এখন নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। ভুক্তভোগীদের মতে চাঁদাবাজির ধরনেও নানা আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে, পাল্টে গেছে চাঁদার পরিমাণ ও স্টাইল। আগে কেবল শীর্ষ সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি করত, এখন শীর্ষ সন্ত্রাসীর সহযোগীদের সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক প্রভাবশালী গ্রুপ। তারাই জীবনযাত্রার প্রতি ধাপে চাঁদা আরোপ করে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» হাওরে কৃষকদের বোরো ধানের উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী

» বাসচাপায় সিএনজি যাত্রী নিহত

» ‌‌‘বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা’

» রাজধানীর শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে

» বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা রাজনৈতিক নয়: প্রধানমন্ত্রী

» রাজধানীর শিশু হাসপাতালের ভবনে আগুন

» শনিবার ২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

» মাদক বিক্রি ও সেবন করার অপরাধে ১০ জন গ্রেফতার

» ‘জীবনে অনেক ভুল করেছি’—হঠাৎ কী হলো পরিণীতির?

» ‘মুস্তাফিজকে কেন পুরো আইপিএল খেলতে দিচ্ছে না বাংলাদেশ’

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

চাঁদাবাজি দখলবাজি ৩০ খাতে

রাজধানীর সর্বত্রই চলছে চাঁদাবাজি আর দখলবাজির সীমাহীন তান্ডব। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে যে যেভাবে পারছে রাতারাতি কামিয়ে নিচ্ছে বেশুমার অর্থবিত্ত। ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজির মাধ্যমে একশ্রেণির দুর্বৃত্ত কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও দখলবাজিতে তারা মুহূর্তেই বাড়ি, গাড়ি, সহায়-সম্পদের মালিক বনে যাচ্ছেন। বেপরোয়া প্রভাব খাটিয়ে, নানা ছলচাতুরী আর দুর্বৃত্তপনার মাধ্যমে যে কারোর বাড়ি, গাড়ি, জায়গাজমি জবরদখল করে রাতারাতি বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়ে যাচ্ছেন তারা।

 

ক্ষমতাসীন দল বা অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে দেশের বেশির ভাগ স্থানেই সাংগঠনিক তৎপরতার কোনো বালাই নেই, যে কোনো মূল্যে অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকছেন নেতারা। টাকা কামানোর ধান্ধা থেকে দলীয় সংঘাত-সংঘর্ষেরও সূত্রপাত ঘটছে। ফুটপাথে দোকান বসানো, হাট-ঘাট, বালুমহাল, ট্রাক-বাস স্ট্যান্ড থেকে রিকশাস্ট্যান্ড ঠিকাদারি জবরদখলে খুব বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তারা। সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হয় ইজিবাইক থেকে। নেতাদের অনেকেই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুনখারাবি, মাদক ব্যবসাসহ সব ধরনের অপরাধ-অপকর্মেও জড়িয়ে পড়েছেন। হুমকি-ধমকি দিয়ে তদবিরবাজি, ব্যবসা-বাণিজ্য ছিনিয়ে নেওয়া, বাসাবাড়ি, মূল্যবান জায়গাজমি জবরদখলেও সিদ্ধহস্ত তারা। কোথাও দলের পদপদবি পেয়েই অপরাধমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত হচ্ছে, আবার কোথাও কোথাও চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, পেশাদার অপরাধীরা নানা কায়দায় ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী কোনো সংগঠনে নাম লিখিয়ে নিজেদের নিরাপদ করছে। অপরাধী চক্রটি প্রভাব বলয় সৃষ্টিসহ কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদপদবিও কবজা করে নিচ্ছে। ফলে সাংগঠনিকভাবে দক্ষ, ত্যাগী নেতা-কর্মীরা সর্বত্রই রয়েছেন কোণঠাসা অবস্থায়। অপরাধী নেতাদের একচ্ছত্র দাপটের সামনে প্রকৃত নেতা-কর্মীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। জানা গেছে, দেশের সর্বত্র হাট-ঘাটের ইজারাদারির পাশাপাশি ৩ শতাধিক পয়েন্টে অবৈধ বালুমহাল রয়েছে দলীয় নেতাদের দখলে। সামান্য ফুটপাথ দোকানিও যুবলীগ, শ্রমিক লীগ কিংবা স্বেচ্ছাসেবক লীগে নাম লিখিয়ে বড় বড় বালুমহাল দখল করে নিয়েছেন। প্রতিদিন তাদের আয়ের পরিমাণ ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠছে। বালুমহাল দখলের বাণিজ্য চলছে রাজধানীসহ জেলায় জেলায়। যুবলীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে মাত্র পাঁচ-সাত বছরে রাজধানীর উত্তরায় দুই ডজন ভবঘুরে যুবক এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। ফুটপাথ বরাদ্দ, জায়গাজমি জবরদখল, নিষিদ্ধ অটোরিকশাসহ পরিবহনে চাঁদাবাজি, অবৈধ কোচ টার্মিনাল স্থাপনসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড পুঁজি করে তারা রাতারাতি শত কোটিপতি হয়ে উঠেছেন। অতিসম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা রাজধানীর মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রণয়নকালে যুবলীগের ৭ শতাধিক নেতা-কর্মীকে সরাসরি মাদক বাণিজ্যে সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে। থানা ও মহানগরী পর্যায়ের অনেক নেতা মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার দিচ্ছেন বলেও ওই তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

৩০ খাতের চাঁদায় ধনাঢ্য অনেকেই : ঢাকা মহানগরীসহ দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়েও একশ্রেণির নেতা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, লুটপাটসহ অপরাধ-অপকর্মের অপ্রতিরোধ্য গডফাদার হয়ে উঠেছেন। তারা এলজিইডি, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের টেন্ডারবাজি, মাদক বাণিজ্য পরিচালনা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান, ছিনতাইকারী-ডাকাত গ্রুপগুলোকে শেল্টার, জায়গাজমি দখল-বেদখল, গার্মেন্টসহ কলকারখানায় চাঁদাবাজি, অস্ত্র ভাড়া দেওয়া, ভাড়ায় খুন, পাওনা টাকা আদায়সহ নানা বিরোধ মেটানোর মতো অন্তত ৩০টি খাতে চাঁদাবাজি চালায়। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরে জমিসংক্রান্ত ঝামেলাই সবচেয়ে বেশি। এসব ঝক্কি মিটিয়ে দেওয়ার নামে বা একজনের হয়ে তা দখল করে দেওয়ার ঘটনায় এককালীন সবচেয়ে বেশি টাকা আদায় করেন নেতারা। গুলশানে জমির মালিকের সঙ্গে ডেভেলপার কোম্পানির বিরোধ মিটিয়ে দেওয়ার এক ঘটনাতেই যুবলীগের বিতর্কিত এক নেতা ৭ কোটি টাকা চাঁদা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে শোনা যায়।

 

রাজধানীতে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে গেলেই সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুরান ঢাকার ডেভেলপার কোম্পানিকে জমি দিয়েছেন এমন একজন বলেন, এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর লোকজন ম্যানেজ করেই এখানে ডেভেলপাররা বাড়ি নির্মাণ করছে। কদমতলীর এক ডেভেলপার কোম্পানির মালিক জানান, সরাসরি চাঁদা না চেয়ে প্রভাবশালী চিহ্নিত একটি চক্র তার কেনা জমি নিয়ে অভিযোগ তুলেছে। ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি কাগজপত্র যাচাই করে জমির মালিকের সঙ্গে চুক্তিপত্র করে কাজ শুরু করেছি। হঠাৎ তারা এসে জমির মালিকানা দাবি করে বসেছে। এখন বাধ্য হয়ে মোটা চাঁদা দিয়ে হলেও ওদের সরাতে হবে।’ এ ছাড়া সরকারি জায়গা জবরদখল, বিরোধপূর্ণ জায়গার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ, ভেজাল কাগজপত্রধারী মালিককে নামকাওয়াস্তে টাকাপয়সা দিয়ে বাড়িঘর দখল করে নেওয়ার মতো ঘটনায় রাতারাতি ধনাঢ্য হয়ে উঠছেন তথাকথিত নেতারা। তারা দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রভাব ব্যবহার করেন নিজেরা বিত্তবান হওয়ার জন্য।

 

সর্বত্রই চলছে চাঁদাবাজি : ধনাঢ্য হওয়ার প্রতিযোগিতায় সর্বত্রই চলছে চাঁদাবাজি। রীতিমতো চাঁদাবাজি ধান্দার কাছে জীবনযাত্রা বাঁধা পড়ে আছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই চলছে চাঁদাবাজির ধকল। ব্যবসা-বাণিজ্য নিশ্চিত রাখতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টেকাতে, সর্বোপরি প্রাণ বাঁচাতেও কাউকে না কাউকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের কবল থেকে রক্ষা পেতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য পেতেও দিতে হয় আরেক ধরনের চাঁদা। চাঁদাবাজি থামছে না কিছুতেই। রাজধানীর ফুটপাথ থেকে শুরু করে নির্মাণাধীন বহুতল ভবন পর্যন্ত, তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায়েও প্রভাব বিস্তার করে চলেছে চাঁদা। পরিবহন, ডিশ, ইন্টারনেট প্রোভাইডার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি-কোচিং বাণিজ্যসহ অনিয়ম-দুর্নীতি টিকিয়ে রাখতে ম্যানেজিং কমিটিকেও এখন নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। ভুক্তভোগীদের মতে চাঁদাবাজির ধরনেও নানা আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে, পাল্টে গেছে চাঁদার পরিমাণ ও স্টাইল। আগে কেবল শীর্ষ সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি করত, এখন শীর্ষ সন্ত্রাসীর সহযোগীদের সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক প্রভাবশালী গ্রুপ। তারাই জীবনযাত্রার প্রতি ধাপে চাঁদা আরোপ করে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com