ঈদকে কেন্দ্র করে সবদিকে আনন্দ বইলেও মাংসের বাজারে যেন আগুন লেগেছে। গত দুই দিনে দুই দফা বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। সেই সঙ্গে মুরগীর দামও বেড়েছে। শনিবার রাতে গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। আজ রোববার তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। গরু সংকটের অজুহাতে দাম বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
একমাসে এ নিয়ে এর দাম বাড়লো দু’বার। গত বছর ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে খুলনায় গরুর মাংস বিক্রি হয় ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজি দরে। এর কিছুদিন পরে ৬০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে পশু সংকটের অজুহাত দেখিয়ে বিক্রেতারা ৬২০ টাকায় বিক্রি করে।
এরপর রমজান মাসে কেসিসি এর দাম নির্ধারণ করে দেয় ৬০০ টাকায়। তবে কেসিসির নির্দেশনা উপেক্ষা করে রোববার থেকে খুলনার ব্যবসায়ীরা ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করছেন।
খুলনার কসাই মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. আবু বক্কার সরদার বলেন, খুলনা জেলার হাটগুলোতে গরু সরবরাহ কমে গেছে। গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিবেশী দেশ থেকে পশু আসছে না। খামারিরা ঈদুল আজহাকে টার্গেট করে গরু সংরক্ষণ করে রাখছে। হাটগুলোতে দালালদের প্রভাব রয়েছে। তাদের কারণে পশুর দাম করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। এ মাসের শুরুতে কেসিসি মাংসের দর নির্ধারণ করে দেওয়ায় খুলনার অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে অন্য ব্যবসা করছেন।
ময়লাপোতা মোড়ের ব্যবসায়ী আল আমিন বলেন, পশু আনতে ঘাটে ঘাটে হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রতিটি পয়েন্টে পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়। সবমিলিয়ে একটি গরু আনতে তাদের ১২০০ টাকা খরচ হয়। তাছাড়া গো খাদ্যের দাম বেড়েছে। কোরবানিকে সামনে রেখে মালিকরা গরু হাটে আনতে চায় না। সেখানে পশুর সংখ্যা থেকে ব্যবসায়ীর উপস্থিতি বেশি হওয়ার গরুর দাম বেড়ে যায়। পশুর সংকট দেখা দিয়েছে। দাম কমলে মাংসের দাম কমানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
টুটপাড়া জোড়াকল বাজারে গরুর মাংস ক্রেতা বেলাল হোসেন বলেন, গরুর মাংসের দাম হঠাৎ করেই বেড়েছে। বাজারে এসে অনেকেই হোঁটচ খেয়েছেন।
তিনি বলেন, বাজারে একের পর এক নিত্যপ্রয়োজনী পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। অনেকেই ঈদে একটু ভালোমন্দ খাওয়ার চেষ্টা করে। মধ্যবিত্ত যাদের টাকা নেই তাদের কি উপায় হবে? টাকা ধার করে মাংস কিনতে এখানে আসা তার। এর দাম কমানোর জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন।
এই বাজারের মুরগী বিক্রেতা বাবু, মনির, আবু। তারা বলেন, ঈদ উপলক্ষে মুরগীর দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। গতকাল শনিবার ১৫০ টাকায় মুরগী বিক্রি হলেও আজ রোববার ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মুরগীর দাও বেড়েছ বলে জানান এই ব্যবসায়ীরা।
মাংসের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহিনুর আলম বলেন, এ মাসের শুরুতে কেসিসি মাংসের দাম ৬০০ টাকায় নির্ধারণ করে দেয়। রমজানজুড়ে তা থাকার কথা। ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি দাম নেওয়ায় গত ৭ দিন পূর্বে নগরীর ময়লাপোতা মোড়ের কয়েকটি মাংসের দোকানে অভিযান চালানো হয়। সেখানে একজন ব্যবসায়ীকে ৩ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।
১ এপ্রিল পবিত্র মাহে রমজান মাস উপলক্ষে খুলনা মহানগরীতে মাংস ও মুরগীর দাম স্থিতিশীল রাখতে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়। সেখানে মহানগরীতে গরুর মাংসের মূল্য প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা ও খাসির মাংসের মূল্য সর্বোচ্চ ৮৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম