ক্যান্সার এবং হৃদরোগের কারণ হতে পারে কিটো ডায়েট

 ডা. এম আর করিম রেজা :অনেকেই আজকাল কিটো ডায়েট ক্রেজে ভুগছেন। কিন্তু এই কিটো ডায়েট ওজন কমালেও শরীরের জন্য ভালো কি মন্দ সেটি হয়তো জানেন না। একজন পুষ্টিবিদ বা ডায়েটেশিয়ান স্বাস্থ্যগত কারণে প্রয়োজন হলে বিচার বিশ্লেষণ করে কাউকে কিটো ডায়েটের পরামর্শ দিতেই পারেন। তবে সেটি গণহারে সবার জন্য মেনে চলার কোন যৌক্তিকতা নেই। কিটো ডায়েট শুরু করার পর পরই অসুস্থতাবোধ এবং ডায়রিয়া ইত্যাদি স্বল্পমেয়াদি সমস্যা থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে।

 

*কিটো ডায়েট অনুযায়ী শরীরবৃত্তীয় চাহিদা মেটাতে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার (চাল, ভুট্টা, গম ইত্যাদির তৈরি খাবার) পরিবর্তে ফ্যাট বা চর্বি ব্যবহার করার ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়। কার্বোহাইড্রেট কম বা গ্রহণ না করার মাধ্যমে শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি হরমোন ইনসুলিনকে কমিয়ে ফেলাই কিটো ডায়েটের মূল উদ্দেশ্য। এই ইনসুলিন একদিকে যেমন শর্করা ভাঙে অন্যদিকে চর্বি ও প্রোটিন জমাতে সাহায্য করে। ইনসুলিনের অভাবে কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে চর্বি শরীরবৃত্তীয় কাজে ব্যবহার হতে থাকে। কিন্তু শর্করা না থাকলে চর্বি শরীরবৃত্তীয় কাজে ব্যবহার হতে পারে না। ইনসুলিনের অভাবে কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজম বন্ধ হয়ে গেলে চর্বি ভেঙে কিটো এসিড তৈরি করে, যা শরীরের জন্য ভয়াবহ একটি অবস্থা কিটো-এসিডোসিস সৃষ্টি করতে পারে। কিটো এসিডোসিসের কারণে মস্তিষ্ক, লিভার এবং কিডনির অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।

 

* মস্তিষ্কের প্রধান খাবার হলো গ্লুকোজ, যা স্বাভাবিক অবস্থায় শর্করা জাতীয় খাবার ভেঙে তৈরি হয়। মস্তিষ্ক কিটোন ব্যবহার করতে পারে না। দীর্ঘদিন ডায়েটিং করলে একসময় মস্তিষ্ক কিটোন ব্যবহার করার সক্ষমতা লাভ করে। কিন্তু কিটোন মস্তিষ্কের জন্য কতোটা স্বাস্থ্যকর সে সমন্ধে প্রয়োজনীয় কোন গবেষণা লব্ধ ফলাফল নেই। দীর্ঘমেয়াদে কিটোডায়েটে স্মৃতি ভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

 

*কিটো ডায়েট চলাকালীন চর্বি ভেঙে রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই চর্বি হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীতে জমে তা বন্ধ করে দিতে পারে। যা হার্ট এ্যটাকের কারণ হতে পারে। রক্তে চর্বি বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।

 

* কিটো ডায়েট চলাকালীন শুধু চর্বিই ভাঙে না প্রোটিনও ভাঙ্গে। শরীরের বাহ্যিক গঠন যেমন মাংসপেশী ও বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রধানত প্রোটিন দিয়েই তৈরি। কিটো ডায়েট চলাকালীন মাংসপেশী এবং হাড়ের গঠনে প্রভাব ফেলে। ক্রীড়াবিদদের হাড়ে ভঙ্গুর অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। প্রোটিন ভেঙ্গে অপুষ্টির মতো অবস্থা তৈরি করতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, কম শর্করা জাতীয় খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সার এবং হৃদরোগের কারণ হতে পারে।

 

মনে রাখবেন সুস্থ স্বাভাবিক, কর্মক্ষম দীর্ঘ জীবনের জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম, অস্বাভাবিক কিটো ডায়েট নয়। উঠতি বা যুবা বয়সে কিটো ডায়েট ক্রেজে আক্রান্ত না হয়ে বরং সুষম খাবার উপভোগ করে সেটি পরিশ্রম বা ব্যায়ামের মাধ্যমে ঝড়িয়ে ফেলার পর বিশ্রাম নিন, জীবনটাকে উপভোগ করুন। সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বোতলজাত সয়াবিনের দাম বাড়ল, কমল খোলা তেলের

» নানার বাড়িতে শিশুকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগে ১জন আটক

» নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ইসি আলমগীর

» অপপ্রচার রোধে ভারতের সহযোগিতা চাইলো বাংলাদেশ

» উপজেলা নির্বাচনে নেতাদের হস্তক্ষেপ বন্ধে কঠোর নির্দেশনা আ.লীগের : কাদের

» ২৯ মে ভোট হবে যেসব উপজেলায়

» বাসের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

» পরীমণিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি

» বিএনপির আন্দোলন এখনও শেষ হয়নি : রিজভী

» কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামীকাল

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ক্যান্সার এবং হৃদরোগের কারণ হতে পারে কিটো ডায়েট

 ডা. এম আর করিম রেজা :অনেকেই আজকাল কিটো ডায়েট ক্রেজে ভুগছেন। কিন্তু এই কিটো ডায়েট ওজন কমালেও শরীরের জন্য ভালো কি মন্দ সেটি হয়তো জানেন না। একজন পুষ্টিবিদ বা ডায়েটেশিয়ান স্বাস্থ্যগত কারণে প্রয়োজন হলে বিচার বিশ্লেষণ করে কাউকে কিটো ডায়েটের পরামর্শ দিতেই পারেন। তবে সেটি গণহারে সবার জন্য মেনে চলার কোন যৌক্তিকতা নেই। কিটো ডায়েট শুরু করার পর পরই অসুস্থতাবোধ এবং ডায়রিয়া ইত্যাদি স্বল্পমেয়াদি সমস্যা থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে।

 

*কিটো ডায়েট অনুযায়ী শরীরবৃত্তীয় চাহিদা মেটাতে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার (চাল, ভুট্টা, গম ইত্যাদির তৈরি খাবার) পরিবর্তে ফ্যাট বা চর্বি ব্যবহার করার ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়। কার্বোহাইড্রেট কম বা গ্রহণ না করার মাধ্যমে শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি হরমোন ইনসুলিনকে কমিয়ে ফেলাই কিটো ডায়েটের মূল উদ্দেশ্য। এই ইনসুলিন একদিকে যেমন শর্করা ভাঙে অন্যদিকে চর্বি ও প্রোটিন জমাতে সাহায্য করে। ইনসুলিনের অভাবে কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে চর্বি শরীরবৃত্তীয় কাজে ব্যবহার হতে থাকে। কিন্তু শর্করা না থাকলে চর্বি শরীরবৃত্তীয় কাজে ব্যবহার হতে পারে না। ইনসুলিনের অভাবে কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজম বন্ধ হয়ে গেলে চর্বি ভেঙে কিটো এসিড তৈরি করে, যা শরীরের জন্য ভয়াবহ একটি অবস্থা কিটো-এসিডোসিস সৃষ্টি করতে পারে। কিটো এসিডোসিসের কারণে মস্তিষ্ক, লিভার এবং কিডনির অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।

 

* মস্তিষ্কের প্রধান খাবার হলো গ্লুকোজ, যা স্বাভাবিক অবস্থায় শর্করা জাতীয় খাবার ভেঙে তৈরি হয়। মস্তিষ্ক কিটোন ব্যবহার করতে পারে না। দীর্ঘদিন ডায়েটিং করলে একসময় মস্তিষ্ক কিটোন ব্যবহার করার সক্ষমতা লাভ করে। কিন্তু কিটোন মস্তিষ্কের জন্য কতোটা স্বাস্থ্যকর সে সমন্ধে প্রয়োজনীয় কোন গবেষণা লব্ধ ফলাফল নেই। দীর্ঘমেয়াদে কিটোডায়েটে স্মৃতি ভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

 

*কিটো ডায়েট চলাকালীন চর্বি ভেঙে রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই চর্বি হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীতে জমে তা বন্ধ করে দিতে পারে। যা হার্ট এ্যটাকের কারণ হতে পারে। রক্তে চর্বি বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।

 

* কিটো ডায়েট চলাকালীন শুধু চর্বিই ভাঙে না প্রোটিনও ভাঙ্গে। শরীরের বাহ্যিক গঠন যেমন মাংসপেশী ও বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রধানত প্রোটিন দিয়েই তৈরি। কিটো ডায়েট চলাকালীন মাংসপেশী এবং হাড়ের গঠনে প্রভাব ফেলে। ক্রীড়াবিদদের হাড়ে ভঙ্গুর অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। প্রোটিন ভেঙ্গে অপুষ্টির মতো অবস্থা তৈরি করতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, কম শর্করা জাতীয় খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সার এবং হৃদরোগের কারণ হতে পারে।

 

মনে রাখবেন সুস্থ স্বাভাবিক, কর্মক্ষম দীর্ঘ জীবনের জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম, অস্বাভাবিক কিটো ডায়েট নয়। উঠতি বা যুবা বয়সে কিটো ডায়েট ক্রেজে আক্রান্ত না হয়ে বরং সুষম খাবার উপভোগ করে সেটি পরিশ্রম বা ব্যায়ামের মাধ্যমে ঝড়িয়ে ফেলার পর বিশ্রাম নিন, জীবনটাকে উপভোগ করুন। সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com