ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার অষ্টম দিনে আজ বন্দরনগরী মারিওপোল ঘিরে ফেলেছে রুশ বাহিনী। শহরটির মেয়র বলেছেন, তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। জনগণ যাতে বের হতে না পারে সে জন্য রুশ বাহিনী ক্রমাগত স্টেশন, রেললাইন এমন সব জায়গায় হামলা করছে।
মারিওপোল ঘেরাওয়ের আগে আজ দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী খেরসন দখল করে রুশ বাহিনী।
অন্যদিকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে কয়েক দিন ধরে আক্রমণ চালালেও ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রতিরোধের মুখে থমকে গেছে তা। ফলে রাশিয়া সামনের দিনে কৌশল বদলে আরও মারাত্মক আক্রমণে যাবে বলে তথ্য দিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দারা।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো সতর্ক করেছে, রুশ বাহিনী এখন সরাসরি বা নির্বিচার হামলা করবে।
আর কিয়েভ ঘিরে রাখা রুশ বাহিনী কিয়েভের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে পরামর্শ দিয়েছে। নাগরিকদের যাত্রাপথে বাধা দেওয়া হবে না জানিয়েছে তারা। তাতেও ধারণা করা হচ্ছে কিয়েভে ভয়াবহ হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রুশ বাহিনী।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগোর কোনাশেনকোভ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ইউক্রেনে রুশ অভিযানের হালনাগাদ তথ্য দেওয়ার সময় বলেন, বেসামরিক লোকজনের সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর সদস্যরা কোনো বাধা দেবে না।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, তার সেনাবাহিনী রুশ বাহিনীকে অগ্রগতি রোধ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক সপ্তাহে শত্রুর (রাশিয়া) পরিকল্পনা ভেঙে দিয়েছি। আমরা তাদের থামিয়ে দিয়েছি।’ রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখার জন্য দেশের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, গত এক সপ্তাহে প্রায় নয় হাজার রুশ সেনাকে হত্যা করেছে তার সেনাবাহিনী। আর রাশিয়ার দাবি, তাদের চার শতাধিক ও ইউক্রেনের দুই হাজারে ৭০০-র বেশি সেনা নিহত হয়েছে চলমান যুদ্ধে।
অবশ্য আজ রাশিয়ার সরকারি দপ্তর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ স্বীকার করেন, ইউক্রেনে রুশ সেনারা হতাহতের শিকার হয়েছেন। তবে হতাহতের কোনো সংখ্যা উল্লেখ করেনিনি তিনি।
গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনের উত্তর, পূর্ব ও দিক্ষণ দিক থেকে আক্রমণ শুরু করে। ইতিমধ্যে লুহানস্ক, দোনেতস্ক, মারিওপল, খারসন শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। কিয়েভ ও খারকিভ দখলে নিতে সাত দিন ধরে আক্রমণ চালিয়েও ব্যর্থ রুশ বাহিনী। তাদের সঙ্গে যোগ দিতে ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেনাবহর দুই দিন ধরে রাস্তায়। সেটিও নাকি এখন কার্যত স্থবির হয়ে আছে।
খাদ্য, জ্বালানিসহ লজিস্টিক সংকটের কারণে রুশ বাহিনীর কিয়েভের পথে বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেনি বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের দাবি।
আজ ইউক্রেনে রুশ সেনাবাহিনীর আক্রমণ নিয়ে সর্বশেষ তথ্যে মার্কিন গোয়েন্দারা বলেছে, ইউক্রেনের শহরগুলো দখলে নিতে রুশ বাহিনী আরও আক্রমাণত্মক হবে। কিয়েভ দখলে হতাশ হয়ে তারা আরও আক্রমণাত্মক হওয়ার পথে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়, রাশিয়া কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। শহর ঘিরে রাখার চেয়ে শহর দখলে মনোযোগ দিচ্ছে তারা। তাই বোমাবর্ষণ বাড়িয়েছে।
বুধবার দিবাগত রাতে কিয়েভে চার-পাঁচটি বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে রাশিয়া। গোয়েন্দাদের তথ্য, কিয়েভ ও খারকিভ দখলে নিতে রুশ সেনাদের সঙ্গে বেলারুশের সেনারাও আক্রমণে অংশ নিতে পারে।