কোরআনের আয়াত সম্বলিত তাবিজ কি শিরকের অন্তর্ভুক্ত?

তাবিজ বলতেই শিরক বা নাজায়েজ নয়। অনেকেই একটি হাদিসের ভুল ব্যাখ্যার কারণে এমনটি মনে করে থাকেন। হাদিসটি হলো, নবী কারিম (স.) বলেন, ‘মন্ত্র, তাবিজ এবং মহব্বতের তাবিজ শিরকের অন্তর্ভুক্ত।’ (আবু দাউদ: ৩৩৮৫; ইবনে মাজাহ: ৩৫২১; মুসনাদে আহমদ: ৩৪৩৩)

 

এই হাদিস থেকে অনেকে ধরে নিয়েছেন যে সব ধরনের তাবিজ শিরক। অথচ এ কথাটি ভুল। মূলত জাহেলি যুগে শামুক-ঝিনুকের যেসব কড়ি সুতায় গেঁথে বাচ্চাদের গলায় ঝুলিয়ে দিত, এগুলোকে তামিমা বলে এবং এর ওপর মন্ত্র পড়ে দম দিত এবং একে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রভাবশালী মনে করা হত। এটা ছিল একটি শিরকি আমল, যাকে তামিমা বলা হত।

 

রাসুলুল্লাহ (স.) এ হাদিসে ওই তামিমা বা তামায়েমকে নিষিদ্ধ করেছেন, কিন্তু তাবিজকে নয়। অর্থ না বুঝার দরুণ তাবিজ ও তামিমা-কড়িকে এক করে ফেলা হয়েছে, যা সঠিক বিবেচনা নয়। কারণ তাবিজ বৈধ ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত।

 

ফতোয়ার কিতাবাদিতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘কোনো বৈধ প্রয়োজনে কোরআন শরিফের আয়াত, হাদিসে বর্ণিত দোয়া, জিকির বা সঠিক অর্থবহ কোনো দোয়া ইত্যাদি সম্বলিত তাবিজ ব্যবহার বৈধ। তবে শর্ত হলো- তাবিজকে সত্তাগত শক্তিতে প্রভাব সৃষ্টিকারী হিসেবে বিশ্বাস করা যাবে না। বরং আল্লাহ তাআলার হুকুমে কাজ হওয়ার আশা রাখবে। তবে শিরকি শব্দ, কুফরি কালাম বা অনর্থক লেখা সম্বলিত তাবিজ ব্যবহার করা বৈধ নয়। (মুসলিম: ২২০০, তাকমিলা: ৪/৩২৬, মুসনাদে আহমদ: ৬৬৯৬; ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ১/৬৪৩-৬৪৪)

 

মনে রাখতে হবে, অসুখ হলেই তাবিজ গ্রহণের চিন্তা করা উচিত নয়। কারণ তাবিজ কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নয়। রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। কেননা আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক রোগের প্রতিষেধক সৃষ্টি করেছেন। নবীজি (স.) বলেন, ‘যিনি রোগ নাজিল করেছেন, তিনি চিকিৎসাও নাজিল করেছেন।’ (মুয়াত্তা মালেক: ১৭৫৭)

 

কেউ তাবিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে এতই বাড়াবাড়ি করে যে বেদীনের কাছেও তাবিজ নিতে যায়। অথচ তাদের তাবিজে শিরকি শব্দ থাকার আশঙ্কা থাকে। এক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিত। আলেমদের পরমার্শ হলো- তাবিজের পরিবর্তে দোয়া ও সুন্নাহসমর্থিত আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া উত্তম। এতে ছোট-বড় কোনোরকম শিরকের আশঙ্কা থাকে না।

 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক বিষয়ে সঠিক বুঝ দান করুন। কোনো বিষয় পুরোপুরি না জেনে প্রচার করা থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ফেরত যাবে মিয়ানমারের ২৮৫ সেনা, ফিরবে ১৫০ বাংলাদেশি

» ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী তিন যুবক নিহত

» কৃষক লীগকে শহরে আটকে না রেখে গ্রামে নিয়ে যাওয়া ভালো: কাদের

» গণভবনের শাক-সবজি কৃষক লীগ নেতাদের উপহার দিলেন শেখ হাসিনা

» হাওরে কৃষকদের বোরো ধানের উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী

» বাসচাপায় সিএনজি যাত্রী নিহত

» ‌‌‘বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা’

» রাজধানীর শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে

» বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা রাজনৈতিক নয়: প্রধানমন্ত্রী

» রাজধানীর শিশু হাসপাতালের ভবনে আগুন

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কোরআনের আয়াত সম্বলিত তাবিজ কি শিরকের অন্তর্ভুক্ত?

তাবিজ বলতেই শিরক বা নাজায়েজ নয়। অনেকেই একটি হাদিসের ভুল ব্যাখ্যার কারণে এমনটি মনে করে থাকেন। হাদিসটি হলো, নবী কারিম (স.) বলেন, ‘মন্ত্র, তাবিজ এবং মহব্বতের তাবিজ শিরকের অন্তর্ভুক্ত।’ (আবু দাউদ: ৩৩৮৫; ইবনে মাজাহ: ৩৫২১; মুসনাদে আহমদ: ৩৪৩৩)

 

এই হাদিস থেকে অনেকে ধরে নিয়েছেন যে সব ধরনের তাবিজ শিরক। অথচ এ কথাটি ভুল। মূলত জাহেলি যুগে শামুক-ঝিনুকের যেসব কড়ি সুতায় গেঁথে বাচ্চাদের গলায় ঝুলিয়ে দিত, এগুলোকে তামিমা বলে এবং এর ওপর মন্ত্র পড়ে দম দিত এবং একে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রভাবশালী মনে করা হত। এটা ছিল একটি শিরকি আমল, যাকে তামিমা বলা হত।

 

রাসুলুল্লাহ (স.) এ হাদিসে ওই তামিমা বা তামায়েমকে নিষিদ্ধ করেছেন, কিন্তু তাবিজকে নয়। অর্থ না বুঝার দরুণ তাবিজ ও তামিমা-কড়িকে এক করে ফেলা হয়েছে, যা সঠিক বিবেচনা নয়। কারণ তাবিজ বৈধ ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত।

 

ফতোয়ার কিতাবাদিতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘কোনো বৈধ প্রয়োজনে কোরআন শরিফের আয়াত, হাদিসে বর্ণিত দোয়া, জিকির বা সঠিক অর্থবহ কোনো দোয়া ইত্যাদি সম্বলিত তাবিজ ব্যবহার বৈধ। তবে শর্ত হলো- তাবিজকে সত্তাগত শক্তিতে প্রভাব সৃষ্টিকারী হিসেবে বিশ্বাস করা যাবে না। বরং আল্লাহ তাআলার হুকুমে কাজ হওয়ার আশা রাখবে। তবে শিরকি শব্দ, কুফরি কালাম বা অনর্থক লেখা সম্বলিত তাবিজ ব্যবহার করা বৈধ নয়। (মুসলিম: ২২০০, তাকমিলা: ৪/৩২৬, মুসনাদে আহমদ: ৬৬৯৬; ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ১/৬৪৩-৬৪৪)

 

মনে রাখতে হবে, অসুখ হলেই তাবিজ গ্রহণের চিন্তা করা উচিত নয়। কারণ তাবিজ কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নয়। রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। কেননা আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক রোগের প্রতিষেধক সৃষ্টি করেছেন। নবীজি (স.) বলেন, ‘যিনি রোগ নাজিল করেছেন, তিনি চিকিৎসাও নাজিল করেছেন।’ (মুয়াত্তা মালেক: ১৭৫৭)

 

কেউ তাবিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে এতই বাড়াবাড়ি করে যে বেদীনের কাছেও তাবিজ নিতে যায়। অথচ তাদের তাবিজে শিরকি শব্দ থাকার আশঙ্কা থাকে। এক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিত। আলেমদের পরমার্শ হলো- তাবিজের পরিবর্তে দোয়া ও সুন্নাহসমর্থিত আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া উত্তম। এতে ছোট-বড় কোনোরকম শিরকের আশঙ্কা থাকে না।

 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক বিষয়ে সঠিক বুঝ দান করুন। কোনো বিষয় পুরোপুরি না জেনে প্রচার করা থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com