এবার কঠিন নির্বাচন হবে

অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী : নির্বাচনের এখন এক বছরও বাকি নেই। স্বাভাবিক কারণেই চায়ের টেবিল থেকে শুরু করে সব জায়গায় ঘুরেফিরে আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। যত দিন যাচ্ছে আর যেভাবে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা নিজে ব্যক্তিগতভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত প্রায়ই বিভিন্ন প্রোগ্রাম করছেন এবং আওয়ামী লীগবিরোধীরাও বিভিন্নভাবে তাদের শক্তি প্রদর্শনের সর্বাত্মক চেষ্টা করে চলেছে, তা থেকে একটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট যে, এখন নির্বাচনী হাওয়া শুরু হয়ে গেছে। এখন সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে নির্বাচন। এমনকি কারও বিয়ের দাওয়াতে গেলে সেখানেও বাঙালির চরিত্র হচ্ছে রাজনীতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা। সেই আলোচনার অংশ হিসেবে বিয়ের আসরেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা হয়। যখন দেশের নির্বাচন এত কাছে তখন আওয়ামী লীগের অনেক নেতার কাছে, বিশেষ করে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বললে আমি হতাশ হয়ে যাই। আমি একা নই, নিশ্চয়ই অনেকেই হতাশ হন। কারণ তাদের অনেকেরই বিশ্বাস যে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে যে রকমভাবে নির্বাচনে জিতেছেন, ২০১৮ নির্বাচনে জিতেছেন, ২০২৪ সালেও তারা একইভাবে জিতবেন। যারা এখনো এটা মনে করেন এবং সেভাবে হাবভাব দেখান, তারা বোকার স্বর্গে আছেন। এবার কঠিন নির্বাচন হবে। আমি আমার প্রতিটি লেখা ও বক্তব্যে এ কথা বলেছি। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের বিপক্ষ শক্তি যার মূল হচ্ছে বিএনপি। একদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি একসঙ্গে নির্বাচন করবে। আর যারা আওয়ামীবিরোধী তারা অবশ্যই যেভাবে বিএনপি চায় সেভাবেই করবে পুতুলনাচের মতো। এখন যা কিছুই তারা বলুক না কেন, দেখা যাবে শেষ পর্যন্ত সবাই নির্বাচনে আসবে। বিশেষ করে বিএনপি। আগেও বলেছি, বিএনপি নামে আসবে নাকি অন্য কোনোভাবে সবাইকে নিয়ে কোনো জোট করে নির্বাচন করবে, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু এবার কঠিন নির্বাচন হবে। নির্বাচনে সব পক্ষ অংশ নেওয়ায় ফাঁকা মাঠে কারও জেতার সুযোগ থাকবে না। এটা স্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগারদের মনে রাখা প্রয়োজন। যারা মনে রাখবেন না তারা যে মারাত্মক ভুল করবেন, সেই ভুলের মাশুল দিতে হবে সমগ্র জাতিকে। অন্যভাবে বললে দাঁড়ায়, ২১ বছর পর যারা কাউন্টার-রেভ্যুলিউশনারি তাদের পরাজিত করে দার্শনিক শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এনেছিলেন। তারপরে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েই তাঁর দল ২০০১-এর নির্বাচনে হেরে যায়। আবার তিনি সম্পূর্ণ প্রজ্ঞা, দর্শন এবং সাহস দেখিয়ে এবং দলে যেখানে যেখানে ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি আছে সেগুলো সব ঠিকঠাক করে দিয়ে বি টিম-সি টিমের প্লেয়ারদের দিয়েও এ টিমের খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে খেলিয়ে তিনি জিতিয়ে আনলেন। কিন্তু এবারের অবস্থা সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা যদি মনে করি পশ্চিমা শক্তি শুধু বলছে যে আমরা সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই এটা মুখের কথা, তাহলে ভুল করা হবে। তারা কিন্তু যেটা বলছে সেটা তারা হিসাব করেই বলছে। এবং এ হিসাবের পেছনে অনেক কিছু আছে। আমরা কী করে ভুলি যে ইংল্যান্ডে বসে টাকা খরচ করে বিভিন্ন শক্তিশালী মিডিয়ায়, টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশ করা হয় যেমন আলজাজিরা কিন্তু একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। যতই আমরা বলি না কেন বাংলাদেশে কোনোরকম নেগেটিভ কিছু যদি হয়, এক্সিডেন্টই হোক কিংবা আগুন লাগা হোক সেটাকে তারা কিন্তু বড় করে এবং বেশ ডিটেইল করে প্রকাশ করে। এমনকি বাংলাদেশের নদী ভাঙন নিয়েও বড় করে খবর হয়। অথচ অনেক দেশে ঘণ্টায় কতজন মারা যায় সেটা কোনো বড় খবর হয় না, শিরোনাম হয় না। বাংলাদেশ নিয়ে হয়। এগুলো বুঝতে হবে যে বিএনপি টাকা ব্যয় করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তাদের একটি অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে এবং তাদের প্রক্রিয়া একটাই- ষড়যন্ত্র। এখন ষড়যন্ত্র তো অনেকভাবেই হয়। ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এ এক ধরনের ষড়যন্ত্র, ২১ আগস্ট দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাসহ তাঁর দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা করার অপচেষ্টা এক ধরনের ষড়যন্ত্র, নির্বাচন যাতে গ্রহণযোগ্য না হয় সেটা এক ধরনের ষড়যন্ত্র। নির্বাচন যেন একেবারেই না হতে পারে সেটাও এক ধরনের ষড়যন্ত্র। অথবা এদের বোকার স্বর্গে রেখে সোজাসুজি কথা বললে দাঁড়ায়, একদম অপ্রস্তুত একটি যুদ্ধজয়ের প্রধান অংশ হচ্ছে তার এক্সারসাইজ। যে আর্মি যত বেশি অনুশীলন করে, সুসংগঠিত হয়, তারাই ক্ষমতাশালী হয় এবং তারাই যুদ্ধে জয়লাভ করে। আমরা যত যুদ্ধের ইতিহাস পড়েছি, সব জায়গায় তারাই হেরেছে যারা প্রস্তুত ছিল না। যারা চিন্তাও করেনি যে সন্ধ্যার সময় তারা আক্রমণের শিকার হতে পারে, কারণ তাদের ধারণায় ছিল আক্রমণ ভোরবেলা হবে। তার ফলে হেরে গেছে। এবার নির্বাচনটা অনেকটাই সে রকম হচ্ছে। এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে খুব কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। এবং এ কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য যদি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন তাতেই পার পেয়ে যাবেন, সেটাও একটা মারাত্মক ভুল হবে। তিনি একের পর এক জায়গায় যাচ্ছেন, বক্তব্য দিচ্ছেন, বলছেন সবকিছু। কিন্তু তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজগুলো তো আমাদের করতে হবে। সেটা কতটুকু করছি আমরা? সেদিক থেকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে তেমন উচ্ছ্বাস নেই। এদিকে নেত্রী যেমন মনে করছেন আগামীকালই নির্বাচন, আমাদেরও ঠিক সেভাবে প্রস্তুত হতে হবে। আমার মতে, দার্শনিক শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ একই পথে চলছে না। কারণ তারা ভাবছে আমাদের শেখ হাসিনা আছে, তাতেই হয়ে যাবে। যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখি যে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ শেখ হাসিনার পক্ষে আছে, ঠিক। কিন্তু এ লোকগুলোকে তো ঠিক রাখতে হবে। তিনজন ক্যান্ডিডেট যদি দলের বাইরে গিয়েই নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যায় এবং তারা আবার যদি ক্ষমা পায় তবে তারা আরও সাহস পাবে। তারা যে আবার স্বতন্ত্র দাঁড়াবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? এখন চুপচাপ থাকতে পারে। কিন্তু নির্বাচনে গিয়ে দেখা গেল যে বিএনপি অনেক টাকা খরচ করল আওয়ামী লীগের কাউকে স্বতন্ত্র দাঁড় করানোর জন্য। দুইভাবে- একভাবে বলবে শুধু তুমি দাঁড়াও নির্বাচনে তুমি ১০ কোটি টাকা পাবা। আর দ্বিতীয় হচ্ছে, তোমাকে জিতিয়ে আনার দায়িত্ব আমাদের। তাহলে এটা নিয়ে তো কর্মীদের ভাবতে হবে। এটা তো প্রেসিডেন্সিয়াল ফ্রন্ট না যে এখানে আমাদের নেত্রী আছে, নেত্রী তো ৯৫ শতাংশ ভোট নিয়ে জিতে যাবেন। তাঁর সঙ্গে কারও প্রতিযোগিতা নেই। এটা সংসদীয় নির্বাচনের মডেল। মুখে বলা হয় যে নৌকায় কলা গাছ দাঁড়ালেও হবে, বাস্তবে কিন্তু অনেক সময় সেটা না-ও হতে পারে। এই যে আমাদের কঠিন সময় আসছে এবং নির্বাচন যে কঠিন, এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আমি যতদূর দেখি কর্মীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সে ধরনের গুরুত্ব দেখিনি। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কিছু কিছু বক্তব্য আমার বেশ ভালোই লাগে। তিনি বারবার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন কর্মীদের। কিন্তু আসলে ওবায়দুল কাদেরের কথায় তো জনগণ অতটা গুরুত্ব দেয় না। জনগণের বিশ্বাস সেই একজনের প্রতি, দার্শনিক শেখ হাসিনা। তাঁর কথা সবাই বিশ্বাস করে। কিন্তু শুধু বিশ্বাস করলে তো হবে না, বিশ্বাস করে কাজটাও করতে হবে। সেই কাজ কিন্তু সেভাবে হচ্ছে না। এখন থেকেই নির্বাচন উপলক্ষে জনগণের কাছে নেতা-কর্মীদের যেতে হবে। আমি মনে করি নেত্রী কোথায় কাকে দিয়ে নির্বাচন করবেন, এখনই তাদের নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া উচিত। যাতে তারা তাদের নিজস্ব এলাকায় সব গোছাতে পারেন। কারণ নির্বাচনের তারিখ পড়ার পরে তিন-চার মাসের প্রস্তুতিতে নির্বাচন জেতা খুব কঠিন হবে। এখানে নেত্রী যদি মনে করেন তিনি ৮০-১০০ জনকে নির্বাচনে পরিবর্তন করতে চান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে, তাহলে এখন থেকেই জানা প্রয়োজন তারা কারা। আর এটাও ঠিক যে, আওয়ামী লীগ ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার ফলে অনেক কাকের অনুপবেশ ঘটেছে। কতবার ওবায়দুল কাদের সাহেব বললেন কাক ঢুকেছে। এখন কথা হলো, কাক ঢুকতে তিনি দেখলেন, বের হতে দেখা গেছে সে কথা কিন্তু তিনি কোনো সময় বললেন না। অর্থাৎ একবার কাক ভিতরে আসতে পারলেই তাদের পার্মানেন্ট স্থান হয়ে যায়। সেখানে আমি সেভাবে কোনো পার্থক্য দেখি না। সেই কাউয়ারাই আছেন। সুতরাং তাদের যখন সুযোগ হবে তখন সেই সুযোগে অন্যের টাকা নিয়ে আবার নির্বাচনে দাঁড়াবে না তা কে জানে? এবং মনে রাখতে হবে, নির্বাচনে জেতার চেয়ে যে কোনো একজন জনপ্রিয় নেতাকে নির্বাচনে হারিয়ে দেওয়া সহজ। বিশেষ করে যেখানে বিএনপির মতো দল বিপুল টাকা নিয়ে বসে আছে। তারা দেশের এই যে বিভিন্ন জনসমাবেশ ও মিটিং করে এ টাকা বাইরে থেকে আসে বলে আমি বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি দেশের ব্যবসায়ীরাই টাকা দেওয়া শুরু করেছেন। তাদের অনেকেই ক্ষমতায় যারা থাকেন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন, কিন্তু যারা ক্ষমতায় নেই তাদের যে টাকাপয়সা দিচ্ছেন না তা কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য নয়। বরং আমি বিশ্বাস করি তারা দুই দিকেই টাকা দিচ্ছেন এবং আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ইতোমধ্যে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে টাকাপয়সা, মিডিয়ার ব্যবহার হচ্ছে। যে কোনো দিনের একটা পত্রিকা আপনি খুলে দেখুন না কেন। এত ভালো ভালো কাজ হচ্ছে, কই সেভাবে তো শিরোনাম আসে না। আপনি যে কোনো একটা জিনিস ধরলে সেটা নিয়ে আলাদা করে লেখা যেত, পিএইচডি থিসিস করা যেত। আজকে পদ্মা সেতু হলো, মেট্রোরেল হলো, বঙ্গবন্ধু টানেল হলো, এদিকে পাতালরেল করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসব না হয় বাদই দিলাম, এর আগে এই যে বিধবা ভাতা দিল, এই বিধবা ভাতার ওপর একটা পিএইচডি থিসিস হতে পারত না? এর ওপর আলোচনা হয় না। কারা করেন? এই যে তিনি এত গবেষণার কথা বলেন, আমি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। আমার কাছে কোনো বাজেটই নেই ঠিকমতো। অথচ অনেকে পরিচয় থাকার জন্য সরকারের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা নিয়ে যান গবেষণা করার জন্য। তাহলে সিস্টেমটা কীভাবে কাজ করছে? এগুলো তো আমদের চিন্তা করতে হবে, স্পষ্টভাবে বলতে হবে। কে কোন পদে থাকল বা না থাকল সেটা নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও তাঁর দর্শন যদি আমাদের কাজে পরিণত করতে হয় তাহলে তাঁর দর্শনকে তাঁর ক্ষমতা অনুযায়ী সমর্থন দিতে হবে। সেই সমর্থন এ সরকারের দ্বারা আমরা এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে পাচ্ছি না। যার জন্য দেখা যায় এই যে বলা হয়, ডাক্তার গ্রামে দিলাম তারা থাকে না কিংবা বলে থাকার জায়গা নেই, এটা ঠিক না। অনেক জায়গায় থাকার জায়গা আছে। থাকতে পারে না কেন? সেটি তদবিরের কারণে। তদবির কারা করে? যারা ক্ষমতাশালী তারা। আমি উদাহরণ দিয়ে বলি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে চক্ষু হাসপাতালটা মূলত নেত্রীর সঙ্গে আলাপ করে আমিই গড়ে তুলেছিলাম। নেত্রীর অনেক দূরদর্শিতার জন্য আগে স্কুলঘরে আই ক্যাম্প করা হতো। সে সময় কোনো রোগীর ওপর অপারেশন করলে ইনফেকশন হতো। ফলে সব রোগীকে আমরা ভালো চিকিৎসা দিতে পারতাম না। নেত্রীর সঙ্গে যখন কথা বললাম যে এটা যদি আমরা একটা গাড়িতে ওটি গড়ে তুলতে পারি এবং ক্যাম্পের রোগীদের এখানে এনে অপারেশন করাতে পারি তবে ইনফেকশনের আশঙ্কা কমে যাবে। উনি সঙ্গে সঙ্গে মত দিলেন এবং যতটুকু সহযোগিতা করা প্রয়োজন করলেন। এবং এটা বঙ্গমাতা আই কেয়ার প্রজেক্ট নামে আমি শুরু করলাম ১৯৯৭-এ। নেত্রীর পরামর্শ, নির্দেশনা অনুযায়ী বিরাট পরিবর্তন এলো বাংলাদেশে। ইনফেকশন রেট কমে গেল। আই ক্যাম্প বাদ হয়ে গেল। তবে ক্যাম্প বাদ হলেও ক্যাম্পের রোগীরা হাসপাতালে এসে চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের দৃষ্টি ফিরে পেল। এবং ইন্ট্রাঅক্যুলারি ইমপ্লান্ট- সবচেয়ে বেস্ট পসিবল দৃষ্টি যা এখনো বাংলাদেশে অনেকে ১ লাখ টাকার ওপরে নেয়, নেত্রী সেটা বিনামূল্যে করে দিলেন। এরপর আসে ভিশন সেন্টার। নেত্রী একদিন কথায় কথায় বললেন যে এটার নাম যেন আই সেন্টার দেওয়া হয়। আমার কাছেও সেটাই যুক্তিযুক্ত মনে হলো। নেত্রী খুব চিন্তা করেন এগুলো নিয়ে তা বোঝা যায়। আই সেন্টার নাম দিয়েই আই সেন্টারগুলো- এর মাঝে একটা ব্যাপার আছে। এগুলো কিন্তু সঠিকভাবে চালাতে হবে। আমাদের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, এটা একটা সেন্টার অব এক্সিলেন্স হবে। ন্যাশনাল আই কেয়ার পলিসি তো এখানে করার দরকার নেই। এটার হেডকোয়ার্টার হওয়া উচিত ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান’-এ গোপালগঞ্জে। কিন্তু তার পরে কী কারণে জানি না এটা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অন্তর্গত হলো। অথচ বঙ্গমাতার নামে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল একটা পরিত্যক্ত হাসপাতালের মতো অবস্থা হলো। বর্তমানে একজন ভালো পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটা আমিই লিখিত আকারে দিয়েছিলাম। কারণ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে জনগণ কী সুবিধা পাচ্ছে তা বোঝাতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমর্থন পেতে গেলে নেত্রী কী করেছেন সেই মেসেজটা অন্তত দিতে হবে। কিন্তু সেটা অর্গানাইজড করতে আমি এখনো সক্ষম হইনি। সুতরাং আমি চাই কাজগুলো আমরা সঠিকভাবে করব। এতে কে খুশি হলো না হলো, তাতে কিছু আসে যায় না। আসল হচ্ছে যে, দার্শনিক শেখ হাসিনা যদি এ দেশ পরিচালনা করার ব্যাপারে নিজেও বলেন যে আমি অনেক করেছি। এখন আমি দেশ পরিচালনা না করে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বিশ্রাম নেব, দেশ চলুক। তাহলে বাংলাদেশে এতদিনে যা যা অর্জন তা শেষ হতে এক মাসও লাগবে না। সুতরাং আমাদের প্রতিটা লোকের দায়িত্ব কত বেশি তা আমাদের ভাবতে হবে। শুধু নেত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকলে তো চলবে না। নেত্রীকে যেটা বলা দরকার বলতে হবে, যেটা আনা দরকার আনতে হবে, যে সাহায্য দরকার সেটা নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, দার্শনিক শেখ হাসিনার যে দর্শন তা বুঝতে হবে। তিনি যে বক্তব্য দেন সেটা বুঝে সঠিকভাবে কাজ করে সেভাবেই আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে।

লেখক : সাবেক উপদেষ্টা, চেয়ারম্যান, বিএমআরসি

ইমেইল : [email protected]      সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ফেরত যাবে মিয়ানমারের ২৮৫ সেনা, ফিরবে ১৫০ বাংলাদেশি

» ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী তিন যুবক নিহত

» কৃষক লীগকে শহরে আটকে না রেখে গ্রামে নিয়ে যাওয়া ভালো: কাদের

» গণভবনের শাক-সবজি কৃষক লীগ নেতাদের উপহার দিলেন শেখ হাসিনা

» হাওরে কৃষকদের বোরো ধানের উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী

» বাসচাপায় সিএনজি যাত্রী নিহত

» ‌‌‘বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা’

» রাজধানীর শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে

» বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা রাজনৈতিক নয়: প্রধানমন্ত্রী

» রাজধানীর শিশু হাসপাতালের ভবনে আগুন

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

এবার কঠিন নির্বাচন হবে

অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী : নির্বাচনের এখন এক বছরও বাকি নেই। স্বাভাবিক কারণেই চায়ের টেবিল থেকে শুরু করে সব জায়গায় ঘুরেফিরে আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। যত দিন যাচ্ছে আর যেভাবে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা নিজে ব্যক্তিগতভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত প্রায়ই বিভিন্ন প্রোগ্রাম করছেন এবং আওয়ামী লীগবিরোধীরাও বিভিন্নভাবে তাদের শক্তি প্রদর্শনের সর্বাত্মক চেষ্টা করে চলেছে, তা থেকে একটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট যে, এখন নির্বাচনী হাওয়া শুরু হয়ে গেছে। এখন সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে নির্বাচন। এমনকি কারও বিয়ের দাওয়াতে গেলে সেখানেও বাঙালির চরিত্র হচ্ছে রাজনীতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা। সেই আলোচনার অংশ হিসেবে বিয়ের আসরেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা হয়। যখন দেশের নির্বাচন এত কাছে তখন আওয়ামী লীগের অনেক নেতার কাছে, বিশেষ করে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বললে আমি হতাশ হয়ে যাই। আমি একা নই, নিশ্চয়ই অনেকেই হতাশ হন। কারণ তাদের অনেকেরই বিশ্বাস যে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে যে রকমভাবে নির্বাচনে জিতেছেন, ২০১৮ নির্বাচনে জিতেছেন, ২০২৪ সালেও তারা একইভাবে জিতবেন। যারা এখনো এটা মনে করেন এবং সেভাবে হাবভাব দেখান, তারা বোকার স্বর্গে আছেন। এবার কঠিন নির্বাচন হবে। আমি আমার প্রতিটি লেখা ও বক্তব্যে এ কথা বলেছি। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের বিপক্ষ শক্তি যার মূল হচ্ছে বিএনপি। একদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি একসঙ্গে নির্বাচন করবে। আর যারা আওয়ামীবিরোধী তারা অবশ্যই যেভাবে বিএনপি চায় সেভাবেই করবে পুতুলনাচের মতো। এখন যা কিছুই তারা বলুক না কেন, দেখা যাবে শেষ পর্যন্ত সবাই নির্বাচনে আসবে। বিশেষ করে বিএনপি। আগেও বলেছি, বিএনপি নামে আসবে নাকি অন্য কোনোভাবে সবাইকে নিয়ে কোনো জোট করে নির্বাচন করবে, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু এবার কঠিন নির্বাচন হবে। নির্বাচনে সব পক্ষ অংশ নেওয়ায় ফাঁকা মাঠে কারও জেতার সুযোগ থাকবে না। এটা স্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগারদের মনে রাখা প্রয়োজন। যারা মনে রাখবেন না তারা যে মারাত্মক ভুল করবেন, সেই ভুলের মাশুল দিতে হবে সমগ্র জাতিকে। অন্যভাবে বললে দাঁড়ায়, ২১ বছর পর যারা কাউন্টার-রেভ্যুলিউশনারি তাদের পরাজিত করে দার্শনিক শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এনেছিলেন। তারপরে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েই তাঁর দল ২০০১-এর নির্বাচনে হেরে যায়। আবার তিনি সম্পূর্ণ প্রজ্ঞা, দর্শন এবং সাহস দেখিয়ে এবং দলে যেখানে যেখানে ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি আছে সেগুলো সব ঠিকঠাক করে দিয়ে বি টিম-সি টিমের প্লেয়ারদের দিয়েও এ টিমের খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে খেলিয়ে তিনি জিতিয়ে আনলেন। কিন্তু এবারের অবস্থা সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা যদি মনে করি পশ্চিমা শক্তি শুধু বলছে যে আমরা সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই এটা মুখের কথা, তাহলে ভুল করা হবে। তারা কিন্তু যেটা বলছে সেটা তারা হিসাব করেই বলছে। এবং এ হিসাবের পেছনে অনেক কিছু আছে। আমরা কী করে ভুলি যে ইংল্যান্ডে বসে টাকা খরচ করে বিভিন্ন শক্তিশালী মিডিয়ায়, টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশ করা হয় যেমন আলজাজিরা কিন্তু একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। যতই আমরা বলি না কেন বাংলাদেশে কোনোরকম নেগেটিভ কিছু যদি হয়, এক্সিডেন্টই হোক কিংবা আগুন লাগা হোক সেটাকে তারা কিন্তু বড় করে এবং বেশ ডিটেইল করে প্রকাশ করে। এমনকি বাংলাদেশের নদী ভাঙন নিয়েও বড় করে খবর হয়। অথচ অনেক দেশে ঘণ্টায় কতজন মারা যায় সেটা কোনো বড় খবর হয় না, শিরোনাম হয় না। বাংলাদেশ নিয়ে হয়। এগুলো বুঝতে হবে যে বিএনপি টাকা ব্যয় করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তাদের একটি অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে এবং তাদের প্রক্রিয়া একটাই- ষড়যন্ত্র। এখন ষড়যন্ত্র তো অনেকভাবেই হয়। ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এ এক ধরনের ষড়যন্ত্র, ২১ আগস্ট দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাসহ তাঁর দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা করার অপচেষ্টা এক ধরনের ষড়যন্ত্র, নির্বাচন যাতে গ্রহণযোগ্য না হয় সেটা এক ধরনের ষড়যন্ত্র। নির্বাচন যেন একেবারেই না হতে পারে সেটাও এক ধরনের ষড়যন্ত্র। অথবা এদের বোকার স্বর্গে রেখে সোজাসুজি কথা বললে দাঁড়ায়, একদম অপ্রস্তুত একটি যুদ্ধজয়ের প্রধান অংশ হচ্ছে তার এক্সারসাইজ। যে আর্মি যত বেশি অনুশীলন করে, সুসংগঠিত হয়, তারাই ক্ষমতাশালী হয় এবং তারাই যুদ্ধে জয়লাভ করে। আমরা যত যুদ্ধের ইতিহাস পড়েছি, সব জায়গায় তারাই হেরেছে যারা প্রস্তুত ছিল না। যারা চিন্তাও করেনি যে সন্ধ্যার সময় তারা আক্রমণের শিকার হতে পারে, কারণ তাদের ধারণায় ছিল আক্রমণ ভোরবেলা হবে। তার ফলে হেরে গেছে। এবার নির্বাচনটা অনেকটাই সে রকম হচ্ছে। এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে খুব কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। এবং এ কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য যদি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন তাতেই পার পেয়ে যাবেন, সেটাও একটা মারাত্মক ভুল হবে। তিনি একের পর এক জায়গায় যাচ্ছেন, বক্তব্য দিচ্ছেন, বলছেন সবকিছু। কিন্তু তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজগুলো তো আমাদের করতে হবে। সেটা কতটুকু করছি আমরা? সেদিক থেকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে তেমন উচ্ছ্বাস নেই। এদিকে নেত্রী যেমন মনে করছেন আগামীকালই নির্বাচন, আমাদেরও ঠিক সেভাবে প্রস্তুত হতে হবে। আমার মতে, দার্শনিক শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ একই পথে চলছে না। কারণ তারা ভাবছে আমাদের শেখ হাসিনা আছে, তাতেই হয়ে যাবে। যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখি যে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ শেখ হাসিনার পক্ষে আছে, ঠিক। কিন্তু এ লোকগুলোকে তো ঠিক রাখতে হবে। তিনজন ক্যান্ডিডেট যদি দলের বাইরে গিয়েই নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যায় এবং তারা আবার যদি ক্ষমা পায় তবে তারা আরও সাহস পাবে। তারা যে আবার স্বতন্ত্র দাঁড়াবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? এখন চুপচাপ থাকতে পারে। কিন্তু নির্বাচনে গিয়ে দেখা গেল যে বিএনপি অনেক টাকা খরচ করল আওয়ামী লীগের কাউকে স্বতন্ত্র দাঁড় করানোর জন্য। দুইভাবে- একভাবে বলবে শুধু তুমি দাঁড়াও নির্বাচনে তুমি ১০ কোটি টাকা পাবা। আর দ্বিতীয় হচ্ছে, তোমাকে জিতিয়ে আনার দায়িত্ব আমাদের। তাহলে এটা নিয়ে তো কর্মীদের ভাবতে হবে। এটা তো প্রেসিডেন্সিয়াল ফ্রন্ট না যে এখানে আমাদের নেত্রী আছে, নেত্রী তো ৯৫ শতাংশ ভোট নিয়ে জিতে যাবেন। তাঁর সঙ্গে কারও প্রতিযোগিতা নেই। এটা সংসদীয় নির্বাচনের মডেল। মুখে বলা হয় যে নৌকায় কলা গাছ দাঁড়ালেও হবে, বাস্তবে কিন্তু অনেক সময় সেটা না-ও হতে পারে। এই যে আমাদের কঠিন সময় আসছে এবং নির্বাচন যে কঠিন, এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আমি যতদূর দেখি কর্মীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সে ধরনের গুরুত্ব দেখিনি। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কিছু কিছু বক্তব্য আমার বেশ ভালোই লাগে। তিনি বারবার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন কর্মীদের। কিন্তু আসলে ওবায়দুল কাদেরের কথায় তো জনগণ অতটা গুরুত্ব দেয় না। জনগণের বিশ্বাস সেই একজনের প্রতি, দার্শনিক শেখ হাসিনা। তাঁর কথা সবাই বিশ্বাস করে। কিন্তু শুধু বিশ্বাস করলে তো হবে না, বিশ্বাস করে কাজটাও করতে হবে। সেই কাজ কিন্তু সেভাবে হচ্ছে না। এখন থেকেই নির্বাচন উপলক্ষে জনগণের কাছে নেতা-কর্মীদের যেতে হবে। আমি মনে করি নেত্রী কোথায় কাকে দিয়ে নির্বাচন করবেন, এখনই তাদের নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া উচিত। যাতে তারা তাদের নিজস্ব এলাকায় সব গোছাতে পারেন। কারণ নির্বাচনের তারিখ পড়ার পরে তিন-চার মাসের প্রস্তুতিতে নির্বাচন জেতা খুব কঠিন হবে। এখানে নেত্রী যদি মনে করেন তিনি ৮০-১০০ জনকে নির্বাচনে পরিবর্তন করতে চান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে, তাহলে এখন থেকেই জানা প্রয়োজন তারা কারা। আর এটাও ঠিক যে, আওয়ামী লীগ ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার ফলে অনেক কাকের অনুপবেশ ঘটেছে। কতবার ওবায়দুল কাদের সাহেব বললেন কাক ঢুকেছে। এখন কথা হলো, কাক ঢুকতে তিনি দেখলেন, বের হতে দেখা গেছে সে কথা কিন্তু তিনি কোনো সময় বললেন না। অর্থাৎ একবার কাক ভিতরে আসতে পারলেই তাদের পার্মানেন্ট স্থান হয়ে যায়। সেখানে আমি সেভাবে কোনো পার্থক্য দেখি না। সেই কাউয়ারাই আছেন। সুতরাং তাদের যখন সুযোগ হবে তখন সেই সুযোগে অন্যের টাকা নিয়ে আবার নির্বাচনে দাঁড়াবে না তা কে জানে? এবং মনে রাখতে হবে, নির্বাচনে জেতার চেয়ে যে কোনো একজন জনপ্রিয় নেতাকে নির্বাচনে হারিয়ে দেওয়া সহজ। বিশেষ করে যেখানে বিএনপির মতো দল বিপুল টাকা নিয়ে বসে আছে। তারা দেশের এই যে বিভিন্ন জনসমাবেশ ও মিটিং করে এ টাকা বাইরে থেকে আসে বলে আমি বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি দেশের ব্যবসায়ীরাই টাকা দেওয়া শুরু করেছেন। তাদের অনেকেই ক্ষমতায় যারা থাকেন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন, কিন্তু যারা ক্ষমতায় নেই তাদের যে টাকাপয়সা দিচ্ছেন না তা কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য নয়। বরং আমি বিশ্বাস করি তারা দুই দিকেই টাকা দিচ্ছেন এবং আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ইতোমধ্যে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে টাকাপয়সা, মিডিয়ার ব্যবহার হচ্ছে। যে কোনো দিনের একটা পত্রিকা আপনি খুলে দেখুন না কেন। এত ভালো ভালো কাজ হচ্ছে, কই সেভাবে তো শিরোনাম আসে না। আপনি যে কোনো একটা জিনিস ধরলে সেটা নিয়ে আলাদা করে লেখা যেত, পিএইচডি থিসিস করা যেত। আজকে পদ্মা সেতু হলো, মেট্রোরেল হলো, বঙ্গবন্ধু টানেল হলো, এদিকে পাতালরেল করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসব না হয় বাদই দিলাম, এর আগে এই যে বিধবা ভাতা দিল, এই বিধবা ভাতার ওপর একটা পিএইচডি থিসিস হতে পারত না? এর ওপর আলোচনা হয় না। কারা করেন? এই যে তিনি এত গবেষণার কথা বলেন, আমি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। আমার কাছে কোনো বাজেটই নেই ঠিকমতো। অথচ অনেকে পরিচয় থাকার জন্য সরকারের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা নিয়ে যান গবেষণা করার জন্য। তাহলে সিস্টেমটা কীভাবে কাজ করছে? এগুলো তো আমদের চিন্তা করতে হবে, স্পষ্টভাবে বলতে হবে। কে কোন পদে থাকল বা না থাকল সেটা নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও তাঁর দর্শন যদি আমাদের কাজে পরিণত করতে হয় তাহলে তাঁর দর্শনকে তাঁর ক্ষমতা অনুযায়ী সমর্থন দিতে হবে। সেই সমর্থন এ সরকারের দ্বারা আমরা এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে পাচ্ছি না। যার জন্য দেখা যায় এই যে বলা হয়, ডাক্তার গ্রামে দিলাম তারা থাকে না কিংবা বলে থাকার জায়গা নেই, এটা ঠিক না। অনেক জায়গায় থাকার জায়গা আছে। থাকতে পারে না কেন? সেটি তদবিরের কারণে। তদবির কারা করে? যারা ক্ষমতাশালী তারা। আমি উদাহরণ দিয়ে বলি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে চক্ষু হাসপাতালটা মূলত নেত্রীর সঙ্গে আলাপ করে আমিই গড়ে তুলেছিলাম। নেত্রীর অনেক দূরদর্শিতার জন্য আগে স্কুলঘরে আই ক্যাম্প করা হতো। সে সময় কোনো রোগীর ওপর অপারেশন করলে ইনফেকশন হতো। ফলে সব রোগীকে আমরা ভালো চিকিৎসা দিতে পারতাম না। নেত্রীর সঙ্গে যখন কথা বললাম যে এটা যদি আমরা একটা গাড়িতে ওটি গড়ে তুলতে পারি এবং ক্যাম্পের রোগীদের এখানে এনে অপারেশন করাতে পারি তবে ইনফেকশনের আশঙ্কা কমে যাবে। উনি সঙ্গে সঙ্গে মত দিলেন এবং যতটুকু সহযোগিতা করা প্রয়োজন করলেন। এবং এটা বঙ্গমাতা আই কেয়ার প্রজেক্ট নামে আমি শুরু করলাম ১৯৯৭-এ। নেত্রীর পরামর্শ, নির্দেশনা অনুযায়ী বিরাট পরিবর্তন এলো বাংলাদেশে। ইনফেকশন রেট কমে গেল। আই ক্যাম্প বাদ হয়ে গেল। তবে ক্যাম্প বাদ হলেও ক্যাম্পের রোগীরা হাসপাতালে এসে চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের দৃষ্টি ফিরে পেল। এবং ইন্ট্রাঅক্যুলারি ইমপ্লান্ট- সবচেয়ে বেস্ট পসিবল দৃষ্টি যা এখনো বাংলাদেশে অনেকে ১ লাখ টাকার ওপরে নেয়, নেত্রী সেটা বিনামূল্যে করে দিলেন। এরপর আসে ভিশন সেন্টার। নেত্রী একদিন কথায় কথায় বললেন যে এটার নাম যেন আই সেন্টার দেওয়া হয়। আমার কাছেও সেটাই যুক্তিযুক্ত মনে হলো। নেত্রী খুব চিন্তা করেন এগুলো নিয়ে তা বোঝা যায়। আই সেন্টার নাম দিয়েই আই সেন্টারগুলো- এর মাঝে একটা ব্যাপার আছে। এগুলো কিন্তু সঠিকভাবে চালাতে হবে। আমাদের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, এটা একটা সেন্টার অব এক্সিলেন্স হবে। ন্যাশনাল আই কেয়ার পলিসি তো এখানে করার দরকার নেই। এটার হেডকোয়ার্টার হওয়া উচিত ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান’-এ গোপালগঞ্জে। কিন্তু তার পরে কী কারণে জানি না এটা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অন্তর্গত হলো। অথচ বঙ্গমাতার নামে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল একটা পরিত্যক্ত হাসপাতালের মতো অবস্থা হলো। বর্তমানে একজন ভালো পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটা আমিই লিখিত আকারে দিয়েছিলাম। কারণ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে জনগণ কী সুবিধা পাচ্ছে তা বোঝাতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমর্থন পেতে গেলে নেত্রী কী করেছেন সেই মেসেজটা অন্তত দিতে হবে। কিন্তু সেটা অর্গানাইজড করতে আমি এখনো সক্ষম হইনি। সুতরাং আমি চাই কাজগুলো আমরা সঠিকভাবে করব। এতে কে খুশি হলো না হলো, তাতে কিছু আসে যায় না। আসল হচ্ছে যে, দার্শনিক শেখ হাসিনা যদি এ দেশ পরিচালনা করার ব্যাপারে নিজেও বলেন যে আমি অনেক করেছি। এখন আমি দেশ পরিচালনা না করে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বিশ্রাম নেব, দেশ চলুক। তাহলে বাংলাদেশে এতদিনে যা যা অর্জন তা শেষ হতে এক মাসও লাগবে না। সুতরাং আমাদের প্রতিটা লোকের দায়িত্ব কত বেশি তা আমাদের ভাবতে হবে। শুধু নেত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকলে তো চলবে না। নেত্রীকে যেটা বলা দরকার বলতে হবে, যেটা আনা দরকার আনতে হবে, যে সাহায্য দরকার সেটা নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, দার্শনিক শেখ হাসিনার যে দর্শন তা বুঝতে হবে। তিনি যে বক্তব্য দেন সেটা বুঝে সঠিকভাবে কাজ করে সেভাবেই আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে।

লেখক : সাবেক উপদেষ্টা, চেয়ারম্যান, বিএমআরসি

ইমেইল : [email protected]      সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com