এনক্রিপ্টেড ম্যাসেজিং অ্যাপের’ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় ভয়ানক মাদক ক্রিষ্টাল মেথ

রাজধানীসহ সারাদেশে অতি আসক্তি সৃষ্টিকারী মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে। মূলত “এনক্রিপ্টেড ম্যাসেজিং” অ্যাপের মাধ্যমে এ বাজার পরিচালিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন। শতাধিক ডিলার সক্রিয় রয়েছে।

 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ১০০ জন ডিলারের সহায়তায় ৪০ থেকে ৪৫ জন এই মাদক ব্যবসায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইয়াবার মতো এটিও মূলত মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করে। তুলনামূলক ব্যয়বহুল এ মাদক প্রায়ই রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে দেশের সীমানায় প্রবেশ করে। পরে পরিবহন কর্মীরা এগুলো ঢাকাসহ সারাদেশে নিয়ে যান। ক্রিস্টাল মেথের পাচার সম্প্রতি বেড়েছে।

ডিএনসির কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে মোহাম্মদপুরে দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের পর তারা আইসের বিষয়ে জানতে পারেন। গেল বছরেই ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ৮টি অভিযানে অন্তত ৭ দশমিক ৭২ কেজি আইস উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এক আইস ব্যবহারকারী জানান, ঢাকায় ২০১৭ সাল থেকে মাদকটি পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ আইস ব্যবসায়ী ইয়াবাও বিক্রি করেন। আমরা এগুলো ম্যাসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে বা ফোনে অর্ডার করি।

 

ডিএনসির সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, ‘আইস বিক্রেতারা অচেনা ব্যক্তিদের মাদক সরবরাহ করেন না। ব্যবহারকারী ও ডিলাররা বেশিরভাগই সমাজের উঁচু স্তরের। তারা একে অপরের সঙ্গে পার্টিতে পরিচিত হন।’ ব্যবহারকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে, মাত্র ১০ গ্রাম আইসের দাম ১ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে ৮০ হাজার টাকা হয়। মেহেদী বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি এবং ঢাকায় এই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি। টেকনাফে আইস সরবরাহকারীদের সম্পর্কে কিছু তথ্যও পেয়েছি। শিগগির অভিযান চালানো হবে।’

 

কক্সবাজারের এক স্থানীয় জানান, নাফ নদী এবং হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আইস দেশে প্রবেশ করে। তিনি জানান, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় নারীরা সীমান্ত পেরিয়ে আইস নিয়ে আসে। কখনো কখনো রোহিঙ্গারা পাচারের কাজে মাছ ধরার নৌকা ব্যবহার করে। মাদকের ডিলাররা ইয়াবা ও আইস একইসঙ্গে পাচার করেন।

 

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, পাচারকারীরা পরিচয় গোপন রাখতে ‘একাধিক স্তরে’ কাজ করে। প্রতিটি স্তরের একজন প্রধান আছে। শুধুমাত্র একজন প্রধান অন্য প্রধানের পরিচয় জানে। কোনো সদস্যই চক্রের সব সদস্যকে চেনে না।

 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (গুলশান বিভাগ) উপ-কমিশনার মশিউর রহমান জানান, জঙ্গি সংগঠনগুলোও একইভাবে কাজ করত। তিনি বলেন, ‘পাচারকারীদের একটি স্তর মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। আরেকটি স্তর কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে আইস নিয়ে যায়। এরপর আরেকটি স্তর এগুলো ঢাকায় নিয়ে যায় এবং শেষ স্তরটি ব্যবহারকারীদের হাতে আইস পৌঁছে দেয়। ঢাকাসহ সারাদেশে আইসের বাজার আছে। আমরা সতর্কতা বাড়িয়েছি এবং সিন্ডিকেটের সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি।’  সূএ: আমাদের সময় ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ঘূর্ণিঝড়ে আলফাডাঙ্গার ২২ গ্রাম বিধ্বস্ত

» প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা আগামীকাল

» আইপিইউর এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের চেয়ারম্যান হলেন স্পিকার

» এক শহরের মধ্যে দুই দেশ

» ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে খেলে রোজা শুদ্ধ হবে?

» মশার কামড়ে গায়ে চাকা চাকা দাগ হলে কী করবেন?

» মাটিভর্তি ট্রাকের ধাক্কায় অটোভ্যান দুমড়ে-মুচড়ে চালক নিহত

» ২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে বুলডোজার দিয়ে বালুচাপা দিলো ইসরায়েল

» বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছিল: ওবায়দুল কাদের

» চেক প্রতারণার মামলা ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

এনক্রিপ্টেড ম্যাসেজিং অ্যাপের’ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় ভয়ানক মাদক ক্রিষ্টাল মেথ

রাজধানীসহ সারাদেশে অতি আসক্তি সৃষ্টিকারী মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে। মূলত “এনক্রিপ্টেড ম্যাসেজিং” অ্যাপের মাধ্যমে এ বাজার পরিচালিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন। শতাধিক ডিলার সক্রিয় রয়েছে।

 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ১০০ জন ডিলারের সহায়তায় ৪০ থেকে ৪৫ জন এই মাদক ব্যবসায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইয়াবার মতো এটিও মূলত মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করে। তুলনামূলক ব্যয়বহুল এ মাদক প্রায়ই রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে দেশের সীমানায় প্রবেশ করে। পরে পরিবহন কর্মীরা এগুলো ঢাকাসহ সারাদেশে নিয়ে যান। ক্রিস্টাল মেথের পাচার সম্প্রতি বেড়েছে।

ডিএনসির কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে মোহাম্মদপুরে দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের পর তারা আইসের বিষয়ে জানতে পারেন। গেল বছরেই ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ৮টি অভিযানে অন্তত ৭ দশমিক ৭২ কেজি আইস উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এক আইস ব্যবহারকারী জানান, ঢাকায় ২০১৭ সাল থেকে মাদকটি পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ আইস ব্যবসায়ী ইয়াবাও বিক্রি করেন। আমরা এগুলো ম্যাসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে বা ফোনে অর্ডার করি।

 

ডিএনসির সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, ‘আইস বিক্রেতারা অচেনা ব্যক্তিদের মাদক সরবরাহ করেন না। ব্যবহারকারী ও ডিলাররা বেশিরভাগই সমাজের উঁচু স্তরের। তারা একে অপরের সঙ্গে পার্টিতে পরিচিত হন।’ ব্যবহারকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে, মাত্র ১০ গ্রাম আইসের দাম ১ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে ৮০ হাজার টাকা হয়। মেহেদী বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি এবং ঢাকায় এই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি। টেকনাফে আইস সরবরাহকারীদের সম্পর্কে কিছু তথ্যও পেয়েছি। শিগগির অভিযান চালানো হবে।’

 

কক্সবাজারের এক স্থানীয় জানান, নাফ নদী এবং হোয়াইক্যং এলাকা দিয়ে আইস দেশে প্রবেশ করে। তিনি জানান, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় নারীরা সীমান্ত পেরিয়ে আইস নিয়ে আসে। কখনো কখনো রোহিঙ্গারা পাচারের কাজে মাছ ধরার নৌকা ব্যবহার করে। মাদকের ডিলাররা ইয়াবা ও আইস একইসঙ্গে পাচার করেন।

 

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, পাচারকারীরা পরিচয় গোপন রাখতে ‘একাধিক স্তরে’ কাজ করে। প্রতিটি স্তরের একজন প্রধান আছে। শুধুমাত্র একজন প্রধান অন্য প্রধানের পরিচয় জানে। কোনো সদস্যই চক্রের সব সদস্যকে চেনে না।

 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (গুলশান বিভাগ) উপ-কমিশনার মশিউর রহমান জানান, জঙ্গি সংগঠনগুলোও একইভাবে কাজ করত। তিনি বলেন, ‘পাচারকারীদের একটি স্তর মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। আরেকটি স্তর কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে আইস নিয়ে যায়। এরপর আরেকটি স্তর এগুলো ঢাকায় নিয়ে যায় এবং শেষ স্তরটি ব্যবহারকারীদের হাতে আইস পৌঁছে দেয়। ঢাকাসহ সারাদেশে আইসের বাজার আছে। আমরা সতর্কতা বাড়িয়েছি এবং সিন্ডিকেটের সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি।’  সূএ: আমাদের সময় ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com