এটিএম বুথে বিদেশি প্রতারকের হানা

দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথে বিদেশি প্রতারক চক্রের হানায় চিন্তিত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সব ব্যাংকের বুথগুলো কীভাবে আরও আধুনিকায়ন করা যায় এবং আন্তর্জাতিক মানের ডিভাইস বসানো যায় তা ভেবে দেখছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি প্রতারকরা ব্যাংকের সার্ভার হ্যাক করে টাকা উত্তোলন করায় ভাবিয়ে তুলেছে কর্তৃপক্ষকে। প্রতারকরা সার্ভার হ্যাক করে বুথগুলোতে ম্যালওয়্যার স্থাপন ও ভার্জিন কার্ডের মাধ্যমে টাকা তুলে নিচ্ছে। গত ১৯শে জানুয়ারি আন্তর্জাতিক মানের হ্যাকার তুর্কি নাগরিক হাকান জানবারকানকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির সিটিটিসি। হাকান এর আগে বাংলাদেশে তিনবার এসেছিল বলে পুলিশের কাছে সে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।

তার কাছে কয়েকটি ব্যাংকের নকল কার্ড পাওয়া গেছে। ওই ব্যাংকগুলো থেকে সে টাকা উত্তোলন করেছে কি-না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ইস্টার্ন ব্যাংকের বুথে টাকা উত্তোলনের অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। বিদেশি প্রতারক যে ভার্জিন কার্ড ব্যবহার করছে তা মূলত এক ধরনের এটিএম কার্ড। যাতে গ্রাহকের কোনো তথ্য-উপাত্ত থাকে না। এসব ভার্জিন কার্ডে গ্রাহকের তথ্য প্রবেশ করানোর পরই তা ব্যাংকের মূল সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার উপযোগী হয়। এর আগে টেলার মেশিনে প্রবেশ করানো হলে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সার্ভারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে না। জালিয়াতির জন্য ফাস্ট ক্যাশ সিস্টেম নামে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যাংকের মূল সার্ভারে ম্যালওয়্যারে অনুপ্রবেশ করায় হ্যাকাররা। এটি কাজে লাগিয়ে ব্যাংকের মূল সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত না হয়েও ভার্জিন কার্ডের মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী টাকা তুলে নিতে সক্ষম হয় দুর্বৃত্ত হ্যাকাররা। এমন কাণ্ড করে গত ৫ বছরে ১৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিদেশি প্রতারক চক্র।

এ বিষয়ে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের এডিসি  মো. তৌহিদুল ইসলাম  জানান, বিদেশি প্রতারকরা প্রযুক্তির মাধ্যমে নকল কার্ড দিয়ে বুথগুলো থেকে টাকা উত্তোলন করছে। আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর পরই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

যোগাযোগ করা হলে মিউচ্যুয়াল ট্র্যাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান জানান,  সাম্প্রতিক সময়ে বুথগুলো থেকে অবৈধভাবে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে আমরা সচেতন আছি। আমরা বুথগুলোতে উন্নতমানের ডিভাইস বসাচ্ছি।

তিনি আরও জানান, মূল সার্ভারের সঙ্গে যাতে কোনোভাবে বুথগুলোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা না যায় সেদিকে নজর দিয়ে উন্নতমানের মেশিন বসানো হয়েছে। সিসি ক্যামেরা ছাড়াও অবৈধ লেনদেন হলে যাতে সার্ভারে অ্যালার্মিং বাজতে থাকে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৯শে মে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যালের বুথ থেকে ওই কার্ড দিয়ে তোলা টাকাসহ চীনা নাগরিক জু জিয়ানহুইকে (৩৮) আটক করে র‌্যাব। ওই প্রতারক প্রাইম ব্যাংকের ফার্মগেট ও পান্থপথের দু’টি এটিএম বুথ থেকে ৫ লাখ ৯ হাজার টাকা তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ ব্যাংকটির। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্লোন কার্ড দিয়ে বেসরকারি অপর তিনটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগে এক জার্মান নাগরিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরবর্তীতে জালিয়াতি চক্রের অন্যতম গডফাদার পোল্যান্ডের নাগরিক পিউটরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পিউটর দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা চুরি করে জার্মানিতে পাঠিয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে ৪ঠা জুন জালিয়াতির মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে প্রায় ১৬ লাখ টাকা উত্তোলনের অভিযোগে ৬ ইউক্রেনীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সূত্র জানায়, যেসব বিদেশি প্রতারক এখন ব্যাংকগুলোর বুথে হানা দিয়ে টাকা তুলছে তারা জ্যাকপট নামে একটি বিশেষায়িত ম্যালওয়্যার স্থাপন করছে। এটি দ্বারা একটি নির্দিষ্ট এটিএম বুথকে তার ব্যাংকের নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যায়। এরপর ওই বুথ থেকে ইচ্ছামতো টাকা তুলে নেয়া যায়। এ ছাড়াও তারা কার্ড স্কিমিং, কার্ড ক্লোনিং, সার্ভার থেকে পিন কোড চুরি ও হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা দেদারসে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» চিনির উৎপাদন বৃদ্ধি সময়ের দাবি- ধর্মমন্ত্রী

» কৃষি জমি রক্ষায় ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে – ভূমিমন্ত্রী

» ইসলামপুরে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী উদ্বোধন

» বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা

» জয়পুরহাটে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শন -২০২৪

» বোতলজাত সয়াবিনের দাম বাড়ল, কমল খোলা তেলের

» নানার বাড়িতে শিশুকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগে ১জন আটক

» নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ইসি আলমগীর

» অপপ্রচার রোধে ভারতের সহযোগিতা চাইলো বাংলাদেশ

» উপজেলা নির্বাচনে নেতাদের হস্তক্ষেপ বন্ধে কঠোর নির্দেশনা আ.লীগের : কাদের

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

এটিএম বুথে বিদেশি প্রতারকের হানা

দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথে বিদেশি প্রতারক চক্রের হানায় চিন্তিত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সব ব্যাংকের বুথগুলো কীভাবে আরও আধুনিকায়ন করা যায় এবং আন্তর্জাতিক মানের ডিভাইস বসানো যায় তা ভেবে দেখছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি প্রতারকরা ব্যাংকের সার্ভার হ্যাক করে টাকা উত্তোলন করায় ভাবিয়ে তুলেছে কর্তৃপক্ষকে। প্রতারকরা সার্ভার হ্যাক করে বুথগুলোতে ম্যালওয়্যার স্থাপন ও ভার্জিন কার্ডের মাধ্যমে টাকা তুলে নিচ্ছে। গত ১৯শে জানুয়ারি আন্তর্জাতিক মানের হ্যাকার তুর্কি নাগরিক হাকান জানবারকানকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির সিটিটিসি। হাকান এর আগে বাংলাদেশে তিনবার এসেছিল বলে পুলিশের কাছে সে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।

তার কাছে কয়েকটি ব্যাংকের নকল কার্ড পাওয়া গেছে। ওই ব্যাংকগুলো থেকে সে টাকা উত্তোলন করেছে কি-না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ইস্টার্ন ব্যাংকের বুথে টাকা উত্তোলনের অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। বিদেশি প্রতারক যে ভার্জিন কার্ড ব্যবহার করছে তা মূলত এক ধরনের এটিএম কার্ড। যাতে গ্রাহকের কোনো তথ্য-উপাত্ত থাকে না। এসব ভার্জিন কার্ডে গ্রাহকের তথ্য প্রবেশ করানোর পরই তা ব্যাংকের মূল সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার উপযোগী হয়। এর আগে টেলার মেশিনে প্রবেশ করানো হলে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সার্ভারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে না। জালিয়াতির জন্য ফাস্ট ক্যাশ সিস্টেম নামে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যাংকের মূল সার্ভারে ম্যালওয়্যারে অনুপ্রবেশ করায় হ্যাকাররা। এটি কাজে লাগিয়ে ব্যাংকের মূল সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত না হয়েও ভার্জিন কার্ডের মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী টাকা তুলে নিতে সক্ষম হয় দুর্বৃত্ত হ্যাকাররা। এমন কাণ্ড করে গত ৫ বছরে ১৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিদেশি প্রতারক চক্র।

এ বিষয়ে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের এডিসি  মো. তৌহিদুল ইসলাম  জানান, বিদেশি প্রতারকরা প্রযুক্তির মাধ্যমে নকল কার্ড দিয়ে বুথগুলো থেকে টাকা উত্তোলন করছে। আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর পরই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

যোগাযোগ করা হলে মিউচ্যুয়াল ট্র্যাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান জানান,  সাম্প্রতিক সময়ে বুথগুলো থেকে অবৈধভাবে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে আমরা সচেতন আছি। আমরা বুথগুলোতে উন্নতমানের ডিভাইস বসাচ্ছি।

তিনি আরও জানান, মূল সার্ভারের সঙ্গে যাতে কোনোভাবে বুথগুলোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা না যায় সেদিকে নজর দিয়ে উন্নতমানের মেশিন বসানো হয়েছে। সিসি ক্যামেরা ছাড়াও অবৈধ লেনদেন হলে যাতে সার্ভারে অ্যালার্মিং বাজতে থাকে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৯শে মে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যালের বুথ থেকে ওই কার্ড দিয়ে তোলা টাকাসহ চীনা নাগরিক জু জিয়ানহুইকে (৩৮) আটক করে র‌্যাব। ওই প্রতারক প্রাইম ব্যাংকের ফার্মগেট ও পান্থপথের দু’টি এটিএম বুথ থেকে ৫ লাখ ৯ হাজার টাকা তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ ব্যাংকটির। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্লোন কার্ড দিয়ে বেসরকারি অপর তিনটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগে এক জার্মান নাগরিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরবর্তীতে জালিয়াতি চক্রের অন্যতম গডফাদার পোল্যান্ডের নাগরিক পিউটরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পিউটর দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা চুরি করে জার্মানিতে পাঠিয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে ৪ঠা জুন জালিয়াতির মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে প্রায় ১৬ লাখ টাকা উত্তোলনের অভিযোগে ৬ ইউক্রেনীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সূত্র জানায়, যেসব বিদেশি প্রতারক এখন ব্যাংকগুলোর বুথে হানা দিয়ে টাকা তুলছে তারা জ্যাকপট নামে একটি বিশেষায়িত ম্যালওয়্যার স্থাপন করছে। এটি দ্বারা একটি নির্দিষ্ট এটিএম বুথকে তার ব্যাংকের নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যায়। এরপর ওই বুথ থেকে ইচ্ছামতো টাকা তুলে নেয়া যায়। এ ছাড়াও তারা কার্ড স্কিমিং, কার্ড ক্লোনিং, সার্ভার থেকে পিন কোড চুরি ও হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা দেদারসে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com