মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা অতি সম্প্রতি তিনজন মাদক কারবারিকে আটক করেছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন মাসওয়া আকবর খান সায়েম। ৩৫ বছর বয়সী সায়েম মূলত একজন পেশাদার ইয়াবা কারবারি। দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা কারবার করছিলেন।
কক্সবাজারও টেকনাফ থেকে ইয়াবার চালান এনে বিক্রি করতেন। নিয়মিত ইয়াবা আনার সুবাদে কিছুদিন আগে তার সঙ্গে এক আইস কারবারির সম্পর্ক হয়। এরপর থেকে ওই কারবারির নানা রকম প্রলোভনে সায়েম নিজেই আইস কারবারে জড়িত হয়। শুধু সায়েম নন।
সারা দেশে আইসের চাহিদা বাড়ায় অনেক ইয়াবা কারবারিরা এখন আইসের ব্যবসা করছেন। চাহিদা ও লাভ বেশি এবং ধরা পড়ার ঝুঁকি কম থাকায় আইসের ব্যবসাতে ঝুঁকে পড়েছেন।
আইস নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি), কোস্ট গার্ড, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে। বিভিন্ন অভিযানে সংস্থাগুলো বিপুল পরিমাণ আইস জব্দ করেছে। আসামি গ্রেপ্তারের পাশাপাশি অনেক সেবনকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে এদের মধ্যে বিজিবি সবচেয়ে বেশি আইসের চালান জব্দ করেছে। সংস্থাটি চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই শুধু ১০৫ কোটি টাকার আইস জব্দ করেছে। এরমধ্যে গত ৩০শে জানুয়ারি কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন প্রায় ৯ কেজি আইস উদ্ধার করেছে। এই আইসের বাজারমূল্য ৪৫ কোটি টাকা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি সদস্যরা ওইদিন উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখাল কাটা পাহাড় নামক স্থানে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেনের আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে। তার আস্তানায় তল্লাশি করে ওই আইস উদ্ধার করা হয়। এর আগে ২০শে জানুয়ারি একই ব্যাটালিয়ন উখিয়ার পালংখালী বাজারে অভিযান চালিয়ে ২৫ কোটি টাকার পাঁচ কেজি আইস উদ্ধার করে।
গোয়েন্দারা বলছেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবস্থান করায় তাদের সঙ্গে ওই দেশের মাদক কারবারিদের ভালো যোগাযোগ রয়েছে। মূলত মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে আইসের ব্যবসা ছড়িয়েছেন। এসব রোহিঙ্গারা এতদিন ইয়াবা ব্যবসা করতো। কিন্তু লাভজনক হওয়াতে নতুন এই ব্যবসায় তারা এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মিয়ানমার থেকে যতগুলো চালান দেশে ঢুকে তার প্রত্যকটি চালানের বহনকারী হলো রোহিঙ্গারা। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা কৌশলে চালান দেশে প্রবেশ করে। দেশে প্রবেশের পর চালান চলে যায় রোহিঙ্গা শিবিরের মাদক সন্ত্রাসীদের কাছে। পরে সেখান থেকে সুযোগ সুবিধামতো দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যায়। তবে চালান একবার রোহিঙ্গা শিবিরে প্রবেশ করতে পারলে আর কোনো সমস্যা থাকে না।
মাদক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গোয়েন্দা তথ্য ছাড়া চালান ধরার কোনো উপায় নাই। যখন মিয়ানমার থেকে চালান বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয় তখন একটা চেইন সেখানে কাজ করে। মূলত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ এড়ানোর জন্য চেইনটি কাজ করে। অনেক সময় গোয়েন্দা তথ্য থাকা সত্ত্বেও চালান ধরা সম্ভব হয় না। এই হিসাবে যে পরিমাণ চালান ধরা পড়ছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি চালান দেশে ছড়াচ্ছে।
বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মো. মেহেদি হোসাইন কবির বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় যাদেরকে গ্রেপ্তার করি তারা হচ্ছে বহনকারী। এদের শতভাগই রোহিঙ্গা। টাকার বিনিময়ে তারা আইস বহন করে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বলে তাদের হাতে চালানটি আরেকজন দিয়েছে। এর বাইরে তারা কিছু জানে না। মূল গডফাদাররা কখনো সামনে আসে না। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। ধরা পড়া আইসের গন্তব্য কোথায় সেটাও জানা যায় না। আমাদের সোর্সরাও বেশি তথ্য দিতে চায় না। কারণ তথ্যদাতার নিরাপত্তার বিষয় আছে। বড় জোর কোন পথ দিয়ে চালান প্রবেশ করবে বা কাকে ধরলে পাওয়া যাবে এতটুকু তথ্য দেয়। আইসের চালান আসা বন্ধের জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার। এক্ষেত্রে সব সংস্থার সমন্বয় দরকার। সবারই আন্তরিকতা দরকার বলে মনে করেন বিজিবির ওই কর্মকর্তা। সূএ:মানবজমিন