আবেদনের ১ বছরেও মিলছে না এমআরপি গ্রিসে দুশ্চিন্তায় পাসপোর্টহীন দুই সহস্রাধিক বাংলাদেশি

গ্রিস প্রবাসী আব্দুল কালাম চলতি বছরের মার্চ মাসের ২ তারিখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি)-এর জন্য আবেদন করেছিলেন। গ্রিসের এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস আব্দুল কালামের নতুন পাসপোর্টের আবেদনটি গ্রহণ করে পরের মাস অর্থাৎ এপ্রিলের ২৫ তারিখ পাসপোর্টটি সংগ্রহ করার জন্য একটি রসিদ দিয়েছিল। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ ভেরিফিকেশনও হয় তার। কিন্তু ৮ মাস অতিবাহিত হলেও এখনোও পাসপোর্টটি ছাপা হয়নি তার।

 

দূতাবাসে গেলে কর্মকর্তারা বলেন,  পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সার্ভারে দেখাচ্ছে ভেরিফিকেশন রিপোর্ট আসেনি। তাদের সার্ভারে পুলিশ ভেরিফিকেশন পেন্ডিং দেখাচ্ছে। অথচ আবেদনকারী হিসেবে আবেদনের অবস্থা সার্ভারে যাচাই করতে গেলে সেখানে লেখা দেখাচ্ছে- পুলিশ ভেরিফিকেশন অ্যাপ্রুভড। অপরদিকে, পুলিশও বলছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনটি তাৎক্ষনিক পাঠিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

 

১২ বছর পূর্বে হাতের লেখা পাসপোর্ট নিয়ে গ্রিসে পাড়ি দেওয়া প্রবাসী আব্দুল কালাম বলেন, এক যুগ ধরে অবৈধভাবে থাকায় দেশেও যেতে পারছি না। এবার গ্রিসে বৈধ হওয়ার সুযোগ এসেছে। কিন্তু পাসপোর্ট না পেলে আমরা এ সুযোগটি হারাবো। দূতাবাসে গেলে কর্মকর্তারা বলেন পাসপোর্ট ঢাকা অফিসে আটকে আছে। জেলা পুলিশের কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন গত এপ্রিলেই তদন্ত করে পক্ষে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন, আমাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা মোকদ্দমা নেই, এমনকি পাঠানোর প্রমাণও দেখিয়েছেন। কিন্তু দূতাবাসের কমকর্তারা অনলাইনে দেখে বলছেন পুলিশ রিপোর্টের জন্য আটক আছে। তারা কিছু জানেন না।

 

ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা আছেন এই প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা। শুধু আব্দুল কালামই নয়, গ্রিসে পাসপোর্ট জটিলতায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশির ভবিষ্যৎ। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা ইউরোপে বৈধ হতে পাসপোর্টের ভুল তথ্যের কারণে পড়ছেন নানা বিড়াম্বনায়। এমনকি অনেকেই অবৈধ পথে এনালগ পাসপোর্ট নিয়ে গ্রিসে প্রবেশ করেছেন কিন্তু তাদের কাছে বর্তমানে নেই কোন পাসপোর্ট। নতুন করে পাসপোর্ট করার সুযোগও পাচ্ছে না তারা। এমন সমস্যা প্রতিকারের আশায় দৌড়ঝাঁপ করে সদুত্তর না পেয়ে অনেকটা হতাশায় ভুগছেন। গ্রিসে বর্তমানে ৩০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি বসবাস করেন। কিন্তু এদের মধ্যে সিংহভাগই অনিয়মিত। নেই কোন বৈধ কাগজপত্র।

 

দূতাবাসের তথ্য মতে- গ্রিসে পাসপোর্ট নেই এমন পরের শত থেকে দুই হাজার বাংলাদেশি আছেন। যাদের অনেকেই এমআরপির জন্য আবেদন করেছেন। প্রায় ৫০০ আবেদন আছে যারা বিভিন্ন তথ্য পরিবর্তন করতে চান। কিন্তু এসব সকল আবেদনই আটকে আছে ঢাকায়।
পাসপোর্টের জন্য গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তরে বারবার তাগিদ দেয়া হলেও আটকে থাকা পাসপোর্টগুলো ছাপা হচ্ছে না।

 

এদিকে নানা জল্পনা কল্পনার পর বাংলাদেশ ও প্রাচীণ সভ্যতার দেশ গ্রিসের সমঝোতা চুক্তিটি গ্রিক সংসদে অনুমোদন হয়েছে। এর ফলে প্রতি বছরে ৪ হাজার করে কর্মী মৌসুমি কর্মভিসায় নেওয়ার পাশাপাশি গ্রিসে থাকা অবৈধ ১৫ হাজার অভিবাসীদেরকেও বৈধতা দেয়া হবে। অনিয়মিত বাংলাদেশীদের নিয়মিতকরন বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস এথেন্স কর্তৃক আরেকটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

 

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে- নিয়মিত হওয়ার জন্য ২ বছরের বেশি মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট, দূতাবাস হতে পাসপোর্টের সত্যায়িত কপি লাগবে। কিন্তু যাদের পাসপোর্ট নেই তারা এখন মহা বিপদে পড়েছেন। এ নিয়ে অনেকেই হতশায় ভুগছেন।

 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যে সমঝোতা চুক্তির ফলে অনিয়মিতদের বৈধ করণের সুযোগ আসছে। এ বছরই কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বৈধতা পেলে অনেকেই উপকৃত হবেন। তবে বাংলাদেশিদের বৈধ হতে প্রথম শর্ত হচ্ছে মূল পাসপোর্ট লাগবে। বর্তমানে অনেকের কাছেই পাসপোর্ট নেই। এক্ষেত্রে অনিয়মিত প্রবাসীদের পাসর্পোটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সমস্যা নিরসনের দূতাবাস ও বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা ও প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি।

 

দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ইউরোপের প্রথম মিশন হিসাবে বাংলাদেশ দূতাবাস এথেন্সে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট সেবা চালু হওয়ার কিছুদিন পর পাসপোর্ট অধিদপ্তর অত্র দূতাবাস থেকে এমআরপি পাসপোর্ট কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রিস-বাংলাদেশ দ্বীপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে গ্রিসে অনিয়মিতভাবে বসবাসরত আনুমানিক ১৫ হাজার বাংলাদেশীর বৈধ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় প্রেক্ষিতে অনিয়মিতদের দ্রুত পাসপোর্ট প্রদানের জন্য দূতাবাসের অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৬ মাসের জন্য এমআরপি পাসপোর্ট কার্যক্রম পুনরায় চালু করে যা আগামী জানুয়ারি ২০২৩ সাল পর্যন্ত চলমান থাকবে। যদি এই অনুমোদনের সময়সীমা বৃদ্ধি  করা না হয়, তবে জানুয়ারি ২০২৩ সালের পর থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা গ্রিসে বাংলাদেশ দূতাবাসে শুধুমাত্র ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট গ্রহণ করতে পারবেন। এই সময়সীমার মধ্যে যারা এমআরপি পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করেছেন বা করবেন তারা তাদের পাসপোর্ট যথা নিয়ম অনুযায়ী পাবেন।

 

এ ব্যাপারে এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিষ্টার মোহাম্মদ খালেদ বলেন, ২০২১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অনুমোদন এবং নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি তাদের পাসপোর্টে নাম, ঠিকানা ও জন্ম সালসহ বিভিন্ন ধরনের এক বা একাধিক তথ্য সংশোধনের আবেদন করেন এবং এসময় তারা তাদের আবেদনের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র পেশ করেন। এই সকল পাসপোর্ট  আবেদন পাসপোর্ট অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। প্রবাসীদের অবস্থা বিবেচনা করে এবং তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই অনিষ্পন্ন পাসপোর্ট এর আবেদনসমূহ দ্রুত নিষ্পন্ন করে প্রবাসীদের নিয়মিত হওয়ার সুযোগ দানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে এই সকল অনিষ্পন্ন পাসপোর্ট এর আবেদন সমূহ ভবিষ্যতে নিষ্পন্ন হবে।

 

এদিকে বর্তমানে গ্রিসে অনেক বাংলাদেশি আছেন যাদের কাছে কোন পাসপোর্ট নেই। ১০-১৫ বছর পূর্বে অনেকেই হাতে লেখা পাসপোর্ট নিয়ে ইরান-তুরস্ক হয়ে গ্রিসে প্রবেশ করেছেন। দালালের কথায় সেই পাসপোর্টও সীমান্তে ফেলে দিয়েছিলেন। শূন্য হাতে প্রবেশ করেছিলেন গ্রিসে। এসব এনালগ পাসপোর্টধারীদের কোনও তথ্য নেই পাসপোর্ট অধিদফতরের সার্ভারে। এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় দেড় সহস্রাধিক লোক আছে যাদের কাছে পাসপোর্ট নেই। এদের অনেকেই এক থেকে দেড় বছর আগে আবেদনের সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু পাসপোর্ট পাননি। বর্তমানে আবেদন গ্রহণ কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। তাদের উপায় কি হবে?

 

এ প্রসঙ্গে দূতাবাসের মিনিষ্টার মোহাম্মদ খালেদ বলেন, গ্রিসে বিদ্যমান প্রায় সহস্রাধিক বাংলাদেশীদের যাদের পাসপোর্ট নেই বা পূর্বে হাতে লেখা পাসপোর্ট থাকলেও তার কোনও রেকর্ড নেই। এমন আবেদনকারীদের পাসপোর্ট প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে,  যা এখনো পাসপোর্ট অধিদপ্তরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে। সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা আবেদনগুলো যথাশীঘ্র নিষ্পন্ন করা না গেলে এই সমস্ত প্রবাসীরা গ্রিস ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় বৈধ হওয়ার সুযোগ হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কোনো সমস্যা হলে ট্রিপল নাইনে জানাতে বললেন আইজিপি

» নোয়াখালীর সেই পুকুরে এবার মিলল ৪০ রুপালি ইলিশ

» রমজানের তৃতীয় জুমায় বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের ঢল

» রাজার আমন্ত্রণে ভুটান সফরে তথ্য প্রতিমন্ত্রী

» কারিনা-কারিশমার রাজনীতিতে নামার গুঞ্জন

» ‘জিয়া মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মাবরণে পাকিস্তানের দোসর ছিলেন’

» কবি মুক্তাদির চৌধুরী তরুণের ইন্তেকাল

» পুলিশের সোর্সকে চাকু মেরে হত্যা মামলার পলাতক দুই আসামি গ্রেফতার

» ব্যবহৃত অলংকারের জাকাত দিতে হবে কি?

» ফেসবুক দীর্ঘদিন লগ আউট না করলে কী হয়?

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

আবেদনের ১ বছরেও মিলছে না এমআরপি গ্রিসে দুশ্চিন্তায় পাসপোর্টহীন দুই সহস্রাধিক বাংলাদেশি

গ্রিস প্রবাসী আব্দুল কালাম চলতি বছরের মার্চ মাসের ২ তারিখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি)-এর জন্য আবেদন করেছিলেন। গ্রিসের এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস আব্দুল কালামের নতুন পাসপোর্টের আবেদনটি গ্রহণ করে পরের মাস অর্থাৎ এপ্রিলের ২৫ তারিখ পাসপোর্টটি সংগ্রহ করার জন্য একটি রসিদ দিয়েছিল। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ ভেরিফিকেশনও হয় তার। কিন্তু ৮ মাস অতিবাহিত হলেও এখনোও পাসপোর্টটি ছাপা হয়নি তার।

 

দূতাবাসে গেলে কর্মকর্তারা বলেন,  পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সার্ভারে দেখাচ্ছে ভেরিফিকেশন রিপোর্ট আসেনি। তাদের সার্ভারে পুলিশ ভেরিফিকেশন পেন্ডিং দেখাচ্ছে। অথচ আবেদনকারী হিসেবে আবেদনের অবস্থা সার্ভারে যাচাই করতে গেলে সেখানে লেখা দেখাচ্ছে- পুলিশ ভেরিফিকেশন অ্যাপ্রুভড। অপরদিকে, পুলিশও বলছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনটি তাৎক্ষনিক পাঠিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

 

১২ বছর পূর্বে হাতের লেখা পাসপোর্ট নিয়ে গ্রিসে পাড়ি দেওয়া প্রবাসী আব্দুল কালাম বলেন, এক যুগ ধরে অবৈধভাবে থাকায় দেশেও যেতে পারছি না। এবার গ্রিসে বৈধ হওয়ার সুযোগ এসেছে। কিন্তু পাসপোর্ট না পেলে আমরা এ সুযোগটি হারাবো। দূতাবাসে গেলে কর্মকর্তারা বলেন পাসপোর্ট ঢাকা অফিসে আটকে আছে। জেলা পুলিশের কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন গত এপ্রিলেই তদন্ত করে পক্ষে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন, আমাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা মোকদ্দমা নেই, এমনকি পাঠানোর প্রমাণও দেখিয়েছেন। কিন্তু দূতাবাসের কমকর্তারা অনলাইনে দেখে বলছেন পুলিশ রিপোর্টের জন্য আটক আছে। তারা কিছু জানেন না।

 

ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা আছেন এই প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা। শুধু আব্দুল কালামই নয়, গ্রিসে পাসপোর্ট জটিলতায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশির ভবিষ্যৎ। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা ইউরোপে বৈধ হতে পাসপোর্টের ভুল তথ্যের কারণে পড়ছেন নানা বিড়াম্বনায়। এমনকি অনেকেই অবৈধ পথে এনালগ পাসপোর্ট নিয়ে গ্রিসে প্রবেশ করেছেন কিন্তু তাদের কাছে বর্তমানে নেই কোন পাসপোর্ট। নতুন করে পাসপোর্ট করার সুযোগও পাচ্ছে না তারা। এমন সমস্যা প্রতিকারের আশায় দৌড়ঝাঁপ করে সদুত্তর না পেয়ে অনেকটা হতাশায় ভুগছেন। গ্রিসে বর্তমানে ৩০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি বসবাস করেন। কিন্তু এদের মধ্যে সিংহভাগই অনিয়মিত। নেই কোন বৈধ কাগজপত্র।

 

দূতাবাসের তথ্য মতে- গ্রিসে পাসপোর্ট নেই এমন পরের শত থেকে দুই হাজার বাংলাদেশি আছেন। যাদের অনেকেই এমআরপির জন্য আবেদন করেছেন। প্রায় ৫০০ আবেদন আছে যারা বিভিন্ন তথ্য পরিবর্তন করতে চান। কিন্তু এসব সকল আবেদনই আটকে আছে ঢাকায়।
পাসপোর্টের জন্য গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তরে বারবার তাগিদ দেয়া হলেও আটকে থাকা পাসপোর্টগুলো ছাপা হচ্ছে না।

 

এদিকে নানা জল্পনা কল্পনার পর বাংলাদেশ ও প্রাচীণ সভ্যতার দেশ গ্রিসের সমঝোতা চুক্তিটি গ্রিক সংসদে অনুমোদন হয়েছে। এর ফলে প্রতি বছরে ৪ হাজার করে কর্মী মৌসুমি কর্মভিসায় নেওয়ার পাশাপাশি গ্রিসে থাকা অবৈধ ১৫ হাজার অভিবাসীদেরকেও বৈধতা দেয়া হবে। অনিয়মিত বাংলাদেশীদের নিয়মিতকরন বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস এথেন্স কর্তৃক আরেকটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

 

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে- নিয়মিত হওয়ার জন্য ২ বছরের বেশি মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট, দূতাবাস হতে পাসপোর্টের সত্যায়িত কপি লাগবে। কিন্তু যাদের পাসপোর্ট নেই তারা এখন মহা বিপদে পড়েছেন। এ নিয়ে অনেকেই হতশায় ভুগছেন।

 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যে সমঝোতা চুক্তির ফলে অনিয়মিতদের বৈধ করণের সুযোগ আসছে। এ বছরই কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বৈধতা পেলে অনেকেই উপকৃত হবেন। তবে বাংলাদেশিদের বৈধ হতে প্রথম শর্ত হচ্ছে মূল পাসপোর্ট লাগবে। বর্তমানে অনেকের কাছেই পাসপোর্ট নেই। এক্ষেত্রে অনিয়মিত প্রবাসীদের পাসর্পোটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সমস্যা নিরসনের দূতাবাস ও বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা ও প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি।

 

দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ইউরোপের প্রথম মিশন হিসাবে বাংলাদেশ দূতাবাস এথেন্সে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট সেবা চালু হওয়ার কিছুদিন পর পাসপোর্ট অধিদপ্তর অত্র দূতাবাস থেকে এমআরপি পাসপোর্ট কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রিস-বাংলাদেশ দ্বীপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে গ্রিসে অনিয়মিতভাবে বসবাসরত আনুমানিক ১৫ হাজার বাংলাদেশীর বৈধ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় প্রেক্ষিতে অনিয়মিতদের দ্রুত পাসপোর্ট প্রদানের জন্য দূতাবাসের অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৬ মাসের জন্য এমআরপি পাসপোর্ট কার্যক্রম পুনরায় চালু করে যা আগামী জানুয়ারি ২০২৩ সাল পর্যন্ত চলমান থাকবে। যদি এই অনুমোদনের সময়সীমা বৃদ্ধি  করা না হয়, তবে জানুয়ারি ২০২৩ সালের পর থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা গ্রিসে বাংলাদেশ দূতাবাসে শুধুমাত্র ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট গ্রহণ করতে পারবেন। এই সময়সীমার মধ্যে যারা এমআরপি পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করেছেন বা করবেন তারা তাদের পাসপোর্ট যথা নিয়ম অনুযায়ী পাবেন।

 

এ ব্যাপারে এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিষ্টার মোহাম্মদ খালেদ বলেন, ২০২১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অনুমোদন এবং নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি তাদের পাসপোর্টে নাম, ঠিকানা ও জন্ম সালসহ বিভিন্ন ধরনের এক বা একাধিক তথ্য সংশোধনের আবেদন করেন এবং এসময় তারা তাদের আবেদনের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র পেশ করেন। এই সকল পাসপোর্ট  আবেদন পাসপোর্ট অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। প্রবাসীদের অবস্থা বিবেচনা করে এবং তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই অনিষ্পন্ন পাসপোর্ট এর আবেদনসমূহ দ্রুত নিষ্পন্ন করে প্রবাসীদের নিয়মিত হওয়ার সুযোগ দানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে এই সকল অনিষ্পন্ন পাসপোর্ট এর আবেদন সমূহ ভবিষ্যতে নিষ্পন্ন হবে।

 

এদিকে বর্তমানে গ্রিসে অনেক বাংলাদেশি আছেন যাদের কাছে কোন পাসপোর্ট নেই। ১০-১৫ বছর পূর্বে অনেকেই হাতে লেখা পাসপোর্ট নিয়ে ইরান-তুরস্ক হয়ে গ্রিসে প্রবেশ করেছেন। দালালের কথায় সেই পাসপোর্টও সীমান্তে ফেলে দিয়েছিলেন। শূন্য হাতে প্রবেশ করেছিলেন গ্রিসে। এসব এনালগ পাসপোর্টধারীদের কোনও তথ্য নেই পাসপোর্ট অধিদফতরের সার্ভারে। এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় দেড় সহস্রাধিক লোক আছে যাদের কাছে পাসপোর্ট নেই। এদের অনেকেই এক থেকে দেড় বছর আগে আবেদনের সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু পাসপোর্ট পাননি। বর্তমানে আবেদন গ্রহণ কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। তাদের উপায় কি হবে?

 

এ প্রসঙ্গে দূতাবাসের মিনিষ্টার মোহাম্মদ খালেদ বলেন, গ্রিসে বিদ্যমান প্রায় সহস্রাধিক বাংলাদেশীদের যাদের পাসপোর্ট নেই বা পূর্বে হাতে লেখা পাসপোর্ট থাকলেও তার কোনও রেকর্ড নেই। এমন আবেদনকারীদের পাসপোর্ট প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে,  যা এখনো পাসপোর্ট অধিদপ্তরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে। সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা আবেদনগুলো যথাশীঘ্র নিষ্পন্ন করা না গেলে এই সমস্ত প্রবাসীরা গ্রিস ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় বৈধ হওয়ার সুযোগ হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com