অপেক্ষা কমছে মেট্রোরেলের

নিচে সমতল রাস্তা। শোঁ শোঁ গাড়ি চলছে। অবশ্য পিচঢালাই পুরোপুরি শেষ হয়নি। ওপরে মেট্রোরেলের লাইন। দিয়াবাড়ীর ডিপো থেকে উঠে এসেছে পৃথক পৃথক রেললাইন। যুক্ত হয়েছে মেট্রোরেলের প্রধান স্টেশনের সঙ্গে। স্টেশনের নিচের রাস্তা দিয়ে হাঁটলে চোখে পড়ে লিফট। এই লিফট দিয়ে উঠতে হবে স্টেশনে। কিংবা দুই পাশে থাকা সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতেই চোখে পড়বে টিকিটিং সেন্টার। তার পাশেই কন্ট্রোল রুম। টিকিটিং সেন্টারের উল্টো দিকে সুইচগেট। গেট পেরিয়ে গেলেই ডানদিকে সিঁড়ি। অন্য পাশে দুই দিক দিয়ে উঠে গেছে এক্সেলেটর (চলমান লিফট)। সিঁড়ি কিংবা এক্সেলেটর বেয়ে ওপরে উঠলেই প্ল্যাটফরম। মাথার ওপরে বড় মনিটরে শোভা পাচ্ছে ওয়েলকাম টু ঢাকা মেট্রোরেল। অন্য একাধিক মনিটরে লেখা আছে গন্তব্য আগারগাঁও। স্টেশনের নাম উত্তরা। সন্ধ্যার পর মাথার ওপরে সুসজ্জিত লাইটগুলো ঝলঝল করে জ্বলে ওঠে। রেললাইন বরাবর ওপরের দিকে ভেন্টিলেটর। যা আলোক পরিবাহী স্বচ্ছ কঠিন পদার্থ দিয়ে তৈরি। যা ছেদ করে সূর্যালোক পড়েছে পুরো স্টেশন এলাকায়। এটিই মেট্রোরেল লাইন-৬ এর প্রধান (১ নম্বর) স্টেশন। এ স্টেশনের নির্মাণ কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়ে গেছে। চলছে ঘষামাজার কাজ। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিটিএমসিএল) তথ্যমতে, এ রকম তিনটি স্টেশনের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। উত্তরা অঞ্চলের ওই তিনটি স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে শেষ মুহূর্তের ঘষামাজার কাজ চলছে।

 

দিয়াবাড়ী মেট্রোরেলের ডিপো এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সারি সারি ১৭ জোড়া ট্রেন সাজানো রয়েছে। প্রতিদিনই দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও অংশে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচলও করছে ট্রেন। বাকি আরও সাত জোড়া ট্রেন অল্প সময়ের মধ্যে জাপান থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছবে বলে আশা করছে ডিটিএমসিএল। এদিকে মিরপুর অংশে স্টেশনগুলোর সিঁড়ির কাজ চলমান। যদিও কোথাও কোথাও এখনো জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে সিঁড়ি নির্মাণের জন্য। এ অংশে এক প্রান্তে নিচের রাস্তা খানাখন্দে ভরা। এক পাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কাজের নিরাপত্তার জন্য। ফলে যানজটও লেগেই থাকছে। অবশ্য ডিসেম্বরের পর এই ভোগান্তি আর থাকবে না বলে আশা করা হচ্ছে। ঢাকাবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি দেবে স্বপ্নের মেট্রোরেল- এমন প্রত্যাশা সরকারের। লাইন-৬ উত্তরা থেকে মতিঝিল প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও-এর পূর্ত কাজ শেষ হয়েছে ৯৪ শতাংশ। এ অংশের সার্বিক কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৮৪ শতাংশ। পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। প্রকল্পের আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ী পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিক, প্রযুক্তিবিদ, প্রকৌশলীসহ কর্মীরা শিফট মেনে ২৪ ঘণ্টাই কাজ করছেন। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে দিনরাত কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন  ছিদ্দিক। তিনি বলেন, পুরো প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়েই শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। দিয়াবাড়ী ও আগারগাঁও পয়েন্ট থেকে যাত্রীদের পরবর্তী গন্তব্যে পৌঁছার জন্য আপাতত বিআরটিসির অতিরিক্ত বাস থাকবে। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তির প্রস্তুতিও নিয়েছে ডিটিএমসিএল। সংস্থাটির এমডি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিআরটিসির বাসে সংকুলান না হলে বেসরকারি কোম্পানির বাসও নেওয়া হবে মেট্রোরেলের যাত্রীসেবার জন্য। তবে ঢাকাবাসী ও সম্ভাব্য যাত্রী এবং বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ চালু হওয়ার পর যাত্রীদের চাপ ও ভোগান্তি বাড়বে আগারগাঁও এলাকায়। তিন মিনিট পর পর ট্রেন এসে থামার পর অসংখ্য যাত্রী নামবেন। পরবর্তী গন্তব্যে পৌঁছার জন্য আগারগাঁও থেকে বাস ধরতে অনেককেই ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে। এ জন্য কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী। ডিটিএমসিএল সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ ডিসেম্বরেই যাত্রী চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। বিজয় দিবসের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকাবাসীকে মেট্রোরেলের সুবিধা উন্মুক্ত করতে যাচ্ছেন। আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পদ্মা সেতুর মতো এটিও বর্তমান সরকারের অনন্য অর্জন ও উন্নয়ন।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্যমতে, (দিয়াবাড়ী) উত্তরা-আগারগাঁও অংশের কাজ ইতোমধ্যে প্রায় ৯৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। পুরো প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৮২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। উত্তরা-আগারগাঁও অংশের ৯টি স্টেশনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। বর্তমানে মেট্রোরেল পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করছে উত্তরা-আগারগাঁও পথে। এরই মধ্যে জাপান থেকে ১৭ সেট ট্রেন ঢাকায় এসেছে। আরও ৯ সেট ট্রেন আসার পথে। ট্রেন পরিচালনার জন্য নিয়ন্ত্রক ও চালকসহ অন্যান্য লোকবল নিয়োগ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে একজন নারী চালক ও একজন নারীকে নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা, আগারগাঁও, ফার্মগেট, কমলাপুরে চারটি স্টেশনে নির্মাণ করা হচ্ছে স্টেশন প্লাজা। এসব স্টেশন প্লাজা হবে সুপরিসর। যাত্রীরা প্রাইভেট কার পার্র্র্কিংয়ের সুবিধা পাবেন এসব প্লাজায়। এ ছাড়া থাকবে অন্যান্য সুবিধাও। দৃষ্টিনন্দন আইকনিক স্টেশনগুলোর স্টিল ইস্পাতের ছাউনির কাজ চলমান রয়েছে।

 

ডিটিএমসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, আসছে ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ট্রেন চালুর জন্য সব প্রস্তুতি চলছে। সব প্যাকেজের কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। আশা করা যায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব। ডিএমটিসিএলের অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের কাজ চলছে অবিরত। কর্মী, শ্রমিক, টেকনিশিয়ানরা পালা করে ২৪ ঘণ্টাই কাজ করছেন। ৩০ আগস্ট পর্যন্ত পুরো মেট্রোরেল প্রকল্পে গড় অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম অংশের বাস্তবায়ন ৯৪ দশমিক ১৪ শতাংশ।

 

দেশের প্রথম মেট্রোরেল হিসেবে এমআরটি লাইন-৬ বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের জুলাইয়ে। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালের কিছু সময় প্রকল্পের কাজে অনেকটা ধীরগতি নেমে আসে। ওই বাধা কাটিয়ে উঠে আবারও দ্রুতগতিতে চলতে থাকে প্রকল্পের কাজ। প্রথম দিকে মেট্রোরেল লাইন-৬ মতিঝিল পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলেও পরে ডিপিপি সংশোধন করে তা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত প্রসারিত করা হয়। নতুন অংশ (মতিঝিল-কমলাপুর) যোগ হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। যা মতিঝিল পর্যন্ত ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পের প্রথম অংশ উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। দ্বিতীয় অংশ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এবং তৃতীয় অংশ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৯টি প্যাকেজের কাজ চলমান।  ১ সেপ্টেম্বর থেকে মেট্রোরেলের ইন্টিগ্রেশন টেস্ট শুরু হয়েছে। পুরো প্রকল্পের এই টেস্ট সম্পন্ন হতে অন্তত তিন মাস লাগতে পারে। ট্রেন অপারেটর, চালক, নিয়ন্ত্রকসহ নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে অক্টোবর থেকে। মেট্রোরেলের ভাড়াও ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ চলছে। এর মধ্যে সরকার মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেল চালুর কথা জানালেও শুরুতে শুধু উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেল চলবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

 

প্ল্যাটফরমে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়নি : সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে প্ল্যাটফরমে যাত্রীদের বসার মতো কোনো জায়গা রাখা হয়নি। ফলে ট্রেন ধরার জন্য দাঁড়িয়েই থাকতে হবে। অসুস্থ যাত্রী, গর্ভবতী হলেও প্ল্যাটফরমে বসার সুযোগ পাবেন না। অবশ্য স্টেশনের দোতলায় বসার জায়গা রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ বা শহর যেমন নিউইয়র্ক, প্যারিস, লন্ডন জার্মানির বন শহরের মেট্রো বা সাবওয়েতে প্ল্যাটফরমে যাত্রীদের বসার জায়গা রয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ডিটিএমসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেছেন, একটি ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পর আরেকটি ট্রেন আসার সময়ের দূরত্ব খুবই কম। তাই প্ল্যাটফরমে বসার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আধুনিক মেট্রোরেলের প্ল্যাটফরমে বসার ব্যবস্থা থাকে না। অন্য যেসব দেশের প্ল্যাটফরমে বসার ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলো বেশ পুরো দিনের। তবে স্টেশনের দোতলায় টিকিট নেওয়ার পর যাত্রীদের বসার জন্য সুব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

 

মূল ফটকে লাগানো হয়েছে শাটার : সমতল ভূমি থেকে সিঁড়ি বেয়ে কিংবা লিফট দিয়ে ওপরে উঠে সামান্য হাঁটার পর স্টেশনের মূলক ফটক চোখে পড়বে। সেখানে চোখ আটকে যাবে শাটারে। যা অনেকটা দোকান ঘরের মতো ওপরে ধাক্কা দিয় খুলতে হবে। আবার টেনে নামিয়ে তালা আটকে দিতে হবে। স্টেশনগুলোর প্রতিটি সিঁড়িতে লাগানো হয়েছে লোহার গ্রিল। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের মেট্রো স্টেশনে এমন শাটার নেই। এখানে ইিউম্যান সেন্সর সংবলিত কাচের গেট লাগানো যেত। যা দেখতে সুন্দর। প্রবেশ ও বের হওয়া সহজ। মজবুতও। তবে এ বিষয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছেন ডিটিএমসিএলের এমডি এম এ এন ছিদ্দিক। তিনি বলেন, রাত ১২টা বা সাড়ে ১২টার পর যখন মেট্রো বন্ধ হয়ে যাবে তখন ভিতরে মেইনটেইন্স ও ধোয়ামোছার কাজ চলবে। তখন শাটারগুলো নামিয়ে দেওয়া হবে। যাতে বাইরে থেকে কেউ ঢুকতে না পারে কিংবা বাইরে দেখা না যায় ভিতরে কী হচ্ছে। এসব শাটার বেশ উন্নত মানের বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিটিএমসিএলের অপর এক কর্মকর্তা।

সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বিডিএস বাস্তবায়িত হলে ম্যাপ সংযুক্ত মালিকানা ভিত্তিক খতিয়ান চালু করা সম্ভব হবে – ভূমিমন্ত্রী

» বিএটি বাংলাদেশের ৫১তম এজিএম অনুষ্ঠিত

» ইসলামপুরে কৃষকরা পেল উন্নত মানের বীজ

» ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সাথে ব্র্যাক ব্যাংকের কাস্টোডিয়াল সার্ভিস চুক্তি

» এপেক্স ইন্টারন্যাশনাল জার্নালিস্ট কাউন্সিল”এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কমিটি গঠিত

» ২ লাখ টাকার ফ্যামিলি ট্রিপের সেরা ঈদ অফার দিচ্ছে রিয়েলমি

» ঘূর্ণিঝড়ে আলফাডাঙ্গার ২২ গ্রাম বিধ্বস্ত

» প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা আগামীকাল

» আইপিইউর এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের চেয়ারম্যান হলেন স্পিকার

» এক শহরের মধ্যে দুই দেশ

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অপেক্ষা কমছে মেট্রোরেলের

নিচে সমতল রাস্তা। শোঁ শোঁ গাড়ি চলছে। অবশ্য পিচঢালাই পুরোপুরি শেষ হয়নি। ওপরে মেট্রোরেলের লাইন। দিয়াবাড়ীর ডিপো থেকে উঠে এসেছে পৃথক পৃথক রেললাইন। যুক্ত হয়েছে মেট্রোরেলের প্রধান স্টেশনের সঙ্গে। স্টেশনের নিচের রাস্তা দিয়ে হাঁটলে চোখে পড়ে লিফট। এই লিফট দিয়ে উঠতে হবে স্টেশনে। কিংবা দুই পাশে থাকা সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতেই চোখে পড়বে টিকিটিং সেন্টার। তার পাশেই কন্ট্রোল রুম। টিকিটিং সেন্টারের উল্টো দিকে সুইচগেট। গেট পেরিয়ে গেলেই ডানদিকে সিঁড়ি। অন্য পাশে দুই দিক দিয়ে উঠে গেছে এক্সেলেটর (চলমান লিফট)। সিঁড়ি কিংবা এক্সেলেটর বেয়ে ওপরে উঠলেই প্ল্যাটফরম। মাথার ওপরে বড় মনিটরে শোভা পাচ্ছে ওয়েলকাম টু ঢাকা মেট্রোরেল। অন্য একাধিক মনিটরে লেখা আছে গন্তব্য আগারগাঁও। স্টেশনের নাম উত্তরা। সন্ধ্যার পর মাথার ওপরে সুসজ্জিত লাইটগুলো ঝলঝল করে জ্বলে ওঠে। রেললাইন বরাবর ওপরের দিকে ভেন্টিলেটর। যা আলোক পরিবাহী স্বচ্ছ কঠিন পদার্থ দিয়ে তৈরি। যা ছেদ করে সূর্যালোক পড়েছে পুরো স্টেশন এলাকায়। এটিই মেট্রোরেল লাইন-৬ এর প্রধান (১ নম্বর) স্টেশন। এ স্টেশনের নির্মাণ কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়ে গেছে। চলছে ঘষামাজার কাজ। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিটিএমসিএল) তথ্যমতে, এ রকম তিনটি স্টেশনের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। উত্তরা অঞ্চলের ওই তিনটি স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে শেষ মুহূর্তের ঘষামাজার কাজ চলছে।

 

দিয়াবাড়ী মেট্রোরেলের ডিপো এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সারি সারি ১৭ জোড়া ট্রেন সাজানো রয়েছে। প্রতিদিনই দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও অংশে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচলও করছে ট্রেন। বাকি আরও সাত জোড়া ট্রেন অল্প সময়ের মধ্যে জাপান থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছবে বলে আশা করছে ডিটিএমসিএল। এদিকে মিরপুর অংশে স্টেশনগুলোর সিঁড়ির কাজ চলমান। যদিও কোথাও কোথাও এখনো জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে সিঁড়ি নির্মাণের জন্য। এ অংশে এক প্রান্তে নিচের রাস্তা খানাখন্দে ভরা। এক পাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কাজের নিরাপত্তার জন্য। ফলে যানজটও লেগেই থাকছে। অবশ্য ডিসেম্বরের পর এই ভোগান্তি আর থাকবে না বলে আশা করা হচ্ছে। ঢাকাবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি দেবে স্বপ্নের মেট্রোরেল- এমন প্রত্যাশা সরকারের। লাইন-৬ উত্তরা থেকে মতিঝিল প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও-এর পূর্ত কাজ শেষ হয়েছে ৯৪ শতাংশ। এ অংশের সার্বিক কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৮৪ শতাংশ। পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। প্রকল্পের আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ী পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিক, প্রযুক্তিবিদ, প্রকৌশলীসহ কর্মীরা শিফট মেনে ২৪ ঘণ্টাই কাজ করছেন। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে দিনরাত কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন  ছিদ্দিক। তিনি বলেন, পুরো প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়েই শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। দিয়াবাড়ী ও আগারগাঁও পয়েন্ট থেকে যাত্রীদের পরবর্তী গন্তব্যে পৌঁছার জন্য আপাতত বিআরটিসির অতিরিক্ত বাস থাকবে। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তির প্রস্তুতিও নিয়েছে ডিটিএমসিএল। সংস্থাটির এমডি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিআরটিসির বাসে সংকুলান না হলে বেসরকারি কোম্পানির বাসও নেওয়া হবে মেট্রোরেলের যাত্রীসেবার জন্য। তবে ঢাকাবাসী ও সম্ভাব্য যাত্রী এবং বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ চালু হওয়ার পর যাত্রীদের চাপ ও ভোগান্তি বাড়বে আগারগাঁও এলাকায়। তিন মিনিট পর পর ট্রেন এসে থামার পর অসংখ্য যাত্রী নামবেন। পরবর্তী গন্তব্যে পৌঁছার জন্য আগারগাঁও থেকে বাস ধরতে অনেককেই ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে। এ জন্য কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী। ডিটিএমসিএল সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ ডিসেম্বরেই যাত্রী চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। বিজয় দিবসের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকাবাসীকে মেট্রোরেলের সুবিধা উন্মুক্ত করতে যাচ্ছেন। আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পদ্মা সেতুর মতো এটিও বর্তমান সরকারের অনন্য অর্জন ও উন্নয়ন।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্যমতে, (দিয়াবাড়ী) উত্তরা-আগারগাঁও অংশের কাজ ইতোমধ্যে প্রায় ৯৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। পুরো প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৮২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। উত্তরা-আগারগাঁও অংশের ৯টি স্টেশনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। বর্তমানে মেট্রোরেল পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করছে উত্তরা-আগারগাঁও পথে। এরই মধ্যে জাপান থেকে ১৭ সেট ট্রেন ঢাকায় এসেছে। আরও ৯ সেট ট্রেন আসার পথে। ট্রেন পরিচালনার জন্য নিয়ন্ত্রক ও চালকসহ অন্যান্য লোকবল নিয়োগ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে একজন নারী চালক ও একজন নারীকে নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা, আগারগাঁও, ফার্মগেট, কমলাপুরে চারটি স্টেশনে নির্মাণ করা হচ্ছে স্টেশন প্লাজা। এসব স্টেশন প্লাজা হবে সুপরিসর। যাত্রীরা প্রাইভেট কার পার্র্র্কিংয়ের সুবিধা পাবেন এসব প্লাজায়। এ ছাড়া থাকবে অন্যান্য সুবিধাও। দৃষ্টিনন্দন আইকনিক স্টেশনগুলোর স্টিল ইস্পাতের ছাউনির কাজ চলমান রয়েছে।

 

ডিটিএমসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, আসছে ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ট্রেন চালুর জন্য সব প্রস্তুতি চলছে। সব প্যাকেজের কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। আশা করা যায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব। ডিএমটিসিএলের অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের কাজ চলছে অবিরত। কর্মী, শ্রমিক, টেকনিশিয়ানরা পালা করে ২৪ ঘণ্টাই কাজ করছেন। ৩০ আগস্ট পর্যন্ত পুরো মেট্রোরেল প্রকল্পে গড় অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম অংশের বাস্তবায়ন ৯৪ দশমিক ১৪ শতাংশ।

 

দেশের প্রথম মেট্রোরেল হিসেবে এমআরটি লাইন-৬ বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের জুলাইয়ে। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালের কিছু সময় প্রকল্পের কাজে অনেকটা ধীরগতি নেমে আসে। ওই বাধা কাটিয়ে উঠে আবারও দ্রুতগতিতে চলতে থাকে প্রকল্পের কাজ। প্রথম দিকে মেট্রোরেল লাইন-৬ মতিঝিল পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলেও পরে ডিপিপি সংশোধন করে তা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত প্রসারিত করা হয়। নতুন অংশ (মতিঝিল-কমলাপুর) যোগ হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। যা মতিঝিল পর্যন্ত ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পের প্রথম অংশ উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। দ্বিতীয় অংশ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এবং তৃতীয় অংশ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৯টি প্যাকেজের কাজ চলমান।  ১ সেপ্টেম্বর থেকে মেট্রোরেলের ইন্টিগ্রেশন টেস্ট শুরু হয়েছে। পুরো প্রকল্পের এই টেস্ট সম্পন্ন হতে অন্তত তিন মাস লাগতে পারে। ট্রেন অপারেটর, চালক, নিয়ন্ত্রকসহ নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে অক্টোবর থেকে। মেট্রোরেলের ভাড়াও ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ চলছে। এর মধ্যে সরকার মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেল চালুর কথা জানালেও শুরুতে শুধু উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেল চলবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

 

প্ল্যাটফরমে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়নি : সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে প্ল্যাটফরমে যাত্রীদের বসার মতো কোনো জায়গা রাখা হয়নি। ফলে ট্রেন ধরার জন্য দাঁড়িয়েই থাকতে হবে। অসুস্থ যাত্রী, গর্ভবতী হলেও প্ল্যাটফরমে বসার সুযোগ পাবেন না। অবশ্য স্টেশনের দোতলায় বসার জায়গা রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ বা শহর যেমন নিউইয়র্ক, প্যারিস, লন্ডন জার্মানির বন শহরের মেট্রো বা সাবওয়েতে প্ল্যাটফরমে যাত্রীদের বসার জায়গা রয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ডিটিএমসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেছেন, একটি ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পর আরেকটি ট্রেন আসার সময়ের দূরত্ব খুবই কম। তাই প্ল্যাটফরমে বসার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আধুনিক মেট্রোরেলের প্ল্যাটফরমে বসার ব্যবস্থা থাকে না। অন্য যেসব দেশের প্ল্যাটফরমে বসার ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলো বেশ পুরো দিনের। তবে স্টেশনের দোতলায় টিকিট নেওয়ার পর যাত্রীদের বসার জন্য সুব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

 

মূল ফটকে লাগানো হয়েছে শাটার : সমতল ভূমি থেকে সিঁড়ি বেয়ে কিংবা লিফট দিয়ে ওপরে উঠে সামান্য হাঁটার পর স্টেশনের মূলক ফটক চোখে পড়বে। সেখানে চোখ আটকে যাবে শাটারে। যা অনেকটা দোকান ঘরের মতো ওপরে ধাক্কা দিয় খুলতে হবে। আবার টেনে নামিয়ে তালা আটকে দিতে হবে। স্টেশনগুলোর প্রতিটি সিঁড়িতে লাগানো হয়েছে লোহার গ্রিল। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের মেট্রো স্টেশনে এমন শাটার নেই। এখানে ইিউম্যান সেন্সর সংবলিত কাচের গেট লাগানো যেত। যা দেখতে সুন্দর। প্রবেশ ও বের হওয়া সহজ। মজবুতও। তবে এ বিষয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছেন ডিটিএমসিএলের এমডি এম এ এন ছিদ্দিক। তিনি বলেন, রাত ১২টা বা সাড়ে ১২টার পর যখন মেট্রো বন্ধ হয়ে যাবে তখন ভিতরে মেইনটেইন্স ও ধোয়ামোছার কাজ চলবে। তখন শাটারগুলো নামিয়ে দেওয়া হবে। যাতে বাইরে থেকে কেউ ঢুকতে না পারে কিংবা বাইরে দেখা না যায় ভিতরে কী হচ্ছে। এসব শাটার বেশ উন্নত মানের বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিটিএমসিএলের অপর এক কর্মকর্তা।

সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com