অপপ্রচারে আতঙ্কে প্রবাসীরা

দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাত নিয়ে অনলাইনে লাগাতার অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ অপপ্রচারের কারণে ব্যাংকে রাখা নিজের অর্থ ফেরত পাবেন না এমন আতঙ্কে রয়েছেন শ্রমঘন দেশগুলোতে থাকা প্রবাসীরা। এমন ভয়ে নিতান্তই ঋণের টাকার কিস্তি ও পরিবারের খরচের প্রয়োজন ছাড়া টাকা পাঠাচ্ছেন না অনেকে। তিন-চার মাস ধরে নতুন করে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ রেখেছেন অনেকে। উল্টো দেশের ব্যাংকে জমা থাকা টাকা খরচ করে পরিবারের ব্যয় মেটানোর জন্য বলছেন তারা। মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও ইতালিতে থাকা প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত প্রবাসীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওর এসব অপপ্রচারে বেশি প্রভাবিত হচ্ছেন। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী থাকা সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স আসা রেকর্ড পরিমাণ কমেছে। একই অবস্থা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত, কাতারের প্রবাসীদের। মালয়েশিয়া ও ইতালিতে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এ ধরনের অপপ্রচারের শিকার হচ্ছেন।

 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহতে বসবাস করা বাংলাদেশি মিজানুর রহমান বলেন, ফেসবুক ও ইউটিউবে ব্যাংকগুলোর যে অবস্থার খবর পাওয়া যায়, তাতে টাকা পাঠানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। ব্যাংক দেউলিয়া হলে নাকি আমার কষ্টের ১০-২০ লাখ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে মাত্র ১ লাখ। এ খবর দেখার পর থেকে আমরা মেসের ২৫ জনই ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানো বন্ধ করেছি। ব্যাংকে প্রণোদনা দেওয়ার পরও যে টাকা পাওয়া যায়, তার  চেয়ে বেশি এমনিতেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পাওয়া যায়। সৌদি আরবের জেদ্দায় কর্মরত লিয়াকত আলী বলেন, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে শোনার পর জুন মাস থেকে লোন শোধ ছাড়া বাকি টাকা নিজের কাছেই রেখে দিই। দেশে গেলে নিজেই নিয়ে যাব কিন্তু নিজের টাকা হারাব না। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে জনশক্তি রেমিট্যান্স পাঠানোয় সবসময়ই শীর্ষ অবস্থানে ছিল সৌদি আরব। তবে সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে এবার সে স্থান দখলে নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দেশটি থেকে এসেছে ৯৯ কোটি ৯৮ লাখ বৈদেশিক মুদ্রা। সৌদি থেকে এসেছে ৯৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সৌদির চেয়ে ৭ লাখ ডলার বেশি এসেছে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসীরা তাদের পাঠানো আয়ের প্রায় সবই পাঠান বৈধ পথে। তারা আগেও যা পাঠাতেন এবারও তা-ই পাঠিয়েছেন। কিন্তু সৌদি আরবের প্রবাসীরা হঠাৎ বৈধ পথে টাকা পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। আর এতে শীর্ষ স্থান হারিয়েছে সৌদি আরব। এমন অবস্থা চলতে থাকলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিট্যান্স প্রাপ্তি আরও কমতে থাকবে।  জানা গেছে, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বল্পশিক্ষিত, অদক্ষ এবং স্বল্পদক্ষ শ্রমিক যান। অনেকের মধ্যে ব্যাংকিং ভীতি থাকে। শ্রমিকদের ছুটির দিনে সাধারণত ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউস বন্ধ থাকে। শ্রমজীবী হওয়ায় চাইলেও কাজ ফেলে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে অর্থ পাঠানো তাঁদের জন্য কঠিন। ব্যাংকের তুলনায় বেশি টাকার প্রলোভনসহ নানা উপায়ে হুন্ডি কারবারিরা তাদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। এরপর বাংলাদেশি এজেন্টের মাধ্যমে প্রবাসীর কাছে দ্রুততম সময়ে টাকা পৌঁছে দেয়। বর্তমানে হুন্ডি কারবারিরা মোবাইল ব্যাংকিং বা এমএফএস মাধ্যমেরও অপব্যবহার করছে।  সূএ: বাংলাদশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কক্সবাজার-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

» নির্মাণাধীন ভবনে লার্ভা পেলে নির্মাণ কাজ বন্ধ : তাপস

» বাংলাদেশ সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করল জিম্বাবুয়ে

» চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ফের সড়ক অবরোধ

» ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় ভারত

» থাইল্যান্ডে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

» ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃত্যু

» রাবির ভর্তির বিভাগ পছন্দক্রম ফরম পূরণের তারিখ ঘোষণা

» শুভ জন্মদিন ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’

» মন্ত্রী-এমপির স্বজন যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেনি, সময়মতো ব্যবস্থা: কাদের

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অপপ্রচারে আতঙ্কে প্রবাসীরা

দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাত নিয়ে অনলাইনে লাগাতার অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ অপপ্রচারের কারণে ব্যাংকে রাখা নিজের অর্থ ফেরত পাবেন না এমন আতঙ্কে রয়েছেন শ্রমঘন দেশগুলোতে থাকা প্রবাসীরা। এমন ভয়ে নিতান্তই ঋণের টাকার কিস্তি ও পরিবারের খরচের প্রয়োজন ছাড়া টাকা পাঠাচ্ছেন না অনেকে। তিন-চার মাস ধরে নতুন করে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ রেখেছেন অনেকে। উল্টো দেশের ব্যাংকে জমা থাকা টাকা খরচ করে পরিবারের ব্যয় মেটানোর জন্য বলছেন তারা। মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও ইতালিতে থাকা প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত প্রবাসীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওর এসব অপপ্রচারে বেশি প্রভাবিত হচ্ছেন। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী থাকা সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স আসা রেকর্ড পরিমাণ কমেছে। একই অবস্থা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত, কাতারের প্রবাসীদের। মালয়েশিয়া ও ইতালিতে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এ ধরনের অপপ্রচারের শিকার হচ্ছেন।

 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহতে বসবাস করা বাংলাদেশি মিজানুর রহমান বলেন, ফেসবুক ও ইউটিউবে ব্যাংকগুলোর যে অবস্থার খবর পাওয়া যায়, তাতে টাকা পাঠানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। ব্যাংক দেউলিয়া হলে নাকি আমার কষ্টের ১০-২০ লাখ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে মাত্র ১ লাখ। এ খবর দেখার পর থেকে আমরা মেসের ২৫ জনই ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানো বন্ধ করেছি। ব্যাংকে প্রণোদনা দেওয়ার পরও যে টাকা পাওয়া যায়, তার  চেয়ে বেশি এমনিতেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পাওয়া যায়। সৌদি আরবের জেদ্দায় কর্মরত লিয়াকত আলী বলেন, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে শোনার পর জুন মাস থেকে লোন শোধ ছাড়া বাকি টাকা নিজের কাছেই রেখে দিই। দেশে গেলে নিজেই নিয়ে যাব কিন্তু নিজের টাকা হারাব না। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে জনশক্তি রেমিট্যান্স পাঠানোয় সবসময়ই শীর্ষ অবস্থানে ছিল সৌদি আরব। তবে সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে এবার সে স্থান দখলে নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দেশটি থেকে এসেছে ৯৯ কোটি ৯৮ লাখ বৈদেশিক মুদ্রা। সৌদি থেকে এসেছে ৯৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সৌদির চেয়ে ৭ লাখ ডলার বেশি এসেছে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসীরা তাদের পাঠানো আয়ের প্রায় সবই পাঠান বৈধ পথে। তারা আগেও যা পাঠাতেন এবারও তা-ই পাঠিয়েছেন। কিন্তু সৌদি আরবের প্রবাসীরা হঠাৎ বৈধ পথে টাকা পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। আর এতে শীর্ষ স্থান হারিয়েছে সৌদি আরব। এমন অবস্থা চলতে থাকলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিট্যান্স প্রাপ্তি আরও কমতে থাকবে।  জানা গেছে, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বল্পশিক্ষিত, অদক্ষ এবং স্বল্পদক্ষ শ্রমিক যান। অনেকের মধ্যে ব্যাংকিং ভীতি থাকে। শ্রমিকদের ছুটির দিনে সাধারণত ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউস বন্ধ থাকে। শ্রমজীবী হওয়ায় চাইলেও কাজ ফেলে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে অর্থ পাঠানো তাঁদের জন্য কঠিন। ব্যাংকের তুলনায় বেশি টাকার প্রলোভনসহ নানা উপায়ে হুন্ডি কারবারিরা তাদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। এরপর বাংলাদেশি এজেন্টের মাধ্যমে প্রবাসীর কাছে দ্রুততম সময়ে টাকা পৌঁছে দেয়। বর্তমানে হুন্ডি কারবারিরা মোবাইল ব্যাংকিং বা এমএফএস মাধ্যমেরও অপব্যবহার করছে।  সূএ: বাংলাদশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com