অজ্ঞান পার্টির দাপট

স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা যাচ্ছিলেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী উপ-পরিদর্শক মীর আবদুল হান্নান। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! তিনি আর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে তাকে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। ঘটনাটি চলতি মাসের ১৬ তরিখের। ঘটনার দিন হান্নান কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে দুপুরে শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা থেকে একটি বাসে ওঠেন। বাসের ভেতরেই তাকে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা অসৎ উদ্দেশে অজ্ঞান করে। বাসটি কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর গেলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। ততক্ষণে তার সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা নিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা।

 

যদিও তার কাছে একটি মোবাইল ফোন ছিল। অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পথচারীরা মোবাইল ফোনে তার স্বজনদের বিষয়টি জানান। এ ছাড়া তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হলে রাতে তিনি মারা যান।

 

সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য। অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে ঘটছে নানা অঘটন। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলওয়ে স্টেশন, বিমানবন্দর, বাজারহাট ও বিভিন্ন মার্কেট ঘিরে ওত পেতে থাকে চক্রের সদস্যরা। পথচারী বা যাত্রীদের কৌশলে মলম বা অজ্ঞান করার সরঞ্জাম দিয়ে অজ্ঞান করে লুটে নেয় টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান সবকিছু। কোনো কোনো চক্র আবার যাত্রী ও পথচারীদের খাদ্যদ্রব্যর সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে অজ্ঞান করে। বিষাক্ত এসব উপাদান মানুষের শরীরে প্রবেশ ও এর গন্ধের কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। পেশাজীবী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী সদস্য থেকে শুরু করে কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না তারা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ সরোওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এ তিনটি হাসপাতালে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে গড়ে প্রতিদিন ১০ জন রোগী আসেন। চিকিৎসা নিতে আসা এসব রোগীরা অচেতন অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয়ে ভর্তি হন। বিভিন্ন বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, লঞ্চঘাট, মার্কেটের সামনে বা রাস্তা থেকে পথচারীরা এসব রোগীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এসব রোগীদের অবস্থা সংকটাপূর্ণ থাকে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর অনেকেই সুস্থ হন। অনেকেই মারা যান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া  বলেন, আগের চেয়ে অজ্ঞান পার্টির রোগী কিছুটা বেশি আসছে। তবে এখানে কাউকে ভর্তি দেয়া হয় না। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সবাইকে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়।

 

পুলিশ ও গোয়েন্দারা জানিয়েছে, অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা খুব চতুর। সাধারণ যাত্রীদের মতই তারা বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও অন্যান্য পাবলিক প্লেসে দাঁড়িয়ে থাকে। যাত্রী সেজে টিকিট কেটে অন্য যাত্রীদের পাশের সিটে বসে। তারপর সুযোগ সুবিধামতো তাদের কাজ হাসিল করে। তারা মানুষের কাছ থেকে সামান্য কিছু টাকা-পয়সা নেয়ার জন্য মারাত্মক কিছু প্রয়োগ করে। এতে করে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে মানুষ মূল্যবান জিনিসপত্র হারানোর পাশাপাশি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করতে চায় না। অনেক ভুক্তভোগী ঝক্কি-ঝামেলা এড়ানোর জন্য অভিযোগ না করে শুধু হারানোর জিডি করে। এতে করে ঘটনার তদন্ত করতে পারে না পুলিশ।

 

এপিবিএনের ওই সদস্য নিহত হওয়ার দু’দিন আগে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন এক সৌদি প্রবাসী। ১৪ই জানুয়ারি জাহিদুল ইসলাম নামের ওই প্রবাসী সকালবেলা বিমানযোগে এসে ঢাকায় নামেন। পরে দুপুরে বগুড়া যাওয়ার উদ্দেশে উত্তরা এলাকা থেকে শাহ ফতেহ আলী নামের একটি বাসে ওঠেন। কিছুদূর যাওয়ার পর ওই বাসের সুপারভাইজার জাহিদের স্ত্রীকে ফোন করে জানান তার স্বামী অচেতন হয়ে গেছেন। খবর পেয়ে জাহিদের স্ত্রী ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের দশ মাইল এলাকা থেকে তার স্বামীকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে জ্ঞান ফিরে আসে জাহিদের। তবে জাহিদ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেও সৌদি থেকে আসার সময় স্ত্রীর জন্য স্বর্ণের গয়না, দুটি মুঠোফোন সেট, মা ও পরিবারের অন্যদের জন্য নতুন জামা কাপড়, নগদ টাকাসহ তিনটি বড় ব্যাগে তার প্রায় তিন লাখ টাকার জিনিস ছিল। যার সবই তিনি খুঁইয়েছেন।

 

গত মঙ্গলবার গুলিস্তানে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়েন মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। একই দিন পল্টন এলাকায় রহমত উল্লাহ নামের আরেক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ৬ই জানুয়ারি দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বনানী, মতিঝিল ও পোস্তগোলা এলাকায় তিনজন অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। ২রা জানুয়ারি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়া এক দম্পতিকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করে রেলওয়ে থানা পুলিশ। দু’দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর সেখানে মারা যান মোকসেদ আলী মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি। ২৭শে ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর স্বজনকে অজ্ঞান করে টাকা-পয়সা নিয়ে যায় অজ্ঞান পার্টি চক্রের সদস্যরা। এর কয়েকদিন আগে ২০শে ডিসেম্বর অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে লতিফ ব্যাপারী নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।

 

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলিস্তানে চলন্ত বাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন দৈনিক মানবজমিনের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার সামন হোসেন (৩৭)। তার সঙ্গে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। সামন শীতল পরিবহনে করে নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টেডিয়াম ক্রীড়া লেখক সমিতিতে আসছিলেন।

 

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন  বলেন, অজ্ঞানপার্টির দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়াতে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি ও পেট্রোলিং বৃদ্ধি করেছি। কিছু ঘটনায় র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-৪ অনেক আসামিও গ্রেপ্তার করেছে। তবে আমার মনে হয় সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন থাকতে হবে। তারা যে ফাঁদ তৈরি করে সেটি থেকে সাবধান হতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টহল বৃদ্ধি করতে হবে। বিভিন্ন গাড়িতে সন্দেহভাজন কেউ আছে কিনা তা চেক করতে হবে ও অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের অভিযানও অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা নিয়েও আমরা তদন্ত করছি।

 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার  বলেন, গত কয়েক মাস অজ্ঞানপার্টির দৌরাত্ম্যটা কম ছিল। কিন্তু কিছুদিন ধরে বেশকিছু ঘটনায় মনে হচ্ছে তাদের উৎপাত কিছুটা বেড়েছে। সাধারণ যাত্রীদের টার্গেট করেই তারা কাজ করে। বিভিন্ন কৌশলে কিছু খাইয়ে দিয়ে অজ্ঞান করে সব লুটে নেয়। অজ্ঞান করার জন্য যাকে খাওয়াতে চায় তাকে কোনো না কোনো কৌশলে খাওয়াবেই। এটা এক ধরনের প্রতারণাও বটে। তিনি বলেন, যেহেতু অজ্ঞানপার্টির দৌরাত্ম্য বেড়েছে সেহেতু আমাদের কাজও বেড়েছে। আমরা আগেও অনেক চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছি। এখনো করবো। ডিবির সব টিম এ নিয়ে সজাগ আছে। সূূূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কবি মুক্তাদির চৌধুরী তরুণের ইন্তেকাল

» পুলিশের সোর্সকে চাকু মেরে হত্যা মামলার পলাতক দুই আসামি গ্রেফতার

» ব্যবহৃত অলংকারের জাকাত দিতে হবে কি?

» ফেসবুক দীর্ঘদিন লগ আউট না করলে কী হয়?

» বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে বিক্রি ও সেবনের অপরাধে ৪০ জন গ্রেপ্তার

» শুক্রবার এলেই উত্তাপ বাড়ে মাছ-সবজির বাজারে

» দেশে ফিরেছেন স্পিকার

» আইপিএলের ম্যাচসহ টিভিতে আজকের খেলা

» বিএনপির ৮০ ভাগ নিগৃহীত নেতাদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

» ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে যুবকের মৃত্যু

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অজ্ঞান পার্টির দাপট

স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা যাচ্ছিলেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী উপ-পরিদর্শক মীর আবদুল হান্নান। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! তিনি আর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে তাকে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। ঘটনাটি চলতি মাসের ১৬ তরিখের। ঘটনার দিন হান্নান কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে দুপুরে শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা থেকে একটি বাসে ওঠেন। বাসের ভেতরেই তাকে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা অসৎ উদ্দেশে অজ্ঞান করে। বাসটি কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর গেলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। ততক্ষণে তার সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা নিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা।

 

যদিও তার কাছে একটি মোবাইল ফোন ছিল। অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পথচারীরা মোবাইল ফোনে তার স্বজনদের বিষয়টি জানান। এ ছাড়া তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হলে রাতে তিনি মারা যান।

 

সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য। অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে ঘটছে নানা অঘটন। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলওয়ে স্টেশন, বিমানবন্দর, বাজারহাট ও বিভিন্ন মার্কেট ঘিরে ওত পেতে থাকে চক্রের সদস্যরা। পথচারী বা যাত্রীদের কৌশলে মলম বা অজ্ঞান করার সরঞ্জাম দিয়ে অজ্ঞান করে লুটে নেয় টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান সবকিছু। কোনো কোনো চক্র আবার যাত্রী ও পথচারীদের খাদ্যদ্রব্যর সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে অজ্ঞান করে। বিষাক্ত এসব উপাদান মানুষের শরীরে প্রবেশ ও এর গন্ধের কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। পেশাজীবী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী সদস্য থেকে শুরু করে কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না তারা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ সরোওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এ তিনটি হাসপাতালে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে গড়ে প্রতিদিন ১০ জন রোগী আসেন। চিকিৎসা নিতে আসা এসব রোগীরা অচেতন অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয়ে ভর্তি হন। বিভিন্ন বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, লঞ্চঘাট, মার্কেটের সামনে বা রাস্তা থেকে পথচারীরা এসব রোগীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এসব রোগীদের অবস্থা সংকটাপূর্ণ থাকে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর অনেকেই সুস্থ হন। অনেকেই মারা যান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া  বলেন, আগের চেয়ে অজ্ঞান পার্টির রোগী কিছুটা বেশি আসছে। তবে এখানে কাউকে ভর্তি দেয়া হয় না। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সবাইকে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়।

 

পুলিশ ও গোয়েন্দারা জানিয়েছে, অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা খুব চতুর। সাধারণ যাত্রীদের মতই তারা বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও অন্যান্য পাবলিক প্লেসে দাঁড়িয়ে থাকে। যাত্রী সেজে টিকিট কেটে অন্য যাত্রীদের পাশের সিটে বসে। তারপর সুযোগ সুবিধামতো তাদের কাজ হাসিল করে। তারা মানুষের কাছ থেকে সামান্য কিছু টাকা-পয়সা নেয়ার জন্য মারাত্মক কিছু প্রয়োগ করে। এতে করে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে মানুষ মূল্যবান জিনিসপত্র হারানোর পাশাপাশি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করতে চায় না। অনেক ভুক্তভোগী ঝক্কি-ঝামেলা এড়ানোর জন্য অভিযোগ না করে শুধু হারানোর জিডি করে। এতে করে ঘটনার তদন্ত করতে পারে না পুলিশ।

 

এপিবিএনের ওই সদস্য নিহত হওয়ার দু’দিন আগে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন এক সৌদি প্রবাসী। ১৪ই জানুয়ারি জাহিদুল ইসলাম নামের ওই প্রবাসী সকালবেলা বিমানযোগে এসে ঢাকায় নামেন। পরে দুপুরে বগুড়া যাওয়ার উদ্দেশে উত্তরা এলাকা থেকে শাহ ফতেহ আলী নামের একটি বাসে ওঠেন। কিছুদূর যাওয়ার পর ওই বাসের সুপারভাইজার জাহিদের স্ত্রীকে ফোন করে জানান তার স্বামী অচেতন হয়ে গেছেন। খবর পেয়ে জাহিদের স্ত্রী ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের দশ মাইল এলাকা থেকে তার স্বামীকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে জ্ঞান ফিরে আসে জাহিদের। তবে জাহিদ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেও সৌদি থেকে আসার সময় স্ত্রীর জন্য স্বর্ণের গয়না, দুটি মুঠোফোন সেট, মা ও পরিবারের অন্যদের জন্য নতুন জামা কাপড়, নগদ টাকাসহ তিনটি বড় ব্যাগে তার প্রায় তিন লাখ টাকার জিনিস ছিল। যার সবই তিনি খুঁইয়েছেন।

 

গত মঙ্গলবার গুলিস্তানে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়েন মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। একই দিন পল্টন এলাকায় রহমত উল্লাহ নামের আরেক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ৬ই জানুয়ারি দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বনানী, মতিঝিল ও পোস্তগোলা এলাকায় তিনজন অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। ২রা জানুয়ারি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়া এক দম্পতিকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করে রেলওয়ে থানা পুলিশ। দু’দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর সেখানে মারা যান মোকসেদ আলী মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি। ২৭শে ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর স্বজনকে অজ্ঞান করে টাকা-পয়সা নিয়ে যায় অজ্ঞান পার্টি চক্রের সদস্যরা। এর কয়েকদিন আগে ২০শে ডিসেম্বর অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে লতিফ ব্যাপারী নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।

 

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলিস্তানে চলন্ত বাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন দৈনিক মানবজমিনের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার সামন হোসেন (৩৭)। তার সঙ্গে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। সামন শীতল পরিবহনে করে নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টেডিয়াম ক্রীড়া লেখক সমিতিতে আসছিলেন।

 

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন  বলেন, অজ্ঞানপার্টির দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়াতে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি ও পেট্রোলিং বৃদ্ধি করেছি। কিছু ঘটনায় র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-৪ অনেক আসামিও গ্রেপ্তার করেছে। তবে আমার মনে হয় সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন থাকতে হবে। তারা যে ফাঁদ তৈরি করে সেটি থেকে সাবধান হতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টহল বৃদ্ধি করতে হবে। বিভিন্ন গাড়িতে সন্দেহভাজন কেউ আছে কিনা তা চেক করতে হবে ও অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের অভিযানও অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা নিয়েও আমরা তদন্ত করছি।

 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার  বলেন, গত কয়েক মাস অজ্ঞানপার্টির দৌরাত্ম্যটা কম ছিল। কিন্তু কিছুদিন ধরে বেশকিছু ঘটনায় মনে হচ্ছে তাদের উৎপাত কিছুটা বেড়েছে। সাধারণ যাত্রীদের টার্গেট করেই তারা কাজ করে। বিভিন্ন কৌশলে কিছু খাইয়ে দিয়ে অজ্ঞান করে সব লুটে নেয়। অজ্ঞান করার জন্য যাকে খাওয়াতে চায় তাকে কোনো না কোনো কৌশলে খাওয়াবেই। এটা এক ধরনের প্রতারণাও বটে। তিনি বলেন, যেহেতু অজ্ঞানপার্টির দৌরাত্ম্য বেড়েছে সেহেতু আমাদের কাজও বেড়েছে। আমরা আগেও অনেক চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছি। এখনো করবো। ডিবির সব টিম এ নিয়ে সজাগ আছে। সূূূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com