তখন রাত সাড়ে ১১টা। নতুন সহকর্মীকে লেখা সম্পাদনার কাজ দেখিয়ে দিতে একটু দেরি। এদিকে সময় আর আমাকে থাকতে দিতে চাচ্ছে না। চলে যাওয়ার সময় হয়েছে। সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে অফিস থেকে নিচে নামলাম। তার অতীতের কথা ও বর্তমান বিষয়গুলো নিয়ে খোশগল্প করতে করতে বাসার দিকে হাঁটছি।
একটু যেতেই তিনি তার পথে যেতে বিদায় নিলেন। আমি সামনের দিকে হেঁটেই চলছি। এদিকে ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টায় এসে থেমেছে। আসে পাশের সব দোকান-পাট বন্ধ। শীতও অনেক পড়েছে। এমন সময় পেছন থেকে ডাক, ‘মামা একটা তিলের খাজা নেবেন? মাত্র ১০ টাকা। নেন ভালো লাগবে’।
একটু চমকে গেলাম! আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একজন বৃদ্ধ। শরীরে একটা ময়লাযুক্ত কম্বল। মুখে একটা মিষ্টি হাসি। হাসির পেছনে একটা কষ্টের গল্প আছে, তা দেখলে বোঝা যায়। মনটা কেমন জানি করছে! তার গল্পটা শোনা দরকার। না হলে মনটা তৃপ্তি পাবে না।
বাসার দিকে না গিয়ে বসলাম তার পাশে। গল্প হলো তার সঙ্গে কিছু সময়। তার নাম আমিরুল ইসলাম। তিনি কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় এসেছেন কাজ করার জন্য। এক মেয়ে ও এক ছেলে আছে বৃদ্ধর। তারা খুবই ছোট। তিনি ঢাকার আবদুল্লাহপুরে থাকেন। দুই বছর আগে একটা দুর্ঘটনায় তিনি তার পায়ে আঘাত পান। ফলে এখন আর বড় বা ভারী কাজ করতে পারেন না।
পরিবারের একমাত্র অপার্জনকারী তিনি। বড় অভাবের সংসার। কারো কাছে তিনি সাহায্য নিতে নারাজ। নিজে কিছু করতে চান। সাহায্য গ্রহণ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামা অন্যের কাছে হাত পাততে ভালো লাগে না।আর ভিক্ষা করতেও বিবেকে বাঁধে। মানুষ অনেক কথা কয়। আর মোর ভাইয়েরাও দেখে না। আত্মীয়স্বজন সবাই নিজের কাজ নিয়ে থাকে। কে কারে দেখবো কন? আমি নিজে এইভাবে সারারাত এই বেচাকেনার কাজ করি আর সংসার চালাই। রাতে তাড়াতাড়ি বাড়িতে গেলে কম বেচা হয়, এইজন্য যাই না। দেরিতে যাই। দেখি কী হয়?’
তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে তিনি আমাকে তার তিলের খাজাটা দিলেন। আমি নিয়ে তাকে ৫০ টাকার নোটটা দিলাম। তিনি ফেরত দিতে চাইলেন আমি না নিয়ে রেখে দিলাম। তিনি একটা সুন্দর হাসি দিলেন। মাত্র পঞ্চাশ টাকার হাসি এত সুন্দর-নির্মল!
অতঃপর বাসার দিকে রওনা দিলাম। যদিও অনেক টাকা দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু মানিব্যাগের অবস্থাও করুন। দিতে পারি নাই। আক্ষেপ কিছুটা ছিল! আসুন এইভাবে এমন মানুষের পাশে দাঁড়াই। মানবিক হয়ে উঠি।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী। সূএ:রাইজিংবিডি.কম