হারিছ চৌধুরীর রেড নোটিশের কী হবে

ইন্টারপোল বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন এর তালিকায় এখনো লাল তালিকায় ঝুলছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর নাম। বিভিন্ন অপরাধে পলাতক বাংলাদেশের রেড নোটিশধারী ৫৮ জনের মধ্যে হারিছ চৌধুরীর নাম ও ছবি ১৩ নম্বরে রয়েছে। সেখানে তার নাম চৌধুরী আবুল হারিছ লেখা রয়েছে। এতে তার জন্ম তারিখ থেকে শুরু করে জন্মস্থান, জাতীয়তা, উচ্চতা, ওজন, চুল ও চোখের রংসহ দৈহিক বিবরণ রয়েছে। রেড নোটিশে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ রয়েছে। অথচ সম্প্রতি জানা গেছে তার মৃত্যুর তারিখ। প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর কাছে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হারিছ চৌধুরীর লন্ডন প্রবাসী মেয়ে সরকারি চাকরিজীবী ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী জানান, একাধিক রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৩রা সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। এর আগে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল।

লন্ডন না ঢাকা এ নিয়ে  ছিল নানা ধরনের গুজব ও গুঞ্জন। গণমাধ্যম তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও প্রশাসন এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি বলে জানিয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা  বলেন, গণমাধ্যমে আমরা তার মৃত্যুর খবর পড়েছি। আমাদের কাছে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে একটি গোয়েন্দা সংস্থা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে। মৃত্যুর পরও হারিছ চৌধুরীর নাম রেড নোটিশে থাকা প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা ও আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন  জানান, সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় কারও নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। হারিছ চৌধুরীর নামটিও সেভাবে এসেছে। এখন শুনছি তিনি মারা গেছেন। কিন্তু তার নামটি নোটিশে রয়ে গেছে। এর কারণ সরকারকেই জানাতে হবে যে, তিনি মারা গেছেন। যতদিন এ তথ্য সরকার ইন্টারপোলকে জানাবে না ততদিন নামটি তালিকায় থেকে যাবে। শুধু তাই নয়, তার মৃত্যুর সনদ থেকে শুরু করে আরও বেশকিছু তথ্য-উপাত্ত ইন্টারপোলের কাছে দাখিল করতে হবে। তারাও বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মতো খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হবে। এরপর রেড নোটিশ থেকে হারিছ চৌধুরীর নামটি বাদ যাবে। প্রসঙ্গত ইন্টারপোল একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যার প্রধান কাজ আন্তর্জাতিক পুলিশকে সহায়তা করা। এটি ১৯২৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ কমিশন নামে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৪৬ সালে বর্তমানের নামে পরিবর্তিত হয়। ইন্টারপোলের বর্তমান সদস্য ১৯৪টি দেশ এবং এই সদস্যরাই বাৎসরিক চাঁদার মাধ্যমে ৫৯ মিলিয়ন ডলারের বাৎসরিক খরচ নির্বাহ করে। এর সর্বশেষ সদস্য দেশ ভানুয়াতু। প্রধান দপ্তর ফ্রান্সের লিয়োঁতে। এটি জাতিসংঘের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংস্থা। হারিছ চৌধুরী ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও লোকপ্রশাসন বিভাগের মেধাবী এই ছাত্র ১/১১-এর পর থেকে টানা ১৪ বছর আত্মগোপনে ছিলেন। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত হন। এতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক নেতাকর্মী আহত হন। ওই হামলার ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ই অক্টোবর আদালত ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেন। দণ্ড পাওয়া আসামিদের মধ্যে হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জন ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আত্মগোপনে চলে যান।

 

সিলেটের কানাইঘাটের দীঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের দর্পনগরে হারিছ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি। পাঁচ ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। হারিছ চৌধুরীর দুই ভাই মারা গেছেন। সবার ছোট ভাই কামাল চৌধুরী জন্মলগ্ন থেকেই অসুস্থ। তিনি গ্রামের বাড়িতে থাকেন। এক ভাই থাকেন ইরানে। তিনি পেশায় চিকিৎসক। হারিছ চৌধুরীর ছেলে ও মেয়ে যুক্তরাজ্যে থাকেন। মেয়ে ব্যারিস্টার, ছেলে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন।সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» হত্যার ঘটনায় ৩জন গ্রেফতার

» রাষ্ট্রপতির কাছে ৪ দেশের রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ

» অনলাইনে সব সেবা চালু করল গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট

» বিশ্ব বাজার মাতাতে এল রিয়েলমি জিটি৫ প্রো

» লক্ষ্মীপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউমের’ প্রভাবে বৃষ্টি, শীতের প্রকোপ!  

» খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে দুই ফসলি জমি রক্ষায়ও সরকার বদ্ধ পরিকর – ভূমি সচিব

» স্টেম ফিল্ডে বাংলাদেশী নারীদের অংশগ্রহণ বিষয়ক ব্রিটিশ কাউন্সিলের সিম্পোজিয়াম

» পাঁচবিবিতে তিন দিন ধরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, আগাম জাতের আলুর ক্ষেত নষ্ট 

» ইসলামপুরে হানাদার মুক্ত দিবস পালিত

» পাঁচবিবিতে মৌসুমী ফেরিওয়ালার পতাকা বিক্রি

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।(দপ্তর সম্পাদক)  উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

হারিছ চৌধুরীর রেড নোটিশের কী হবে

ইন্টারপোল বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন এর তালিকায় এখনো লাল তালিকায় ঝুলছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর নাম। বিভিন্ন অপরাধে পলাতক বাংলাদেশের রেড নোটিশধারী ৫৮ জনের মধ্যে হারিছ চৌধুরীর নাম ও ছবি ১৩ নম্বরে রয়েছে। সেখানে তার নাম চৌধুরী আবুল হারিছ লেখা রয়েছে। এতে তার জন্ম তারিখ থেকে শুরু করে জন্মস্থান, জাতীয়তা, উচ্চতা, ওজন, চুল ও চোখের রংসহ দৈহিক বিবরণ রয়েছে। রেড নোটিশে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ রয়েছে। অথচ সম্প্রতি জানা গেছে তার মৃত্যুর তারিখ। প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর কাছে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হারিছ চৌধুরীর লন্ডন প্রবাসী মেয়ে সরকারি চাকরিজীবী ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী জানান, একাধিক রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৩রা সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। এর আগে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল।

লন্ডন না ঢাকা এ নিয়ে  ছিল নানা ধরনের গুজব ও গুঞ্জন। গণমাধ্যম তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও প্রশাসন এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি বলে জানিয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা  বলেন, গণমাধ্যমে আমরা তার মৃত্যুর খবর পড়েছি। আমাদের কাছে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে একটি গোয়েন্দা সংস্থা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে। মৃত্যুর পরও হারিছ চৌধুরীর নাম রেড নোটিশে থাকা প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা ও আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন  জানান, সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় কারও নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। হারিছ চৌধুরীর নামটিও সেভাবে এসেছে। এখন শুনছি তিনি মারা গেছেন। কিন্তু তার নামটি নোটিশে রয়ে গেছে। এর কারণ সরকারকেই জানাতে হবে যে, তিনি মারা গেছেন। যতদিন এ তথ্য সরকার ইন্টারপোলকে জানাবে না ততদিন নামটি তালিকায় থেকে যাবে। শুধু তাই নয়, তার মৃত্যুর সনদ থেকে শুরু করে আরও বেশকিছু তথ্য-উপাত্ত ইন্টারপোলের কাছে দাখিল করতে হবে। তারাও বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মতো খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হবে। এরপর রেড নোটিশ থেকে হারিছ চৌধুরীর নামটি বাদ যাবে। প্রসঙ্গত ইন্টারপোল একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যার প্রধান কাজ আন্তর্জাতিক পুলিশকে সহায়তা করা। এটি ১৯২৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ কমিশন নামে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৪৬ সালে বর্তমানের নামে পরিবর্তিত হয়। ইন্টারপোলের বর্তমান সদস্য ১৯৪টি দেশ এবং এই সদস্যরাই বাৎসরিক চাঁদার মাধ্যমে ৫৯ মিলিয়ন ডলারের বাৎসরিক খরচ নির্বাহ করে। এর সর্বশেষ সদস্য দেশ ভানুয়াতু। প্রধান দপ্তর ফ্রান্সের লিয়োঁতে। এটি জাতিসংঘের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংস্থা। হারিছ চৌধুরী ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও লোকপ্রশাসন বিভাগের মেধাবী এই ছাত্র ১/১১-এর পর থেকে টানা ১৪ বছর আত্মগোপনে ছিলেন। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত হন। এতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক নেতাকর্মী আহত হন। ওই হামলার ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ই অক্টোবর আদালত ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেন। দণ্ড পাওয়া আসামিদের মধ্যে হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জন ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আত্মগোপনে চলে যান।

 

সিলেটের কানাইঘাটের দীঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের দর্পনগরে হারিছ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি। পাঁচ ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। হারিছ চৌধুরীর দুই ভাই মারা গেছেন। সবার ছোট ভাই কামাল চৌধুরী জন্মলগ্ন থেকেই অসুস্থ। তিনি গ্রামের বাড়িতে থাকেন। এক ভাই থাকেন ইরানে। তিনি পেশায় চিকিৎসক। হারিছ চৌধুরীর ছেলে ও মেয়ে যুক্তরাজ্যে থাকেন। মেয়ে ব্যারিস্টার, ছেলে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন।সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।(দপ্তর সম্পাদক)  উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com