সাভারের তেঁতুলঝোড়া ও ভরারীতে হলমার্ক গ্রুপের মালিকানাধীন হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব এলাকায় অবস্থিত হলমার্কের বিভিন্ন কারখানার জেনারেটর মেশিনারিজ, দরজা, জানালা, গেটসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি লুট হয়ে গেছে। বর্তমানে কারখানাগুলোর ভবন ভেঙে জমি দখলের মাধ্যমে সেগুলো প্লট আকারে বিক্রির পাঁয়তারা করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের সদস্যরা। তবে সবকিছু স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের চোখের সামনে ঘটছে। কোনো ধরনের বাধা না আসায় অনেকটা নির্বিঘ্নেই চলছে বেদখল কার্যক্রম। সম্প্রতি তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের নগরচর এলাকায় অবস্থিত হলমার্কের তারকাঁটা কারখানা নামে পরিচিত ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু করেছেন শাহাদাৎ হোসেন নামে এক ব্যক্তি। সিএস ৩৮৩, এসএ ২১৩, আরএস ১০৫ নম্বর খতিয়ানে সিএস ও এসএ ১৭৬ এবং আরএস ১৬৪ নম্বর দাগে ২ একর ৪৯ শতাংশ জমিটিতে মিসেস নিলুফা হক ওরফে রুনুর নামে একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। পাশেই আরও কটি সাইনবোর্ডে ওই জমির ৯২ শতাংশের বায়না সূত্রে মালিক মো. শাহাদাৎ হোসেন গং লেখা রয়েছে। ভবনটি কয়েক দিন ধরে ৪৫-৫০ জন শ্রমিক ভাঙার কাজ শুরু করেছেন। এর আগেই সেখানে থাকা বড় একটি জেনারেটর, তারকাঁটা তৈরির বেশ কিছু মেশিনারিজ, তারকাঁটা তৈরির জন্য রাখা বিপুল পরিমাণ লোহা ও রড, ভবনটির জানালা, দরজা, বৈদ্যুতিক পাখা ও বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্রসহ বিশালাকৃতির মূল ফটক লুট হয়ে গেছে। এখন ভবনটি ভেঙে প্লট আকারে জমি বিক্রি করার পাঁয়তারা চলছে। সরেজমিনে তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের হলমার্ক গ্রুপের হলমার্ক ফ্যাশন, হলমার্ক ডিজাইন ওয়্যার, ওয়াল মাট ফ্যাশন, ইসলাম ফ্যাশন, ডন অ্যাপারেল, ফারহান ফ্যাশন, মাহমুদ অ্যাপারেল, হলমার্ক স্পিনিং, ববি ফ্যাশন, হলমার্ক ডেনিম কম্পোজিট, ববি ফ্লাট বেড প্রিন্টিং, হলমার্ক এক্সেসরিজ, হলমার্ক নিট কম্পোজিট, ববি ডেনিম কম্পোজিট, হলমার্ক স্টাইল, পারফেক্ট এমব্রয়ডারি, হলমার্ক প্যাকেজিং, জিসান নিট কম্পোজিট, হলমার্ক নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, আনোয়ার স্পিনিং ও ম্যাক্স স্পিনিংসহ বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি কারখানার স্থাপনা ধসে পড়ছে। কিছু কারখানার শেড ভেঙে পড়েছে এবং সেখানে থাকা কোটি কোটি টাকা মূল্যের মেশিনারিজ উধাও হয়ে গেছে। দরজা, জানালা, এমনকি মূল ফটকও নেই অনেক কারখানায়। হলমার্ক গ্রুপের এবিএস নিটিং লিমিটেড কারখানার ব্যবস্থাপক (অর্থ) মো. মোবারক হোসেন রাজু বলেন, ‘আট বছর আগে হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ তারকাঁটা কারখানাটি ক্রয় করেন। এর পর থেকেই এটি আমাদের দখলে রয়েছে। তবে বর্তমানে গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কারাগারে থাকায় রাতের আঁধারে কারখানার মালামালসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র চুরি হয়ে গেছে। দুই দিন ধরে ভবনটির মালিকানা দাবি করে এটি ভাঙার কাজ শুরু করেছে শাহাদাৎ হোসেন গং। আমরা বাধা দিয়েছি এবং বলেছি, আপনাদের কী কাগজ আছে নিয়ে আমাদের সঙ্গে বসেন। আমাদেরও কাগজ আছে। একসঙ্গে বসলেই সঠিক মালিকানা জানা যাবে। কিন্তু তারা আমাদের পাত্তা না দিয়ে কাজ অব্যাহত রেখেছেন। তাই আমরা বিষয়টি স্থানীয় ফাঁড়িকে অবহিত করেছি।’ বায়নাসূত্রে জমির মালিকানা দাবিকারী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, জমির মূল মালিক মিসেস নিলুফা হক। তার জমিটি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করেছিল তারকাঁটা কারখানার মালিক স্বপন। তাদের কাছ থেকে পরবর্তী সময়ে হলমার্ক গ্রুপ কিনে দখলে নেয়। সম্প্রতি আদালতের রায়ে জাল দলিল প্রমাণিত হওয়ায় মূল মালিকের কাছ থেকে আমরা কয়েকজন মিলে জমিটি বায়না করে ভবন ভাঙার কাজ শুরু করেছি। এদিকে হলমার্ক গ্রুপের অভিযোগের ভিত্তিতে সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে স্থানীয় ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ি থেকে এসআই সায়েদ এসে ভবন ভাঙার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এ সময় উভয়পক্ষকে জমির কাগজ নিয়ে ফাঁড়িতে বসার জন্য বলা হয়। জানতে চাইলে ট্যানারি ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহিদ হোসেন বলেন, হলমার্ক গ্রুপের অভিযোগের ভিত্তিতে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। কাগজপত্র দেখে মালিকানা নিশ্চিত হওয়ার পরই সেখানে কাজ করতে পারবেন প্রকৃত মালিক। সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, হলমার্ক গ্রুপের সব সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হলেও এসব বিষয়ে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রীয় সম্পদ যদি কেউ চুরি করে কিংবা দখলের চেষ্টা চালায় তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। উল্লেখ্য, সাভারসহ বিভিন্ন জায়গায় হলমার্ক গ্রুপের শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। এসব জমির ওপর প্রায় ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের নির্মাণাধীন ভবন ছিল। এসব সম্পত্তি দেখভালের অভাবে বিনষ্ট হয়ে গেছে। নির্মাণাধীন ভবনগুলো এখন মাদকসেবীদের আখড়া। বিভিন্নজন ভোগদখল করে খাচ্ছে।
সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন