দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপি নেতারা হতাশায় নিমজ্জিত বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে তিনি বিএনপি নেতাদের এই পথ পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানে এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিভিন্ন বক্তব্যের জবাব দেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।
বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সফল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে এক সময়ের মঙ্গা-খরা দুর্যোগ-দুর্ভিক্ষ কবলিত বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট আমলে যেখানে উত্তরবঙ্গের মঙ্গাপীড়িত অসংখ্য মানুষকে না খেয়ে মরতে হয়েছে, সামান্য বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষকে অভুক্ত থেকে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হয়েছে; সেখানে জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী পদক্ষেপে দেশে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। কৃষিবান্ধব নীতি এবং কৃষিখাতে গবেষণায় সরকারি সহযোগিতার কারণে খাদ্যশস্যসহ কৃষিপণ্য উৎপাদন বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল মাত্র ৩২৮.৯৬ লক্ষ মেট্রিক টন, সেখানে ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার পরও বর্তমানে খাদ্যশস্য উৎপাদন ৪৫৫.০৫ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে ধান, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয়, আলু ও আম উৎপাদনে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে রয়েছে। আমাদের কৃষি এখন ‘জীবন নির্বাহী’ হতে ‘বাণিজ্যিক’ কৃষিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ‘রপ্তানিমুখী কৃষি অর্থনীতি’ গড়ে উঠছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কেবল কৃষিখাতেই উন্নতি সাধিত হয়নি; গত ১৩ বছরে কৃষির খাতের মতো আর্থ-সামাজিক সকল সূচকে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময়েও বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল সন্তোষজনক। মাথাপিছু আয় ২৫৫৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট শাসনামলের চরম খাদ্য ঘাটতি ও পুষ্টি নিরাপত্তাহীনতার দুঃসহ স্মৃতি দেশবাসী ভুলে যায়নি। এমনকি সে সময় সারের দাবিতে আন্দোলনরত কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলন করায় জনগণকে গুলি করে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্র পরিচালনায় বিএনপি ফ্যাসিবাদী নীতি গ্রহণ করেছিল। বিরোধী দলসহ জনগণের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছিল। রাষ্ট্র পরিচালনায় বিএনপি জনগণের দাবির প্রতি তোয়াক্কা না করে লুটপাটতন্ত্রের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আজ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে। তাই বাংলাদেশে এখন কোনো খাদ্যাভাব দেখা যায় না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি নেতারা যে রাজনৈতিক কূটচাল চেলেছিল এবং বিষয়টি নিয়ে জনগণকে জিম্মি করার যে অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিল, তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। একই সাথে দেশের ভাবমূর্তি নষ্টে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষতি সাধনের যে অপকৌশল তারা গ্রহণ করেছিল, তাদের সে ষড়যন্ত্রও ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কখনও ক্ষুণ্ন হতে দেয়নি; দেবেও না।
কাদের বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপি নেতারা আজ চরম হতাশার চোরাবালিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছেন। সেই হতাশার ভূত দেশের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। আমরা বিএনপি নেতাদের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করার আহ্বান জানাচ্ছি।’