সেই তাণ্ডবের এক বছর পরও আতংকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ

২০২১ সালের ২৬ মার্চ। সারা দেশ যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উৎসবের কথা, তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আতঙ্ক, উদ্বেগ। হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা সে সময় কয়েক দিনে শহরজুড়ে চালায় তাণ্ডব, হামলা হয় সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনায়।

 

এক বছর পরও ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি তাজা শহরবাসীর মনে। এখনও স্বাভাবিক হয়নি জেলা ভূমি অফিসের কার্যক্রম। পুড়ে যাওয়া নথিপত্রের নকল তুলতে যেতে হচ্ছে কুমিল্লায়।

পৌরসভা ভবন ভস্মীভূত হওয়ায় সেটি সরিয়ে নিতে হয়েছে পাশের একটি ভবনে। সেই ভবনে ছিল আবার হাসপাতাল। সেটিকেও পরে স্থানান্তর করতে হয়েছে।

 

ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে লেগেছে আট মাস। মার্চে দেয়া আগুনে সংকেতব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করে সেটি ট্রেন থামার উপযোগী করতে লেগে যায় ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত।

দেশজুড়ে তোলপাড় করা এই হামলা তাণ্ডবের ঘটনায় করা মামলাগুলোর তদন্ত এখনও শেষ করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আসামিদের বেশির ভাগই মুক্তি পেয়েছেন জামিনে। এই অবস্থায় ২০১৬ সালের তাণ্ডবের মামলাগুলোর দীর্ঘসূত্রতা সামনে এসেছে। প্রশ্ন উঠছে, এই মামলাগুলোও ছয় বছর আগের মামলাগুলোর মতোই গতি হারাবে কি না। আর দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা না গেলে ভবিষ্যতে একই ধরনের তাণ্ডব আবার দেখতে হবে- এমন আশঙ্কার কথাও বলা হচ্ছে।

 

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গত বছর মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকেই রাজপথে তৎপর ছিল হেফাজতে ইসলাম।

 

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, মুন্সীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা শহরে নানা ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাঙ্গামা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

 

২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাসের ফেসবুক আইডি থেকে পবিত্র কাবা শরিফকে ব্যঙ্গ করে একটি পোস্ট দেয়ার ঘটনায়ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তার ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

 

৩০ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলা, সদরে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ হিন্দুদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে নাসিরনগরে আটটি ও সদরে ১৬টি মামলা হয়। নাসিরনগরের আটটি মামলায় ২৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ৫৭৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা করা হয়।

 

সদরে ১৬টি মামলায় ৩৮৮ জনকে গ্রেপ্তার এবং ৪৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু একটি মামলাতেও বিচার রায় পর্যায়ে যায়নি। কবে রায় হবে, এ বিষয়েও কেউ কিছু বলতে পারছে না।

 

গত বছরের ২৬ মার্চ ঢাকার বায়তুল মোকাররমে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সরকারি ডাকবাংলো, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় ও থানায় হামলা চালায় হেফাজতের কর্মীরা।

 

হাটহাজারী থানায় হামলার সময় পুলিশের গুলিতে কয়েকজনের প্রাণহানির পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজত সমর্থকরা দল বেঁধে গিয়ে হামলা চালায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে।

 

তারা স্টেশনের বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি রেললাইনে আগুন দেয়। তাদের মারমুখী অবস্থানের কারণে রেলের কর্মীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ফায়ার সার্ভিসও ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। প্রস্তুতি না থাকায় পুলিশও সেভাবে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

 

বিকেলে যখন রেলস্টেশন জ্বলছিল, তখন হেফাজত কর্মীরা হামলে পড়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। পুলিশ গুলি চালিয়ে তাদের প্রতিহত করে। এরপর রাতে বিজিবি মোতায়েনের পর ছাত্ররা মাদ্রাসায় ফিরে যায়। তবে নানা ধরনের গুজব ছড়ানোর পাশাপাশি হুমকিও দেয়া হতে থাকে।

 

২৭ ও ২৮ মার্চ মাদ্রাসার ছাত্রদের একটি মিছিলের পর বঙ্গবন্ধুর তিনটি ম্যুরাল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষাচত্বর, রেলওয়ে স্টেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জন অফিস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, সার্কিট হাউস, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন, আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, মাতৃসদন, এসি ল্যান্ডের কার্যালয়, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা মৎস্য অফিস, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা ভবন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়সহ অর্ধশতাধিক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়।

 

পুলিশ জানায়, তিন দিন ধরে চলা হামলায় নিহত হন ১৫ জন, আহত ৮০ পুলিশসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ।

 

এসব ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন থানায় পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে ৫৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে সদর থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় চারটি, সরাইল থানায় দুটি ও রেলওয়ে স্টেশন থানায় হয় একটি।

 

এসব মামলায় প্রায় ৩৮ হাজার আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হন ৭৫৮ জন। তাদের মধ্যে ৬৩৮ জন এখন জামিনে আছেন।

৩৬ মামলায় ১৬৪ ধারায় ৪৯ জন জবানবন্দি দেন আদালতে। তবে এক বছর পেরিয়ে গেলেও ৩৬ মামলায় একটিরও তদন্তকাজ শেষ করতে পারেনি পুলিশ।

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘আমরা মামলাগুলো সতর্কভাবে তদন্ত করছি। তদন্ত শেষ হলেই চার্জশিট আদালতে জমা দেব।

 

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ মামলাগুলো নিয়ে কাজ করছে। তদন্ত কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়ে গেছে। পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে স্থিতিশীল রাখতে করণীয় সবই করা হচ্ছে।

 

হেফাজত যেসব স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল, তার মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকারের বাড়িও ছিল। তিনি পুরো ঘটনায় দ্রুত বিচার শেষ করার দাবি জানিয়েছেন।

মামুন বলেন, ‘হামলার ঘটনায় যদি বিচার না হয়, তাহলে আবারও এর পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা আবারও একটি অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

 

জেলা জাসদের সভাপতি আক্তার হোসেন সাঈদ বলেন, ‘গত বছর হেফাজতে ইসলাম যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল আমরা সেটা ঘৃণা করি। তাদের যে ধরনের বিচার হওয়ার কথা ছিল, আমরা তা দেখতে পাইনি।

 

‘এখানে কোনো আপস হয়েছে কি না সেটা সন্দেহের বিষয়। যতদিন তাদের বিচারের আওতায় না আনা হবে, ততদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের প্রতিহিত করার আহ্বান জানাই।

 

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহ্বায়ক আবদুন নূর বলেন, ‘২০১৬ সালেও মাদ্রাসার ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শহরেজুড়ে চলেছিল তাণ্ডব। একই বছরের নাসিরনগরে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা হয়েছে। সেসব ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। ওই সব ঘটনার বিচার হলে এসব ঘটনার পুনারাবৃত্তি ঘটত না।

 

তিনি বলেন, ‘আমরা শঙ্কিত। শঙ্কিত এই জন্য, এসব ঘটনার বিচার দেখে যেতে পারব কি না। আমরা চাই এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক।’

সূএ:পূর্ব পশ্চিম বিডি ডটনিউজ

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» অপারেশন ডেভিল হান্টকে স্বাগত জানালেন নুরুল হক নুর

» ঢামেকে চান্স পাওয়া দরিদ্র শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ালেন তারেক রহমান

» গাজীপুরে হাসনাত-সারজিসের নেতৃত্বে সড়ক অবরোধ

» বৈষম্যহীন শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়তে হবে: সালাহউদ্দিন

» সারা দেশে কর্মসূচি ডেকেছে বিএনপি

» বিপিএলের সেরা একাদশে চমক! তামিম অধিনায়ক, জায়গা পেলেন যারা

» দিল্লি জয় করে যা বললেন মোদি

» নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুপ্রিমকোর্টে প্রবেশে পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার অনুরোধ

» ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু

» প্রধান অতিথি সম্রাট হোসেন দোয়েল বগুড়ার গাবতলীতে ছাত্রদলের  সাংগঠনিক সভা অনুষ্ঠিত

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সেই তাণ্ডবের এক বছর পরও আতংকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ

২০২১ সালের ২৬ মার্চ। সারা দেশ যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উৎসবের কথা, তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আতঙ্ক, উদ্বেগ। হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা সে সময় কয়েক দিনে শহরজুড়ে চালায় তাণ্ডব, হামলা হয় সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনায়।

 

এক বছর পরও ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি তাজা শহরবাসীর মনে। এখনও স্বাভাবিক হয়নি জেলা ভূমি অফিসের কার্যক্রম। পুড়ে যাওয়া নথিপত্রের নকল তুলতে যেতে হচ্ছে কুমিল্লায়।

পৌরসভা ভবন ভস্মীভূত হওয়ায় সেটি সরিয়ে নিতে হয়েছে পাশের একটি ভবনে। সেই ভবনে ছিল আবার হাসপাতাল। সেটিকেও পরে স্থানান্তর করতে হয়েছে।

 

ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে লেগেছে আট মাস। মার্চে দেয়া আগুনে সংকেতব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করে সেটি ট্রেন থামার উপযোগী করতে লেগে যায় ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত।

দেশজুড়ে তোলপাড় করা এই হামলা তাণ্ডবের ঘটনায় করা মামলাগুলোর তদন্ত এখনও শেষ করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আসামিদের বেশির ভাগই মুক্তি পেয়েছেন জামিনে। এই অবস্থায় ২০১৬ সালের তাণ্ডবের মামলাগুলোর দীর্ঘসূত্রতা সামনে এসেছে। প্রশ্ন উঠছে, এই মামলাগুলোও ছয় বছর আগের মামলাগুলোর মতোই গতি হারাবে কি না। আর দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা না গেলে ভবিষ্যতে একই ধরনের তাণ্ডব আবার দেখতে হবে- এমন আশঙ্কার কথাও বলা হচ্ছে।

 

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গত বছর মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকেই রাজপথে তৎপর ছিল হেফাজতে ইসলাম।

 

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, মুন্সীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা শহরে নানা ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাঙ্গামা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

 

২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাসের ফেসবুক আইডি থেকে পবিত্র কাবা শরিফকে ব্যঙ্গ করে একটি পোস্ট দেয়ার ঘটনায়ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তার ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

 

৩০ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলা, সদরে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ হিন্দুদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে নাসিরনগরে আটটি ও সদরে ১৬টি মামলা হয়। নাসিরনগরের আটটি মামলায় ২৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ৫৭৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা করা হয়।

 

সদরে ১৬টি মামলায় ৩৮৮ জনকে গ্রেপ্তার এবং ৪৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু একটি মামলাতেও বিচার রায় পর্যায়ে যায়নি। কবে রায় হবে, এ বিষয়েও কেউ কিছু বলতে পারছে না।

 

গত বছরের ২৬ মার্চ ঢাকার বায়তুল মোকাররমে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সরকারি ডাকবাংলো, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় ও থানায় হামলা চালায় হেফাজতের কর্মীরা।

 

হাটহাজারী থানায় হামলার সময় পুলিশের গুলিতে কয়েকজনের প্রাণহানির পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজত সমর্থকরা দল বেঁধে গিয়ে হামলা চালায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে।

 

তারা স্টেশনের বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি রেললাইনে আগুন দেয়। তাদের মারমুখী অবস্থানের কারণে রেলের কর্মীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ফায়ার সার্ভিসও ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। প্রস্তুতি না থাকায় পুলিশও সেভাবে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

 

বিকেলে যখন রেলস্টেশন জ্বলছিল, তখন হেফাজত কর্মীরা হামলে পড়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। পুলিশ গুলি চালিয়ে তাদের প্রতিহত করে। এরপর রাতে বিজিবি মোতায়েনের পর ছাত্ররা মাদ্রাসায় ফিরে যায়। তবে নানা ধরনের গুজব ছড়ানোর পাশাপাশি হুমকিও দেয়া হতে থাকে।

 

২৭ ও ২৮ মার্চ মাদ্রাসার ছাত্রদের একটি মিছিলের পর বঙ্গবন্ধুর তিনটি ম্যুরাল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষাচত্বর, রেলওয়ে স্টেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জন অফিস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, সার্কিট হাউস, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন, আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, মাতৃসদন, এসি ল্যান্ডের কার্যালয়, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা মৎস্য অফিস, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা ভবন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়সহ অর্ধশতাধিক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়।

 

পুলিশ জানায়, তিন দিন ধরে চলা হামলায় নিহত হন ১৫ জন, আহত ৮০ পুলিশসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ।

 

এসব ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন থানায় পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে ৫৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে সদর থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় চারটি, সরাইল থানায় দুটি ও রেলওয়ে স্টেশন থানায় হয় একটি।

 

এসব মামলায় প্রায় ৩৮ হাজার আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হন ৭৫৮ জন। তাদের মধ্যে ৬৩৮ জন এখন জামিনে আছেন।

৩৬ মামলায় ১৬৪ ধারায় ৪৯ জন জবানবন্দি দেন আদালতে। তবে এক বছর পেরিয়ে গেলেও ৩৬ মামলায় একটিরও তদন্তকাজ শেষ করতে পারেনি পুলিশ।

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘আমরা মামলাগুলো সতর্কভাবে তদন্ত করছি। তদন্ত শেষ হলেই চার্জশিট আদালতে জমা দেব।

 

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ মামলাগুলো নিয়ে কাজ করছে। তদন্ত কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়ে গেছে। পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে স্থিতিশীল রাখতে করণীয় সবই করা হচ্ছে।

 

হেফাজত যেসব স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল, তার মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকারের বাড়িও ছিল। তিনি পুরো ঘটনায় দ্রুত বিচার শেষ করার দাবি জানিয়েছেন।

মামুন বলেন, ‘হামলার ঘটনায় যদি বিচার না হয়, তাহলে আবারও এর পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা আবারও একটি অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

 

জেলা জাসদের সভাপতি আক্তার হোসেন সাঈদ বলেন, ‘গত বছর হেফাজতে ইসলাম যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল আমরা সেটা ঘৃণা করি। তাদের যে ধরনের বিচার হওয়ার কথা ছিল, আমরা তা দেখতে পাইনি।

 

‘এখানে কোনো আপস হয়েছে কি না সেটা সন্দেহের বিষয়। যতদিন তাদের বিচারের আওতায় না আনা হবে, ততদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের প্রতিহিত করার আহ্বান জানাই।

 

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহ্বায়ক আবদুন নূর বলেন, ‘২০১৬ সালেও মাদ্রাসার ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শহরেজুড়ে চলেছিল তাণ্ডব। একই বছরের নাসিরনগরে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা হয়েছে। সেসব ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। ওই সব ঘটনার বিচার হলে এসব ঘটনার পুনারাবৃত্তি ঘটত না।

 

তিনি বলেন, ‘আমরা শঙ্কিত। শঙ্কিত এই জন্য, এসব ঘটনার বিচার দেখে যেতে পারব কি না। আমরা চাই এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক।’

সূএ:পূর্ব পশ্চিম বিডি ডটনিউজ

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com