মিয়ানমারের সীমান্তের ৩টি জেলায় গড়ে উঠেছে প্রায় ১৪০টি ইয়াবা কারখানা। মংডু, বুথিডং ও রাথেডং এলাকায় বেশি ইয়াবা উৎপাদনের কারখানা রয়েছে। ওই কারখানাগুলোতে ইয়াবা উৎপাদন হওয়ার পর চোরাকারবারিরা বাংলাদেশের সীমান্তে ঠেলে দিচ্ছে। উৎপাদন হওয়া ইয়াবাগুলো মাছ ধরা নৌকায়, জর্দার কৌটায়, বাঁশের ভেতরসহ আরও নানা মাধ্যমে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে চোরাকারবারিরা। সীমান্ত এলাকা থেকে ইয়াবার সঙ্গে আসছে আইসও। এ ছাড়াও সীমান্ত এলাকার পাশাপাশি উপকূলকেও মাদক চোরাচালানে ব্যবহার করছে পাচারকারীরা। ওই তিন জেলায় গড়ে উঠা কারখানাগুলো নিয়ে কোােন উদ্বেগ নেই মিয়ানমারের। তারা বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে ওই কারখানাগুলো উচ্ছেদের ব্যাপারে একাধিকবার আশ্বাস দিলেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (গোয়েন্দা) মো. মোসাদ্দেক হোসেন রেজা জানান, ‘সীমান্তে ইয়াবা কারখানাগুলোর ব্যাপারে তাদেরকে (মিয়ানমারকে) একাধিকবার জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশে কোনো মাদকের কারখানা নেই বলে শক্তভাবে মিয়ানমারের সেন্ট্রাল কমিটি ফর ড্রাগ অ্যাবিউজ কন্ট্রোলকে (সিসিডাক) জানানো হয়েছে।
ডিএনসি সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তের কানকিয়া এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশি ইয়াবার কারখানা। মিয়ানমারের সিসিডাক বাংলাদেশের ডিএনসির কাছে দাবি করেছে যে, সীমান্ত এলাকার গহিন অরণ্যের কারণে সেসব কারখানায় অভিযান চালানো তাদের জন্য কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সে কারখানাগুলো ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। তারা এও দাবি করেছেন যে, ইয়াবা তৈরির যে উপকরণ সিউডো এফিড্রিন ও প্রিকারসন কেমিক্যাল তা তাদের দেশে তৈরি হয় না। সেগুলো তৈরি হয় চীন, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে। তাদের সীমান্তে নৌ ও আকাশ পথে সেই সব উপকরণগুলো ঢুকছে।
সূত্র জানায়, ডিএনসি এবং সিসিডাক মাদক পাচার রোধে যথা সময়ে তথ্যবিনিময় এবং জড়িত ব্যক্তিবর্গের তালিকা দেয়া এবং নেয়ার ব্যাপারে তারা ঐকমত্য হয়েছে। তারা ইয়াবা তৈরির উপাদান সিউডো এফিড্রিন ও প্রিকারসন কেমিক্যাল পাচারের তথ্য আদান-প্রদান করবেন। টেকনাফ ও মংডু এলাকায় বিএলও অফিস স্থাপিত হওয়ার পর এখনো তাদের মধ্যে সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে শিগগিরই সভা হবে বলে জানিয়েছেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের সীমান্তে ইয়াবা কারখানাগুলো রাখাইন, মংডু ও শান অঞ্চলে অবস্থিত। সীমান্তের অনেক কারখানা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন পরিচালনা করছে। সেগুলো বিক্রি করে তারা অস্ত্রের মজুত করে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে দাবি করেছে যে, বাংলাদেশের সীমান্তে কোনো ইয়াবা কারখানা তো দূরের কথা কোনো মাদকের কারখানাই নেই। সেগুলোকে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও তারা বলেছে যে, বাংলাদেশ মাদকের জন্য ভিকটিম একটি দেশ। বাংলাদেশে কোনো মাদকের কারখানা নেই। একটি অন্য দেশ থেকে এসে বাংলাদেশে ছড়ায়। কাজেই বাংলাদেশের সীমান্তে যদি তথ্যগত সঠিক কোনো কারখানা থেকে থাকে তাহলে নাম ও এবং সঠিক ঠিকানা দিয়ে যাতে সিসিডাক বাংলাদেশের ডিএনসিকে সহযোগিতা করে। যাতে কারখানাগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত সিসিডাক কোনো কারখানার নাম বাংলাদেশের ডিএনসিকে জানাতে পারেনি বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ডিএনসি সিসিডাককে জানিয়েছে যে, তাদের সমীক্ষায় সব কারখানা মিয়ানমারের সীমান্তে। মিয়ানমার থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ৯৮ শতাংশ মাদক পাচার বেড়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। মিয়ানমার জানিয়েছে যে, তাদের দেশে ৩ লাখ মাদকাসক্ত আছে। আর সরকারি নিরাময় কেন্দ্র আছে ২৯টি। সেগুলো বাড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়াও তারা সীমান্ত এলাকায় ম্যারাথন অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদি তাদের এই অভিযানে বিজিবি’র কোনো সহযোগিতা লাগে তাহলে ডিএনসি’র মারফতে তা জানানো হবে। সূএ :মানবজমিন