সবার যোগসাজশে অভয়াশ্রমে নির্বিচারে জাতীয় সম্পদ লুট

আজকের চাপিলা কিংবা জাটকা আগামী দিনের রূপালী ইলিশ। জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষায় কাগজে-কলমে নানা বিধিনিষেধ থাকলে বাস্তবে এর প্রয়োগ যত সামান্য। সরকারি প্রশাসনের চোখের সামনে মেঘনার ইলিশ অভয়াশ্রম থেকে প্রতিদিন নিধন হচ্ছে শত শত মন চাপিলা ও জাটকা। এগুলো ট্রলার এবং সড়ক পথে সরবরাহ হচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন বাজারসহ দূর-দূরান্তে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলে, আড়তদার ও মৎস্য বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগসাজশেই লুণ্ঠন হচ্ছে এই জাতীয় সম্পদ। ডাঙ্গায় কিছু তৎপরতা থাকলেও জাটকা নিধন বন্ধে নদীতে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

অর্থনীতির সূচকে দেশের সার্বিক অগ্রগতির (জিডিপি) ১ ভাগ আসে ইলিশ থেকে। দেশে গত বছর উৎপাদিত হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগের নদী-সাগর থেকে আহরিত হয়েছে ৬৬ ভাগ অর্থাৎ ৩ লাখ ২৫ হাজার টন ইলিশ। প্রজননের পর রেণু থেকে শুরু করে চাপিল এবং জাটকা সাইজের পরই পূর্ণাঙ্গ সাইজে পরিণত হয় ইলিশ। ইলিশের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এছাড়া ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস ২৫ সেন্টিমিটারের কম আকারের (জাটকা) ইলিশ ধরায় রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু বাস্তবতা দেখলে কাগুজে মনে হবে এসব। বরিশালের ৩টি অভয়াশ্রমে প্রতিদিন নির্বিচারে মাছ শিকার করছে হাজার হাজার জেলে। এসব জাটকা নদী এবং সড়ক পথে ছড়িয়ে পড়ছে স্থানীয় সকল বাজারে। সড়ক পথেও পাচার হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

 

মঙ্গলবার সকালে নগরীর পোর্ট রোড বাজার চাপিলা আর জাটকায় সয়লাব দেখা গেছে। মৎস্য বিভাগ এবং প্রশাসনের চোখের সামনেই চলে জাটকা বিকিকিনি। বাজারে আসা মাছের ক্রেতারা জাটকা নিধন বন্ধের জন্য সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান। এই জাটকা রক্ষা করতে পারলে আগামী দিনে দেশ ইলিশে ভরপুর হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তারা।

 

বরিশাল জেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ ইয়ার হোসেন সিকদার বলেন, মেঘনার অভয়াশ্রম থেকেই চাপিলা ও জাটকা আহরিত হয়। এগুলো ট্রলারে বরিশালের তালতলী এবং বাবুগঞ্জের আগরপুরে আসে। সেখান থেকে সড়ক পথে বিভিন্ন বাজারে এবং দূর-দূরান্তে সরবরাহ করা হয়। এই সম্পদ রক্ষা করতে পারলে আগামীতে ইলিশে দেশ ভরপুর হবে বলে তিনি মনে করেন।

 

মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য শেখ রিপন বলেন, অসাধু মৎস্য কর্মকর্তা, শৃঙ্খলা বাহিনী, জেলে এবং আড়তদারের যোগসাজশেই নির্বিচারে নিধন হচ্ছে জাটকা। এদের রুখতে পারলেই ইলিশ সম্পদ বেড়ে যবে বলে মনে করেন তিনি।

 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জাটকা নিধন ঠেকাতে তারা তৎপর রয়েছেন। তবে জাটকা রক্ষার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়। সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা যাবে না বলে মনে করেন তিনি। গত ১ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত অভয়াশ্রমে মাছ শিকারের দায়ে ১৫০ জন জেলেকে জেল-জরিমানা এবং ২০ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল ও ৪ হাজার ২৯৯ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়েছে বলে দাবি তার।

 

ডাঙ্গায় জাটকা আটকের চেয়ে জাটকা নিধন বন্ধে নদীতে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা। একই সাথে প্রকৃত জেলেদের যথা সময়ে সরকারি প্রণোদনা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

 

বরিশাল বিভাগে সরকারের তালিকাভুক্ত সাড়ে ৩ লাখ জেলে রয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর দ্বিগুণ। সুবিধাবঞ্চিত এই জেলেদের পুনর্বাসনের আওতায় আনা গেলেই জাতীয় সম্পদ ইলিশের উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» র‌্যাংকিংয়েও আফগানদের টপকে গেল টাইগাররা

» রাজাকারের নাতিপুতি আখ্যা দেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল অপমানজনক

» নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেবে: টুকু

» রাতারগুলের অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার পাশে থাকবে: আসিফ নজরুল

» প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘে যাচ্ছেন ৪ রাজনীতিবিদকে নিয়ে

» এবারের দুর্গাপূজা উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» দুর্গাপূজায় আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক ও প্রতিরোধের প্রস্তুতি থাকতে হবে: তারেক রহমান

» পিআর দাবি জনগণের আঙ্খাকার সঙ্গে ‘মুনাফেকি’: রিজভী

» পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় অতন্দ্র প্রহরী হোন: নেতা-কর্মীদের মির্জা ফখরুল

» সফররত ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সবার যোগসাজশে অভয়াশ্রমে নির্বিচারে জাতীয় সম্পদ লুট

আজকের চাপিলা কিংবা জাটকা আগামী দিনের রূপালী ইলিশ। জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষায় কাগজে-কলমে নানা বিধিনিষেধ থাকলে বাস্তবে এর প্রয়োগ যত সামান্য। সরকারি প্রশাসনের চোখের সামনে মেঘনার ইলিশ অভয়াশ্রম থেকে প্রতিদিন নিধন হচ্ছে শত শত মন চাপিলা ও জাটকা। এগুলো ট্রলার এবং সড়ক পথে সরবরাহ হচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন বাজারসহ দূর-দূরান্তে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলে, আড়তদার ও মৎস্য বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগসাজশেই লুণ্ঠন হচ্ছে এই জাতীয় সম্পদ। ডাঙ্গায় কিছু তৎপরতা থাকলেও জাটকা নিধন বন্ধে নদীতে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

অর্থনীতির সূচকে দেশের সার্বিক অগ্রগতির (জিডিপি) ১ ভাগ আসে ইলিশ থেকে। দেশে গত বছর উৎপাদিত হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগের নদী-সাগর থেকে আহরিত হয়েছে ৬৬ ভাগ অর্থাৎ ৩ লাখ ২৫ হাজার টন ইলিশ। প্রজননের পর রেণু থেকে শুরু করে চাপিল এবং জাটকা সাইজের পরই পূর্ণাঙ্গ সাইজে পরিণত হয় ইলিশ। ইলিশের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এছাড়া ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস ২৫ সেন্টিমিটারের কম আকারের (জাটকা) ইলিশ ধরায় রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু বাস্তবতা দেখলে কাগুজে মনে হবে এসব। বরিশালের ৩টি অভয়াশ্রমে প্রতিদিন নির্বিচারে মাছ শিকার করছে হাজার হাজার জেলে। এসব জাটকা নদী এবং সড়ক পথে ছড়িয়ে পড়ছে স্থানীয় সকল বাজারে। সড়ক পথেও পাচার হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

 

মঙ্গলবার সকালে নগরীর পোর্ট রোড বাজার চাপিলা আর জাটকায় সয়লাব দেখা গেছে। মৎস্য বিভাগ এবং প্রশাসনের চোখের সামনেই চলে জাটকা বিকিকিনি। বাজারে আসা মাছের ক্রেতারা জাটকা নিধন বন্ধের জন্য সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান। এই জাটকা রক্ষা করতে পারলে আগামী দিনে দেশ ইলিশে ভরপুর হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তারা।

 

বরিশাল জেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ ইয়ার হোসেন সিকদার বলেন, মেঘনার অভয়াশ্রম থেকেই চাপিলা ও জাটকা আহরিত হয়। এগুলো ট্রলারে বরিশালের তালতলী এবং বাবুগঞ্জের আগরপুরে আসে। সেখান থেকে সড়ক পথে বিভিন্ন বাজারে এবং দূর-দূরান্তে সরবরাহ করা হয়। এই সম্পদ রক্ষা করতে পারলে আগামীতে ইলিশে দেশ ভরপুর হবে বলে তিনি মনে করেন।

 

মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য শেখ রিপন বলেন, অসাধু মৎস্য কর্মকর্তা, শৃঙ্খলা বাহিনী, জেলে এবং আড়তদারের যোগসাজশেই নির্বিচারে নিধন হচ্ছে জাটকা। এদের রুখতে পারলেই ইলিশ সম্পদ বেড়ে যবে বলে মনে করেন তিনি।

 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জাটকা নিধন ঠেকাতে তারা তৎপর রয়েছেন। তবে জাটকা রক্ষার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়। সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা যাবে না বলে মনে করেন তিনি। গত ১ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত অভয়াশ্রমে মাছ শিকারের দায়ে ১৫০ জন জেলেকে জেল-জরিমানা এবং ২০ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল ও ৪ হাজার ২৯৯ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়েছে বলে দাবি তার।

 

ডাঙ্গায় জাটকা আটকের চেয়ে জাটকা নিধন বন্ধে নদীতে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা। একই সাথে প্রকৃত জেলেদের যথা সময়ে সরকারি প্রণোদনা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

 

বরিশাল বিভাগে সরকারের তালিকাভুক্ত সাড়ে ৩ লাখ জেলে রয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর দ্বিগুণ। সুবিধাবঞ্চিত এই জেলেদের পুনর্বাসনের আওতায় আনা গেলেই জাতীয় সম্পদ ইলিশের উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com