সত্যিই কি মঙ্গলের আকাশের রং সবুজ?

সংগৃহীত ছবি

 

আমরা মঙ্গল গ্রহকে সাধারণত লাল গ্রহ হিসেবেই জানি। ছবিতেও তেমনটিই দেখা যায়। কিন্তু মঙ্গল গ্রহের আকাশের রং নাকি কখনো কখনো সবুজ।

 

ইরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (এসা) গবেষকেরা এই তথ্য জানিয়েছেন।

 

তাদের দাবি, এক্সোমার্স ট্রেস গ্যাস অরবিটারের সাহায্যে মঙ্গলের সবুজ বায়ুমণ্ডলের সন্ধান পেয়েছেন তারা।

 

তার অর্থ এই নয়, সব সময় মঙ্গলের আকাশ সবুজ রঙের।

 

বাইরের মহাকাশ থেকে দেখলে পৃথিবীকে নীল রঙের দেখায়। কারণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল নীল। বেশির ভাগ সময়ই মঙ্গল গ্রহকে লাল দেখায়। এর বড় কারণ গ্রহটির লালচে ভূত্বক। মঙ্গেলের বাতাস খুব হালকা।

 

তাই বায়ুমণ্ডলের পৃথিবীর মতো গাঢ় হওয়ার সুযোগ নেই। হালকা হলেও বায়ুমণ্ডল আছে গ্রহটিতে। তাই মাঝে মাঝে সেটা এমন রং ধারণ করতে পারে।

 

এ ধরনের ব্যাপারকে বলা হয় এয়ার গ্লো। এটা দিনে বা রাতে—যেকোনো সময় হতে পারে।

 

তবে এসার বিজ্ঞানী রাতের আকাশে এই সবুজ আভা দেখেছেন। তাই এ ঘটনাকে বলা হচ্ছে নাইট গ্লো।
মঙ্গলের এই নাইট গ্লোর মতো ঘটনা কিন্তু পৃথিবীতেও ঘটে। নর্দান লাইট বা অরোরা নামে পরিচিত সেটা। উত্তর মেরুর আকাশে অরোরা দেখা যায়। এর কারণ সৌরঝড় থেকে মুক্ত হওয়া চার্জিত কণারা পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের ভেতর এলে এদের মধ্যে বৈদ্যুক্রিয়া সংঘটিত হয়। তাতেই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে কণাগুলো। তখন উত্তরমেরুর আকাশ নানা রঙের আলোর ঝলকনানিতে মেতে ওঠে। বিশেষ করে রাতের বেলা।

 

মঙ্গলেও তেমটাই ঘটেছে বলে দাবি করছেন গবেষকরা। মঙ্গলের গ্রহের আকাশের ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় এ দৃশ্য দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

 

মঙ্গলে বায়ুমণ্ডল আছে কি না এ নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন বিজ্ঞানীরা। ৪০ বছর ধরে তাদের মনে হয়েছে মঙ্গলে হয়তো বায়ুমণ্ডল আছে। কিন্তু প্রমাণ তো চাই। তাই ২০১৬ সালে এসা ও রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমস যৌথভাবে মঙ্গলে উদ্দেশে এক্সোমার্স ট্রেস গ্যাস অরবিটারের বা (টিজিও) নামের মহাকাশযানটি পাঠায়। এর কাজ মঙ্গলের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে এর বায়ুমণ্ডলের সন্ধান করা। ২০২০ সালে সফলতার মুখ দেখে অরবিটারটি। দৃশ্যমান দিনের আলোতে এর সাহায্যে এয়ার গ্লো বা ডে গ্লোর সন্ধান পান বিজ্ঞানীরা। এবার রাতের আকাশে দেখা গেল নাইট গ্লো।

 

এসা ও বেলজিয়ামের লিজ বিশবিদ্যালয়ের জিন-ক্লদ জেরার্ড বলেন, মঙ্গলে মনুষ্য অভিযান পরিচালনা করতে সাহায্য করবে এই পর্যবেক্ষণ। বিজ্ঞানীরা হয়তো অদূর ভবিষ্যতে মঙ্গলের কক্ষপথ কিংবা ভূমি থেকেও এ দৃশ্য দেখতে পাবেন।

 

এই নাইট গ্লো একটা গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের ইঙ্গিত করে। অক্সিজেনের দুটি পরমাণু যুক্ত হয়ে একটা অক্সিজেন তৈরি করার সময় বায়ুমণ্ডলে এই নাইট গ্লো দেখা দিতে পারে। অল্প হলেও অক্সিজেন যদি থাকে, সেটা বরং আশাব্যঞ্জক খবর।

 

এই আবিষ্কারকে অবিস্মরণীয় বলে মনে করছেন বেলজিয়াম ইউনিভার্সিটি অব লিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যানেটারি অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক ফিজিক্সের গবেষক বেনোয়েট হুবার্ট। তার মতে, এই নাইট গ্লোর মাধ্যমে মঙ্গলের ৪০-৮০ কিলোমিটার উচ্চাতায় বায়ুমণ্ডলের গঠন ও গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সহজ হবে। সূত্র: লাইভ সায়েন্স

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদ থেকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পদত্যাগ

» ট্রাক্টরের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত

» বিএনপি না এলেও নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে: সালমান এফ রহমান

» তিন কেজি গাঁজা ও নগদ ৮৮ হাজার টাকাসহ বাবা-ছেলে গ্রেফতার

» মানুষের কল্যাণে ডিএসসিএসসি’র প্রশিক্ষণার্থীদের অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগানোর আহ্বান রাষ্ট্রপতির

» নির্বাচন যারা বাধাগ্রস্ত করছে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসা উচিত : ওবায়দুল কাদের

» দলীয় এমপিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও করতে হবে না পদত্যাগ: ইসি

» সহিংসতায় নিহত শুক্কুর হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার

» সসে ডুবিয়ে জীবন্ত অক্টোপাস খাওয়া জনপ্রিয় যেখানে

» বিশাল গাড়িবহর নিয়ে মাগুরার পথে সাকিব আল হাসান

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।(দপ্তর সম্পাদক)  উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সত্যিই কি মঙ্গলের আকাশের রং সবুজ?

সংগৃহীত ছবি

 

আমরা মঙ্গল গ্রহকে সাধারণত লাল গ্রহ হিসেবেই জানি। ছবিতেও তেমনটিই দেখা যায়। কিন্তু মঙ্গল গ্রহের আকাশের রং নাকি কখনো কখনো সবুজ।

 

ইরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (এসা) গবেষকেরা এই তথ্য জানিয়েছেন।

 

তাদের দাবি, এক্সোমার্স ট্রেস গ্যাস অরবিটারের সাহায্যে মঙ্গলের সবুজ বায়ুমণ্ডলের সন্ধান পেয়েছেন তারা।

 

তার অর্থ এই নয়, সব সময় মঙ্গলের আকাশ সবুজ রঙের।

 

বাইরের মহাকাশ থেকে দেখলে পৃথিবীকে নীল রঙের দেখায়। কারণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল নীল। বেশির ভাগ সময়ই মঙ্গল গ্রহকে লাল দেখায়। এর বড় কারণ গ্রহটির লালচে ভূত্বক। মঙ্গেলের বাতাস খুব হালকা।

 

তাই বায়ুমণ্ডলের পৃথিবীর মতো গাঢ় হওয়ার সুযোগ নেই। হালকা হলেও বায়ুমণ্ডল আছে গ্রহটিতে। তাই মাঝে মাঝে সেটা এমন রং ধারণ করতে পারে।

 

এ ধরনের ব্যাপারকে বলা হয় এয়ার গ্লো। এটা দিনে বা রাতে—যেকোনো সময় হতে পারে।

 

তবে এসার বিজ্ঞানী রাতের আকাশে এই সবুজ আভা দেখেছেন। তাই এ ঘটনাকে বলা হচ্ছে নাইট গ্লো।
মঙ্গলের এই নাইট গ্লোর মতো ঘটনা কিন্তু পৃথিবীতেও ঘটে। নর্দান লাইট বা অরোরা নামে পরিচিত সেটা। উত্তর মেরুর আকাশে অরোরা দেখা যায়। এর কারণ সৌরঝড় থেকে মুক্ত হওয়া চার্জিত কণারা পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের ভেতর এলে এদের মধ্যে বৈদ্যুক্রিয়া সংঘটিত হয়। তাতেই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে কণাগুলো। তখন উত্তরমেরুর আকাশ নানা রঙের আলোর ঝলকনানিতে মেতে ওঠে। বিশেষ করে রাতের বেলা।

 

মঙ্গলেও তেমটাই ঘটেছে বলে দাবি করছেন গবেষকরা। মঙ্গলের গ্রহের আকাশের ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় এ দৃশ্য দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

 

মঙ্গলে বায়ুমণ্ডল আছে কি না এ নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন বিজ্ঞানীরা। ৪০ বছর ধরে তাদের মনে হয়েছে মঙ্গলে হয়তো বায়ুমণ্ডল আছে। কিন্তু প্রমাণ তো চাই। তাই ২০১৬ সালে এসা ও রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমস যৌথভাবে মঙ্গলে উদ্দেশে এক্সোমার্স ট্রেস গ্যাস অরবিটারের বা (টিজিও) নামের মহাকাশযানটি পাঠায়। এর কাজ মঙ্গলের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে এর বায়ুমণ্ডলের সন্ধান করা। ২০২০ সালে সফলতার মুখ দেখে অরবিটারটি। দৃশ্যমান দিনের আলোতে এর সাহায্যে এয়ার গ্লো বা ডে গ্লোর সন্ধান পান বিজ্ঞানীরা। এবার রাতের আকাশে দেখা গেল নাইট গ্লো।

 

এসা ও বেলজিয়ামের লিজ বিশবিদ্যালয়ের জিন-ক্লদ জেরার্ড বলেন, মঙ্গলে মনুষ্য অভিযান পরিচালনা করতে সাহায্য করবে এই পর্যবেক্ষণ। বিজ্ঞানীরা হয়তো অদূর ভবিষ্যতে মঙ্গলের কক্ষপথ কিংবা ভূমি থেকেও এ দৃশ্য দেখতে পাবেন।

 

এই নাইট গ্লো একটা গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের ইঙ্গিত করে। অক্সিজেনের দুটি পরমাণু যুক্ত হয়ে একটা অক্সিজেন তৈরি করার সময় বায়ুমণ্ডলে এই নাইট গ্লো দেখা দিতে পারে। অল্প হলেও অক্সিজেন যদি থাকে, সেটা বরং আশাব্যঞ্জক খবর।

 

এই আবিষ্কারকে অবিস্মরণীয় বলে মনে করছেন বেলজিয়াম ইউনিভার্সিটি অব লিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যানেটারি অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক ফিজিক্সের গবেষক বেনোয়েট হুবার্ট। তার মতে, এই নাইট গ্লোর মাধ্যমে মঙ্গলের ৪০-৮০ কিলোমিটার উচ্চাতায় বায়ুমণ্ডলের গঠন ও গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সহজ হবে। সূত্র: লাইভ সায়েন্স

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।(দপ্তর সম্পাদক)  উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com