রোজায় স্বাস্থ্য উপযোগী খাবার

 মাহফুজা আফরোজ সাথী:কেমন খাবার হলে রোজা থেকেও সতেজ থাকা যায় তা নিয়েই এই ফিচার। মুসলমানরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন রমজান মাসের জন্য। এ দেশের মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়। আমরা বাংলাদেশিরা ভোজনরসিকও বটে। আমাদের প্রতিটি উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা রকম খাবার। সারা বছর যে খাবারগুলো খাওয়া হয় না বললেই চলে বা কম খাওয়া হয়, এমন সব খাবার রমজান উপলক্ষে প্রতিদিন খাওয়ার প্রচলনটাও কম নয়। 

 

রোজা বা সিয়াম সাধনা করার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। তাই রোজা সবার জন্য অবশ্য পালনীয় ইবাদত। রোজা রেখে আমাদের খাবার যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে আমরা সুস্থ থাকতে পারব এবং আরও বেশি ইবাদত পালন ও দৈনন্দিন কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারব।

 

চারপাশে তাপদাহ, এ অবস্থায় রোজা রাখলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়া খুবই স্বাভাবিক। কেমন খাবার হলে রোজা থেকেও সুস্থ ও সতেজ থাকা যায় চলুন জেনে নেওয়া যাক।

 

ইফতার : সারা দিন রোজা রাখার ফলে দেহ পানিশূন্যতায় ভোগে। তাই ইফতার হতে হবে হাইড্রেটিং এবং রিফ্রেশিং। এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে অনেক রকমের ফল। তাই ইফতারে যে কোনো ফ্রেশ ফ্রুট জুস বা কয়েকটি ফলের ফ্রুট ককটেল রাখতে পারেন যা আপনাকে করে তুলবে একদম চাঙ্গা। খুব বেশি ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন, এমন গুরুপাক খাবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ছাড়াও ডায়রিয়া বা অন্যান্য পেটের অসুখের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই খেতে পারেন বেকড স্যান্ডউইচ, ওটস অথবা দই-চিঁড়া। তাছাড়া থাকতে পারে অল্প তেলে বা তেলছাড়া রান্না করা নুডলস। শুকনো ফল, খেজুর ও বাদাম হতে পারে শক্তির উৎস। ইফতারের পর থেকে সাহরি পর্যন্ত অবশ্যই ন্যূনতম আট গ্লাস পানি পান করবেন, তবেই শরীরে পানির কোনো অভাব হবে না।

 

রাতের খাবার : অনেকেই ইফতারে অতিরিক্ত খেয়ে রাতের খাবারটি বাদ রাখেন, যা মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। রাতে না খেয়ে থাকলে এসিডিটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। ফলে রোজা থেকে সারা দিন বুক জ্বালাপোড়া করে। তাই ডিনার একদম বাদ দেবেন না। কম খেতে চাইলে হালকা কিছু খেতে পারেন। যেমন একবাটি সবজির স্যুপ সঙ্গে এক স্লাইস ব্রাউন ব্রেড ও সেদ্ধ ডিম একটা। ভাত খেলে সবজি ও সালাদের আধিক্য রেখে পছন্দসই মাছ খেতে পারেন। এমন খাবার খেলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে আবার স্বাস্থ্যহানিও ঘটে না।

 

সাহরি : এটি একটু ব্যতিক্রম সময়ের খাবার। সাধারণত আমরা এ সময় খেয়ে অভ্যস্ত নই। আবার এ সময়ের খাবারের ওপর নির্ভর করে আমাদের সারা দিনের কর্মক্ষমতা। তাই সারা দিন যেন সতেজ থাকা যায় এমন খাবার খেতে হবে সাহরিতে। পানীয় জাতীয় খাবার যেমন ডাল বা স্যুপ রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়, বাদ দিতে হবে চা-কফি। কারণ চা-কফি শরীর থেকে পানি বের করে দেয়। ফলে ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। সহজে পরিপাক হয় এমন খাবার খেতে হবে। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত কষানো খাবার থেকে বিরত থাকুন।

 

প্রোটিনের চাহিদা মাংসের পরিবর্তে মাছ বা দুধ দিয়ে পূরণ করুন। সবুজ শাক বা পানি জাতীয় সবজি যেমন- পেঁপে, পটোল, লাউ, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স খান। তবেই পানির অভাবে সৃষ্ট কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। অতিরিক্ত তেল-মসলা ও চিনিযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। এই ছোট ছোট বিষয় মাথায় রেখে খাবারের তালিকা সাজালে সুস্থ ও কর্মক্ষমভাবে রোজা পালন করা কোনো কঠিন ব্যাপার নয়। এখানে যেভাবে খাদ্য নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে তা সুস্থ মানুষের জন্য প্রযোজ্য। যদি কারও কোনো বিশেষ রোগ থাকে যেমন ডায়াবেটিস বা কিডনি রোগ, তবে তারা অবশ্যই তার ডাক্তার ও একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের সঙ্গে কথা বলে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করবেন।

লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম  । সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» গ্যারান্টিড ম্যাচুরিটি ভ্যালুর সুবিধা নিয়ে মেটলাইফের নতুন বীমা পলিসি

» ১১৬৪ টি ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা পদে নিয়োগে বিপিএসসির সুপারিশ

» আমেরিকার ভিসানীতির পরে বিএনপির নেতৃত্ব ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে: হানিফ

» বিএনপি কি নির্বাচন চায়, তাদের নেতা কে: প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

» ‘সজাগ থাকুন, স্বাধীনতাবিরোধীরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে’

» কোনো দলকে পক্ষ করে ভিসা নীতি নয় : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

» রোডমার্চ বৃহত্তর আন্দোলনের প্রাক প্রস্তুতি: নজরুল ইসলাম

» বিশ্বের ‘সবচেয়ে দূরপাল্লার’ ড্রোন উন্মোচন করলো ইরান

» ভিসানীতি নিয়ে সরকার নয়, বিএনপি চাপে আছে: শিক্ষামন্ত্রী

» সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে ছুরিকাঘাতে স্কুলছাত্র আহত

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।(দপ্তর সম্পাদক)  উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

রোজায় স্বাস্থ্য উপযোগী খাবার

 মাহফুজা আফরোজ সাথী:কেমন খাবার হলে রোজা থেকেও সতেজ থাকা যায় তা নিয়েই এই ফিচার। মুসলমানরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন রমজান মাসের জন্য। এ দেশের মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়। আমরা বাংলাদেশিরা ভোজনরসিকও বটে। আমাদের প্রতিটি উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা রকম খাবার। সারা বছর যে খাবারগুলো খাওয়া হয় না বললেই চলে বা কম খাওয়া হয়, এমন সব খাবার রমজান উপলক্ষে প্রতিদিন খাওয়ার প্রচলনটাও কম নয়। 

 

রোজা বা সিয়াম সাধনা করার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। তাই রোজা সবার জন্য অবশ্য পালনীয় ইবাদত। রোজা রেখে আমাদের খাবার যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে আমরা সুস্থ থাকতে পারব এবং আরও বেশি ইবাদত পালন ও দৈনন্দিন কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারব।

 

চারপাশে তাপদাহ, এ অবস্থায় রোজা রাখলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়া খুবই স্বাভাবিক। কেমন খাবার হলে রোজা থেকেও সুস্থ ও সতেজ থাকা যায় চলুন জেনে নেওয়া যাক।

 

ইফতার : সারা দিন রোজা রাখার ফলে দেহ পানিশূন্যতায় ভোগে। তাই ইফতার হতে হবে হাইড্রেটিং এবং রিফ্রেশিং। এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে অনেক রকমের ফল। তাই ইফতারে যে কোনো ফ্রেশ ফ্রুট জুস বা কয়েকটি ফলের ফ্রুট ককটেল রাখতে পারেন যা আপনাকে করে তুলবে একদম চাঙ্গা। খুব বেশি ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন, এমন গুরুপাক খাবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ছাড়াও ডায়রিয়া বা অন্যান্য পেটের অসুখের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই খেতে পারেন বেকড স্যান্ডউইচ, ওটস অথবা দই-চিঁড়া। তাছাড়া থাকতে পারে অল্প তেলে বা তেলছাড়া রান্না করা নুডলস। শুকনো ফল, খেজুর ও বাদাম হতে পারে শক্তির উৎস। ইফতারের পর থেকে সাহরি পর্যন্ত অবশ্যই ন্যূনতম আট গ্লাস পানি পান করবেন, তবেই শরীরে পানির কোনো অভাব হবে না।

 

রাতের খাবার : অনেকেই ইফতারে অতিরিক্ত খেয়ে রাতের খাবারটি বাদ রাখেন, যা মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। রাতে না খেয়ে থাকলে এসিডিটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। ফলে রোজা থেকে সারা দিন বুক জ্বালাপোড়া করে। তাই ডিনার একদম বাদ দেবেন না। কম খেতে চাইলে হালকা কিছু খেতে পারেন। যেমন একবাটি সবজির স্যুপ সঙ্গে এক স্লাইস ব্রাউন ব্রেড ও সেদ্ধ ডিম একটা। ভাত খেলে সবজি ও সালাদের আধিক্য রেখে পছন্দসই মাছ খেতে পারেন। এমন খাবার খেলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে আবার স্বাস্থ্যহানিও ঘটে না।

 

সাহরি : এটি একটু ব্যতিক্রম সময়ের খাবার। সাধারণত আমরা এ সময় খেয়ে অভ্যস্ত নই। আবার এ সময়ের খাবারের ওপর নির্ভর করে আমাদের সারা দিনের কর্মক্ষমতা। তাই সারা দিন যেন সতেজ থাকা যায় এমন খাবার খেতে হবে সাহরিতে। পানীয় জাতীয় খাবার যেমন ডাল বা স্যুপ রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়, বাদ দিতে হবে চা-কফি। কারণ চা-কফি শরীর থেকে পানি বের করে দেয়। ফলে ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। সহজে পরিপাক হয় এমন খাবার খেতে হবে। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত কষানো খাবার থেকে বিরত থাকুন।

 

প্রোটিনের চাহিদা মাংসের পরিবর্তে মাছ বা দুধ দিয়ে পূরণ করুন। সবুজ শাক বা পানি জাতীয় সবজি যেমন- পেঁপে, পটোল, লাউ, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স খান। তবেই পানির অভাবে সৃষ্ট কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। অতিরিক্ত তেল-মসলা ও চিনিযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। এই ছোট ছোট বিষয় মাথায় রেখে খাবারের তালিকা সাজালে সুস্থ ও কর্মক্ষমভাবে রোজা পালন করা কোনো কঠিন ব্যাপার নয়। এখানে যেভাবে খাদ্য নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে তা সুস্থ মানুষের জন্য প্রযোজ্য। যদি কারও কোনো বিশেষ রোগ থাকে যেমন ডায়াবেটিস বা কিডনি রোগ, তবে তারা অবশ্যই তার ডাক্তার ও একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের সঙ্গে কথা বলে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করবেন।

লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম  । সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।(দপ্তর সম্পাদক)  উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com