রোগীর সেবা করার ফজিলত ও নীতিমালা

মানবতার ধর্ম ইসলাম। ইহ ও পরকালীন সর্বজনীন ব্যবস্থা রয়েছে এ ধর্মে। চিরকল্যাণ ও অনাবিল শান্তির পয়গাম নিয়ে এ ধর্মের আবির্ভাব। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি বিধান পালন করা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। পারিবারিক ও সামাজিক সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন রক্ষা করা, হৃদয়গ্রাহী আচরণ করা এবং মানবসেবায় নিবেদিত হওয়া কোরআন-সুন্নাহর আলোকে অতুল্য মহৎ কর্ম। 

 

অসুস্থ কোনো ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া, তার সেবা করা মহানবী (সা.)-এর সুমহান আদর্শ, ইহ ও পরকালে উত্তম বিনিময় লাভের অন্যতম উপায়। মুসলমান হিসেবে অন্য মুসলমানের ওপর বিশেষ একটি অধিকার। বুখারি, মুসলিম। রোগী অমুসলিম হলে তাকে দেখতে যাওয়ার মধ্যেও অনেক কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

 

সাহাবি আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ইহুদি যুবক রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিল। একদা সে অসুস্থ হয়ে যায়। মহানবী (সা.) পৌঁছে যান সেই যুবকের কুটিরে তাকে দেখার জন্য। তাকে তিনি ইসলামের দাওয়াত প্রদান করেন। সে তার পিতার দিকে দৃষ্টি দেয়। তার পিতা তাকে বলল, তুমি আবুল কাসেমের অনুসরণ কর। এরপর সে ইসলাম গ্রহণ করে। বুখারি।

 

রোগীকে দেখতে যাওয়ার অনেক ফজিলত। সাহাবি আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সকালবেলা কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায় ৭০ হাজার ফেরেশতা বিকাল পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকে। আর বিকালে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ফলের বাগান তৈরি করা হয়।’ আবু দাউদ।

 

রোগী দেখতে যাওয়ার সুন্নত নিয়ম হলো অজু করে যাওয়া। সাহাবি আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অজু করে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায় তাকে জাহান্নাম থেকে ৬০ বছর সমপথ দূরে রাখা হবে।’ আবু দাউদ।

 

রোগী দেখার ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণীয় বিষয় হলো- রোগীর শরীরে হাত রেখে তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা। আহমদ। রোগীকে সান্ত্বনার বাণী শোনানো। তিরমিজি। রোগীর কাছে বেশি সময় না বসা। উঁচু আওয়াজে কথা না বলা। মিশকাত। এ ছাড়া রোগীর কাছে নিজের জন্য দোয়া চাওয়া, রোগীর আরোগ্যতার জন্য মাসনুন দোয়া পড়া এবং মুমূর্ষুর কাছে সুরা ইয়াসিন পাঠ করা ইত্যাদি রোগী দেখার অন্যতম সুন্নত নিয়ম।

 

রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মুমূর্ষু রোগী ছাড়া যে কোনো রোগীর কাছে নিম্নের দোয়াটি সাতবার পাঠ করলে সে রোগী অবশ্যই ওই রোগ থেকে মুক্তি লাভ করবে। দোয়াটি হলো : ‘আসআলুল্লাহাল আজিম রাব্বাল আরশিল আজিম, আইয়াশফিয়াক।’ আবু দাউদ।

 

সুস্থতা-অসুস্থতা মিলেই মানুষের জীবন। অসুস্থতা মানবজীবনে অভিন্ন অধ্যায়। কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া, যথাসাধ্য তার সেবা ও সহযোগিতায় এগিয়ে আসা মানবতার দাবি। ইসলামের বিধান। মানবতার কান্ডারি মহানবী (সা.)-এর অনুপম আদর্শ অনুসরণ করে এ মহৎ সেবার মাধ্যমে আমরা ইহ ও পরকালের মহাকল্যাণ অর্জন করতে পারি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জুলাই শহীদদের প্রকৃত সম্মান হবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া : পরিবেশ উপদেষ্টা

» তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের খালাসের রায় প্রকাশ

» ‘দুলাভাই, দুলাভাই’ স্লোগানে মুখরিত এনসিপির মঞ্চ, উৎসাহ দিলেন হাসনাত

» সংসদে ১০০ নারী আসনের পক্ষে বিএনপি, তবে সংরক্ষিত : সালাহউদ্দিন

» চাঁদাবাজ যেখানে সংগ্রাম হবে সেখানে: জামায়াতের নায়েবে আমির

» বিএনপির নেতাকে নিয়ে অশ্লীল স্লোগান দেওয়ার পরও ছাত্রদলের লাখো নেতাকর্মীকে শান্ত রেখেছি : ছাত্রদল সভাপতি

» বিএনপি ছাড়া বাংলাদেশ কারও হাতে নিরাপদ নয়: মির্জা আব্বাস

» বিএনপি এখন চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের দলে পরিণত হয়েছে: নাহিদ ইসলাম

» জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের উদ্বোধন ৫ আগস্ট

» এ সরকারের শাসনামলেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে : ড. আসিফ নজরুল

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

রোগীর সেবা করার ফজিলত ও নীতিমালা

মানবতার ধর্ম ইসলাম। ইহ ও পরকালীন সর্বজনীন ব্যবস্থা রয়েছে এ ধর্মে। চিরকল্যাণ ও অনাবিল শান্তির পয়গাম নিয়ে এ ধর্মের আবির্ভাব। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি বিধান পালন করা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। পারিবারিক ও সামাজিক সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন রক্ষা করা, হৃদয়গ্রাহী আচরণ করা এবং মানবসেবায় নিবেদিত হওয়া কোরআন-সুন্নাহর আলোকে অতুল্য মহৎ কর্ম। 

 

অসুস্থ কোনো ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া, তার সেবা করা মহানবী (সা.)-এর সুমহান আদর্শ, ইহ ও পরকালে উত্তম বিনিময় লাভের অন্যতম উপায়। মুসলমান হিসেবে অন্য মুসলমানের ওপর বিশেষ একটি অধিকার। বুখারি, মুসলিম। রোগী অমুসলিম হলে তাকে দেখতে যাওয়ার মধ্যেও অনেক কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

 

সাহাবি আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ইহুদি যুবক রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিল। একদা সে অসুস্থ হয়ে যায়। মহানবী (সা.) পৌঁছে যান সেই যুবকের কুটিরে তাকে দেখার জন্য। তাকে তিনি ইসলামের দাওয়াত প্রদান করেন। সে তার পিতার দিকে দৃষ্টি দেয়। তার পিতা তাকে বলল, তুমি আবুল কাসেমের অনুসরণ কর। এরপর সে ইসলাম গ্রহণ করে। বুখারি।

 

রোগীকে দেখতে যাওয়ার অনেক ফজিলত। সাহাবি আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সকালবেলা কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায় ৭০ হাজার ফেরেশতা বিকাল পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকে। আর বিকালে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ফলের বাগান তৈরি করা হয়।’ আবু দাউদ।

 

রোগী দেখতে যাওয়ার সুন্নত নিয়ম হলো অজু করে যাওয়া। সাহাবি আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অজু করে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায় তাকে জাহান্নাম থেকে ৬০ বছর সমপথ দূরে রাখা হবে।’ আবু দাউদ।

 

রোগী দেখার ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণীয় বিষয় হলো- রোগীর শরীরে হাত রেখে তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা। আহমদ। রোগীকে সান্ত্বনার বাণী শোনানো। তিরমিজি। রোগীর কাছে বেশি সময় না বসা। উঁচু আওয়াজে কথা না বলা। মিশকাত। এ ছাড়া রোগীর কাছে নিজের জন্য দোয়া চাওয়া, রোগীর আরোগ্যতার জন্য মাসনুন দোয়া পড়া এবং মুমূর্ষুর কাছে সুরা ইয়াসিন পাঠ করা ইত্যাদি রোগী দেখার অন্যতম সুন্নত নিয়ম।

 

রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মুমূর্ষু রোগী ছাড়া যে কোনো রোগীর কাছে নিম্নের দোয়াটি সাতবার পাঠ করলে সে রোগী অবশ্যই ওই রোগ থেকে মুক্তি লাভ করবে। দোয়াটি হলো : ‘আসআলুল্লাহাল আজিম রাব্বাল আরশিল আজিম, আইয়াশফিয়াক।’ আবু দাউদ।

 

সুস্থতা-অসুস্থতা মিলেই মানুষের জীবন। অসুস্থতা মানবজীবনে অভিন্ন অধ্যায়। কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া, যথাসাধ্য তার সেবা ও সহযোগিতায় এগিয়ে আসা মানবতার দাবি। ইসলামের বিধান। মানবতার কান্ডারি মহানবী (সা.)-এর অনুপম আদর্শ অনুসরণ করে এ মহৎ সেবার মাধ্যমে আমরা ইহ ও পরকালের মহাকল্যাণ অর্জন করতে পারি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com