রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের হল সম্মেলন শুরু হয়েছে। দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলা মাঠে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. গোলাম কিবরিয়া।
এ সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন উড্ডয়ন ও কবুতর মুক্তি দেওয়া হয়। প্রায় ছয় বছর পর এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে রাবি শাখা ছাত্রলীগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে প্রতিটি অ্যাকাডেমিক ভবন, বিভিন্ন রাস্তার মোড়, ছাত্রলীগের টেন্ট, টুকিটাকি চত্বর, আমতলা চত্বর, পরিবহন মার্কেট, আবাসিক হল গেট ছেয়ে গেছে ব্যানার, ফেস্টুনে। রঙবেরঙের পোস্টার আর নানা শুভেচ্ছা বার্তায় স্বাগত জানানো হয়েছে সম্মেলনের অতিথিদের। পদপ্রত্যাশীদের মাঝে বিরাজ করছে আনন্দ। ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হচ্ছে ক্যাম্পাস অঙ্গণ।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ. এইচ. এম খায়রুজ্জামান লিটন।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম কামাল হোসেন অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও বিশেষ কারণবশত তিনি আসতে পারেননি। এ ছাড়া বিশেষে অতিথি হিসেবে আছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল সরকার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাঈদ আহমেদ পলক, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ড. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে আছেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি খালিদ হাসান নয়ন, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ হিল বারী, সহসম্পাদক শরিফুল ইসলাম সাদ্দাম, আহসান হাবীব বাপ্পী, শফি আজাদ বান্টি ও প্রদীপ কুমার সাহা পিংকু, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস।
শহীদ ড. শামসুজ্জোহা হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বরজাহান আলীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করছেন রাবির শাহ মখদুম হল ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফ বিন জাহির।
হল সম্মেলন উপলক্ষে সোমবার বিকেল ৪টায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অুনষ্ঠানে মঞ্চ মাতাবেন বর্তমানের সময়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ইমরান মাহমুদুল, আঁখি আলমগীর এবং ব্যান্ড ওয়ারফেজ।
সম্মেলনের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, সম্মেলনকে সফল ও স্বার্থক করতে নেতাকর্মী সবার সহযোগিতা কামনা করছি। সবার অংশগ্রহণে আনন্দমুখর পরিবেশে একটি সম্মেলন উপহার দিতে পারবো বলে আশা করি।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি হল সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা ‘অনিবার্য’ কারণ দেখিয়ে স্থগিত করা হয়। এ সম্মেলনের জন্য ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে ফরম বিক্রি শুরু হয়। চলে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরমধ্যে ১১টি ছাত্র হল ও ৬টি ছাত্রী হলসহ সর্বমোট ১৭টি হলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ফরম সংগ্রহ করে ৪১৬ জন।
এর মধ্যে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ২২, মন্নুজান হলে ১৭, তাপসী রাবেয়া হলে ৭, রহমতুন্নেসা হলে ৮, খালেদা জিয়া হলে ৯, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৪২, শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক হলে ৩০, মতিহার হলে ২২, শাহ মখদুম হলে ৩৪, সৈয়দ আমীর আলী হলে ২৮, লতিফ হলে ২৬, শামসুজ্জোহা হলে ২৫, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ৪০, মাদার বখশ হলে ৩১, শহীদ হবিবুর রহমান হলে ৩৭ ও জিয়াউর রহমান হলে ২৮ জন।
এর আগে, ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ও ২২ নভেম্বর দুই ভাগে ভাগ করে ছাত্রদের ১১টি হলের সম্মেলন করে তৎকালীন রানা-বিপ্লব কমিটি। পরে বিভিন্ন সময়ে ৯টি হলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঝুলিয়ে রাখা হয় শের-ই-বাংলা ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল শাখার কমিটি। এরপর থেকে আর হল কমিটি হয়নি।
তাছাড়া ২০১৭ সালে শাখা ছাত্রলীগ ২৫১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছর পার হলেও নতুন কমিটি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় নিষ্ক্রিয় হয়েছেন দলের ২৩০ জন নেতাকর্মী। ফলে হতাশা ও নেতৃত্বের অভাবে ঝিমিয়ে পড়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।