রক্ত-ভীতি দূর করার উপায়

রক্ত দেখলেই অনেকেই ভয় পান, ভয়ে প্রায় অজ্ঞান হওয়ার জোগাড় হয় অনেকের। তবে এ নিয়ে আর দুশ্চিন্তার কারণ নেই। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, পৃথিবীর প্রায় তিন শতাংশ মানুষই এমন ভীতিতে ভোগেন। চিকিৎসকদের ভাষায় ভয়ের জেরে হওয়া প্রতিক্রিয়াকে ভ্যাসোভেগাল সিনকোপ বলে। একে নিউরোকার্ডিওজেনিক সিনকোপ-ও বলে। ‘ভ্যাসো’ বলতে বোঝানো হয় রক্তনালী এবং ‘ভ্যাগাস’ হল একটি বিশেষ স্নায়ু।

 

রক্ত দেখে ভয় পাওয়াটি মূলত হিমোফোবিয়া। খুব সাধারণ এই ফোবিয়া আদতে নীরিহ। মারাত্মক ক্ষতি করে না। তবে যদি ভয়ের চোটে ঘন ঘন অজ্ঞান বা বাড়াবাড়ি রকমের প্রতিক্রিয়া প্রায়ই হতে থাকে, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

 

অনেকেই ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ দেখলে ভয় পান। রক্তদান করতেও এই ভীতি কাজ করে। মনোবিদ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘হিমোফোবিয়ায় ভোগেন এমন মানুষদের ক্ষেত্রে রক্ত দেখলেই তাদের হার্ট রেট বেড়ে যায়। সেখান থেকে অ্যাংজাইটি বা প্যানিক অ্যাটাক হয়। এতে রক্তচাপও বাড়ে অনেকের ক্ষেত্রে।’’

 

অনেকে রক্তপরীক্ষার সময়ও এই ভীতিতে ভোগেন। তবে শুধু এটুকুই নয়, অনেকেই এই প্যানিক অ্যাটাক সামলাতে না পেরে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখেন। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। হিমোফোবিয়া নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা অবশ্য দাবি করে, এই ফোবিয়া কিছুটা জিনগত, অর্থাৎ উত্তরাধীকার সূত্রেও মেলে।

 

কখন বাড়াবাড়ি :মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও মানসিক ভীতি (ফোবিয়া) নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা গৌতম বরাটের মতে, ‘‘হিমোফোবিয়া আদতে খুবই নিরীহ। একে নিয়ে দুশ্চিন্তা বা মাতামাতি কোনোটাই প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু এটা তখনই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে যায়, যখন কারও রক্তচাপ এই আতঙ্কের জেরে তলানিতে পৌঁছে যায় ও ক্রনিক রক্তচাপের রোগী হয়ে ওঠেন। ঘন ঘন অজ্ঞান হওয়া থেকে খিঁচও চলে আসতে পারে। তখনই দরকার হয় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার।’’

 

এমন হলে কী করবেন : চিকিৎসকের পরামর্শ তো নেবেন, কিন্তু হঠাৎ কাউকে এমন হতে দেখলে বা নিজের এমন হলে দ্রুত কোনো শক্ত জিনিসে হেলান দিয়ে বসে পড়ুন। ঘাড়ে পানি দিন। ধীরে ধীরে শুয়ে পড়ে পা দুটোকে কোনো সাপোর্টের মাধ্যমে উঁচু করে রাখুন। এতে রক্ত চলাচল দ্রুত স্বাভাবিক হবে ও প্যানিক অ্যাটাক সারবে।

 

রক্তে ভয় থাকলে মেডিক্যাল চেক আপ বা কোনো ইঞ্জেকশন নেওয়ার সময় একা যাবেন না। সূচের দিকে না তাকানোই ভাল। প্রয়োজনে পরীক্ষক বা চিকিৎসককে নিজের এই ফোবিয়ার কথা জানিয়ে রাখুন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» শহীদদের নিয়ে মামলার নামে দেশে ব্যবসা শুরু হয়েছে: সারজিস

» ‘কাদের আমার বাসায় আসতে চেয়েছিলেন, আজ তিনি কোথায়?’

» ‘আগামীতে সরকার-বিরোধী দলকে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে’

» ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন ব্যাগের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভিযান: উপদেষ্টা রিজওয়ানা

» বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া

» মতিঝিল রুটে চললো মেট্রো ট্রেন

» দেশে প্রথমবারের মতো আর্মরশেল প্রটেকশনের ফোন নোট ৬০ এনেছে রিয়েলমি

» স্যামসাং উইন্ডফ্রি এসি এক্সপেরিয়েন্স জোন: ভবিষ্যতের এক ঝলক

» সুন্দরবনের উপকূলীয় বাগেরহাটের নয় উপজেলায় আখের বাম্পার ফলন, চাষিরমুখে হাসির ঝিলিক

» অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম একনেকে ৪ প্রকল্প অনুমোদন

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

রক্ত-ভীতি দূর করার উপায়

রক্ত দেখলেই অনেকেই ভয় পান, ভয়ে প্রায় অজ্ঞান হওয়ার জোগাড় হয় অনেকের। তবে এ নিয়ে আর দুশ্চিন্তার কারণ নেই। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, পৃথিবীর প্রায় তিন শতাংশ মানুষই এমন ভীতিতে ভোগেন। চিকিৎসকদের ভাষায় ভয়ের জেরে হওয়া প্রতিক্রিয়াকে ভ্যাসোভেগাল সিনকোপ বলে। একে নিউরোকার্ডিওজেনিক সিনকোপ-ও বলে। ‘ভ্যাসো’ বলতে বোঝানো হয় রক্তনালী এবং ‘ভ্যাগাস’ হল একটি বিশেষ স্নায়ু।

 

রক্ত দেখে ভয় পাওয়াটি মূলত হিমোফোবিয়া। খুব সাধারণ এই ফোবিয়া আদতে নীরিহ। মারাত্মক ক্ষতি করে না। তবে যদি ভয়ের চোটে ঘন ঘন অজ্ঞান বা বাড়াবাড়ি রকমের প্রতিক্রিয়া প্রায়ই হতে থাকে, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

 

অনেকেই ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ দেখলে ভয় পান। রক্তদান করতেও এই ভীতি কাজ করে। মনোবিদ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘হিমোফোবিয়ায় ভোগেন এমন মানুষদের ক্ষেত্রে রক্ত দেখলেই তাদের হার্ট রেট বেড়ে যায়। সেখান থেকে অ্যাংজাইটি বা প্যানিক অ্যাটাক হয়। এতে রক্তচাপও বাড়ে অনেকের ক্ষেত্রে।’’

 

অনেকে রক্তপরীক্ষার সময়ও এই ভীতিতে ভোগেন। তবে শুধু এটুকুই নয়, অনেকেই এই প্যানিক অ্যাটাক সামলাতে না পেরে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখেন। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। হিমোফোবিয়া নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা অবশ্য দাবি করে, এই ফোবিয়া কিছুটা জিনগত, অর্থাৎ উত্তরাধীকার সূত্রেও মেলে।

 

কখন বাড়াবাড়ি :মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও মানসিক ভীতি (ফোবিয়া) নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা গৌতম বরাটের মতে, ‘‘হিমোফোবিয়া আদতে খুবই নিরীহ। একে নিয়ে দুশ্চিন্তা বা মাতামাতি কোনোটাই প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু এটা তখনই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে যায়, যখন কারও রক্তচাপ এই আতঙ্কের জেরে তলানিতে পৌঁছে যায় ও ক্রনিক রক্তচাপের রোগী হয়ে ওঠেন। ঘন ঘন অজ্ঞান হওয়া থেকে খিঁচও চলে আসতে পারে। তখনই দরকার হয় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার।’’

 

এমন হলে কী করবেন : চিকিৎসকের পরামর্শ তো নেবেন, কিন্তু হঠাৎ কাউকে এমন হতে দেখলে বা নিজের এমন হলে দ্রুত কোনো শক্ত জিনিসে হেলান দিয়ে বসে পড়ুন। ঘাড়ে পানি দিন। ধীরে ধীরে শুয়ে পড়ে পা দুটোকে কোনো সাপোর্টের মাধ্যমে উঁচু করে রাখুন। এতে রক্ত চলাচল দ্রুত স্বাভাবিক হবে ও প্যানিক অ্যাটাক সারবে।

 

রক্তে ভয় থাকলে মেডিক্যাল চেক আপ বা কোনো ইঞ্জেকশন নেওয়ার সময় একা যাবেন না। সূচের দিকে না তাকানোই ভাল। প্রয়োজনে পরীক্ষক বা চিকিৎসককে নিজের এই ফোবিয়ার কথা জানিয়ে রাখুন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com