পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে, এ অবস্থায় বাংলাদেশেও সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
রোববার দুপুরে মহাখালী জাতীয় নিপসম অডিটোরিয়ামে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে। মৃত্যুও শূন্যের কোটায়। এটি আমাদের ধরে রাখতে হবে। তাই সবাইকেই সচেতন থাকতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে এতোদিন করোনা নিয়ন্ত্রণে ছিল বলেই কোনো ধরনের খাদ্যের অভাব হয়নি। আমাদের মাথাপিছু আয় সচল আছে। সংক্রমণ নাই বললেই চলে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ। তিনি সহযোগিতা করেছেন, যেন সবাই টিকা পায়।
জাহিদ মালেক বলেন, আমরা দেশের টার্গেটকরা জনসংখ্যার শতভাগ মানুষকে টিকা দিয়েছি। শুধুমাত্র যারা টিকা নিতে চায় না, তারাই টিকা নেওয়া বাকি আছে। বাকি সবাইকেই আমরা টিকা দিয়েছি। সঠিক সময়ে টিকা আনতে পেরেছি। সবাইকে সময়মতো টিকা দিতে সক্ষম হয়েছি।
মন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে স্বাস্থ্য বিভাগে অভুতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের উন্নতি হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। পুষ্টি সেবার উন্নয়ন হয়েছে। এগুলো সব প্রধানমন্ত্রীর চিন্তার ফসল।
তিনি আরও বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি পুষ্টির ব্যাপারেও সচেতন করা হয়। যে কারণে আগের তুলনায় অনেক মানুষ সচেতন হচ্ছে। তবে, আমাদের প্রাইমারি হেলথ কেয়ারে আরও জোর দিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমাদের টিবি, ডায়রিয়া, কলেরা, যক্ষা কন্ট্রোলে আছে। যেসব কারণে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। কিন্তু অসংক্রামক রোগ বেড়ে যাচ্ছে। এগুলোর পেছনে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি ভূমিকা রাখে।
‘শুধু খাবার খেলেই হবে না, পুষ্টিকর সুষম খাবার খেতে হবে। পরিমিত খেতে হবে। করোনায় যখন দেশ ও পৃথিবী আক্রান্ত হলো, তখন আমরা খুঁজতে থাকলাম কী খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। করোনা হলেও যেন করোনাকে মোকাবিলা করা যায়, আমাদের যেন ক্ষতি না হয়। তার মানে স্বাস্থ্য সেবায় পুষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং জাতীয় পুষ্টি পরিষদের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ডা. জুবাইদা নাসরীন প্রমুখ।
সপ্তাহব্যাপী এ আয়োজনে গত ২৩ তারিখ আলোকসজ্জা, ব্যানার-ফেস্টুন ও গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়, আজ (২৪ এপ্রিল) নিপসম অডিটরিয়ামে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। আগামী ২৫ এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মিলনায়তনে ‘আরবান নিউট্রিশন’ বিষয়ক সেমিনার, ২৬ এপ্রিল ‘নিউট্রিশন : অপরচুনিটি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে। ২৭ এপ্রিল লেকশোর হোটেলে ‘নিউট্রিশন গভরনেন্স’ শীর্ষক সেমিনার।
সপ্তাহব্যাপী এ কর্মসূচিতে ৭টি বার্তা দেশব্যাপী প্রচার করা হবে। সেগুলো হলো- জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে শালদুধ খাওয়ানো; শিশুকে ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ এবং ৬ মাস বয়সের পর থেকে ২ বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি সুষম খাবার দেওয়া; শিশু সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে কিনা জানতে কাছের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত ওজন ও উচ্চতা পরিমাপ করা; কিশোর-কিশোরীদের ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে উৎসাহিত করা; গর্ভবতী ও প্রসূতি মাকে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দেওয়া এবং নিয়মানুযায়ী আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ানো; পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের পুষ্টি চাহিদার প্রতি নজর দেওয়া; স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং কোভিড প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা।