ভয়ংকর বিপদ মাইক্রোপ্লাস্টিকে

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের তিনটি প্রধান নদী পশুর, রূপসা ও মোংলার পানিতে বিপজ্জনক মাইক্রোপ্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়েছে। এ জন্য এ তিন নদীর অন্তত ১৭ প্রজাতির মাছ ও তিন প্রজাতির শেলফিশ সংক্রমিত হয়ে পড়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিকে।

 

পাঁচ মিলিমিটারের কম দৈর্ঘ্যরে প্লাস্টিকের টুকরোগুলোকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয়, যা মাছ বা শেলফিশ সহজেই গিলে ফেলতে পারে। মাছের গিলে খাওয়া ওই সব প্লাস্টিকের কণা একপর্যায়ে মানুষের খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। সম্প্রতি ‘সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

 

এর আগে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের হৃৎপিন্ডখ্যাত কর্ণফুলী নদীতেও এ বিষয়ে প্রায় অভিন্ন তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। গবেষণা থেকে বলা হয়-প্লাস্টিক বর্জ্য কর্ণফুলীকে পরিণত করেছে চরম মাত্রায় দূষিত নদীতে। এ নদীতে চট্টগ্রাম শহরের প্রায় ৪০ শতাংশ প্লাস্টিকের ঠাঁই হয়। এরপরই রয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে রূপসা নদী, যেখানে ফেলা হয় প্রায় ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত প্লাস্টিক বর্জ্য। অন্তত ৭ মিটার উঁচু পলিথিনের বিশাল আস্তরণের কারণে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে একটি ড্রেজিং প্রকল্প অর্ধসমাপ্ত রেখেই থামতে হয়েছে। সম্প্রতি ‘সিপিডি-গ্রিন সিটিস ইনিশিয়েটিভ’ রিসার্চের অংশ হিসেবে একটি সেকেন্ডারি ডাটা বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। শুধু পশুর, রূপসা, মোংলা, কর্ণফুলী নদীই নয়, রাজধানীর আশপাশসহ অধিকাংশ নদীতে এ ধরনের দূষণের খবর নতুন নয়। ফলে ওই নদীগুলোর মাছ ও মানুষ ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী  বলেন, ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে মাছ-মানুষ সবারই ক্ষতি করছে। মাছের পেট কাটলে প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। সেই মাছ মানুষ খাচ্ছে। নদীগুলোতে টনে টনে প্লাস্টিকের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। মানুষের তৈরি করা এই ভয়াবহ বিপদের ফলও ভোগ করবে মানুষই। আমাদের যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ করতে হবে। অভ্যাস বদলাতে হবে। দেশের নীতি-নির্ধারকদেরও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে করণীয় ঠিক করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে। এ ছাড়া একক ব্যবহার্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।’ সুন্দরবনের তিন নদীর পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ফুড সেফটি অ্যান্ড কোয়ালিটি ডিভিশন, বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (বিসিএসআইআর) ইনস্টিটিউট অব ন্যাশনাল অ্যানালিটিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড সার্ভিসেস এবং ব্রাজিলের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে গবেষণাটি করেছে। এতে বলা হয়, ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটি গাইডলাইন অনুযায়ী সুন্দরবনের পশুর, রূপসা ও মোংলা নদী থেকে ২০ প্রজাতির ১৪১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ওই ২০ প্রজাতির মাছের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে, যার পরিমাণ প্রতি গ্রামে ৭ দশমিক ৩৩ থেকে ২০৫ দশমিক ৬১ কণা। পেশিতে এর পরিমাণ প্রতি গ্রামে ৫ দশমিক ৩৭ থেকে ৫৪ দশমিক ৩০ কণা। যেসব প্রজাতির মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে এর মধ্যে রয়েছে- বোম্বে ডাক (লইট্টা), বেঙ্গল ইয়েলোফিন সি ব্রিম (দাতিনা), স্পেকলড শ্রিম্প (হরিণা চিংড়ি), ইলিশ (তেনুয়ালোসা ইলিশা), টলি শাদ, গোল্ডলাইনড সিব্রেম (পোয়া), ইন্ডিয়ান অয়েলড সার্ডিন (ফাইসা), ফিরগেট টুনা (সুরমা), বেররামুন্ডি (ভেটকি), লার্জ হেড রিবন ফিশ (ছুরি), পেইন্টেড টেইলড গোবি (চেমো), লং হুইস্কার (টেংরা), লং হুইস্কার ক্যাটফিশ (আইর), স্পটেড স্ক্যাট (চিত্রা), লেন ¯œ্যাপার, স্পটেড আর্চারফিশ (চোরোই) ও গোল্ড স্পটেড গ্রেনাডিয়ারস অ্যানচোভি। হরিণা চিংড়ির পেশিতে সর্বাধিক পরিমাণে প্লাস্টিকের কণা ছিল, প্রতি গ্রামে এর পরিমাণ ৫৪ দশমিক ৩০। দাতিনা সর্বনিম্ন প্রতি গ্রামে ৫ দশমিক ৩৭ কণা বহন করেছিল। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে সর্বাধিক মাইক্রোপ্লাস্টিকের বাহক হলো চেমো। সেখানে প্রতি গ্রামে কণার পরিমাণ ২০৫ এবং সর্বনিম্ন সুরমা মাছে আছে প্রতি গ্রামে ৭ দশমিক ৩৩। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতি সপ্তাহে ৩০০ গ্রাম মাছের পেশি গ্রহণ করে থাকলে বছরে তিনি ৭৪ হাজার ২৮২টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গ্রহণ করছেন। আর শিশুরা সপ্তাহে ৫০ গ্রাম মাছের পেশি গ্রহণ করে থাকলেও বছরে ১২ হাজার ৩৮০টি কণা গ্রহণ করছে। টক্সিন কার্সিনোজেন তৈরি করে এমন ১০টি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পলিথিন ও প্লাস্টিক আইটেম। মানুষ যদি তা সেবন করে তাহলে খুব বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের মাছ খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিক যায়। যদি এটি পেটে জমতে থাকে, তবে পাঁচনতন্ত্র ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দেবে। যদি এটি রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থায় প্রবেশ করে, তবে লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশে মাথাপিছু মাছের ভোগ বছরে ১৪ কেজি। এদিকে সম্প্রতি প্রকাশ করা প্লাস্টিক বর্জ্যদূষণ নিয়ে ‘সিপিডি-গ্রিন সিটিস ইনিশিয়েটিভ’ গবেষণায় বলা হয়েছে, প্লাস্টিক দূষণের কারণে বেহাল দশা নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে কীর্তনখোলা (৭ দশমিক ১ শতাংশ), সন্ধ্যা (৬ দশমিক ৫ শতাংশ), নার (৪ দশমিক ১ শতাংশ), মেঘনা (৩ দশমিক ৩ শতাংশ), কালীগঙ্গা (২ দশমিক ৫), বলেশ্বরী (২ শতাংশ), সুগন্ধা (১ দশমিক ৮ শতাংশ), গলাচিপা (১ দশমিক ২ শতাংশ), পায়রা (শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ), বিষখালী (শূন্য দশমিক ২ শতাংশ)। সিপিডির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, প্লাস্টিক বর্জ্য দেশের পানি ব্যবস্থায় দূষণের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রতি বছর প্রায় ১ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। শুধু ঢাকায় প্রতি বছর ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে, ৪৮ শতাংশ ভাগাড়ে যায়, ৩৭ শতাংশ পুনঃব্যবহার করা হয়, ১২ শতাংশ নদীতে ফেলা হয়, বাকি ৩ শতাংশ রাস্তার কাছে ফেলা হয়।  সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জুলাই-আগস্টের চেতনা হারিয়ে যাচ্ছে: উপদেষ্টা নাহিদ

» পূজায় অপ্রীতিকর ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: আইজিপি

» সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ : ইশরাক

» ধর্মের উপর আঘাত সহ্য করা হবে না

» কুচক্রী মহলের হীন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে : র‍্যাব মহাপরিচালক

» গণহত্যার বিচার শুরু হলে অনেক দ্বিধা-প্রশ্ন দূর হবে : আসিফ নজরুল

» ১৩ অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

» মঙ্গলবার ফল প্রকাশ যেভাবে জানবেন এইচএসসি ও সমমানের রেজাল্ট

» জামালপুরে সেফটিক ট্যাংক থেকে নৈশ্যপ্রহরীর মরদেহ উদ্ধার

» এভারকেয়ার হসপিটালে কালেকশন সার্ভিস দেবে ব্র্যাক ব্যাংক

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ভয়ংকর বিপদ মাইক্রোপ্লাস্টিকে

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের তিনটি প্রধান নদী পশুর, রূপসা ও মোংলার পানিতে বিপজ্জনক মাইক্রোপ্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়েছে। এ জন্য এ তিন নদীর অন্তত ১৭ প্রজাতির মাছ ও তিন প্রজাতির শেলফিশ সংক্রমিত হয়ে পড়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিকে।

 

পাঁচ মিলিমিটারের কম দৈর্ঘ্যরে প্লাস্টিকের টুকরোগুলোকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয়, যা মাছ বা শেলফিশ সহজেই গিলে ফেলতে পারে। মাছের গিলে খাওয়া ওই সব প্লাস্টিকের কণা একপর্যায়ে মানুষের খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। সম্প্রতি ‘সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

 

এর আগে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের হৃৎপিন্ডখ্যাত কর্ণফুলী নদীতেও এ বিষয়ে প্রায় অভিন্ন তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। গবেষণা থেকে বলা হয়-প্লাস্টিক বর্জ্য কর্ণফুলীকে পরিণত করেছে চরম মাত্রায় দূষিত নদীতে। এ নদীতে চট্টগ্রাম শহরের প্রায় ৪০ শতাংশ প্লাস্টিকের ঠাঁই হয়। এরপরই রয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে রূপসা নদী, যেখানে ফেলা হয় প্রায় ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত প্লাস্টিক বর্জ্য। অন্তত ৭ মিটার উঁচু পলিথিনের বিশাল আস্তরণের কারণে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে একটি ড্রেজিং প্রকল্প অর্ধসমাপ্ত রেখেই থামতে হয়েছে। সম্প্রতি ‘সিপিডি-গ্রিন সিটিস ইনিশিয়েটিভ’ রিসার্চের অংশ হিসেবে একটি সেকেন্ডারি ডাটা বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। শুধু পশুর, রূপসা, মোংলা, কর্ণফুলী নদীই নয়, রাজধানীর আশপাশসহ অধিকাংশ নদীতে এ ধরনের দূষণের খবর নতুন নয়। ফলে ওই নদীগুলোর মাছ ও মানুষ ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী  বলেন, ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে মাছ-মানুষ সবারই ক্ষতি করছে। মাছের পেট কাটলে প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। সেই মাছ মানুষ খাচ্ছে। নদীগুলোতে টনে টনে প্লাস্টিকের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। মানুষের তৈরি করা এই ভয়াবহ বিপদের ফলও ভোগ করবে মানুষই। আমাদের যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ করতে হবে। অভ্যাস বদলাতে হবে। দেশের নীতি-নির্ধারকদেরও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে করণীয় ঠিক করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে। এ ছাড়া একক ব্যবহার্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।’ সুন্দরবনের তিন নদীর পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ফুড সেফটি অ্যান্ড কোয়ালিটি ডিভিশন, বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (বিসিএসআইআর) ইনস্টিটিউট অব ন্যাশনাল অ্যানালিটিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড সার্ভিসেস এবং ব্রাজিলের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে গবেষণাটি করেছে। এতে বলা হয়, ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটি গাইডলাইন অনুযায়ী সুন্দরবনের পশুর, রূপসা ও মোংলা নদী থেকে ২০ প্রজাতির ১৪১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ওই ২০ প্রজাতির মাছের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে, যার পরিমাণ প্রতি গ্রামে ৭ দশমিক ৩৩ থেকে ২০৫ দশমিক ৬১ কণা। পেশিতে এর পরিমাণ প্রতি গ্রামে ৫ দশমিক ৩৭ থেকে ৫৪ দশমিক ৩০ কণা। যেসব প্রজাতির মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে এর মধ্যে রয়েছে- বোম্বে ডাক (লইট্টা), বেঙ্গল ইয়েলোফিন সি ব্রিম (দাতিনা), স্পেকলড শ্রিম্প (হরিণা চিংড়ি), ইলিশ (তেনুয়ালোসা ইলিশা), টলি শাদ, গোল্ডলাইনড সিব্রেম (পোয়া), ইন্ডিয়ান অয়েলড সার্ডিন (ফাইসা), ফিরগেট টুনা (সুরমা), বেররামুন্ডি (ভেটকি), লার্জ হেড রিবন ফিশ (ছুরি), পেইন্টেড টেইলড গোবি (চেমো), লং হুইস্কার (টেংরা), লং হুইস্কার ক্যাটফিশ (আইর), স্পটেড স্ক্যাট (চিত্রা), লেন ¯œ্যাপার, স্পটেড আর্চারফিশ (চোরোই) ও গোল্ড স্পটেড গ্রেনাডিয়ারস অ্যানচোভি। হরিণা চিংড়ির পেশিতে সর্বাধিক পরিমাণে প্লাস্টিকের কণা ছিল, প্রতি গ্রামে এর পরিমাণ ৫৪ দশমিক ৩০। দাতিনা সর্বনিম্ন প্রতি গ্রামে ৫ দশমিক ৩৭ কণা বহন করেছিল। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে সর্বাধিক মাইক্রোপ্লাস্টিকের বাহক হলো চেমো। সেখানে প্রতি গ্রামে কণার পরিমাণ ২০৫ এবং সর্বনিম্ন সুরমা মাছে আছে প্রতি গ্রামে ৭ দশমিক ৩৩। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতি সপ্তাহে ৩০০ গ্রাম মাছের পেশি গ্রহণ করে থাকলে বছরে তিনি ৭৪ হাজার ২৮২টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গ্রহণ করছেন। আর শিশুরা সপ্তাহে ৫০ গ্রাম মাছের পেশি গ্রহণ করে থাকলেও বছরে ১২ হাজার ৩৮০টি কণা গ্রহণ করছে। টক্সিন কার্সিনোজেন তৈরি করে এমন ১০টি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পলিথিন ও প্লাস্টিক আইটেম। মানুষ যদি তা সেবন করে তাহলে খুব বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের মাছ খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিক যায়। যদি এটি পেটে জমতে থাকে, তবে পাঁচনতন্ত্র ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দেবে। যদি এটি রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থায় প্রবেশ করে, তবে লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশে মাথাপিছু মাছের ভোগ বছরে ১৪ কেজি। এদিকে সম্প্রতি প্রকাশ করা প্লাস্টিক বর্জ্যদূষণ নিয়ে ‘সিপিডি-গ্রিন সিটিস ইনিশিয়েটিভ’ গবেষণায় বলা হয়েছে, প্লাস্টিক দূষণের কারণে বেহাল দশা নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে কীর্তনখোলা (৭ দশমিক ১ শতাংশ), সন্ধ্যা (৬ দশমিক ৫ শতাংশ), নার (৪ দশমিক ১ শতাংশ), মেঘনা (৩ দশমিক ৩ শতাংশ), কালীগঙ্গা (২ দশমিক ৫), বলেশ্বরী (২ শতাংশ), সুগন্ধা (১ দশমিক ৮ শতাংশ), গলাচিপা (১ দশমিক ২ শতাংশ), পায়রা (শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ), বিষখালী (শূন্য দশমিক ২ শতাংশ)। সিপিডির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, প্লাস্টিক বর্জ্য দেশের পানি ব্যবস্থায় দূষণের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রতি বছর প্রায় ১ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। শুধু ঢাকায় প্রতি বছর ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে, ৪৮ শতাংশ ভাগাড়ে যায়, ৩৭ শতাংশ পুনঃব্যবহার করা হয়, ১২ শতাংশ নদীতে ফেলা হয়, বাকি ৩ শতাংশ রাস্তার কাছে ফেলা হয়।  সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com