বিলুপ্তির পথে শিমুল গাছ

দক্ষিণা বাতাসে আম্র মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে মুগ্ধ চারিদিক। কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতালে ফাগুনের উত্তাল বাসন্তী হাওয়া দিচ্ছে দোলা। গাছে গাছে জেগে উঠেছে সবুজ পাতা। মুকুল আর শিমুল ফুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে এসেছে ফাগুন। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রাম বাংলার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে ফুটছে নয়নাভিরাম শিমুল ফুল। শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম “বোম্বাক্স সাইবা লিন”।

 

এটি বোমবাকাসিয়াক পরিবারের উদ্ভিদ। বীজ ও কান্ডের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়। রোপণের ৫-৬ বছরের মধ্যে শিমুল গাছে ফুল ফোটে। ৯০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। সেই তুলনায় বেশ মোটাও হয়। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে শিমুল গাছ দেড়শ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। শীতের শেষে পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে ফল ফোটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সাথে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই এর জন্ম হয়।

 

কালের বিবর্তনে নীলফামারীর আগুন ঝরা ফাগুনে চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ এখন বিলুপ্তপ্রায়। এক সময় নীলফামারীর গ্রামীণ জনপদে  প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যেতো। প্রতিটি গাছে গাছে  শিমুল ফুলই স্মরণ করিয়ে দিতো বসন্ত।

 

হাকিম মো. মোস্তাফিজুর রহমান সবুজ  বলেন, এই শিমুল ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিষফোঁড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে এ গাছের মূল ব্যবহার করত। আগে গ্রামে প্রচুর শিমুল গাছ ছিল। এ গাছের সব অংশেরই রয়েছে ভেষজ গুণ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা এখনো নানা রোগের চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে।

কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী অন্তরা আক্তার বলেন, প্রাকৃতিকভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন ছিল শিমুল গাছ। অন্যান্য গাছের মত এ গাছ কেউ শখ করে লাগায় না। নেওয়া হয় না কোন যত্ন। অযত্ন আর অনাদরে প্রাকৃতিকভাবেই গাছ বেড়ে ওঠে। এ গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খুব প্রিয় খাদ্য।

 

নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার রশিদপুর বালিকা স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজী প্রভাষক মো মন্জু মোর্শেদ রাজা বলেন, শিমুল গাছ উজাড় হওয়ার ফলে পরিবেশের উপরে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। এ গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় কাক, কোকিল, চিল, বকসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি বাসা বেঁধে বসবাস করত। এ গাছ উজাড় হওয়ার ফলে এসব পাখিরা আবাসস্থল হারিয়ে ফেলেছে। গাছ না থাকায় আবাসস্থলের অভাবে ধীরে ধীরে এসব পাখিরাও হারিয়ে যাচ্ছে। বালিশ, লেপ ও তোষক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই। অথচ বর্তমানে মানুষ এ গাছকে তুচ্ছ মনে করে কারণে অকারণে কেটে ফেলছে। ফলে আজ বিলুপ্তির পথে শিমুল গাছ।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» তথ্যমন্ত্রী অগ্নিসন্ত্রাস নিয়ে নাগরিক সমাজের বিবৃতি না দেওয়া দুঃখজনক

» বড় ফেনী নদীতে ধরা পড়লো ২০ কেজির কোরাল

» বিএনপি নির্বাচন করতে চাইলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে : ইসি আলমগীর

» বিএনপির সঙ্গে জনগণ নেই : আব্দুর রাজ্জাক

» হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে অটো রিপ্লাই চালুর উপায়

» পরকীয়া সুস্থতার লক্ষণ, বললেন অপরাজিতা আঢ্য

» আজান শোনা ছাড়া নামাজ পড়া যাবে?

» আ.লীগের সঙ্গে আসন বণ্টন প্রয়োজন মনে করছে না জাতীয় পার্টি

» জাপার সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নয়, রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে: ওবায়দুল কাদের

» সব সেক্টরে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।(দপ্তর সম্পাদক)  উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বিলুপ্তির পথে শিমুল গাছ

দক্ষিণা বাতাসে আম্র মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে মুগ্ধ চারিদিক। কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতালে ফাগুনের উত্তাল বাসন্তী হাওয়া দিচ্ছে দোলা। গাছে গাছে জেগে উঠেছে সবুজ পাতা। মুকুল আর শিমুল ফুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে এসেছে ফাগুন। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রাম বাংলার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে ফুটছে নয়নাভিরাম শিমুল ফুল। শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম “বোম্বাক্স সাইবা লিন”।

 

এটি বোমবাকাসিয়াক পরিবারের উদ্ভিদ। বীজ ও কান্ডের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়। রোপণের ৫-৬ বছরের মধ্যে শিমুল গাছে ফুল ফোটে। ৯০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। সেই তুলনায় বেশ মোটাও হয়। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে শিমুল গাছ দেড়শ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। শীতের শেষে পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে ফল ফোটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সাথে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই এর জন্ম হয়।

 

কালের বিবর্তনে নীলফামারীর আগুন ঝরা ফাগুনে চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ এখন বিলুপ্তপ্রায়। এক সময় নীলফামারীর গ্রামীণ জনপদে  প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যেতো। প্রতিটি গাছে গাছে  শিমুল ফুলই স্মরণ করিয়ে দিতো বসন্ত।

 

হাকিম মো. মোস্তাফিজুর রহমান সবুজ  বলেন, এই শিমুল ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিষফোঁড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে এ গাছের মূল ব্যবহার করত। আগে গ্রামে প্রচুর শিমুল গাছ ছিল। এ গাছের সব অংশেরই রয়েছে ভেষজ গুণ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা এখনো নানা রোগের চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে।

কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী অন্তরা আক্তার বলেন, প্রাকৃতিকভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন ছিল শিমুল গাছ। অন্যান্য গাছের মত এ গাছ কেউ শখ করে লাগায় না। নেওয়া হয় না কোন যত্ন। অযত্ন আর অনাদরে প্রাকৃতিকভাবেই গাছ বেড়ে ওঠে। এ গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খুব প্রিয় খাদ্য।

 

নীলফামারী জলঢাকা উপজেলার রশিদপুর বালিকা স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজী প্রভাষক মো মন্জু মোর্শেদ রাজা বলেন, শিমুল গাছ উজাড় হওয়ার ফলে পরিবেশের উপরে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। এ গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় কাক, কোকিল, চিল, বকসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি বাসা বেঁধে বসবাস করত। এ গাছ উজাড় হওয়ার ফলে এসব পাখিরা আবাসস্থল হারিয়ে ফেলেছে। গাছ না থাকায় আবাসস্থলের অভাবে ধীরে ধীরে এসব পাখিরাও হারিয়ে যাচ্ছে। বালিশ, লেপ ও তোষক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই। অথচ বর্তমানে মানুষ এ গাছকে তুচ্ছ মনে করে কারণে অকারণে কেটে ফেলছে। ফলে আজ বিলুপ্তির পথে শিমুল গাছ।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।(দপ্তর সম্পাদক)  উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com