বিয়ে করতে চাবুকের কয়েকশ আঘাত পেতে হয় যাদের

বিশ্বের আনাচে কানাচে এখনো এমন অনেক জাতির বসবাস যারা আধুনিক বিশ্ব থেকে যোজন যোজন দূরে। আধুনিকতার ছিটেফোঁটাও লাগেনি তাদের রীতিনীতি আর সংস্কৃতিতে। নিজেদের পূর্বপুরুষের তৈরি করা সেসব রীতিনীতি, প্রথা এখনও মেনে চলছেন তারা। বিশেষ করে আফ্রিকান উপজাতিদের নানান সংস্কৃতি বিশ্বকে এখনো অবাক করে চলেছে। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও তারা তাদের বিভিন্ন সংস্কৃতি পালন করে যাচ্ছে।

 

যেমন-পশ্চিম আফ্রিকার নাইজারিয়ায় অন্যের স্ত্রী চুরি করা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। তারা যে কোনো সময় অন্যের স্ত্রীকে চুরি করে নিয়ে বিয়ে করতে পারেন। এজন্য কোনো হাঙ্গামা হয় না তাদের মধ্যে। এছাড়াও তারা বাড়িতে পুরুষ অতিথি এলে তাদের সঙ্গে স্ত্রীকে ঘুমাতে দেন। এখানে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয়। তবে স্বামীদের বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যে কোনো বয়সেই তারা বিয়ে করতে পারেন তার চেয়ে অর্ধেক বয়সের মেয়েকে।

,l24

তবে এসব উপজাতির পুরুষদের বিয়ে করতে নানান প্রতিযোগিতা অংশ নিতে হয়। পরীক্ষা দিতে হয় ধৈর্য, পুরুষত্ব আর সহ্যের সীমা কতটুকু আছে সেটাও। এসব উপজাতির পুরুষের স্ত্রী পাওয়া এত সহজ ব্যাপার নয়। রীতিমতো যুদ্ধ করে বউ জয় করতে হয় তাদের। যেমন ধরুন-পশ্চিম আফ্রিকার নাইজেরিয়ার ফুলানি উপজাতিরা, একজন ফুলানি পুরুষকে বিয়ে করতে হলে তার ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। এজন্য তাদের শরীরে মারা হবে চাবুকের বাড়ি। যতক্ষণ সে এই আঘাত সহ্য করতে পারবে তার উপর নির্ভর করতে তার বিয়ে হবে কি হবে না। কয়েকশ চাবুকের আঘাত সহ্য করতে হয় তাদের। অনেকেই জ্ঞান হারান আবার অনেকেই সম্মান এবং স্ত্রী পাবেন সেই আনন্দে হাসিমুখে সহ্য করে নেন সব ব্যথা।

এর মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয় সেই পুরুষের ধৈর্য কতটা। স্ত্রীর পাশাপাশি সম্মান পাওয়ার জন্য বর চাবুকের আঘাত সহ্য করেন। বর যদি এই আঘাত সহ্য করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী না হয় তবে তার বিবাহ বন্ধ করা হয়। আবার সমাজেও অসম্মানিত হন তিনি। তবে কুলানি বর চাবুকের আঘাত থেকে বাঁচতে চাইলে আছে অন্য উপায়ও। কনের পরিবারকে দিতে হবে যৌতুক। কিন্তু বেশিরভাগ পুরুষের সেই সামর্থ্য থাকে না। তাই বাধ্য হয়েই এই পথ বেছে নেন তারা।

0ooo

এদিকে সাতেরে মাওয়ে উপজাতির কথাই ধরা যাক। এই উপজাতির পুরুষদের পুরুষত্বের প্রমাণ দিতে খেতে হয় পিঁপড়ার কামড়। বুলেট নামক ভিমরুলের আকৃতির দসেই পিঁপড়ার বিষাক্ত কামড় সহ্য করতে পারলেই হওয়া যাবে প্রকৃত যোদ্ধা।

 

আমাজনের সেই বিষাক্ত প্রজাতির পিঁপড়ার নাম প্যারাপোনেরা ক্লাভাটার। এর এক কামড়ে ২৪ ঘণ্টা একটানা ব্যথা অনুভূত হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতই যন্ত্রণাদায়ক এই পিঁপড়ার কামড়। এর কামড়ে অত্যাধিক কাঁপুনির সৃষ্টি হয়। বেশিরভাগ সময়ই ব্যথা সহ্য করতে না পেরে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে যায়। আর যারা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে তারাই পেয়ে যায় বীরপুরুষের খেতাব।

xzs

নাইজেরিয়ায় উড্যাব উপজাতিদের মধ্যে আছে অন্য আরেক সংস্কৃতি। এখানে নারীরা ইচ্ছামতো যৌনসঙ্গী খুঁজে নিতে পারেন। যৌনজীবনে একেবারেই স্বাধীন এ উপজাতির নারীরা। বিয়ের আগে খুশীমত যৌনসঙ্গী খুঁজে নিয়ে পরিবারের অনুমতি কিংবা সামাজিক রীতি মেনেই যথেচ্ছা যৌনাচারের স্বাধীনতা রয়েছে তাদের। রয়েছে যতজন খুশী ততজন স্বামীকে বিয়ে করার।

 

উড্যাব উপজাতি পুরুষরা মুখে মেকআপ করে সাজেন বছরের একটি দিন। যে দিন তারা নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করেন তার জাতির নারীদের কাছে। সেখান থেকেই উড্যাব উপজাতির নারীরা নিজের পছন্দমতো সঙ্গী খুঁজে নেন। চাইলে একাধিক সঙ্গীও বেছে নিতে পারবেন তিনি।

o099

সেপ্টেম্বরেই অনুষ্ঠিত হয় কাঙ্খিত উৎসব ‘গেরেওল’, যেখানে নারীর মন জয় করে নিতে উৎসুক থাকে প্রাপ্ত বয়স্ক সকল পুরুষ। এ উৎসবে যোগ দিতে দূর দূরান্ত থেকে একত্রিত হয় উড্যাব উপজাতির সকল সদস্য। অবশ্য কোথায় হবে ‘গেরেওল’, তা গোপন থাকে উৎসবের ক’দিন আগে পর্যন্ত। এমন উৎসবের শুরুটাও হয় জাঁকজমকপূর্ণ নাচ ‘ইয়াক’এর মাধ্যমে। এই নাচে নিজেকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন পুরুষেরা। নাচের বিচারক হিসেবে থাকেন অভিজ্ঞ তিন নারী, যাদের বিচারে বিজয়ী নাচিয়ে পুরুষরা খুব সহজেই হয়ে যান আকাঙ্খিত নারীর যৌনসঙ্গী।

 

লাল মাটি লেপে চেহারা সাজিয়ে ঠোঁটে কালো রং মাখেন পুরুষরা। নাকের উপর আঁকেন সাদা দাগ। আর মাথায় পালক, পুঁতি, পাথর, কাপড়, চামড়া ইত্যাদি দিয়ে তৈরি গহনা ও বিশেষ পোশাক পরেন। শরীরের উর্দ্ধাঙ্গে তেমন কিছু রাখেন না নিজের শারীরিক সামর্থ্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে। তবে নিচের দিকে খানিকটা লুঙ্গির মতো দেখতে পোশাক থাকে।

সূত্র: সি আফ্রিকা টুডে, জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নির্বাচনকে ভয় পায় বলেই ষড়যন্ত্রের পথে বিএনপি: তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী

» বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড ম্যাচ পরিত্যক্ত

» বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের “ক্রস পার্টি পার্লামেন্টারি ডেলিগেশন” প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ

» স্যামসাং গ্যালাক্সি এম১২: সাশ্রয়ী মূল্যে সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা

» দুবাইয়ে ‘প্রভাবশালী নারী’ অ্যাওয়ার্ড পেলেন আবিদা হোসেন

» বিয়ের আগেই হানিমুন উপভোগ করছেন মালাইকা

» বিএনপি এখন সড়ক দুর্ঘটনা নিয়েও রাজনীতি করছে: ওবায়দুল কাদের

» রাজধানীতে লিফটের ফাঁকা থেকে পড়ে নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু

» ব্রয়লার মুরগির দাম ৩০০ ছুঁই ছুঁই

» নির্যাতন-নিপীড়ন যত বাড়বে প্রতিবাদের গতি ততই তীব্র হবে: ফখরুল

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বিয়ে করতে চাবুকের কয়েকশ আঘাত পেতে হয় যাদের

বিশ্বের আনাচে কানাচে এখনো এমন অনেক জাতির বসবাস যারা আধুনিক বিশ্ব থেকে যোজন যোজন দূরে। আধুনিকতার ছিটেফোঁটাও লাগেনি তাদের রীতিনীতি আর সংস্কৃতিতে। নিজেদের পূর্বপুরুষের তৈরি করা সেসব রীতিনীতি, প্রথা এখনও মেনে চলছেন তারা। বিশেষ করে আফ্রিকান উপজাতিদের নানান সংস্কৃতি বিশ্বকে এখনো অবাক করে চলেছে। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও তারা তাদের বিভিন্ন সংস্কৃতি পালন করে যাচ্ছে।

 

যেমন-পশ্চিম আফ্রিকার নাইজারিয়ায় অন্যের স্ত্রী চুরি করা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। তারা যে কোনো সময় অন্যের স্ত্রীকে চুরি করে নিয়ে বিয়ে করতে পারেন। এজন্য কোনো হাঙ্গামা হয় না তাদের মধ্যে। এছাড়াও তারা বাড়িতে পুরুষ অতিথি এলে তাদের সঙ্গে স্ত্রীকে ঘুমাতে দেন। এখানে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয়। তবে স্বামীদের বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যে কোনো বয়সেই তারা বিয়ে করতে পারেন তার চেয়ে অর্ধেক বয়সের মেয়েকে।

,l24

তবে এসব উপজাতির পুরুষদের বিয়ে করতে নানান প্রতিযোগিতা অংশ নিতে হয়। পরীক্ষা দিতে হয় ধৈর্য, পুরুষত্ব আর সহ্যের সীমা কতটুকু আছে সেটাও। এসব উপজাতির পুরুষের স্ত্রী পাওয়া এত সহজ ব্যাপার নয়। রীতিমতো যুদ্ধ করে বউ জয় করতে হয় তাদের। যেমন ধরুন-পশ্চিম আফ্রিকার নাইজেরিয়ার ফুলানি উপজাতিরা, একজন ফুলানি পুরুষকে বিয়ে করতে হলে তার ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। এজন্য তাদের শরীরে মারা হবে চাবুকের বাড়ি। যতক্ষণ সে এই আঘাত সহ্য করতে পারবে তার উপর নির্ভর করতে তার বিয়ে হবে কি হবে না। কয়েকশ চাবুকের আঘাত সহ্য করতে হয় তাদের। অনেকেই জ্ঞান হারান আবার অনেকেই সম্মান এবং স্ত্রী পাবেন সেই আনন্দে হাসিমুখে সহ্য করে নেন সব ব্যথা।

এর মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয় সেই পুরুষের ধৈর্য কতটা। স্ত্রীর পাশাপাশি সম্মান পাওয়ার জন্য বর চাবুকের আঘাত সহ্য করেন। বর যদি এই আঘাত সহ্য করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী না হয় তবে তার বিবাহ বন্ধ করা হয়। আবার সমাজেও অসম্মানিত হন তিনি। তবে কুলানি বর চাবুকের আঘাত থেকে বাঁচতে চাইলে আছে অন্য উপায়ও। কনের পরিবারকে দিতে হবে যৌতুক। কিন্তু বেশিরভাগ পুরুষের সেই সামর্থ্য থাকে না। তাই বাধ্য হয়েই এই পথ বেছে নেন তারা।

0ooo

এদিকে সাতেরে মাওয়ে উপজাতির কথাই ধরা যাক। এই উপজাতির পুরুষদের পুরুষত্বের প্রমাণ দিতে খেতে হয় পিঁপড়ার কামড়। বুলেট নামক ভিমরুলের আকৃতির দসেই পিঁপড়ার বিষাক্ত কামড় সহ্য করতে পারলেই হওয়া যাবে প্রকৃত যোদ্ধা।

 

আমাজনের সেই বিষাক্ত প্রজাতির পিঁপড়ার নাম প্যারাপোনেরা ক্লাভাটার। এর এক কামড়ে ২৪ ঘণ্টা একটানা ব্যথা অনুভূত হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতই যন্ত্রণাদায়ক এই পিঁপড়ার কামড়। এর কামড়ে অত্যাধিক কাঁপুনির সৃষ্টি হয়। বেশিরভাগ সময়ই ব্যথা সহ্য করতে না পেরে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে যায়। আর যারা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে তারাই পেয়ে যায় বীরপুরুষের খেতাব।

xzs

নাইজেরিয়ায় উড্যাব উপজাতিদের মধ্যে আছে অন্য আরেক সংস্কৃতি। এখানে নারীরা ইচ্ছামতো যৌনসঙ্গী খুঁজে নিতে পারেন। যৌনজীবনে একেবারেই স্বাধীন এ উপজাতির নারীরা। বিয়ের আগে খুশীমত যৌনসঙ্গী খুঁজে নিয়ে পরিবারের অনুমতি কিংবা সামাজিক রীতি মেনেই যথেচ্ছা যৌনাচারের স্বাধীনতা রয়েছে তাদের। রয়েছে যতজন খুশী ততজন স্বামীকে বিয়ে করার।

 

উড্যাব উপজাতি পুরুষরা মুখে মেকআপ করে সাজেন বছরের একটি দিন। যে দিন তারা নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করেন তার জাতির নারীদের কাছে। সেখান থেকেই উড্যাব উপজাতির নারীরা নিজের পছন্দমতো সঙ্গী খুঁজে নেন। চাইলে একাধিক সঙ্গীও বেছে নিতে পারবেন তিনি।

o099

সেপ্টেম্বরেই অনুষ্ঠিত হয় কাঙ্খিত উৎসব ‘গেরেওল’, যেখানে নারীর মন জয় করে নিতে উৎসুক থাকে প্রাপ্ত বয়স্ক সকল পুরুষ। এ উৎসবে যোগ দিতে দূর দূরান্ত থেকে একত্রিত হয় উড্যাব উপজাতির সকল সদস্য। অবশ্য কোথায় হবে ‘গেরেওল’, তা গোপন থাকে উৎসবের ক’দিন আগে পর্যন্ত। এমন উৎসবের শুরুটাও হয় জাঁকজমকপূর্ণ নাচ ‘ইয়াক’এর মাধ্যমে। এই নাচে নিজেকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন পুরুষেরা। নাচের বিচারক হিসেবে থাকেন অভিজ্ঞ তিন নারী, যাদের বিচারে বিজয়ী নাচিয়ে পুরুষরা খুব সহজেই হয়ে যান আকাঙ্খিত নারীর যৌনসঙ্গী।

 

লাল মাটি লেপে চেহারা সাজিয়ে ঠোঁটে কালো রং মাখেন পুরুষরা। নাকের উপর আঁকেন সাদা দাগ। আর মাথায় পালক, পুঁতি, পাথর, কাপড়, চামড়া ইত্যাদি দিয়ে তৈরি গহনা ও বিশেষ পোশাক পরেন। শরীরের উর্দ্ধাঙ্গে তেমন কিছু রাখেন না নিজের শারীরিক সামর্থ্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে। তবে নিচের দিকে খানিকটা লুঙ্গির মতো দেখতে পোশাক থাকে।

সূত্র: সি আফ্রিকা টুডে, জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :

Design & Developed BY ThemesBazar.Com