ফ্রি ফায়ার নিয়ে দ্বন্দ্বে তরুণ খুন, ওয়্যারড্রোব থেকে মরদেহ ফেলা হয় ময়লার ভাগাড়ে

কদমতলীর একটি ময়লার ভাগাড় থেকে শুক্রবার রাকিবুল ইসলাম নামে এক তরুণের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত রাকিবুল শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। ঘটনার তিনদিনের মধ্যেই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে কদমতলী থানা পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে এ খুনের মূলহোতাসহ দুজনকে।

তারা হলো- মো. রবিন ও রাসেল। রবিন কদমতলী এলালায় ইন্টারনেট সংযোগকারী একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী। আর রাসেল রবিনেরই আপন ছোট ভাই। গ্রেফতার দুজনও বয়সে তরুণ।

 

পুলিশ বলছে, ফ্রি ফায়ার গেম নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে রাকিবুলকে হত্যা করে রবিন। নিজেদের ভাড়ায় বাসায় রাকিবুলের গলায় ইন্টারনেট সংযোগের কাজে ব্যবহৃত তার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ ওয়ারড্রোবে রেখে দেয় সে। গভীর রাতে রবিন ও তার ছোট ভাই রাসেল দুজন মিলে বাসার ছাদ থেকে রাকিবুলের মরদেহ ছুড়ে ফেলে ময়লার ভাগাড়ে।

 

রোববার রাতে কদমতলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সজীব দে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

তিনি বলেন, শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে কদমতলী থানার মিনাবাগ ২ নম্বর গলির পরিত্যক্ত ময়লার ভাগাড়ে অজ্ঞাত তরুণের মরদেহ পাওয়া যায়। কদমতলী থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে পরিচয় শনাক্ত করে। পরে নিহতের বাবা কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

 

আরো পড়ুন> ‘ধর্ষণ ধামাচাপা দিতে মাটি চাপা দেওয়া হয় শারমিনকে’

 

পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সজীব দে বলেন, মামলাটির তদন্তকালে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। এরপর শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ এলাকা থেকে হত্যা মামলার মূল অভিযুক্ত রবিনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে, কদমতলী থানা এলাকা থেকে তার ছোট ভাই রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়।

 

পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্ত গ্রেফতার রবিন ইন্টারনেট সংযোগকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো। রবিন ও নিহত রাকিবুল মোবাইলে ফ্রি ফায়ার গেমে আসক্ত ছিল। রবিনের স্মার্টফোন না থাকায় তার আইডি নিহত রকিবুলকে আট হাজার টাকায় বিক্রি করে দিতে বলে। নিহত রাকিবুল আইডি বিক্রি না করে রবিনের আইডি ব্যবহার করে নিজেই খেলতে থাকে।

 

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে নিহত রাকিবুল কদমতলী থানার মিনাবাগ এলাকায় গ্রেফতার রবিনদের বাসায় যায়। এ সময় রবিন জানতে পারে রাকিবুল তার আইডি ব্যবহার করে ফ্রি ফায়ার গেম খেলছে। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে রবিন উত্তেজিত হয়ে ড্রয়ার থেকে ইন্টারনেটের তার বের করে রাকিবুলকে পেছন থেকে আচমকা গলায় পেঁচিয়ে টান দেয়। এতে রাকিবুল খাটের ওপর পড়ে যায়। এরপর রবিন রাকিবুলের পিঠের ওপরে বসে তার গলায় তার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

 

পরে রাকিবুলের মরদেহ রবিনের ঘরের ওয়্যারড্রোবে লুকিয়ে রাখে। ওইদিন দিনগত রাত আনুমানিক ২টা থেকে ৩টার দিকে অভিযুক্ত রবিন তার ছোট ভাই রাসেলকে ঘটনাটি জানায়। পরে দুই ভাই মিলে রাকিবুলের মরদেহ ওয়্যারড্রোব থেকে বের করে বাসার ছাদে ওঠায় এবং উত্তর পাশের টিনশেড বাড়ির চালের ওপর দিয়ে ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেয়।

 

এরপর ঢাকা ছেড়ে রবিন শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ এলাকায় আত্মগোপন করে। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আর তার দেয়া তথ্যমতে কদমতলী থানা এলাকা থেকে তার ছোট ভাই রাসেলকে গ্রেফতার করে।

 

ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদের নির্দেশনা ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) রোমানা নাসরিন ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শাহ আলমের তত্ত্বাবধানে কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রলয় কুমার সাহার নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয় বলে জানান পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সজীব দে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র দিলেন বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত

» ড. ইউনূস চান সার্কের কার্যক্রম শুরু হোক: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

» দুদকের মামলায় হাইকোর্টে ওসি প্রদীপের স্ত্রীর জামিন

» থার্টিফার্স্ট নাইটে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট

» সিরিয়ায় আসাদের পতন নিয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ

» জেনে রাখুন এই ভুলে গিজার বিস্ফোরণ হয়

» গাঁজা সেবন নিয়ে বিরোধে যুবক খুন, গ্রেফতার ২

» আটকে দেওয়া হলো বিএনপির তিন সংগঠনের পদযাত্রা

» ১৮ কোটি মানুষ দিল্লির আধিপত্য প্রতিহত করতে প্রস্তুত: রিজভী

» অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না: জাহাঙ্গীর আলম

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ফ্রি ফায়ার নিয়ে দ্বন্দ্বে তরুণ খুন, ওয়্যারড্রোব থেকে মরদেহ ফেলা হয় ময়লার ভাগাড়ে

কদমতলীর একটি ময়লার ভাগাড় থেকে শুক্রবার রাকিবুল ইসলাম নামে এক তরুণের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত রাকিবুল শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। ঘটনার তিনদিনের মধ্যেই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে কদমতলী থানা পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে এ খুনের মূলহোতাসহ দুজনকে।

তারা হলো- মো. রবিন ও রাসেল। রবিন কদমতলী এলালায় ইন্টারনেট সংযোগকারী একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী। আর রাসেল রবিনেরই আপন ছোট ভাই। গ্রেফতার দুজনও বয়সে তরুণ।

 

পুলিশ বলছে, ফ্রি ফায়ার গেম নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে রাকিবুলকে হত্যা করে রবিন। নিজেদের ভাড়ায় বাসায় রাকিবুলের গলায় ইন্টারনেট সংযোগের কাজে ব্যবহৃত তার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ ওয়ারড্রোবে রেখে দেয় সে। গভীর রাতে রবিন ও তার ছোট ভাই রাসেল দুজন মিলে বাসার ছাদ থেকে রাকিবুলের মরদেহ ছুড়ে ফেলে ময়লার ভাগাড়ে।

 

রোববার রাতে কদমতলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সজীব দে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

তিনি বলেন, শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে কদমতলী থানার মিনাবাগ ২ নম্বর গলির পরিত্যক্ত ময়লার ভাগাড়ে অজ্ঞাত তরুণের মরদেহ পাওয়া যায়। কদমতলী থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে পরিচয় শনাক্ত করে। পরে নিহতের বাবা কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

 

আরো পড়ুন> ‘ধর্ষণ ধামাচাপা দিতে মাটি চাপা দেওয়া হয় শারমিনকে’

 

পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সজীব দে বলেন, মামলাটির তদন্তকালে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। এরপর শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ এলাকা থেকে হত্যা মামলার মূল অভিযুক্ত রবিনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে, কদমতলী থানা এলাকা থেকে তার ছোট ভাই রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়।

 

পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্ত গ্রেফতার রবিন ইন্টারনেট সংযোগকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো। রবিন ও নিহত রাকিবুল মোবাইলে ফ্রি ফায়ার গেমে আসক্ত ছিল। রবিনের স্মার্টফোন না থাকায় তার আইডি নিহত রকিবুলকে আট হাজার টাকায় বিক্রি করে দিতে বলে। নিহত রাকিবুল আইডি বিক্রি না করে রবিনের আইডি ব্যবহার করে নিজেই খেলতে থাকে।

 

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে নিহত রাকিবুল কদমতলী থানার মিনাবাগ এলাকায় গ্রেফতার রবিনদের বাসায় যায়। এ সময় রবিন জানতে পারে রাকিবুল তার আইডি ব্যবহার করে ফ্রি ফায়ার গেম খেলছে। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে রবিন উত্তেজিত হয়ে ড্রয়ার থেকে ইন্টারনেটের তার বের করে রাকিবুলকে পেছন থেকে আচমকা গলায় পেঁচিয়ে টান দেয়। এতে রাকিবুল খাটের ওপর পড়ে যায়। এরপর রবিন রাকিবুলের পিঠের ওপরে বসে তার গলায় তার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

 

পরে রাকিবুলের মরদেহ রবিনের ঘরের ওয়্যারড্রোবে লুকিয়ে রাখে। ওইদিন দিনগত রাত আনুমানিক ২টা থেকে ৩টার দিকে অভিযুক্ত রবিন তার ছোট ভাই রাসেলকে ঘটনাটি জানায়। পরে দুই ভাই মিলে রাকিবুলের মরদেহ ওয়্যারড্রোব থেকে বের করে বাসার ছাদে ওঠায় এবং উত্তর পাশের টিনশেড বাড়ির চালের ওপর দিয়ে ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেয়।

 

এরপর ঢাকা ছেড়ে রবিন শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ এলাকায় আত্মগোপন করে। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আর তার দেয়া তথ্যমতে কদমতলী থানা এলাকা থেকে তার ছোট ভাই রাসেলকে গ্রেফতার করে।

 

ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদের নির্দেশনা ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) রোমানা নাসরিন ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শাহ আলমের তত্ত্বাবধানে কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রলয় কুমার সাহার নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয় বলে জানান পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সজীব দে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com