সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয়ের পর এক নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন ইয়াসিন আরাফাত তুষার। এক পর্যায়ে প্রতারণার কৌশল হিসেবে তুষার নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দেন। পরে ভুক্তভোগী বিশ্বাস অর্জন করতে তার ইনবক্সে দিতে থাকেন সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পোশাক পরিহিত ছবি।
এছাড়া ভুক্তভোগীকে বিদেশে নিয়ে যাবেন বলে বিয়ের চাপ দিতে থাকেন। পরে ভুক্তভোগীর পরিবার খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে তুষার ভুয়া মেজর।
অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর শাহআলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তুষারসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ভুয়া মেজর ইয়াসিন আরাফাত তুষার (২৮) ও আল আমিন হীরা (২৫)। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি দেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, দুটি ওয়াকিটকি সেট, সামরিক বাহিনীর ইউনিফর্ম, এক জোড়া বুট, দুই সেট র্যাংক বেজ, দুটি পাসপোর্ট, দুটি চেক বই, ভিজিটিং কার্ড ও ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
বুধবার সকালে র্যাব-৪ এর উপ-পরিচালক পুলিশ সুপার (এসপি) জয়িতা শিল্পী ঢাকাটাইমস কে এতথ্য জানান।
পুলিশ সুপার জয়িতা শিল্পী বলেন, সম্প্রতি এক নারী ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন যে, আরাফাত তুষার নামে এক ব্যক্তি সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে তাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিবাহের উদ্দেশে তার সহযোগী বন্ধু, খালাতো ভাই ও মেজর পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীর বাসায় এসে প্রতারণামূলকভাবে বিবাহের অভিনয় করেন। এছাড়া হুমকি দিচ্ছেন। পরে র্যাব-৪ গোপনে তদন্ত করতে মাঠে নেমে প্রতারণার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
প্রতারক তুষার ভিডিও কলে বিভিন্ন ভিজিটিং কার্ড এবং ওয়াকিটকি সেটসহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট দেখান। এছাড়া সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত কমান্ডোসহ বিভিন্ন র্যাংকের ব্যাজ, মনোগ্রাম দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে প্রতারিত করেন বলে জানা গেছে।
র্যাব-৪ এর উপ-পরিচালক এসপি জয়িতা শিল্পী বলেন, প্রতারণার একপর্যায়ে তুষার ভুক্তভোগীকে বলেন তিনি বর্তমানে মিশনে আফ্রিকায় অবস্থান করছেন। তবে সম্প্রতি সে বাংলাদেশে আসবেন। এরপর দেশে আসার অভিনয় করে মিথ্যা সংবাদ দিয়ে তার সাথে দেখা করেন। পরে আবার মিশনের উদ্দেশে আফ্রিকা চলে যাওয়ার কথা বলে ভুক্তভোগীকে বিয়ের চাপ দিতে থাকেন।
প্রতারক ইয়াসিন আরাফাত তুষার তার বন্ধু হীরাকে ক্যাপ্টেন ও খালাতো ভাই এবং অন্য একজন সহযোগী হৃদয় খানকে ক্যাপ্টেন ও জুনিয়র সহকর্মী হিসেবে ভুয়া পরিচয় দেন বলেও গ্রেপ্তার আসামিরা স্বীকার করেছেন।
জয়িতা শিল্পী বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তুষার ২০০৯ সালে মানিকদির একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ওই বছরেই স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া চলে যান। কিন্তু পড়াশুনা শেষ না করে ২০১৩ সালে দেশে চলে আসেন। পরে এক মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন। পরে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে চলে যান। সর্বশেষ ২০১৮ সালের দিকে দেশে ফিরে এসে বিভিন্ন সময় মেজর, র্যাব কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণামূলক কাজ করতে থাকেন।
গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী নারী রাজধানীর শাহা আলী থানায় একটি প্রতারণা মামলা করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন এই কর্মকর্তা। এছাড়া এর সাথে সম্পৃক্ত বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।