ফয়সাল হত্যায় জড়িত পুলিশের নাম প্রকাশ ও বিচারের দাবিতে বস্টনে বিক্ষোভ

‘জাস্টিস ফর ফয়সল’, ‘জাস্টিস ফর টাইরে’, ‘জাস্টিস ফর এ্যাভরিওয়ান কিল্ড বাই দ্য পুলিশ’ ইত্যাদি স্লোগানে ২৯ জানুয়ারি সোচ্চার ছিলেন বস্টনের লোকজন। ফয়সালের ঘাতকদের চিহ্নিত এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে কালক্ষেপণের অভিযোগে বস্টন সিটির পৃথক দুটি স্থানে শতশত শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কমিউনিটির লোকজন বিক্ষোভ করেছেন।

 

গণসঙ্গীতের মাধ্যমে ঘাতক পুলিশদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং পুলিশি আইন সংস্কারের দাবি উচ্চারিত হয় এ সময়।

 

উল্লেখ্য, ৪ জানুয়ারি দুপুর বেলা বস্টনের ক্যাম্ব্রিজ সিটিতে গুলি করে হত্যা করা হয় বাংলাদেশি আমেরিকান এবং ইউ ম্যাসের বস্টন ক্যম্পাসের ছাত্র সৈয়দ ফয়সাল (২০)। ৫ রাউন্ড গুলিতে হত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, ফয়সালের হাতে নাকি ধারালো অস্ত্র ছিল এবং তা নিয়ে পুলিশের প্রতি তেড়ে আসছিলেন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু পুলিশের এমন দাবিকে মানতে রাজি নন ফয়সালের স্বজন এবং তার সহপাঠিরা। এরপর ক্ষোভে ফেটে পড়া কমিউনিটি এবং শিক্ষার্থীগণকে আশ্বাস দিয়ে ক্যাম্ব্রিজ সিটির মেয়র (পাকিস্তানি-আমেরিকান) সাম্বুল সিদ্দিকী বলেছেন, সরেজমিনে তদন্ত হচ্ছে। শীঘ্রই প্রকৃত তথ্য জানা যাবে। মেয়রের এমন আশ্বাসের পর অতিবাহিত হলো ২৪ দিন। তদন্তের কোন অগ্রগতি নেই। এমনকি বিভিন্নভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালাানো হচ্ছে যে, যে এলাকায় পুলিশ ধাওয়া করেছিল ফয়সালকে এবং যেখানে তাকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়-তার আশপাশে নাকি কোন সিসিটিভি নেই।

 

বিক্ষোভে অংশগ্রগণকারী বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নিউ ইংল্যান্ডের সভাপতি পারভিন চৌধুরী বলেন, আমরা যখন ৯১১ এ কল করি, তখনও পুলিশের বুলেট আশা করি না। সহায়তা চাই নিরাপত্তার জন্যে। কেনেডি নামক একজন বলেন, পুলিশের মধ্যে যারা উগ্রপন্থি তাদেরকে নিরস্ত্র দেখতে চাই, বিচারের কাঠগড়ায় নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। ফয়সালের শৈশবের সহপাঠি সারাহ হালাওয়া বলেন, ফয়সাল তরুণ-তরুণীদের কর্মক্ষম করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন হাই স্কুলে পড়াবস্থায়। আর্ট প্রকল্পেও অংশ নেন। কমিউনিটির প্রায় ইভেন্টেই অনুবাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফয়সাল ছিলেন সমারভিলে কমিউনিটি সুপরিচিত একজন সদস্য। তিনি কমিউনিটির অসহায় মানুষের পাশে থাকতেন সব সময়। তার মত একজন মানুষকে গুলি করে হত্যাকে আমরা কখনোই মেনে নেব না। অনেক হয়েছে। পুলিশকে এবার ঢেলে সাজাতে হবে।

 

এ বিক্ষোভে ফয়সালের সাথে টাইরে নিকলসের পোস্টারও দেখা গেছে। পুলিশি বর্বরতার নিন্দা এবং ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সকলেই রাজপথে থাকার অঙ্গিকার করেন। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র ম্যাসিয়েল টরেস বলেন, আমরা এমন একটি সমাজে বাস করছি যেটি নজরদারিতে রয়েছে এবং যে কোনও সময় খুন হবার আশংকায় দিনাতি পার করতে হচ্ছে। পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা হরদম ঘটছে এবং অসহায় নাগরিকেরা কোন বিচার পাচ্ছে না। টরেস (২৮) উল্লেখ করেন, স্বাধীনতা, মুক্তি এবং সমাজকে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ রাখতে পুলিশ-প্রশাসনকে মানবিকতায় পরিপূর্ণ থাকতে হবে। সেটি হচ্ছে আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ ঘটছে তার বিপরীত। যারা আমাদের নিরাপত্তা দেবেন, তারাই ঘাতকের আসনে অধিষ্ঠিত।

 

ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেট্স’র বস্টন ক্যাম্পাসের অধ্যাপক কীইথ জোন্স (৪৯) এসেছিলেন তার ৭ ও ৯ বছর বয়েসী দুই সন্তানসহ। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে এই কমিউনিটির শান্তি-সম্প্রীতির প্রশ্নে চলমান আন্দোলনের সাথে একাত্মতা দেখাতে এনেছি। ওরা বড় হয়ে যাতে নিজের অধিকার-মর্যাদার প্রশ্নে সোচ্চার থাকে। অধ্যাপক কীইথ উল্লেখ করেন, আর সহ্য হচ্ছে না। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি পুলিশের আচরণে। এহেন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র জনগোষ্ঠিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বস্টনের ওয়েস্টফোর্ড একাডেমিতে স্প্যানিশ এবং সাহিত্যের শিক্ষক হোযে আলেমন (৫৯) বলেন, গুলি করে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। এজন্যে দরকার সম্প্রীতির বন্ধন সংহত করা।

 

ক্যাম্ব্রিজ পুলিশ স্টেশনের বাইরেও জড়ো হয়েছিলেন শতশত মানুষ। তারা সমস্বরে স্লোগান ধরেন জাস্টিস ফর ফয়সাল, জাস্টিস ফর টাইরে। পুলিশের গুলিতে নিহত সকলের পক্ষ থেকে ন্যায় বিচারের দাবি জানান তারা।

 

উল্লেখ্য, সৈয়দ ফয়সালকে হত্যায় জড়িতদের নাম এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে কয়েকজনকে জোরপূর্বক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সিটি মেয়রের মত সিটি কাউন্সিলও এ নিয়ে কয়েক দফা শুনানীতে মিলিত হয়েছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» গুলি চালানো পুলিশ সদস্যদের ছাড় দেওয়া হবে না: আসিফ মাহমুদ

» ব্যক্তিগত শত্রুতায় শহীদ পরিবারকে দিয়ে মামলা দেওয়া হচ্ছে: নাহিদ

» সব আগের মতোই আছে, শুধু শেখ হাসিনা নেই: গয়েশ্বর

» সাড়ে ১৫ বছর মজলুম ছিলাম: ডা. শফিকুর রহমান

» বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফট কাল

» আহতদের দেখতে ঢামেকে নাহিদ-আসিফ, দিলেন আর্থিক সহায়তা

» প্রধান উপদেষ্টার সাথে সেনাবাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ

» ইসলামপুরে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো শারদীয়া দুর্গা উৎসব

» স্যামসাংয়ের ৫০ ইঞ্চি এআই টিভি’তে ২৯% ছাড়

» ইসলামপুরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ফয়সাল হত্যায় জড়িত পুলিশের নাম প্রকাশ ও বিচারের দাবিতে বস্টনে বিক্ষোভ

‘জাস্টিস ফর ফয়সল’, ‘জাস্টিস ফর টাইরে’, ‘জাস্টিস ফর এ্যাভরিওয়ান কিল্ড বাই দ্য পুলিশ’ ইত্যাদি স্লোগানে ২৯ জানুয়ারি সোচ্চার ছিলেন বস্টনের লোকজন। ফয়সালের ঘাতকদের চিহ্নিত এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে কালক্ষেপণের অভিযোগে বস্টন সিটির পৃথক দুটি স্থানে শতশত শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কমিউনিটির লোকজন বিক্ষোভ করেছেন।

 

গণসঙ্গীতের মাধ্যমে ঘাতক পুলিশদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং পুলিশি আইন সংস্কারের দাবি উচ্চারিত হয় এ সময়।

 

উল্লেখ্য, ৪ জানুয়ারি দুপুর বেলা বস্টনের ক্যাম্ব্রিজ সিটিতে গুলি করে হত্যা করা হয় বাংলাদেশি আমেরিকান এবং ইউ ম্যাসের বস্টন ক্যম্পাসের ছাত্র সৈয়দ ফয়সাল (২০)। ৫ রাউন্ড গুলিতে হত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, ফয়সালের হাতে নাকি ধারালো অস্ত্র ছিল এবং তা নিয়ে পুলিশের প্রতি তেড়ে আসছিলেন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু পুলিশের এমন দাবিকে মানতে রাজি নন ফয়সালের স্বজন এবং তার সহপাঠিরা। এরপর ক্ষোভে ফেটে পড়া কমিউনিটি এবং শিক্ষার্থীগণকে আশ্বাস দিয়ে ক্যাম্ব্রিজ সিটির মেয়র (পাকিস্তানি-আমেরিকান) সাম্বুল সিদ্দিকী বলেছেন, সরেজমিনে তদন্ত হচ্ছে। শীঘ্রই প্রকৃত তথ্য জানা যাবে। মেয়রের এমন আশ্বাসের পর অতিবাহিত হলো ২৪ দিন। তদন্তের কোন অগ্রগতি নেই। এমনকি বিভিন্নভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালাানো হচ্ছে যে, যে এলাকায় পুলিশ ধাওয়া করেছিল ফয়সালকে এবং যেখানে তাকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়-তার আশপাশে নাকি কোন সিসিটিভি নেই।

 

বিক্ষোভে অংশগ্রগণকারী বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নিউ ইংল্যান্ডের সভাপতি পারভিন চৌধুরী বলেন, আমরা যখন ৯১১ এ কল করি, তখনও পুলিশের বুলেট আশা করি না। সহায়তা চাই নিরাপত্তার জন্যে। কেনেডি নামক একজন বলেন, পুলিশের মধ্যে যারা উগ্রপন্থি তাদেরকে নিরস্ত্র দেখতে চাই, বিচারের কাঠগড়ায় নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। ফয়সালের শৈশবের সহপাঠি সারাহ হালাওয়া বলেন, ফয়সাল তরুণ-তরুণীদের কর্মক্ষম করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন হাই স্কুলে পড়াবস্থায়। আর্ট প্রকল্পেও অংশ নেন। কমিউনিটির প্রায় ইভেন্টেই অনুবাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফয়সাল ছিলেন সমারভিলে কমিউনিটি সুপরিচিত একজন সদস্য। তিনি কমিউনিটির অসহায় মানুষের পাশে থাকতেন সব সময়। তার মত একজন মানুষকে গুলি করে হত্যাকে আমরা কখনোই মেনে নেব না। অনেক হয়েছে। পুলিশকে এবার ঢেলে সাজাতে হবে।

 

এ বিক্ষোভে ফয়সালের সাথে টাইরে নিকলসের পোস্টারও দেখা গেছে। পুলিশি বর্বরতার নিন্দা এবং ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সকলেই রাজপথে থাকার অঙ্গিকার করেন। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র ম্যাসিয়েল টরেস বলেন, আমরা এমন একটি সমাজে বাস করছি যেটি নজরদারিতে রয়েছে এবং যে কোনও সময় খুন হবার আশংকায় দিনাতি পার করতে হচ্ছে। পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা হরদম ঘটছে এবং অসহায় নাগরিকেরা কোন বিচার পাচ্ছে না। টরেস (২৮) উল্লেখ করেন, স্বাধীনতা, মুক্তি এবং সমাজকে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ রাখতে পুলিশ-প্রশাসনকে মানবিকতায় পরিপূর্ণ থাকতে হবে। সেটি হচ্ছে আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ ঘটছে তার বিপরীত। যারা আমাদের নিরাপত্তা দেবেন, তারাই ঘাতকের আসনে অধিষ্ঠিত।

 

ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেট্স’র বস্টন ক্যাম্পাসের অধ্যাপক কীইথ জোন্স (৪৯) এসেছিলেন তার ৭ ও ৯ বছর বয়েসী দুই সন্তানসহ। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে এই কমিউনিটির শান্তি-সম্প্রীতির প্রশ্নে চলমান আন্দোলনের সাথে একাত্মতা দেখাতে এনেছি। ওরা বড় হয়ে যাতে নিজের অধিকার-মর্যাদার প্রশ্নে সোচ্চার থাকে। অধ্যাপক কীইথ উল্লেখ করেন, আর সহ্য হচ্ছে না। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি পুলিশের আচরণে। এহেন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র জনগোষ্ঠিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বস্টনের ওয়েস্টফোর্ড একাডেমিতে স্প্যানিশ এবং সাহিত্যের শিক্ষক হোযে আলেমন (৫৯) বলেন, গুলি করে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। এজন্যে দরকার সম্প্রীতির বন্ধন সংহত করা।

 

ক্যাম্ব্রিজ পুলিশ স্টেশনের বাইরেও জড়ো হয়েছিলেন শতশত মানুষ। তারা সমস্বরে স্লোগান ধরেন জাস্টিস ফর ফয়সাল, জাস্টিস ফর টাইরে। পুলিশের গুলিতে নিহত সকলের পক্ষ থেকে ন্যায় বিচারের দাবি জানান তারা।

 

উল্লেখ্য, সৈয়দ ফয়সালকে হত্যায় জড়িতদের নাম এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে কয়েকজনকে জোরপূর্বক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সিটি মেয়রের মত সিটি কাউন্সিলও এ নিয়ে কয়েক দফা শুনানীতে মিলিত হয়েছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com