মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, বিরোধীদলের (বিএনপি) গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল নেতারা এখনো বলেন পাকিস্তান আমল এর থেকে ভালো ছিল। আজকে বিনয়ের সঙ্গে তাদের কাছে আমি জানতে চাই, জাতি জানতে চায়, কোন সূচকে পাকিস্তান এর থেকে ভালো ছিল?
আজ (৭ মার্চ) ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ৭ মার্চের ১৮ মিনিটের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবকিছু বলে গেছেন, সব দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। যারা আজকে বলতে চায় আমাদের প্রস্তুতি ছিল না, তাদের উদ্দেশ্য একটাই, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করতে চায় তারা।
তিনি বলেন, এখনো শুনতে হয় পাকিস্তান আমল এর থেকে ভালো ছিল। কোন সূচকে? আজকে বিনয়ের সঙ্গে তাদের কাছে আমি জানতে চাই, জাতি জানতে চায় কোন সূচকে পাকিস্তান এর থেকে ভালো ছিল? এক মাস আগেও বলেছে, বিরোধীদলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
তিনি আরও বলেন, বিরোধীদলের দায়িত্বশীল নেতা মাঝে মাঝে বলেন ৭৫-এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। আমরা বলতাম, ৭১-এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। অর্থ পরিষ্কার, ৭১-এর হাতিয়ার গর্জে উঠেছিল বলেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর ৭৫-এর হাতিয়ার গর্জে উঠেছিল বলে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।
‘তারা আজও স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নেয় না, ৭ মার্চের ভাষণকে তারা স্বীকার করে না। তাই আমরা বলতে চাই, যারা এদেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে তাদের কাছে ৭ মার্চের ভাষণ… নির্দেশিকা। তিনি অর্থনীতি মুক্তির কথা বলেছেন। মানুষের মুক্তি, সেই মুক্তির নির্দেশিকা এখানে আছে। আজও আমরা সেই অর্থনৈতিক মুক্তি পাইনি।’ যোগ করেন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু বাকশাল করেছিলেন। বাকশালের দুইটা অংশ ছিল, একটা রাজনৈতিক, আর একটা অর্থনৈতিক। রাজনৈতিক অংশ আমরা পরিহার করেছি। কারণ আজকের প্রেক্ষাপট বঙ্গবন্ধু আর নেই, যার নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য হতে পারে। সেজন্য পরবর্তী যে অংশ অর্থনৈতিক মুক্তি, অর্থনৈতিক মুক্তির যে কর্মসূচি দিয়েছিলেন, সেই কর্মসূচি যতদিন বাস্তবায়ন না হবে ততদিন স্বাধীনতা বা ৭ মার্চ অর্থবহ হবে না।
মন্ত্রী বলেন, আজকে সেই অর্থনৈতিক মুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বঙ্গবন্ধু নেই, তার আদর্শ উত্তরাধিকার সফল রাষ্ট্রনায়ক দেশরত্ন শেখ হাসিনা আছেন। তার নেতৃত্বে আমরা আগামী দিন ঐক্যবদ্ধ থেকে, যেমনিভাবে ৭০-এ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, তেমনিভাবে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসম্পন্ন অর্থনৈতিক মুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৭ মার্চের অন্তর্নিহিত কথা, স্বাধীনতার মূলমন্ত্র আমরা বাস্তবায়ন করবো।
এসময় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদে বলেন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালি জাতির জীবনে অবিস্মরণীয় দিন। ওইদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে ১৮ মিনিটের যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা ছিল মূলত বাঙালি জাতির স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষার এক মহাকাব্য।
তিনি বলেন, এ ভাষণের প্রতিটি শব্দ ছিল বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহস, সীমাহীন ত্যাগ, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা, আর তার হৃদয়ের উচ্ছলিত সম্মোহিত ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। এ ভাষণ শুধু বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের দলিল নয়, এ ভাষণ বাঙালিন মুক্তির চেতনার প্রতীক। সেদিন এ ভাষণের মধ্যদিয়ে মানুষের মনে আগুণ জ্বালিয়েছিলেন, ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, রক্ত শপথে এবং স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ১৮ মিনিটের ভাষণে প্রতি মিনিটে ৫৮ থেকে ৬০টি শব্দ উচ্চারণ করেছেন। এ ভাষণ পৃথিবীর সব ভাষণের মধ্যে কালজয়ী ইতিহাস হয়ে আছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ১০টি ভাষণের মধ্যে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল অলিখিত৷ বাকি ৯টি ভাষণ ছিল লিখিত। এ ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম রণকৌশলের দলিল। পৃথিবীতে যতদিন পরাধীনতা থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ মুক্তিকামী মানুষের মনে চিরজাগরুক হয়ে থাকবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাহবুব হোসেন বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের আজও অনুপ্রেরণার উৎস, সাহসের প্রতীক। এটা এভাবেই থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। সময়ের পরিক্রমায় অনেক অন্ধকার পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ আলোর পথের অগ্রযাত্রী। সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ। তবে প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা অপার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। দারিদ্র্যতা থেকে উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রী হয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের যেতে হবে অনেক পথ, প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে হতে হবে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ। এ পথে বাধা আছে, আরও আসবে। তবে আমাদের দৃঢ় মনোবল শক্তির জায়গা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় প্রত্যয়ের মতো আমরা ধারণ করি, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।