এক রাজার রাজকীয় ব্যাটিং তাণ্ডবের কাছে নিজেদের ফেবারিট ফরম্যাট ওয়ানডেতে পারলো না টাইগাররা। এ যেন অসহায় আত্ব সমর্পণ। ফলে টি-২০র মতো ওয়ানডে সিরিজও হাতছাড়া করলো বাংলাদেশ। আর ২-০ তে এগিয়ে থেকে সিরিজ জয় করে নিল স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে।
এক সিকান্দার রাজার ফর্মেই যেন বার বার আটকে যাচ্ছে বাংলাদেশ ইনিংস। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা ফর্মে রয়েছেন জিম্বাবুয়ের এই অলরাউন্ডার।
নিজের ব্যাক্তিগত শতক পূরণ করে অসাধারণ ব্যাটিং দক্ষতায় নিজের দেশকে জয় এনে দিলেন রাজা। তার পরপরই চাকাভাও নিজের ব্যাক্তিগত শতকে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। যদিও মেহেদী হাসানের বলে ১০২ রানে হার মানেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত প্রথম একদিনের ম্যাচের মতো আজও বড় ব্যবধানে পরাজয়ের স্বাদ নিতে হলো বাংলাদেশকে। টাইগারদের দেয়া ২৯১ রানের টার্গেটকে মামুলি বানিয়ে ৫ উইকেটে জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা। রাজা ১১৭ রানে ও টনি মুনোয়োঙ্গা ১৬ বলে ৩০ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ শেষ করেন।
প্রথম ইনিংসে ওপেনার তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ফিফটিতে ২৯১ রানের লড়াকু লক্ষ্য দেয় স্বাগতিকদের। শুরুতে ৩ উইকেট হারিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ে। সিকান্দার রাজা ও চাকাভার দৃঢ়তায় সমানতালে জবাব দিয়ে সে বিপর্যয় কাটিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় জিম্বাবুয়ে।
প্রথম ওয়ানডেতে অপরাজিত ১৩৫ রান করার পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের বোলারদের সামনে মুর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দেন সিকান্দার রাজা। ২৭ রানে ৩ উইকেট এবং ৪৯ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর হাল ধরেন রেগিস চাকাভা ও রাজা।
লক্ষ্য তাড়া করতে গিয় শুরুতে বিপদেই পড়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা। বোলার হাসান মাহমুদ ইনিংসের প্রথম এবং তৃতীয় ওভারে দুই উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে ভালো শুরু এনে দিয়েছেন। তার বোলিং তোপে মাত্র ১৩ রানেই ২ উইকেট খুইয়েছে স্বাগতিকরা। অন্যদিকে মেহেদি হাসান মিরাজ তুলে নেন আরেকটি উইকেট। মাত্র ২ রান করা ওয়েসলি মাধেভেরেকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি।
চোট পাওয়া মুস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন হাসান। আর এই সুযোগ দুই হাতে লুফে নেওয়ার যেন তৈরি ছিলেন এই পেসার। তামিম ইকবাল ইনিংসের প্রথম ওভারেই তার হাতে বল তুলে দেন। ওভারের তৃতীয় বলেই ওপেনার তাকুদ জাওয়ানাশেকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান তিনি। নিজের দ্বিতীয় ওভারে সিরিজের প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইনোসেন্ট কাইয়াকেও সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন হাসান। তাকুদের মতো কাইয়াও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন, আউট হওয়ার আগে ৮ বলে করেছিলেন মোটে ৭ রান।
টানা তিন উইকেট পড়লেও অন্যপ্রান্তে অপর ওপেনার তাদিওয়ানাশে মুরুমানি উইকেট আগলে রেখেছিলেন। সিকান্দার রাজার সঙ্গে ২১ রানের জুটিও গড়েন তিনি। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজের বলে পরিবর্তিত ফিল্ডার মোহাম্মদ নাইম শেখের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। ৪২ বলে করেন ২৫ রান। চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে ৪৯ রানে। তারপরই রাজা ও চাকাভার ১৯০ রানের বড় পার্টনারশীপ তৈরি হয়। চাকাভা ১০২ রানে মেহেদীর বলে আউট হলে টনি মুনোয়োঙ্গাকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ শেষ করেন রাজা।
বাংলাদেশের হয়ে হাসান মাহমুদ ও মেহেদী হাসান ২ টি এবং তাইজুল ইসলাম ১ টি উইকেট শিকার করেন।
শুরুতে হারারে স্পোর্টস ক্লাবে টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক রেগিস চাকাভা। চলতি সফরে পাঁচ ম্যাচের সবগুলোতেই টস হেরেছে টাইগাররা।
প্রথম ম্যাচে হারের পর এই ম্যাচে বাংলাদেশ একাদশে এসেছে দুই পরিবর্তন। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ের একাদশে পরিবর্তন পাঁচটি।
ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়া লিটন দাসের জায়গায় এদিন তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেন করতে নামে এনামুল হক বিজয়। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন তামিম। অন্যপ্রান্তে বিজয় সুযোগ বুঝে স্ট্রাইক রোটেট করে খেলছিলেন।
ইনিংসে দশম ওভারেই ফিফটির দেখা পান তামিম। ভিক্টর নিয়ুচির বলে চার হাঁকিয়ে ৪৩ বলেই অর্ধশতক পূরণ করেন তামিম। এ সময় বিজয়ের সংগ্রহ ছিল ১০ রান! বড় কিছুর সম্ভাবনা দেখালেও তামিমের ইনিংসটি বেশিদূর এগোয়নি। পরের ওভারে কোনো রান যোগ না করেই আউট হন তিনি।
রান আউট হয়ে এর কিছুক্ষণ পরই সাজঘরে ফেরেন ২০ রান করা বিজয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের ইনিংসে জোড়া আঘাত হানেন ওয়েসলে মাধেভেরে। তার শিকার হন যথাক্রমে ৩৮ রান করা নাজমুল হোসেন শান্ত ও ২৫ রান করা মুশফিকুর রহিম।
চার উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এমতাবস্থায় দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। দুজনে মিলে গড়েন ৮১ রানের জুটি। এরপরই দৃশ্যপটে সিকান্দার রাজার আবির্ভাব।
৪১ রান করা আফিফকে ফিরিয়ে প্রথম আঘাত হানেন রাজা। এরপর ফেরান মেহেদী মিরাজ ও তাসকিন আহমেদকেও। অন্যপ্রান্তে লড়াই চালিয়ে যান রিয়াদ। দায়িত্বশীল ইনিংসকে পান ফিফটির দেখা। শেষ পর্যন্ত ৮৪ বলে ৮০ রান করেন তিনি।
মূলত রিয়াদের কারণেই লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। শেষদিকে আর কেউই তেমন রান করতে পারেননি।
জিম্বাবুয়ের হয়ে রাজা তিনটি, মাধেভেরে দুটি এবং তানাকা চিভাঙ্গা ও ভিক্টর নিয়ুচি একটি করে উইকেট শিকার করেন।