ছবি সংগৃহীত
ধর্ম ডেস্ক :দান-সদকা বড় ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। এর অসংখ্য পুরস্কারের কথা বর্ণিত হয়েছে কোরআন-হাদিসে। দান-সদকার প্রতিফল শুধু আখেরাতের জন্য সীমাবদ্ধ নয়, দুনিয়াতেও রয়েছে এর নানাবিধ উপকার। নিচে দান-সদকার পার্থিব উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলো।
আল্লাহ বিপদাপদ দূর করে দেন
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা অধিক হারে সদকা করো। কেননা বালা-মুসিবত সদকাকে অতিক্রম করতে পারে না।’ (বায়হাকি: ৮০৮৩)
সম্পদ দান করেন
সদকার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা এর চেয়ে অধিক ও উত্তম জিনিস দান করেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-খয়রাত বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোনো অবিশ্বাসী পাপীকে।’ (সুরা বাকারা: ২৭৬) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি ব্যয় করো, হে আদম সন্তান! আমিও তোমার জন্য ব্যয় করব।’ (বুখারি: ৫৩৫২)
সম্পদের অপবিত্রতা দূর হয়
সম্পদ উপার্জন করতে গিয়ে অনেক সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভুলভ্রান্তি হয়ে যায়। সদকার মাধ্যমে এই ভুলভ্রান্তি মোচন করা হয়। কায়িস ইবনে আবু গারাজাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (স.)-এর যুগে আমাদের (ব্যবসায়ীদের) সামাসিরাহ (দালাল সম্প্রদায়) বলা হত। একদা রাসুল (স.) আমাদের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের এই নামের চেয়ে অধিক সুন্দর নাম দিলেন। তিনি বলেন, ‘হে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়! ব্যবসায়িক কাজে বেহুদা কথাবার্তা এবং অপ্রয়োজনীয় শপথ হয়ে থাকে। সুতরাং তোমরা ব্যবসার পাশাপাশি সদকা করে তাকে ত্রুটিমুক্ত করো।’ (আবু দাউদ: ৩৩২৬)
ভয়ভীতি থেকে নিরাপত্তা লাভ
সদকার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা সদকাকারীকে নানারকম ভয়ভীতি থেকেও নিরাপদ রাখেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.)-এর সময় একবার সূর্যগ্রহণ হলো। তখন রাসুল (স.) লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। অতঃপর তিনি লোকজনের উদ্দেশে খুতবা দান করেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করেন। অতঃপর তিনি বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন তোমরা আল্লাহর কাছে দুয়া করবে। তাঁর মহত্ত্ব ঘোষণা করবে এবং সালাত আদায় করবে ও সদকা প্রদান করবে।’ (বুখারি: ১০৪৪)
ফেরেশতারা দান-সদকাকারীর জন্য দোয়া করেন
দান-সদকাকারীর জন্য প্রতিদিন ফেরেশতারা বরকতের দোয়া করে থাকেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, প্রত্যেক বান্দা যখন সকালে ওঠে, দুজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! খরচকারীর ধন আরও বাড়িয়ে দিন এবং দ্বিতীয়জন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। (মুসলিম: ২২২৬)
অপমৃত্যু রোধ হয়
দান-সদকা ব্যক্তিকে অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে। দান করলে বালা মুসিবত, অ্যাক্সিডেন্ট, পেরেশানি, দুর্ঘটনা, অসুস্থতা দূর হয়ে যায়। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সদকা অপমৃত্যু রোধ করে।’ (তিরমিজি: ৬৬৪; ইবনে হিব্বান: ৩৩০৯)। অপমৃত্যু বলতে ওইসব মৃত্যুকে বোঝানো হয়েছে যা থেকে স্বয়ং নবীজি (সা.) পানাহ চেয়েছেন। যেমন পানিতে পড়ে, আগুনে পুড়ে, ওপর থেকে পতিত হয়ে, যুদ্ধ থেকে পলায়নরত অবস্থায় এবং এ ধরনের যেকোনো কারণে মৃত্যুবরণ করা। হঠাৎ মৃত্যুকেও কেউ কেউ অপমৃত্যু বলেছেন।’ (মেরকাত: ৪/১৩৪১)
ক্ষমা লাভ হয় ও আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত হয়
বান্দা গুনাহে লিপ্ত হলে পরাক্রমশালী আল্লাহ ক্রোধান্বিত হন। গুনাহ করার পর গুনাহগার ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় দান-সদকা করলে আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত হয়ে যায় এবং ক্ষমা লাভের পথ সুগম হয়। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সদকা আল্লাহর ক্রোধকে প্রশমিত করে।’ (তিরমিজি: ৬৬৪; ইবনে হিব্বান: ৩৩০৯)
রোগ নিরাময়ের মাধ্যম
দান-সদকা রোগ-নিরাময়েরও একটি কারণ। হজরত আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের মধ্যকার অসুস্থ ব্যক্তিদের দানের মাধ্যমে চিকিৎসা কর। (বায়হাকি: ৬৫৯৩)
হায়াত বৃদ্ধি
দান করলে আল্লাহ তাআলা দানকারীর হায়াত বাড়িয়ে দেন। হজরত আমর ইবনে আওফ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মুসলমান ব্যক্তির সদকা তার হায়াত বৃদ্ধি করে। (তাবারানি: ৩১)
হায়াত বৃদ্ধি সম্পর্কে ইমাম নববি (রহ) বলেন, আল্লাহ হায়াতের মধ্যে বরকত দান করবেন, ফলে অল্প সময়েও অধিক ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক লাভ হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি দান করার এবং দানের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে প্রভূত কল্যাণ লাভের তওফিক দান করুন। আমিন।