দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হলেন অভিশংসিত সেই প্রধানমন্ত্রী

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট : দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সুকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্বহাল করেছেন দেশটির আদালত। এর মাধ্যমে অভিশংসিত হওয়ার তিনমাস পর আবারও সেই পদে ফিরলেন তিনি।

 

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সংসদে আইনপ্রণেতাদের ভোটে অভিশংসিত হন। এতে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু। তবে দুই সপ্তাহ পর তিনিও অভিশংসিত হন।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত সোমবার প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু’র ক্ষমতা পুনর্বহাল করেছেন। প্রায় তিন মাস আগে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসনের পর পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সাম্প্রতিক অস্থির রাজনীতিতে সর্বশেষ বড় ঘটনা এটি।

 

এদিকে আদালতের আদেশের পর হান ডাক-সু প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের কাছ থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। স্বল্পস্থায়ী সামরিক আইন ঘোষণার কারণে গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি নিজেই অভিশংসিত হয়েছিলেন। মূলত আদালতের রায়ের পর সোমবার হান অবিলম্বে তার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের পদে ফিরে আসেন।

 

রায়ের পর হান বলেন, “সাংবিধানিক আদালতের বিজ্ঞ সিদ্ধান্তের জন্য আমি কৃতজ্ঞ।”

 

এ সময় তিনি মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও ধন্যবাদ জানান।

 

টেলিভিশনে সম্প্রচারিত মন্তব্যে হান বলেন, “আমরা বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া প্রস্তুত ও বাস্তবায়নের জন্য একসাথে কাজ করব এবং ভূ-রাজনৈতিক রূপান্তরের যুগে দক্ষিণ কোরিয়া যাতে ভালোভাবে বিকশিত হতে থাকে তা নিশ্চিত করব।”

 

মূলত ২০২২ সালের মে মাস থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন হান ডাক-সু। আর প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের অভিশংসনের পর গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তবে এর দুই সপ্তাহের মাথায় তিনি নিজেও অভিশংসিত হন এবং সেই পদক্ষেপ পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির চলমান সংবিধানিক সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।

 

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন জারি করার ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদে প্রেসিডেন্ট ইউনকে অভিশংসিত করার পর প্রধানমন্ত্রী হান ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। মূলত দেশটিতে সেসময় যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল তা থেকে দেশকে মুক্ত করতে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল হানের।

 

কিন্তু বিরোধী এমপিরা অভিযোগ করেছিলেন, তিনি ইউনের অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার দাবি প্রত্যাখ্যান করছেন। এরপর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশটির পার্লামেন্টে বিশৃঙ্খলার মধ্যেই তাকে অভিশংসনের জন্য ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটাভুটিতে মোট ১৯২ জন আইনপ্রণেতা তার অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। যদিও অভিশংসনের পদক্ষেপ সফল করার জন্য ১৫১টির বেশি ভোটের প্রয়োজন ছিল।

 

জানা গেছে, ইউনের সামরিক আইন ঘোষণা এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক মিত্র দক্ষিণ কোরিয়াকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটে ফেলে দেয় এবং বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিশংসন, পদত্যাগ এবং ফৌজদারি অভিযোগের মধ্যে দেশটিতে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি করে।

 

সোমবার আদালতের বিচারপতিরা সাত-এক ভোটে হানের অভিশংসন বাতিল করার রায় দিয়েছেন। আট বিচারপতির মধ্যে পাঁচজন বলেছেন, অভিশংসন প্রস্তাব বৈধ, কিন্তু আদালতের বিবৃতি অনুসারে, হানকে অভিশংসন করার মতো পর্যাপ্ত কারণ ছিল না। কারণ তিনি সংবিধান বা আইন লঙ্ঘন করেননি।

 

আর দুই বিচারপতি রায় দিয়েছেন, হান — যিনি তখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন — তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব শুরু থেকেই অবৈধ ছিল। কারণ সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতা এটি পাস করেননি। আর একজন বিচারপতি হানকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সূত্র: বিবিসিআল-জাজিরারয়টার্স

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নারী পোশাককর্মীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে স্বামী আটক

» আমরা ক’জন সিডনি’র আয়োজনে বাংলা বর্ষবরণ

» সাবেক এনআইডি ডিজির এনআইডি ব্লক করার নির্দেশ

» ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

» যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে অটোরিকশার যাত্রী নিহত

» বিদ্যুৎ-মেট্রোরেল-সড়ক-রেলপথে যাত্রীসেবা বিঘ্নিত হলে টেলিভিশন স্ক্রলে দিতে হবে

» রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উসকানি মামলায় খালাস পেলেন আমীর খসরু

» রোমে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উরুগুয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

» নাইজেরিয়ার সোনার খনিতে হামলায় নিহত বেড়ে ২৬

» রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম নিয়ে রিভিউয়ের পরবর্তী শুনানি ১৮ মে

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হলেন অভিশংসিত সেই প্রধানমন্ত্রী

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট : দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সুকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্বহাল করেছেন দেশটির আদালত। এর মাধ্যমে অভিশংসিত হওয়ার তিনমাস পর আবারও সেই পদে ফিরলেন তিনি।

 

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সংসদে আইনপ্রণেতাদের ভোটে অভিশংসিত হন। এতে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু। তবে দুই সপ্তাহ পর তিনিও অভিশংসিত হন।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত সোমবার প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু’র ক্ষমতা পুনর্বহাল করেছেন। প্রায় তিন মাস আগে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসনের পর পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সাম্প্রতিক অস্থির রাজনীতিতে সর্বশেষ বড় ঘটনা এটি।

 

এদিকে আদালতের আদেশের পর হান ডাক-সু প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের কাছ থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। স্বল্পস্থায়ী সামরিক আইন ঘোষণার কারণে গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি নিজেই অভিশংসিত হয়েছিলেন। মূলত আদালতের রায়ের পর সোমবার হান অবিলম্বে তার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের পদে ফিরে আসেন।

 

রায়ের পর হান বলেন, “সাংবিধানিক আদালতের বিজ্ঞ সিদ্ধান্তের জন্য আমি কৃতজ্ঞ।”

 

এ সময় তিনি মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও ধন্যবাদ জানান।

 

টেলিভিশনে সম্প্রচারিত মন্তব্যে হান বলেন, “আমরা বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া প্রস্তুত ও বাস্তবায়নের জন্য একসাথে কাজ করব এবং ভূ-রাজনৈতিক রূপান্তরের যুগে দক্ষিণ কোরিয়া যাতে ভালোভাবে বিকশিত হতে থাকে তা নিশ্চিত করব।”

 

মূলত ২০২২ সালের মে মাস থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন হান ডাক-সু। আর প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের অভিশংসনের পর গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তবে এর দুই সপ্তাহের মাথায় তিনি নিজেও অভিশংসিত হন এবং সেই পদক্ষেপ পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির চলমান সংবিধানিক সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।

 

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন জারি করার ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদে প্রেসিডেন্ট ইউনকে অভিশংসিত করার পর প্রধানমন্ত্রী হান ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। মূলত দেশটিতে সেসময় যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল তা থেকে দেশকে মুক্ত করতে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল হানের।

 

কিন্তু বিরোধী এমপিরা অভিযোগ করেছিলেন, তিনি ইউনের অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার দাবি প্রত্যাখ্যান করছেন। এরপর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশটির পার্লামেন্টে বিশৃঙ্খলার মধ্যেই তাকে অভিশংসনের জন্য ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটাভুটিতে মোট ১৯২ জন আইনপ্রণেতা তার অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। যদিও অভিশংসনের পদক্ষেপ সফল করার জন্য ১৫১টির বেশি ভোটের প্রয়োজন ছিল।

 

জানা গেছে, ইউনের সামরিক আইন ঘোষণা এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক মিত্র দক্ষিণ কোরিয়াকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটে ফেলে দেয় এবং বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিশংসন, পদত্যাগ এবং ফৌজদারি অভিযোগের মধ্যে দেশটিতে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি করে।

 

সোমবার আদালতের বিচারপতিরা সাত-এক ভোটে হানের অভিশংসন বাতিল করার রায় দিয়েছেন। আট বিচারপতির মধ্যে পাঁচজন বলেছেন, অভিশংসন প্রস্তাব বৈধ, কিন্তু আদালতের বিবৃতি অনুসারে, হানকে অভিশংসন করার মতো পর্যাপ্ত কারণ ছিল না। কারণ তিনি সংবিধান বা আইন লঙ্ঘন করেননি।

 

আর দুই বিচারপতি রায় দিয়েছেন, হান — যিনি তখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন — তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব শুরু থেকেই অবৈধ ছিল। কারণ সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতা এটি পাস করেননি। আর একজন বিচারপতি হানকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সূত্র: বিবিসিআল-জাজিরারয়টার্স

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com