ফাইল ফটো
গোল্ডেন লাইন পরিবহনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে রাজবাড়ী-ঢাকা রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঢাকা থেকে রাজবাড়ীর কোনো বাস ছাড়তে দিচ্ছে না বাস-ট্রাক মালিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ রুটের সাধারণ যাত্রীরা।
আজ সকালে ঢাকা-রাজবাড়ী রুটে বাস চলাচল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজবাড়ী জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক লিটন।
এর আগে, সোমবার সকাল হতে রাজবাড়ী থেকে ঢাকা রুটের সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
৩ দিন ধরে রাজবাড়ী থেকে সরাসরি ঢাকা রুটের বাস চলাচল বন্ধে সাময়িক অসুবিধার জন্য যাত্রীদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাজবাড়ী জেলা বাস মালিক গ্রুপের সদস্যরা।
এদিকে, রাজবাড়ী থেকে ঢাকা রুটের সরাসরি বাস বন্ধ থাকলেও লোকাল বাসগুলো সব স্বাভাবিক ভাবেই চলাচল করছে। তাই রাজবাড়ী থেকে ঢাকা এবং ঢাকার গাবতলী থেকে রাজবাড়ী আসা যাওয়ায় যাত্রীদের তেমন অসুবিধা পোহাতে হচ্ছে না।
রাজবাড়ী পরিবহন মালিক গ্রুপের সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী থেকে সরাসরি পদ্মা সেতু হয়ে কোনো যাত্রীবাহী বাস ঢাকায় যায় না। ফরিদপুরের গোল্ডেন লাইন বাস সরাসরি পদ্মা সেতু দিয়ে রাজধানী ঢাকায় যায়। গোল্ডেন লাইন পরিবহন রাজবাড়ীর পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা না করে তাদের নিজেদের মতো ট্রিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে গোল্ডেন লাইনকে বাধা দেওয়ায় তারা গাবতলীতে থাকা রাজবাড়ী জেলার বাসের কাউন্টারগুলোতে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ উঠে। এরপর ঢাকায় বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বিষয়টির সমাধান করা হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয় ফরিদপুরের গোল্ডেন লাইন রাজবাড়ীতে দুইটি ট্রিপ চালাবে। কিন্তু তারা এ সিদ্ধান্ত না মেনে একাধিক ট্রিপ চালিয়ে আসছে। গত শুক্রবার রাজবাড়ী পরিবহন মালিক গ্রুপের লোকজন বাস মালিক সমিতির সামনে থেকে গোল্ডেন লাইনের একটি বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে ঢাকায় ফেরত পাঠায়। এ নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল ঝামেলা।
এর জেরে, গাবতলী বাস টার্মিনালে রোববার সন্ধ্যায় গোল্ডেন লাইন পরিবহনের শ্রমিকেরা রাজবাড়ী জেলার সকল বাস কাউন্টার বন্ধ করে দেন। এ সময় তারা ঘোষণা করে রাজবাড়ী জেলার কোনো বাস ঢাকায় আসবে না। পাশাপাশি ঢাকা থেকেও কোনো বাস রাজবাড়ীতে সরাসরি যাবে না। এই কারণেই সোমবার থেকে রাজবাড়ী টু ঢাকা এবং ঢাকা টু রাজবাড়ী রুটে সরাসরি যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জেলা শহরের নতুনবাজার মুরগীর ফার্ম বাসস্ট্যান্ড, বড়পুল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ থাকার কারণে যাত্রী ভোগান্তি হচ্ছে। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন যারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকায় রওনা হয়েছেন। যে সকল যাত্রীদের সঙ্গে ব্যাগ বা লাগেজের সংখ্যা বেশি। তবে যারা সিঙ্গেল যাত্রী রয়েছেন তারা লোকাল বাস বা থ্রি হুইলারে করে ভেঙে ভেঙে ঢাকার পথে রওনা দিচ্ছেন।
মুরগীর ফার্ম বাসস্টান্ডে কথা হয় ঢাকাগামী যাত্রী খাইরুল বাশারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকায় রওনা হয়েছি। ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে কদিন থেকে স্ত্রী কে ডাক্তার দেখাব। গত ৩দিন ধরে রাজবাড়ী থেকে ঢাকার সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ব্যাগ তল্পিতল্পা নিয়ে একটা ভোগান্তিতে পড়েছি।
আরেক মহিলা যাত্রী খোদেজা বেগম বলেন, আমি বাড়ি থেকে চাউলসহ অনেক খাবার নিয়ে ঢাকার বাড্ডায় মেয়ের বাড়িতে যাচ্ছি। বাস বন্ধ। তাই এখান থেকে মাহেন্দ্রে দৌলতদিয়া ঘাটে যাব। লঞ্চে পদ্মা নদী পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে গিয়ে লোকাল বাসে গাবতলী যাবো। এভাবে ভেঙে ভেঙে যাওয়াটা অনেক কষ্টকর।
রাজবাড়ী বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ও রাবেয়া পরিবহনের পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক লিটন জানান, আমাদের রাজবাড়ী থেকে ঢাকা রুটে ১০৩টি বাসের ট্রিপ চলাচল করে। এর মধ্যে রাজবাড়ীর বাসের ট্রিপ রয়েছে ৫৩টি। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে অন্যান্য বাস রাজবাড়ী জেলার ওপর দিয়ে চলাচল করায় আমরা বাধা দিয়েছি। এমনিতেই আমাদের ফেরি ভাড়া দিয়ে বাস চালাতে লোকসান হচ্ছে। অন্যান্য বাস বেশি চলাচল করলে আমাদের যাত্রী কম হয়। ঢাকা বাস মালিক সমিতির সাথে গোল্ডেন পরিবহন নিয়ে আমাদের ঝামেলা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য আমরা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছি। আজ ৩ দিন পার হলেও কোন সুরাহা হয়নি।