তীব্র গরমে ঢাকার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে বাগেরহাটের উঠোনের ডাব

এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট : দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা মোরেলগঞ্জ  শরণখোলায় সহ ৯উপজেলা যেন এখন ঢাকাবাসীর তৃষ্ণা নিবারণের প্রধান ভরসা। রাজধানীসহ সারাদেশে যখন তাপমাত্রা অতিক্রম করছে ৩৮ ডিগ্রি, তখন শহরের মানুষ স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে বেছে নিচ্ছে ডাব। এই চাহিদা মেটাতে প্রতিদিনই ৯উপজেলার গ্রামগুলো থেকে পাঠানো হচ্ছে শত শত কচি ডাব।

তবে এখানকার দৃশ্যপট একটু ব্যতিক্রম। শরণখোলার চারটি ইউনিয়ন—রায়েন্দা, খোন্তাকাটা, ধানসাগর ও সাউথখালীতে নেই কোনো বাণিজ্যিক নারকেল বাগান। নারকেল গাছগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বাড়ির উঠোনে, রাস্তার পাশে কিংবা পুকুরপাড়ে। এসব গাছই এখন হয়ে উঠেছে গ্রামীণ অর্থনীতির নিরব সহযোদ্ধা।

সাউথখালী গ্রামের মনোয়ারা বেগম জানালেন, ‘আমার বাড়িতে ছয়টা নারকেল গাছ আছে। এবার গরম বেশি, ডাবের চাহিদাও বেশি। গত সপ্তাহে ২৫টা ডাব বিক্রি করলাম। ছেলের স্কুলের ফি দিয়ে দিতে পেরেছি।’

ঢাকা, খুলনা, বরিশালসহ বিভিন্ন শহর থেকে আসা পাইকাররা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামে ঘুরে ঘুরে ডাব সংগ্রহ করছেন। হানিফ মুন্সী নামের এক পাইকার বলেন, “এই এলাকার ডাব খুব সুস্বাদু, ঠান্ডা পানিতে ভরা। প্রতিদিন দেড়-দুই হাজার ডাব কিনে ট্রাকে করে ঢাকায় পাঠাই। ঢাকায় এর খুব চাহিদা।”

রাজধানীর বিভিন্ন ফলের দোকানে একেকটি ডাব বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। বিক্রেতারা জানান, অধিকাংশ ডাবই এসেছে বাগেরহাটের দক্ষিণাঞ্চল থেকে। গরমে পানিশূন্যতা ও শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য এই প্রাকৃতিক পানীয় এখন ভরসা হয়ে উঠেছে শহরবাসীর।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, শরণখোলায় নারকেল গাছের সংখ্যা প্রচুর হলেও এখনও পর্যন্ত পরিকল্পিত ডাব চাষ শুরু হয়নি। বেশিরভাগ গাছ গৃহস্থালির প্রয়োজনে রোপণ করা। তবে চাহিদা ও বাজার মূল্য বিবেচনায় পরিকল্পিত নারকেলভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গড়ে তোলার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।

এই গ্রীষ্মে নারকেল গাছ শুধু ছায়া দিচ্ছে না, হয়ে উঠেছে আয়ের উৎসও। প্রতিটি উঠোনের গাছ যেন একেকটি ‘সবুজ খনি’। একদিকে ঢাকার গরমের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে, অন্যদিকে গ্রামের মানুষকে দিচ্ছে স্বস্তি ও আর্থিক সহায়তা—শরণখোলার ডাব এখন তাপদাহের বিরুদ্ধে এক সাহসী গ্রামীণ হাতিয়ার।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ভারতে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জামায়াতের শোক

» শেখ হাসিনা স্টাইলে একতরফা নির্বাচন করে সরকার পার পাবে না : জিএম কাদের

» দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া যেকোনো ক্রিকেটারের স্বপ্ন: মিরাজ

» আগামীর বাংলাদেশ হবে গণতন্ত্রের: টুকু

» আমরা আমাদের সন্তানদের রক্তের ঋণের ওপর দাঁড়িয়ে আছি : তথ্য সচিব

» দুর্গত এলাকায় খাদ্যসংকট নিরসনে বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে সরকার : খাদ্য উপদেষ্টা

» অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া একমাত্র যাত্রী ১১এ সিটে থাকা বিশ্বাস কুমার রমেশ

» ভারতের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারদের জন্য ১ কোটি রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা

» জামায়াতের সংসদ সদস্য প্রার্থী আশরাফীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

» হাসিনার সরকার অবৈধ ট্রাইব্যুনাল বানিয়ে আমাকে মারতে চেয়েছিলো: আজহারুল

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

তীব্র গরমে ঢাকার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে বাগেরহাটের উঠোনের ডাব

এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট : দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা মোরেলগঞ্জ  শরণখোলায় সহ ৯উপজেলা যেন এখন ঢাকাবাসীর তৃষ্ণা নিবারণের প্রধান ভরসা। রাজধানীসহ সারাদেশে যখন তাপমাত্রা অতিক্রম করছে ৩৮ ডিগ্রি, তখন শহরের মানুষ স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে বেছে নিচ্ছে ডাব। এই চাহিদা মেটাতে প্রতিদিনই ৯উপজেলার গ্রামগুলো থেকে পাঠানো হচ্ছে শত শত কচি ডাব।

তবে এখানকার দৃশ্যপট একটু ব্যতিক্রম। শরণখোলার চারটি ইউনিয়ন—রায়েন্দা, খোন্তাকাটা, ধানসাগর ও সাউথখালীতে নেই কোনো বাণিজ্যিক নারকেল বাগান। নারকেল গাছগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বাড়ির উঠোনে, রাস্তার পাশে কিংবা পুকুরপাড়ে। এসব গাছই এখন হয়ে উঠেছে গ্রামীণ অর্থনীতির নিরব সহযোদ্ধা।

সাউথখালী গ্রামের মনোয়ারা বেগম জানালেন, ‘আমার বাড়িতে ছয়টা নারকেল গাছ আছে। এবার গরম বেশি, ডাবের চাহিদাও বেশি। গত সপ্তাহে ২৫টা ডাব বিক্রি করলাম। ছেলের স্কুলের ফি দিয়ে দিতে পেরেছি।’

ঢাকা, খুলনা, বরিশালসহ বিভিন্ন শহর থেকে আসা পাইকাররা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামে ঘুরে ঘুরে ডাব সংগ্রহ করছেন। হানিফ মুন্সী নামের এক পাইকার বলেন, “এই এলাকার ডাব খুব সুস্বাদু, ঠান্ডা পানিতে ভরা। প্রতিদিন দেড়-দুই হাজার ডাব কিনে ট্রাকে করে ঢাকায় পাঠাই। ঢাকায় এর খুব চাহিদা।”

রাজধানীর বিভিন্ন ফলের দোকানে একেকটি ডাব বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। বিক্রেতারা জানান, অধিকাংশ ডাবই এসেছে বাগেরহাটের দক্ষিণাঞ্চল থেকে। গরমে পানিশূন্যতা ও শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য এই প্রাকৃতিক পানীয় এখন ভরসা হয়ে উঠেছে শহরবাসীর।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, শরণখোলায় নারকেল গাছের সংখ্যা প্রচুর হলেও এখনও পর্যন্ত পরিকল্পিত ডাব চাষ শুরু হয়নি। বেশিরভাগ গাছ গৃহস্থালির প্রয়োজনে রোপণ করা। তবে চাহিদা ও বাজার মূল্য বিবেচনায় পরিকল্পিত নারকেলভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গড়ে তোলার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।

এই গ্রীষ্মে নারকেল গাছ শুধু ছায়া দিচ্ছে না, হয়ে উঠেছে আয়ের উৎসও। প্রতিটি উঠোনের গাছ যেন একেকটি ‘সবুজ খনি’। একদিকে ঢাকার গরমের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে, অন্যদিকে গ্রামের মানুষকে দিচ্ছে স্বস্তি ও আর্থিক সহায়তা—শরণখোলার ডাব এখন তাপদাহের বিরুদ্ধে এক সাহসী গ্রামীণ হাতিয়ার।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com