কয়েক মাস ধরে ডলার সংকটে হিমশিম খাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। এর মধ্যে স্বস্তি নিয়ে এসেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রবাসীরা আত্মীয়-স্বজনদের ঈদ উদ্যাপন আনন্দময় করতে বেশি করে অর্থ পাঠাচ্ছেন। ফলে ঈদ উৎসব কেন্দ্র করে দেশে আসছে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। ঈদের আগে মাত্র এক সপ্তাহে প্রায় ৫৪ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। ফলে আমদানির চাপ মেটাতে বাংলাদেশ কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ থেকে রেমিট্যান্সের গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেড়ে যায়। দেশে প্রথমবারের মতো এক অর্থবছরে রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। একই সময় ৮০ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন পণ্য আমদানি করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ফলে গত অর্থবছর শেষে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৩১ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এই সংকটের কারণে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায় গত জুন মাসে। পরে কিছুটা কমে এলেও বাজারে ডলারের সংকটের কারণে এলসি খুলতে বিপাকে পড়ে একাধিক ব্যাংক। গত অর্থবছরের ১১ মাসে রপ্তানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি হয় এবং রেমিট্যান্সও নেতিবাচক ধারায় ছিল। ফলে ডলারের সংকট তীব্র হচ্ছে প্রতিদিনই। এই সংকটের মধ্যে স্বস্তি নিয়ে এসেছে ঈদের আগে পাঠানো প্রবাসীদের রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ২১ হাজার কোটি ডলারের কিছু বেশি। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম এক সপ্তাহে প্রবাসী আয়ে জোয়ার দেখা যাচ্ছে। চলতি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ৫৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ঈদের আগে দেশে থাকা স্বজনরা যেন একটু ভালো করে ঈদ উদ্যাপন করতে পারেন, কোরবানির পশু কিনতে পারেন, সেজন্য প্রতিবছর ঈদের আগেই রেমিট্যান্স আসে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, যে হারে রেমিট্যান্স আসছে, তা খুবই ইতিবাচক। সাধারণত প্রতি ঈদের আগেই রেমিট্যান্স বাড়ে। তবে এবারের রেমিট্যান্স আসার হার একটু বেশি।
বাজারে এখন ডলার প্রতি পাওয়া যাচ্ছে ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। ব্যাংকের ডলার সংকট কাটাতে রেমিট্যান্স আহরণে বিশেষ সুবিধার আওতায় আরও বেশি টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া সরকার আড়াই শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে রেমিট্যান্সে। এতে ডলার প্রতি ৯৫-৯৬ টাকা পাচ্ছেন গ্রাহকরা। মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বাড়ে। সেই ধারায় দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্স ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করে। প্রবাসী আয়ের ঢল অব্যাহত ছিল ২০২১ সাল পর্যন্ত। এরপর ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি। কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাড়বে। গত ছয় মাসে আরও ১০ লাখের মতো শ্রমিক বিদেশে গেছেন। তাদের পাঠানো আয় অচিরেই রেমিট্যান্সের খাতে যোগ হবে। ফলে বাড়বে রেমিট্যান্স প্রবাহ।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রবাসীরা যে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন এটা বড় এবং ইতিবাচক খবর। তবে দেশের ডলার সংকট নিয়ে যতটা আতঙ্ক কাজ করছে বাস্তবে ততটা সংকট নেই। বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে এখন সারা পৃথিবীতেই যে ধরনের সংকট চলছে বাংলাদেশেও তা আছে। খাদ্য পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে ডলার আরও বেশি যাচ্ছে। এই সময় আমাদের রপ্তানি অনেক বেড়েছে। প্রবাসীরা যে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন তা অর্থনীতির জন্য বড় সুখবর। আগামীতে তা আরও বাড়বে বলে তার প্রত্যাশা।
সূূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন