জানা গেছে, এ মুহূর্তে প্রশাসনে সচিব পদে কর্মরত ৭৭ জন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে বিসিএস ১৯৮২ স্পেশাল ব্যাচের একজন, ১৯৮৪ ব্যাচের ছয়জন, ১৯৮৫ ব্যাচের ছয়জন, ১৯৮৬ ব্যাচের ১৬ জন, বিসিএস নবম ব্যাচের ১২ জন, দশম ব্যাচের ২৪ জন এবং একাদশ ব্যাচের ১৪ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবসহ ১০ জনই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কর্মরত। চলতি বছরের মতো আগামী বছর (২০২৩) নিয়মিত চাকরি শেষে অবসরে যাবেন আরও ২৫ সচিব। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবসহ আরও দুই সচিবের চুক্তিভিত্তিক চাকরির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালে। চলতি বছর চুক্তিতে থাকা সচিবদের মধ্যে আগামী মার্চে মেয়াদ শেষ হচ্ছে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগের সচিব এম ওয়াহিদুল ইসলাম খানের। আগামী জুনে মেয়াদ শেষ হবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম নজরুল ইসলাম ও খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুমের। আগামী সেপ্টেম্বরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার এবং ডিসেম্বরে বিসিএস ১৯৮২ স্পেশাল ব্যাচের কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে।
নিয়মিত সচিবদের মধ্যে আগামী ৯ এপ্রিল পিপিপির (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা আফরোজ, ১৯ মে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান এম আফজাল হোসেন এবং ২২ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ অবসরে যাবেন। আগামী ১৪ জুন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. লোকমান হোসেন মিয়া, ২৬ জুলাই পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, ৫ আগস্ট এনএসডিএর (জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) নির্বাহী চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা, ২৯ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত মো. ফজলুল বারী এবং ৩০ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী অবসরে যাচ্ছেন। পাশাপাশি আগামী ৩০ অক্টোবর অবসরে যাবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, ২ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম এবং ১৩ নভেম্বর ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার। এ ছাড়া আগামী ৩১ ডিসেম্বর পাঁচজন সচিব অবসরে যাবেন। তারা হলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মো. মামুন আল রশিদ, বিপিএটিসির রেক্টর রামেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব এম খলিলুর রহমান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এম সাইদুল ইসলাম এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব এম মোকাম্মেল হোসেন।
সূত্র আরও জানায়, এসব পদ খালি হওয়ার আগেই কোনো কোনো সচিব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। চুক্তিপ্রত্যাশী অনেকে এখনই সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের দফতরে হাজিরা দেওয়া শুরু করেছেন। তবে প্রশাসনের বড় একটি অংশই এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরোধিতা করছে। এই পক্ষের কর্মকর্তারা নিজেরাই সচিব হওয়ার দৌড়ে আছেন। দশম ব্যাচের কর্মকর্তাদের পর ইতিমধ্যে একাদশ ব্যাচের ১৪ জন কর্মকর্তা সচিব হয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে হয়তো এই ব্যাচসহ দশম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সচিব নিয়োগ দেওয়া হবে। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর বিসিএস ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব হওয়ার দুই বছর পূর্ণ হবে। ফলে চলতি বছরের শেষ দিকেই সচিব পদে নিয়োগ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করবে ত্রয়োদশ ব্যাচ। আগে প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিব পদে এক বছর কাজ করার পর ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। এখন তা পরিবর্তন করে অতিরিক্ত সচিব পদে দুই বছর অতিক্রম করার পর সরাসরি সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রায় অভিন্ন ভাষায় একাধিক অতিরিক্ত সচিব বলেন, যারা সচিব পদে দীর্ঘদিন রয়েছেন তাদেরই আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলে আমরা কবে সচিব হব? সব অতিরিক্ত সচিব সচিব হবেন না যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য একটি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কারণে কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব বঞ্চিত হন। কারণ চুক্তিতে একজনকে দুই বছরের জন্য দিলে এ সময়ে কতজন অতিরিক্ত সচিবের চাকরির মেয়াদ শেষ হয় তা-ও নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে। কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোতে নিয়মিত কর্মকর্তারা কাজ করার সুযোগই পাচ্ছেন না। যারাই বড় পদে গেছেন তারাই নিজেদের আখের গুছিয়ে চুক্তি বাগিয়ে নিয়েছেন। যোগ্য কর্মকর্তারা নন, গুটিকয়েক বড় কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠরাই এখন সচিব হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন